বই - মাশরাফি
লেখক - দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
ঘরানা - জীবনী
প্রকাশক - BCSA
পরিবেশক - ঐতিহ্য
প্রচ্ছদের ছবি - রতন গোমেজ
পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৪৭০
মুদ্রিত মূল্য - ৬৭৫ টাকা।
মাশরাফি! নামটা শোনার পর, বলার পর, লেখার পর কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। মাশরাফি একটা আবেগের নাম, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, অনুপ্রেরণার নাম। মাশরাফি বিন মুর্তজা একজন দলনেতার নাম। যার কাধে একটি দেশের নেতৃত্বের ভার। বিদ্ধস্ত হাটুতে ভর করে যিনি দলকে নেতৃত্ব দেন। গল্পটা দলনেতা মাশরাফির, গল্পটা ডানপিটে কৌশিক থেকে দলনেতা মাশরাফি হয়ে ওঠার।
মাশরাফির গল্পটা শুরু করতে হলে আমাদের যেতে হবে চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইলে। ওখান থেকেই তো গল্পের শুরু।
১৯৮২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, মাশরাফির পিতা-মাতা গোলাম মুর্তজা স্বপন ও হামিদা রহমান বলাকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বলাকা যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন পিতার দিকের পারিবারিক বন্ধু নেপাল সরকার তার হাত দেখে বললেন, "তোর কোলে রাজপুত্র আসছে রে, মা।"
৫ অক্টোবর, ১৯৮৩। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট।
শীতের কুয়াশা চিরে ভিতর থেকে পরপর দুটো চিৎকার ভেসে আসে। বলাকার প্রবল চিৎকার। পরপরই একটা নতুন প্রাণ, এই জগতে এক নবাগত চিকন স্বরে জানিয়ে দেয় সে এসেছে। আমি এসেছি। আমি চলে এসেছি রাজত্ব করবো বলে।
মাশরাফির ছেলেবেলা কেটেছে নড়াইলে নানাবাড়িতে নানী বেলা ম্যাডামের আদর-শাসনে। চিত্রা নদীতে সাতরে বেড়ানো, পাড়াপড়শির বাগান থেকে ফল চুরি করা, মোটরসাইকেলে নড়াইল শহর ঘুরে বেড়ানো ডানপিটে কৌশিক আজকের মাশরাফি।
কোন লীগ ম্যাচ না খেলে নিজ যোগ্যতা বলে জাতীয় দলের চান্স পেয়ে যায় মাশরাফি। 'এ' দলের হয়ে প্রথম ভারত সফরে গিয়ে সে তার জাত চিনিয়েছিল। সেই প্রথম থেকে ইঞ্জুরি যার সঙ্গী। দুই পায়ের হাটুতে ৭ বার অপারেশনের পরেও এখনো দিব্যি খেলে যাচ্ছে, দলকে (দেশকে) নেতৃত্ব দিচ্ছে সগৌরবে।
খেলোয়াড় মাশরাফির পাশাপাশি প্রেমিক মাশরাফির দেখা মিলবে। কৈশোরের প্রেমিকা সুমীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় মাশরাফি। এ যেনো এক প্রেমিক বীর যোদ্ধা। স্বামী মাশরাফি থেকে পরবর্তী তে পিতা মাশরাফি। কন্যা হুমায়রা ও পুত্র সাহেল পিতার খুব আদরের। শত ব্যস্ততার মাঝে দুজনকে সময় দেন। মিশুক প্রকৃতির মানুষ মাশরাফি। তার বন্ধু বলয়ে থাকা লোকের সংখ্যা অসংখ্য। মাশরাফির জীবনে বিশেষ কয়েকজন বন্ধু আছে। তারমধ্যে মামা, মামি অন্যতম।
বারবার ইঞ্জুরিতে পড়া। বিশ্রাম নিয়ে আবার মাঠে ফেরা। নিজের বিরুদ্ধে নিজের লড়াই চালিয়ে যাওয়া। অধিনায়কত্ব গ্রহণ করে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় উপহার, দেশবাসী কে আনন্দ উল্লাসে ভাসার সুযোগ করে দেওয়া মানুষটি মাশরাফি বিন মুর্তজা। দেশের প্রথম গতিতারকা তিনি। তারই পথ ধরে অনুজরা এগিয়ে যাচ্ছে। ছায়া দিয়ে সর্বদা তাদের আগলে রেখেছেন। মানুষ মাশরাফি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে হাজারো মানুষ স্বপ্ন দেখে।
বইয়ের প্রথমে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোরের আশীর্বাণী দিয়ে শুরু হয়েছে। শেষে মাশরাফির প্রথম অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকার দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছে।
ফ্ল্যাপ থেকে কিছু অংশ -
টেস্টে এক ইনিংসে তার ৫ উইকেট নেই। ওয়াশিম, ম্যাকগ্রার মতো শত শত উইকেট নেই তার। ব্রেট লি, শোয়েব আখতারের মতো গতিদানব নন তিনি।
তাহলে তিনি কে?
তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজা।
মাশরাফি! এক বিস্ময়ের নাম!
পাঠ প্রতিক্রিয়া -
ক্রীড়া সাংবাদিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এর লেখা জীবনী ধর্মী গ্রন্থ "মাশরাফি"। ক্রীড়া সাংবাদিকতা করার দরুন তিনি খেলোয়াড় মাশরাফিকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। বন্ধুত্ব হয়েছে, কাছ থেকে মানুষ মাশরাফিকে দেখার সুযোগও পেয়েছেন। ডানপিটে কৌশিক থেকে দলনেতা মাশরাফির প্রতিটা পদক্ষেপে লেখক প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে তাকে অনুসরণ করেছেন। সে সফরে তাকে যেতে হয়েছে চিত্রা পাড়ের নড়াইল থেকে অস্ট্রেলিয়াসহ ক্রিকেটের নানান তীর্থস্থানে। বাদ যাইনি ডাক্তারের চেম্বার, পাগলাটিকে তো অনেকবার ডাক্তারের ছুরিকাঁচিতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে।
মাশরাফির শুরু, থেমে যাওয়া, পুনরায় আবার শুরু সব তিনি অতি নিকট থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। খেলোয়াড় বা মানুষ মাশরাফিকে আমরা সবাই কমবেশি জানি কিন্তু বিস্তারিত ভাবে নয়। দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এই অসাধ্যটি সাধন করেছেন। তিনি মাশরাফির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো বিস্তর পরিসরে মলাট বদ্ধ করে দেখিয়েছেন। বেশকিছু রঙিন ছবি আছে বইটিতে। লেখক পেশায় সাংবাদিক, তার লেখা অনেকটা পত্রিকার লেখার মতো হলেও পড়তে খারাপ লাগবে না। কারণ এ যে কোটি মানুষের ভালোবাসা মাশরাফির গল্প। "মাশরাফি" এক বীর যোদ্ধার উপাখ্যান!
Comments
Post a Comment