Skip to main content

বাংলাদেশ শ্রমবিধি

বাংলাদেশে নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী প্রধানতঃ দুই ধরণের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । কোন সরকার বা সরকারের অধীনস্ত কোন দপ্তরের ক্ষেত্রে সরকারী চাকরী বিধিমালা প্রযোজ্য হবে; এই বিধিমালা চলতি বছর সংশোধিত হয়েছে । অন্যদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ প্রযোজ্য হবে । যেমন- বেসরকারী পর্যায়ের কিংবা ব্যাক্তি মালিকানাধীন কোন প্রতিষ্ঠান, কারখানা, শিল্প-কারখানা প্রভৃতি । যার মধ্যে ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, টেলিফোন কোম্পানী প্রভৃতি রয়েছে ।

শ্রম আইনে দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, শিক্ষাধীনসহ যে কোন ব্যক্তি শ্রমিকের সংজ্ঞায় পড়বেন যিনি- মজুরীর বিনিময়ে কাজ করেন, যার কাজের শর্ত রয়েছে (তা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য যাই হোক); যিনি সরাসরি কিংবা কোন ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত হন; যিনি তাঁর কাজের (বা সেবার) বিমিময়ে মজুরী পান প্রভৃতি । আর এই কাজ হতে পারে দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক কিংবা কেরানিগিরীর । [শ্রম আইন, ২(৬৫) ধারা] ।

তবে শ্রম আইনেই বলা হয়েছে কারা শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় পড়বেন না । এর শর্ত হ’ল যারা প্রধানতঃ প্রশাসনিক, তদারকি কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত । [শ্রম আইন, ২(৬৫) ধারা] ।

শ্রম আইনে শ্রমিকের এই সংজ্ঞা একটি সাধারণ সংজ্ঞা । মূলতঃ শ্রমিকের মূল বা বেসিক সংজ্ঞা । যার আওতায় শ্রমিকের নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী নিয়ন্ত্রিত হয় ।

এছাড়া শ্রম আইনের আরও অন্ততঃ তিন জায়গায় শ্রমিকের সংজ্ঞা রয়েছে; এইগুলো ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, কর্মস্থলে দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, লভাংশ প্রাপ্তির অধিকার যোগ্যতা বিষয়ে ।

তবে শ্রম আইনের ২(৬৫) ধারায় কেউ শ্রমিকের সংজ্ঞায় না পড়ার বিষয়ে যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে (যেমন- যারা প্রধানতঃ প্রশাসনিক, তদারকি কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত) তার বিপরীতে আমাদের মাননীয় উচ্চ আদালত ভিন্ন কথা বলেছেন । এই সকল মামলার মাধ্যমে যে মানদণ্ড এসেছে তা হ’লঃ

(১) কারও পদবী দেখে বলা যাবে না বা যে কে শ্রমিক আর কে শ্রমিক নন;

(২) কেউ শুধুমাত্র তত্বাবধানমূলক দায়িত্বে থাকলেই বলা যাবে না যে তিনি শ্রমিক নন;

(৩) কোন উৎপাদনমূলক কাজে সরাসরি যুক্ত না থেকেও কেউ শ্রমিক হতে পারেন ।

অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠান বা কারখানা পরিচালনায় যার চূড়ান্ত অনুমোদন ক্ষমতা থাকবে তিনি শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় পড়বেন বা । অন্যরা পড়বেন ।

শ্রম আইনে দু’টি পক্ষ- শ্রমিক [২(৬৫) ধারা] এবং মালিক [২(৪৯) ধারা] । তাই কোন প্রতিষ্ঠান বা কারখানা সংশ্লিষ্ট যে দু’পক্ষ তারা হয় শ্রমিক অথবা মালিক যে কোন একটি সংজ্ঞার আওতায় পড়বেন ।

কার্যকারণে কোন মজুরীভুক্ত ব্যাক্তি একই সঙ্গে মালিকের ভূমিকা পালন করতে পারেন । তিনি যখন মালিকের পক্ষে কোন কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি তখন মালিক হিসেবে কাজ বা পারফর্ম করেন । (প্রকৃত মালিক না হয়েও) ।

আবার একই ব্যাক্তির নিজের নিয়োগ ও চাকরীর অধিকার কিংবা প্রাপ্য ও সুবিধার কথা যখন আসবে তখন একই ব্যাক্তি শ্রমিক ।

“গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য নিম্নতম মজুরীর হার” (এসআরও নংঃ ৩৬৯-আইন/২০১৩)- এ নুন্যতম মজুরীর মানদণ্ড নির্ধারণকালে দু’ধরণের ব্যাক্তির রয়েছে – শ্রমিক এবং কর্মচারী । এই এসআরও’র জারীকারক শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ।

তবে শ্রম আইনে যারা মজুরীর বিনিময়ে কাজ করবেন তাঁদেরকে শুধুমাত্র শ্রমিক বলে নামকরণ করা হয়েছে । তাই আইনীভাবে পর্যালোচনার বিষয় যা মূল আইন করেনি, তা এসআরও করতে পারে কি না ?

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫-তে “তদারকি কর্মকর্তা” এবং “প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনামুলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি”র যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে মাননীয় শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল এক মামলার রায়ে (২০১৬ সনে) তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন । মাননীয় আদালতের মতে, মূল আইন যেহেতু ঐসব কথিত পদের কোন সংজ্ঞা দেয়নি, কাজেই কোন বিধিমালার মাধ্যমে তার সৃষ্টি আইন-বহির্ভূত; এটি করা আইনসংগত হয়নি (Void) ।

আমাদের মাননীয় হাই কোর্ট বিভাগ এক মামলার রায়ে বলেছেন, কোন প্রতিষ্ঠান তার আভ্যন্তরিন প্রশাসনিক প্রয়োজনে নিজস্ব বিধিমালা তৈরি করতে পারবে এবং পদ-বিন্যাস তৈরি করতে পারবে । তবে এই পদ-বিন্যাসের সঙ্গে শ্রমিকের সংজ্ঞার কোন সম্পর্ক নেই ।

আর প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিধিমালার কোন সুবিধা শ্রম আইনে প্রদত্ত সুবিধার চেয়ে কম অনুকুল করা জাবযানা (৩ ধারা) ।

তাই দেখা যাচ্ছে, পদবী যাই হোক ফল একই ।

ড. উত্তম কুমার দাসঃ এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ এবং শ্রম আইনে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ।

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

উপন্যাসের গঠন কৌশল

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E.M. Forster- এর মতে, কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তাঁর মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। উপন্যাসকে এক সুবিশাল ক্যানভাস হিসেবে ধরা যায়, লেখক তাঁর পরিকল্পনা মাফিক একেকটি অধ্যায়কে জায়গা করে দেন সেখানে। স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা, মানুষের হৃদয়ের গভীর তলদেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা—ইত্যাদি দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য। উপন্যাস বিশ্লেষকগণ একটি সার্থক উপন্যাসের গঠন কৌশল নিয়ে ছয়টি রীতির কথা বলেছেন। প্লট বা আখ্যান সম্পাদনাঃ উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনি। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। প্লটের মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা বাস্তব জীবনকে প্র...