Skip to main content

মাশরাফিঃ অতি দূর সমুদ্রের পর যে নাবিক দিয়াছে দিশা

‘মাশরাফি ভাইয়ের সাথে খেলি এটা অনেক বড় কিছু। সৌভাগ্যের ব্যাপার। জীবনে মনে হয় এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া, মাশরাফি ভাইয়ের ক্যাপ্টেন্সিতে খেলতে পারছি। ওনার কোনো তুলনা হয় না। উনি কখনও বাবার মতো, কখনও বন্ধু, কখনও বড় ভাই। আপনি যখন আপনার আইডলকে কাছে পাবেন, তখন অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। আমি অনেক ভাগ্যবান, ওনার নামের সাথে আমার নাম মিলিয়ে মানুষ ‘ম্যাশকিন’ ডাকে। জীবনে আর কিছু না পেলেও চলবে‌।’

ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ক’দিন আগে কথাগুলো বলছিলেন, বাংলাদেশের হার্টথ্রব ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের এই কথাগুলো আন্তরিক স্বীকারোক্তি। বাংলাদেশ দলের যে কোনো ক্রিকেটারকে ‘মাশরাফি মোর্তজা’ বিষয়ে আপনি জিজ্ঞেস করুন, তাসকিনের কথাগুলোই বলবে সবাই। বাজি লাগতে পারি!

সাকিব আল হাসান বড় তারকা; কিন্তু এদেশে মাশরাফি সবচে বেশি শ্রদ্ধা আর ভালবাসার পাত্র। সাকিব-মুশফিক-তামিমকে পছন্দ করেন না, এমন অনেক মানুষ অহরহ পাওয়া যাবে চারপাশে। কিন্তু মাশরাফি সেই ক্রিকেটার, বাংলাদেশে এমন একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি তাঁকে পছন্দ করেন না।

টেস্ট ক্যারিয়ার থেমে গেছে মাত্র ৩৬ ম্যাচে। ৭৮ উইকেট মোটেই মাশরাফির মানের সঙ্গে যায় না। টেস্টে কোনো পাঁচ উইকেট নেই। এটাও হয়তো প্রকৃতির খেয়াল। তবে মনে রাখতে হবে, মাশরাফিকে বেশিরভাগ টেস্ট খেলতে হয়েছে মরা পিচে। যেখানে পেসারদের জন্য কিছুই থাকত না। আর দ্বিতীয় ইনিংসে বল করার সুযোগ খুব কমই পেয়েছেন। চৌদ্দ বছরের ক্যারিয়ারে ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ১৫৪টি। উইকেটসংখ্যা ১৯৭। এসব পরিসংখ্যান ক্রিকেটার মাশরাফিকে তুলে ধরতে পারে না।

কোনো পরিসংখ্যানে লেখা থাকে না, সাত সাতবার অস্ট্রেলীয় শল্যবিদ ডেভিড ইয়াংয়ের ছুরির নিচে রাখতে হয়েছে তাঁর হাঁটুকে; কোথাও উল্লেখ থাকে না, তিনি যে এখনও বল হাতে দৌড়ান, তা মেডিকেল সায়েন্সের বিস্ময়। অফুরান প্রাণশক্তি আর ক্রিকেটকে ভালবাসা ছাড়া এ সম্ভব নয়। মুন্নাভাই এমবিবিএস চলচ্চিত্রে যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে, মাশরাফি যেন তার বাস্তব চরিত্র।

মাশরাফি মোর্তজা সেই ক্রিকেটার, প্রতি সকালে সিরিঞ্জ দিয়ে যার হাঁটু থেকে পানি আর পুঁজ বের করতে হয়। হাঁটুতে কৃত্রিম বাটি লাগিয়ে তিনি দেশের জন্য লড়েন। তাঁকে নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা হতে পারে। তাঁর চিকিৎসক ডা. ডেভিড ইয়াং তো বলেই দিয়েছেন, মাশরাফি এখনও উঠে দাঁড়ায় এবং ক্রিকেট খেলে এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় বিস্ময়।

জিততে না চাওয়া, জয়ের সাহস না থাকা একটি দলকে নিয়ে ৮ মাসে যে জাদু দেখিয়েছেন মাশরাফি, এক দিক থেকে সেটা বিশ্বকাপ জয়ের চেয়েও বড়।

এখনকার মাশরাফির বলে অত গতি নেই। ১৪৫ নেমে এসেছে ১১৫/২০-এ। কিন্তু যে লাইন-লেংথে বল করেন, তা রোমান্টিক ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো বিবশ-অবশ করা এক সুর তোলে। আর ব্যাটসম্যানদের কাছে তা শুধুই জহর। বিষ। মাছরাঙা টেলিভিশনের ক্রীড়া সম্পাদক রাকিবুল হাসান সব সময় বিস্মিত গলায় বলেন, “ক্যামনে সম্ভব! এই হাঁটু নিয়ে কিভাবে করে এরকম বল!”

সেই উত্তর তিনি জানেন। জানে বাংলাদেশের আপামর ক্রিকেট জনতা। মাশরাফি যখন বাইশ গজে বল হাতে দৌড়ান, তাঁর হৃদয়ে থাকে লাল-সবুজ। তাঁর একেকটি বল যেন একজন মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে ছোড়া একেকটি গ্রেনেড। ‘বাংলাদেশ’ আর ‘ক্রিকেট’ এই দুটি শব্দ, এই দুটি নাম তাঁর সকল কিছুর অনুপ্রেরণা। এমন একজন ক্রিকেটারকে যে আমরা খেলতে দেখছি, এটাও বিরাট সম্মানের বিষয়।

সেই ২০০১ সালের অনুর্ধ্ব ১৭ এশিয়া কাপ থেকে লোকটাকে দেখছি। তাঁকে বোলিং করতে দেখার আগে অবশ্য রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনে বোঝার চেষ্টা করেছি। মুগ্ধতার শুরু ওখান থেকেই; দুজন (আশরাফুল আর মাশরাফি) যা করেন, তা-ই ভালো লাগারও। তারপর অভিষেক সিরিজে ওয়ানডে-টেস্ট দুই ফরম্যাটেই ইনসুইঙ্গারে জিম্বাবুয়ে ওপেনার গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের মিডল স্ট্যাম্প বাতাসে ডিগবাজি খাওয়া, মাশরাফির গতিতে মারে গুডউইন, এমনকি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের পা কাঁপাকাঁপি ১৬ বছর বয়সী আমার ভেতর যে রোমাঞ্চ জাগিয়েছিল, তা একটুও কমে নি। বরং বেড়েছে।

তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে মামাতো বোনের প্রথম পুত্রের নাম রেখেছিলাম কৌশিক। সেই কৌশিক এবার এসএসি পাশ করে ফেলল! মাশরাফির ডাক নামে নাম। তা নিয়ে ওর গর্বের অন্ত নেই। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ১৪৫ থেকে ১৫০ কি.মি. গতিতে আগুনের গোলার মতো বল করা কৌশিক, আমাদের ভালবাসার নড়াইল এক্সপ্রেসকে নিয়ে একবার ক্রিকেট সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনি আফসোস করে বলছিলেন, “কত বড় বোলার। আরো কত বড় হতে পারতেন। আহারে!” তখন আমার চোখে ভাসছিল দুই সতীর্থের কাঁধে দু হাত রেখে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাশরাফির মাঠ ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য।

এদেশের মানুষের কাছে ‘মাশরাফি’ শুধু ভালবাসার নাম না। একটা আক্ষেপও। তাঁর চোট তো বাঙলার মানুষের মনে দাগ কাটা; সেই দাগগুলো পারফরমেন্স দিয়ে বারবারই মুছে দেবার চেষ্টা করেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।

২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ম্যাচে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মাশরাফির বল করার দৃশ্য কেউ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। একটু পর পর দুই পা ধরে বসে পড়ছিলেন, মাঠেই স্ট্রেচিং করে নিচ্ছিলেন। তারপরও মাঠ ছেড়ে যান নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস সৃষ্টি করা ম্যাচেও ছিল একই চিত্র। তারপরও প্রয়োজনীয় ব্রেক থ্রু মাশরাফিই দিয়েছেন, ফিল্ডিংয়ের সময় মরণপণ ঝাঁপিয়ে পড়ে রান আটকেছেন। ক্রিকেটার মাশরাফি এমনই। ক্রিকেটই তো তাঁর প্রাণ।

ক্রিকেটার মাশরাফির কথা লিখে শেষ করা যাবে না। নেতা মাশরাফির গুণকীর্তন করার সামর্থ্যও কি কোনো ভাষার আছে? নাই। আরিফুল ইসলাম রনিকে আবারও টানি। ২১ জুন ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস লেখেন রনি। সেই স্ট্যাটাসের অংশ বিশেষ, “ভারত ২০১১ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ওয়াংখেড়েতে শচীন টেন্ডুলকারকে কাঁধে তুলে নিলেন বিরাট কোহলি। বলেছিলেন, ‘২১ বছর টেন্ডুলকার গোটা জাতির প্রত্যাশার ভার বয়েছেন। এখন সময় আমরা তাঁকে বয়ে নেব।’

আমরা বিশ্বকাপ জিতি নি। তবে আমাদেরও একজন মহানায়ক আছেন। মহানায়ক বলেও আসলে তাঁকে পুরোপুরি ধরা যায় না। সত্যিকারের এক যোদ্ধা। প্রায় ১৪ বছর ধরে যিনি একের পর এক ক্যারিয়ারঘাতি ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতে চলেছেন, এই দেশের জন্য, দেশের ক্রিকেটের জন্য। আর নেতৃত্বের মাত্র ৮ মাসে বাংলাদেশর ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। জিততে না চাওয়া, জয়ের সাহস না থাকা একটি দলকে নিয়ে ৮ মাসে যে জাদু দেখিয়েছেন মাশরাফি, এক দিক থেকে সেটা বিশ্বকাপ জয়ের চেয়েও বড়।

হ্যাঁ, বাংলাদেশ এখন বলে-কয়ে ঘোষণা দিয়ে ভারত-পাকিস্তানকে হারায়। কোহলি-ওয়াহাবদের চোখে চোখ রেখে কথা বলে, শাসায়। আর প্রতিপক্ষ মাথা নিচু করে চলে যায়

সত্যি করে বলুন তো, বছরখানেক আগে একবারও কি ভেবেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে? পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করবে? ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতবে? র‌্যাংকিংয়ের সাতে উঠে আসবে? আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনি নিজেকে ডাঁহা মিথ্যা বলছেন।

বাংলাদেশের সকল ক্রিকেট সমর্থক নিশ্চয়ই আমার মতো আফসোস করেন, ইশ! ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফির সেই ইনজুরিটা না হতো! তখন থেকে যদি টানা অধিনায়কত্ব করতে পারতেন! তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরো উঁচু জায়গায় থাকত নিশ্চয়ই। কত ঘাত-প্রতিঘাত! সিনেমাকেও তো হার মানায় সেসব। ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে পারেন নি। কষ্টে কেঁদেছেন।

তখন অনেকেই মাশরাফির ক্যারিয়ারে শেষ দেখে ফেলেছিলেন। আরে! এ যে সত্যিকার আয়রনম্যান। লড়াকু যোদ্ধা! অতো সহজেই কি হার মানার পাত্র তিনি? হার মানেন নি। আবার ফিরেছেন। আট মাস আগে পেয়েছেন ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি দলের দায়িত্ব। তারপরই মাশরাফি নামক জিওন কাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। হ্যাঁ, বাংলাদেশ এখন বলে-কয়ে ঘোষণা দিয়ে ভারত-পাকিস্তানকে হারায়। কোহলি-ওয়াহাবদের চোখে চোখ রেখে কথা বলে, শাসায়। আর প্রতিপক্ষ মাথা নিচু করে চলে যায়।

নেতা সাহসী হলে, উদাহরণ হলে দল এমনিতেই বদলে যেতে বাধ্য। তার উপর যদি জাদুকরী ব্যক্তিত্বের হাতে থাকে নেতৃত্বের ব্যাটন, ওই দলের তরতর করে উপরে ওঠা ছাড়া কোনো পথ নাই। বাংলাদেশও তাই ক্রিকেটস্বর্গের এলিভেটরে উপরে উঠছে।

মাশরাফি সেই অধিনায়ক, যিনি ড্রেসিংরুমে আত্মবিশ্বাস নামের বাতাস প্রবলবেগে ছড়িয়ে দিতে পারেন। দলের প্রত্যেক সদস্যের মাঝে বিশ্বাস ছড়াতে পারেন, সবাই সমান। দলে সবার গুরুত্ব সমান। একদমই অপরিচিত, আনকোরা কারো হাতে তুলে দিতে পারেন নতুন বল। বলে দিতে পারেন, তুই পারবি। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় নতুন বল প্রথম হাতে নিয়েছেন মাশরাফি। সেই তিনিই নিজের জায়গা ছেড়ে নতুন বলটা তুলে দিলেন দলের নবীনতম সদস্য মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টুয়েন্টিতেও ঠিক তাই করেছিলেন। এমন উদারতার জন্য কলিজা লাগে; বিরাট বড় কলিজা।

মাশরাফি সেই অধিনায়ক, কাঙ্ক্ষিত উইকেট নেবার পর পরম মমতায় বোলারের কপালে চুমু এঁকে দিতে পারেন। আবার শরীরীভাষায় ঢিলেমি দেখলে উত্তেজিত হয়ে কটু কথা শোনাতেও ছাড়েন না। দলের আরেক নবীনতম সদস্যের সঙ্গে লাফিয়ে বুকে বুক লাগিয়ে উদযাপন করতে পারেন। পার্টটাইম অফস্পিনারকে বলতে পারেন, তুই-ই সেরা। আর ম্যাচে সেই বোলার নিতে পারেন কোহলি ও ধাওয়ানের উইকেট। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর জয়ের নায়ক মুস্তাফিজকে কাঁধে তুলে নিতে পারেন। মাশরাফি বিন মোর্তজা এমনই পাগলাটে। নেতা, সতীর্থ, বন্ধু।

খুব জানতে ইচ্ছা করে, স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের মাঠ অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার ম্যাচ শেষে ঘাসের দিকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে তিনি কি কেঁদেছিলেন, নাকি স্যার ডনের মাঠকে চুপিচুপি কিছু বলছিলেন? সেসব হয়তো এবার জানা যাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘রাজা’-কে নিয়ে এবার বই লিখছেন ক্রিকেট সাংবাদিক ও লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। জীবনীনির্ভর বইটা প্রকাশ পেলে মাশরাফির অনেক অজানা জানা যাবে নিশ্চয়ই। তাই দেবু দা-কে আগাম একটা ধন্যবাদ দিয়ে রাখি। তিনি সাকিব আল হাসানকে নিয়েও একটি বই লিখেছেন। সাকিবের অনেক অজানাকে জানিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের।

মতি নন্দী খেলা নিয়ে অনেক সাহিত্য রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদারের মনের মতো মন উপন্যাসের নায়ক একজন ক্রিকেটার। কিন্তু সাহিত্যে ক্রিকেট বা খেলাধুলার স্থান খুব কমই হয়। বাংলা সাহিত্যে বলতে গেলে হয়ই না। বাংলা উপন্যাস গল্পের নায়ক খেলোয়াড় হন না। ব্যতিক্রম হুমায়ূন আহমেদ। এই জাদুকরী কথাসাহিত্যিকের একটি গল্পের নায়ক ছিলেন দাবাড়ু। আর সাকিব আল হাসানের নামে ‘ফাউন্টেনপেন’ নামে একটা বই উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। কবি নির্মলেন্দু গুণ ক্রিকেটপাগল, খেলাটা নিয়ে মাঝেমাঝে লিখেন। আনিসুল হককে নিয়মতিই গ্যালারিতে দেখা যায়। কিন্তু তাঁরা কেউ ক্রিকেট বা কোনো খেলা নিয়ে সাহিত্য রচনা করেন নি।

তাই দেবুদা-কে ধন্যবাদ দেয়াই যায়। ক্রীড়া সাংবাদিক মোস্তফা মামুন বেশ কিছু কিশোর উপন্যাস লিখেছেন খেলাকে উপজীব্য করে। উৎপল শুভ্র খেলা কভার করতে গিয়ে তার ভ্রমণবৃত্তান্ত ও সাক্ষাৎকার নিয়ে বই লিখেছেন। শচীন টেন্ডুলকারকে নিয়েও বই আছে তার। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জীবনালোকে বই প্রথম দেবু দা-ই লিখেছেন। এবার লিখছেন সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মাশরাফি মোর্তজাকে নিয়ে।

কথায় কথায় দেবু দা-কে জিজ্ঞেস করি, বাংলাদেশে খেলোয়াড়দের বায়োগ্রাফি প্রকাশের চল নাই ক্যান? তিনি আফসোস করে বলেন, “আসলে সাকিবের আগে ওইরকম স্টার তো আসে নি। আর মাশরাফি হলো বাংলাদেশের ইতিহাসেরই সবচেয়ে নাটকীয় চরিত্র। এই দুজনকে ছাড়া কাউকে নিয়ে একক বই লেখার তাগিদটা টের পাওয়া কঠিন ছিল। হ্যা, সালাউদ্দিন, মুন্না বা রফিককে নিয়ে লেখা যেত। কিন্তু আমি তাদের কনটেম্পরারি নই। ফলে আমার পক্ষে ধারণ করাটা কঠিন ছিল। সালাউদ্দিন ভাইয়ের (ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন) একটা অটোবায়োগ্রাফি বের হয়েছিল মনে হয়। এ ছাড়া তাদের সময়ের কেউ তাড়না টের পান নি।”

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যদি কবিতার সঙ্গে তুলনা করি (যদিও প্রাসঙ্গিক না, মাঝে মাঝে অপ্রাসঙ্গিক হওয়াও খারাপ না), তাহলে মাশরাফি কে হবেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ নাকি অন্য কেউ

কারণটাও বলে দিলেন তিনি, “এটা আসলে বললে খারাপ শোনায়। আমাদের এখানে বই ব্যাপারটার ফিডব্যাক এত খারাপ যে, যারা যোগ্য লেখক তারা পেশাগত ঝামেলা সামলে আবার বই লেখার জন্য, তাও কারো বায়োগ্রাফির জন্য সময় দেওয়ার প্রেরণা পান না। আপনি দুই বছর কষ্ট করে একটা বই করলেন। ফিডব্যাক হিসেবে তিনটে পিঠ চাপড় আর বিশ হাজার টাকা পেলেন। এতে আর যাই হোক, যোগ্যরা আসবেন না। কমার্স ব্যাপারটাকে অবহেলা করে আর্ট হয় না।”

ঠিকই তো! কমার্সকে অবহেলা করে শিল্প এগুতে পারে না। কোনো শিল্পই না। আর বাংলাদেশে মনে হয় লেখকরাই সবচেয়ে অবহেলিত। কবি তো অবহেলিতদের মধ্যে অবহেলিত। মাশরাফি বিন মোর্তজা কবি নন। তিনি সাহিত্য পড়েন না। ক্রিকেটে তাঁকে কখনও অবহেলাও সইতে হয় নি (২০১১ বিশ্বকাপ ছাড়া!)। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যদি কবিতার সঙ্গে তুলনা করি (যদিও প্রাসঙ্গিক না, মাঝে মাঝে অপ্রাসঙ্গিক হওয়াও খারাপ না), তাহলে মাশরাফি কে হবেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ নাকি অন্য কেউ?

দেবু দা-কেই প্রথম জিজ্ঞেস করি। তিনি নির্দ্বিধায় বলে দিলেন কাজী নজরুল ইসলামের নাম, “আমি নজরুল বলতে পছন্দ করব। আঘাত, যন্ত্রণা, দ্রোহ, নেতৃত্ব, আড্ডা, অর্থচিন্তাহীন এবং লুকানো বেদনা বয়ে বেড়ানো—এর সবই কবি নজরুল আর মাশরাফির মধ্যে বিদ্যমান।”

যে পরিমাণ যন্ত্রণা সয়ে মাশরাফি ক্রিকেট নামের কবিতা-গানের জগৎ বিস্তৃত করেছেন, তা নজরুলের সঙ্গে বেশ যায়। তবে আমি মাশরাফিকে ক্রিকেটের জীবননানন্দ দাশ বলব। তিনি জীবনানন্দের মতো বিশুদ্ধ। এই বিষয়ে কবিবন্ধু হাসনাত শোয়েবের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। মাশরাফি কেন জীবনানন্দ, সে বিষয়ে শোয়েব কয়েকটা পয়েন্ট যোগ করে দিয়েছে। পয়েন্টগুলো এমন :

“ধরেন সিম্পলিসিটি। এত বড় মাপের খেলোয়াড়, একদম নির্লিপ্ত। রিক্সায় চড়তে গিয়ে অ্যাকসিডেন্ট করে বসে। জীবনানন্দও তেমন। হাঁটতে হাঁটতে ট্রামের নিচে গিয়ে পড়ে। তারপর ধরেন, দেশের মানুষের কাছে এই দুজনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে দ্বিমত নাই। নিজেদের জায়গায় তারাই সব থেকে বেশি ক্ল্যাসিক এবং পপুলার।”

আমি বলি, আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। শোয়েব বলেন, “একজন কবিতার জন্য সব ছেড়ে দিয়েছেন, পরিবার কষ্ট পেয়েছে। আরেকজন ক্রিকেটের জন্য পা পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন। কবিতার বাঁক পরিবর্তন হয়ছে জীবনানন্দকে দিয়ে; বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁক পরিবর্তন হচ্ছে মাশরাফিকে দিয়ে।”

এই যুক্তিগুলিকে এড়ানো যায় না। তবে ব্যক্তি জীবনানন্দের সঙ্গে মাশরাফির একটা বড় অমিলও আছে। জীবনবাবু নিজের জীবন নিয়ে মাঝেমাঝেই খুব হতাশ হয়ে পড়তেন। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক কখনও হতাশ হন না।

জীবনানন্দের সঙ্গে মাশরাফির আরেকটা মিল সাহস ও স্বাতন্ত্র্যে। কবি জীবনানন্দ তাঁর কাব্যভাষা সমসময়ে তেমন গৃহীত হয় নি জেনেও নিজস্বতা থেকে সরে আসেন নি। নিজের মতো করে লিখে গেছেন। মাশরাফিও ঠিক তেমনি সাহস করে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যেখানে নেবার স্বপ্ন দেখেছেন, তাঁর আগে তেমনটা আর কেউ পারেন নি।

‘বোধ’ কবিতায় জীবনানন্দ দাশ যে সহজ মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন, মাশরাফি মোর্তজা যেন সেই সহজ মানুষ। ‘সহজ মানুষের মতো কে চলিতে পারে!’ মাশরাফির মতো কে চলতে পারেন? কেউ না। বনলতা সেন কবিতার নাবিক অতিদূর সমুদ্রের পর দিশা হারানো। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নাবিক মাশরাফি দিয়েছেন নতুন এক দিশা। যে দিশায় নিশ্চিন্তে চলছে এ দেশের ক্রিকেটতরী।

মাশরাফি আমাদের উইলিয়াম ব্লেকও বটে। তাঁর কারণেই তো আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ব্লেকের সেই কবিতা ‘টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট…’।

অধিনায়ক মাশরাফির প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আর আস্থা কতটা, তা স্পষ্ট হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষারের একটি দীর্ঘ ফেইসবুক স্ট্যাটাসে। সেই স্ট্যাটাসের চুম্বক অংশ এরকম, “হয়তো এভাবে নিজের হাঁটু দুটোকে অত্যাচার করার ফলে মাশরাফিকে আরো অনেক বেশি ভুগতে হবে। কিন্তু তিনি আমাদের এই দেশের হতাশ প্রজন্মকে বিশ্বাস করিয়ে দিতে পেরেছেন—বিশ্বাস থাকলে, পরিশ্রম করলে, লেগে থাকলে শ্রেষ্ঠত্বের দিকে যাওয়া যায়। ধাপে ধাপেই সাফল্য আসে, একদিনে না। ভবিষ্যতে এদের চেয়েও উজ্জ্বল খেলোয়াড়রা আসবে। আরো জয় আসবে। কিন্ত এই মহত্ত্ব আর শ্রেষ্ঠত্বের সংগ্রামের সময়টি আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভবিষ্যৎ সেটা দেখতে পাবে না। দর্শক হিসেবে আমরা ভাগ্যবান। আমরা একটি দলের সেরা হয়ে ওঠার সঙ্গে আছি।”

ক্রিকেটের বাইরের অনেক কিছুও দেখি, শুনি, চুপ থাকি, কাজ করি। অনেকের কাছাকাছিও গেছি বা যাই, কথা বলি। কিন্তু একজনের কাছে যেতে আমি ভয় পাই! ভয়টা শ্রদ্ধা, সম্মান আর দ্বিধামিশ্রিত। তিনি মাশরাফি বিন মোর্তজা

এই যে শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার সঙ্গে থাকতে পারা, মাশরাফি বিন মোর্তজা অধিনায়ক না হলে তা সম্ভব হতো না। আচ্ছা, তিনি কি শুধুই ক্রিকেটের প্রেরণা? মোটেই না। ব্যক্তি মাশরাফি হতে পারেন যে কোনো মানুষের আদর্শ। উদাহরণের জন্য আবারও ফেইসবুক ও দেবু দা প্রসঙ্গে আসি। ক’দিন আগে তার একটা ফেইসবুক স্ট্যাটাস ছিল এরকম এক লোক কয়, শেয়ার বাজারে তার তিন লাখ টাকা লস হইছে।
জিজ্ঞেস করলাম, কত ইনভেস্ট করেছিলেন?
—আশি হাজার টাকা।
—এখন আছে কত?
—এই লাখ দেড়েক!
—তাহলে তিন লাখ টাকা লস হলো কেমন করে!
—দর বেড়ে এক সময় সাড়ে চার লাখ হইছিল না? তখন বেচলে তো ওটা পাইতাম। সেখান থেকে তিন লাখ কমে গেছে।

জীবনের হিসাবটা, ক্রিকেটের হিসাবও আমাদের শেয়ার বাজারের মতো। কোথা থেকে লাভ গোনা শুরু করি, তাই বুঝে উঠতে পারি না। সবটাই পাওনা ছিল বলে মনে হয়!

মাশরাফিকে বলছিলাম, ‘তোমার জুনিয়র অনেক ক্রিকেটার তোমার দশ গুণ ধনী।’
মাশরাফি ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘আমার সিনিয়র অনেক মানুষ যে আমার চেয়ে দশ গুণ গরীব, সে খেয়াল আছে? শুধু ধনীদের হিশাব করেন কেন! হিশাবের নেশা খুব খারাপ।’

এই হলো মাশরাফি বিন মোর্তজার দর্শন। তাঁর অনেক জুনিয়র ক্রিকেটার অর্থের দিক দিয়ে ধনী। পরিবারের লোকজন গাড়ি নিয়ে যাওয়ায় তিনি রিক্সা করেই স্টেডিয়ামের উদ্দেশে রওনা দেন। সেই রিক্সাকে ধাক্কা মারে একটা বাস। আহত হয়েও জনতার রোষানলের হাত থেকে বাস চালককে নিজেই বাঁচান। বাংলাদেশ দলের অন্য কোনো তারকা ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এসব আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। অন্যদের নিয়ে যা কেউ কল্পনাও করতে পারেন না, মাশরাফি সেগুলোই বাস্তবে করেন। কারও কারও অনেক ধরনের ব্যবসাপাতিও আছে। সেটা অবশ্য দোষের না। কিন্তু মাশরাফি ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে রুটিরুজির চিন্তা খুব কমই করেছেন। কাছের মানুষদের অনুরোধ ফেলতে না পেরে কিছু কিছু ব্র্যান্ডের পণ্যদূত হয়েছেন। মাশরাফি ব্যাংক ইন্টারেস্ট নেন না। সরাসরি তাঁর আয় না, এমন পরোক্ষ অর্থ তিনি স্পর্শ করেন না।

এমন একজন মানুষকে ভালো না বেসে থাকা যায়? শ্রদ্ধা না করে উপায় আছে? একটা ব্যক্তিগত কনফেশান প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে পেশার খাতিরে মিরপুরে হোম অব ক্রিকেটে যাই। বলা ভালো, যেতে ভালোবাসি। ক্রিকেটের তারকা-মহাতারকাদের দেখি, উঠতিদের দেখি। ক্রিকেটের বাইরের অনেক কিছুও দেখি, শুনি, চুপ থাকি, কাজ করি। অনেকের কাছাকাছিও গেছি বা যাই, কথা বলি। কিন্তু একজনের কাছে যেতে আমি ভয় পাই! ভয়টা শ্রদ্ধা, সম্মান আর দ্বিধামিশ্রিত। তিনি মাশরাফি বিন মোর্তজা।

তিনি ছোট-বড়, নবীন-প্রবীন, তারকা-অচেনা সকল সাংবাদিকের সঙ্গে একই আচরণ করেন। সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলেন, ছবি তোলার আবদার মেটান। তারপরও কাজ ছাড়া আমি কখনও তাঁর খুব কাছে যাই নি, কোনো আবদার করি নি। ওই যে ভয়, ভালোবাসা আর সম্মান! খুব শ্রদ্ধাশীল কাউকে দূর থেকে ভালোবাসা প্রকাশ করাই মনে হয় উত্তম। ভয় আর দ্বিধাটা হলো, যদি কোনো ভুল আচরণ করি—কোনোভাবে যদি অসম্মান হয়ে যায়! দেখা হলেই মনে মনে একটা স্যালুট দেই তাঁকে। দুটি ইচ্ছা আছে আমার। একদিন সামনাসামনি তাঁকে স্যালুট করব। আর একটা ছবি তুলে রাখব তাঁর সঙ্গে। না হলে এ জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার ব্র্যাডম্যান-শেন ওয়ার্ন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোবার্স-রিচার্ডস-লারা-মার্শাল, নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি, পাকিস্তানের ইমরান-ওয়াকার-ওয়াসিম, ভারতের টেন্ডুলকার-দ্রাবিড় আছেন, অনেক গ্রেটকে পেয়েছে ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো। কিন্তু মাশরাফির মতো একজন তাদের নেই। পরিসংখ্যান আর রেকর্ডে সমৃদ্ধ অনেক গ্রেট ক্রিকেটার পেয়েছে পৃথিবী, আরো পাবে। প্রায় দেড়শ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে এমন চরিত্রের ক্রিকেটার আর আসে নি। হয়তো ভবিষ্যতেও আসবে না। মাশরাফি এক ও অনন্য।

রুহুল মাহফুজ জয়
২৪.০৬.২০১৫
জন্ম ৩১ মার্চ ১৯৮৪ (ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ।) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক।
পেশা : সাংবাদিকতা।

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...