Skip to main content

স্টার জলসা এগেইন

স্বপ্নের মধ্যে সদ্য বিয়ে করা নতুন বউয়ের হাতখানা ধরে সারাবিশ্বটাকে কয়েক চক্কর দিয়ে তাকে নিয়ে সমুদ্রজলে স্নান করছিলাম। হঠাৎ করেই উপলব্ধি করলাম সমুদ্রজলে নয়, আমি বিছানায় উপর শেয়ালভেজা হয়ে শুয়ে আছি। জোরপূর্বক চোখজোড়া মেলে তাকিয়ে দেখি বউ আমার পাশে নাই, আর পুরো বিছানা বরফজমা ঠান্ডা পানিতে ভিজে টুইটুম্বুর। হুড়মুড় করে উঠে বসলাম, পরিস্থিতি বুঝবার চেষ্টা করতে কয়েকবার চোখ কচলে দৃষ্টিটাকে একটু সচ্ছ করে নিলাম।
বিষধর কোবরার মতো ফুসফুস আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। খাটের পাশে খালি বালতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার বউ! পড়নের শাড়ির আচলটাকে টেনে নিয়ে কোমড়ে গুঁজে রেখেছে। দৃষ্টি দিয়ে গিলে খাবার মতো চাহনিতে আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়কে পানি ছাড়া এক ঢোকে গিলে নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে উদ্ধত হতেই বউ আমার রক আর উচ্চাঙ্গসংগীতের সংমিশ্রণে গলা ছেড়ে দিল।
  - বেলা কয়টা বাজে সেদিকে কোন খেয়াল আছে! সেই সকাল থেকে টানা ডেকেই যাচ্ছি। উঠা তো দূরের কথা, আমার কথা তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়ই নাই! বলছি যে, বাজার-টাজার কিছু করবে নাকি সারাদিন না খেয়েই থাকতে পারবে?
আমি বেশ ভোজনপ্রিয় টাইপের মানুষ। তাই বলে এমন নই যে, সারাক্ষণ খাই খাই করি। তবে না খেয়ে থাকার কথাটা ভাবতেই পারিনা। বউয়ের মুখে না খেয়ে থাকবার হুমকি শুনে একটু সাহস সঞ্চয় করে নিয়ে বললাম,
  - কেন..! না খেয়ে থাকতে হবে কেন?
আমার কথা শুনে বউ একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। চোখ রাঙিয়ে বিষাক্ত নাগিনীর মতো ফুসফুস করতে করতে বলল,
  - পান্ডার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছ! বাজার না করলে রান্না করব তোমার মাথা?
আমাকে পান্ডার সাথে তুলনা করায় নিজেকে একনজর দেখে নিলাম। নাহ, কোনদিক থেকেই নিজেকে পান্ডার মতো লাগছে না। তাহলে আমার বউ কেন পান্ডার সাথে তুলনা করল, সেটা আমার মগজে ঢুকছে না। পান্ডা গবেষণা মনে চাপা রেকগে আমি বললাম,
  - কেন বাসায় কিছু নেই রান্নার মতো? গত পরশুই না বাজার করে আনলাম।
  - কি করে থাকবে? খাওয়ার সময় তো আর পরিমাণের দিকে হুশ থাকে না!
  - আচ্ছা বাদ দাও না। একটু দেখ না, এবেলা কোনভাবে সামলানো যায় কি না। আমি একটু পর গিয়ে বাজার করে আনছি।
  - পরে মানে! তুমি এক্ষণ যাবে বাজারে...!
বউয়ের রাগান্বিত চেহারা আর অনবরত বকবক শুনে সিক্ত বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম। সেটা দেখে বউ পুনরায় হুংকার দিয়ে উঠল,
  - খবরদার! একদম ওয়াশরুমে যাবে না! আগে বাজারে যাও।
  - আরে ব্রাশ তো করতে দিবে নাকি?
  - না..! ফিরে এসে ব্রাশ করবে!
বউয়ের আচরণ মোটে ভাল মনে হচ্ছে না। যেভাবে কথায় কথায় হুংকার ছাড়ছে তাতে যেকোন সময় আমার গায়েও চড়াও হতে পারে। আপাদত বউয়ের হাতে মার খেতে চাচ্ছি না। তাই ব্রাশ না করেই বাজারের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম।

বাসা থেকে বেড়িয়ে রিক্সা নিয়ে বাজারে রওনা দিলাম। যেতে যেতে মনেমনে নিজেকে প্রশ্ন , শিপ্রা হঠাৎ এমন আচরণ কেন করল? কিন্তু কোন জবাব খুঁজে পেলাম না।
নিশ্চয়ই ভাবছেন, হঠাৎ আবার এই শিপ্রাটা কোত্থেকে আসলো?
শিপ্রা হচ্ছে আমার প্রাণপ্রিয় বউয়ের নাম।
এবার কি ভাবছেন? এরকম জল্লাদীয় আচরণের পরেও কেন প্রাণপ্রিয় বউ বলছি সেটাই তো?
সেটারও কারণ আছে, তাহলে একটু বিশ্লেষণ করেই বলা যাক-
আমাদের আসলে এরেঞ্জ ম্যারিজ হয়েছিল। দুই পরিবারের পছন্দেই আমরা বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের আগে আমরা দুজন দুজনকে দেখিনি পর্যন্ত। এটা নিয়ে আমি অবশ্য কিছুটা শংকায় ছিলাম বটে। একেবারে অপরিচিত একজনকে সাথে নিয়ে সারাটা জীবন কাটাতে হবে। তার সাথে আমার কতটা বনিবনা হবে, এটা নিয়েই একটু বেশি শংকা ছিল আমার মনে। পরে জেনেছি, এই একই শংকায় শিপ্রা নিজেও আক্রান্ত ছিল।
যাই হোক, বিয়ের পর সৃষ্টিকর্তার ইশারায় সকল শংকা কাটতে খুব বেশি সময় লাগেনি। খুবই অল্প সময়েই কিভাবে যেন আমরা একে অপরের খুবই চেনাজানা হয়ে গেলাম। এতটা চেনাজানা যে, সেটার মানদন্ড আসলে অকল্পনীয়। আমাদের দুজনের মধ্যে যতটা বুঝাপড়া হয়ে উঠেছে, সেটা মনে হয় সাত জনম প্রেমের পরেও অর্জন করা অসম্ভব। আরও অনেক প্রাসঙ্গিক কারণ রয়েছে, তার মধ্যে ওর শান্তশিষ্ট স্বভাবও বাদ দেবার মতো না। যার জন্যেই আমি সর্বদা বলি যে শিপ্রা আমার প্রাণপ্রিয় বউ।
কিন্তু এমন শান্তশিষ্ট, লক্ষী বউটা আজকে হঠাৎ এমন জল্লাদ হয়ে গেল কেন?
রিক্সার আচমকা ব্রেক কষাতে আমার ঘোর কাটল। সকাল প্রায় এগারোটা বাজে, কিন্তু এখন পর্যন্ত পেটে কোন দানাপানি পড়েনি। ইতিমধ্যে পেটের মধ্যে ইঁদুরের দলেরা পুশআপ করতে শুরু করে দিয়েছে। রাস্তার পাশে একটা কনফেশনারী দোকান দেখে রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা থামাতে ইশারা করলাম। রিক্সা ভাড়া চুকিয়ে কনফেশনারীতে ঢুকলাম।

কেক, বিস্কুট, কলা সামনে যেই আইটেম পড়ল কয়েকটা করে পেটে চালান করে দিলাম। তারপর একটা কোক নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা একেবারে গিলে নিলাম। খাবার পেয়ে এবার পেটের ইঁদুরের দল শান্ত হয়েছে।
পেট শান্ত করে একটা বেনসন অ্যান্ড হেজেস জ্বালিয়ে ঠোঁটে পুড়ে ফুরফুরে মেজাজে বাজারে গেলাম। বাজারের সামনে গিয়েই তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। এতটা উপচে পড়া ভিড় যে তিলধারণের ঠাই নেই। মনে পড়ল, আজকে তো শুক্রবার। মানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এজন্যই ভিড়টা অন্যদিনের তুলনায় বেশি। ভিড় ঠেলে ঠেলে শিপ্রার দেওয়া লিস্টের অর্ধেক বাজার করতেই আমি কুপোকাত। ব্যবসার চালানের মতো বড় সাইজের যে লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে, সেটা দেখেই এখন আমার মাথা ঘুরে পড়ার উপক্রম। মনেমনে নিজেকে শক্ত করে ঘন্টাখানেক সময় ব্যয় করে অবশেষে বাজার করা নামক যুদ্ধের সমাপ্তি করতে পারলাম। দুই ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে বাসায় ফিরলাম। সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় সকালবেলায় শিপ্রার আচরণ মনে পড়ে একধরনের আতংক অনুভব করতে লাগলাম। ফ্ল্যাটের সামনে এসে বাজারের ব্যাগ দুটো নিচে রেখে কলিংবেল চাপলাম। কিন্তু ভেতর থেকে শিপ্রার কোন সাড়া পেলাম না। পুনরায় চেষ্টা করেও কোন লাভ হল না। দরজা ঠেলতেই দরজা খুলে গেল। এবার মনে একটু ভিন্নতর আতংক কাজ করতে লাগলো। কোনরকমে ব্যাগ দুটো ভেতরে রেখেই চিৎকার করে শিপ্রাকে ডাকতে লাগলাম। এবারও কোন সাড়া নেই। আমার ভয়টা আরও বাড়তে লাগলো।

বাসাটা কেমন যেন একটু বেশিই নীরব মনে হচ্ছে। ধীরপায়ে বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। বুকের ভেতরটাতে কেউ অনবরত হাতুরিপেটা চালিয়ে যাচ্ছে। দরজা খুলে দেখি শিপ্রা খাটের উপর বসে হাটুতে মাথা রেখে চুপটি মেরে বসে আছে। একটু কাছে যেতেই টের পেলাম ও ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। কারণ জিজ্ঞেস করেও কোন জবাব মিলল না। অতঃপর আমি এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলাম,
  - কি হয়েছে! তুমি কাঁদছ কেন?
আমার বুকে মাথা রেখে শিপ্রা এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। আমি অস্থির ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম,
  - শিপ্রা..! কি হয়েছে তোমার? তুমি এরকম কাঁদতেছ কেন?
আমাকে জড়িয়ে ধরে শিপ্রা বলতে লাগল,
  - আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি! তোমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি। প্লিজ.. আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কখনওই আমি তোমার সাথে এমন করব না...!
শিপ্রাকে শান্তনা দিয়ে ওর চোখের জল মুছে দিলাম। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
  - আচ্ছা শিপ্রা..। তুমি আজ হঠাৎ এরকম করলে কেন?
শিপ্রা তাৎক্ষণিক বলল,
  - আমি ইচ্ছে করে কিচ্ছু করিনি, সব দোষ হচ্ছে স্টার জলসার।
  - স্টার জলসার! এই টিভি চ্যানেল আবার কিভাবে দায়ী?
কিছুটা অবাক হয়েই আমি জানতে চাইলাম। শিপ্রা বলল,
  - গতকাল একটা সিরিয়ালে দেখেছি হাজবেন্ডকে কিভাবে টাইট দিয়ে রাখতে হয়। সেটা দেখেই এই আমিও...। উফফ! কি ভয়ংকর অবস্থা রে বাবা! স্বামীকে টাইট দেওয়া, অন্যের স্ত্রীর সাথে পরকিয়া, ঝগড়াঝাটি এসব ছাড়া কি কিছু করতে পারে না এই আজাইরা চ্যানেলগুলো?
  - তাহলে জেনেশুনে তুমি এসব চ্যানেল দেখতেই গেলে কেন?
  - আমার কি দোষ? তুমি সারাদিন অফিসে থাকো আর আমি বাসায় একা একা থাকি। সময় কাটাতেই তো একটু আধটু দেখি। বাসায় কথা বলার মতো একটা চুনোপুঁটি পর্যন্ত নেই..।

"চুনোপুঁটি" শব্দটা শুনে আমার মাথায় একটা প্ল্যান খেলে গেল। আমি দুষ্টু ইংগিত করে শিপ্রার কানেকানে বললাম,
  - তাহলে তোমার চুনোপুঁটি দরকার..?
আমার ইংগিত টের পেয়ে শিপ্রা লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নামিয়ে নিয়ে বলল,
  - হুম..। আমাদের বিয়ের তো দু'বছর পেরিয়ে গেল, এবার একটা বেবি তো নেওয়াই যায়।
আচমকা হ্যাচকা টানে শিপ্রাকে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। পরম ভালবাসায় সিক্ত হয়ে দুজনের সকল অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হবার পূর্বমুহূর্তে আমার প্রাণপ্রিয় বউয়ের কানেকানে ফিসফিস করে বললাম,
  - এখন থেকে সময় গুনতে শুরু কর, স্টারজলসার ভূত ছাড়াতে চুনোপুঁটি পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে!

*

© মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...