Skip to main content

কিরামিষ

অষ্টাদশী এক কন্যাকে বিবাহ করিয়াছি। কথাখান কিঞ্চিত রেশ মারিয়া বলিবার কারণ, বধূ হইলো কিরামিষ! 

জ্বী হ্যাঁ কিরামিষ! নাম টা আমি দিয়েছি। কিরামিষ হল সেটাই, যা আমিষ ও নিরামিষ দুটোর একটার পর্যায়েও পরে না। 
কালকে রাগ করে বলেছিলাম,
  - ব্যাঙ রান্না করে আনো, খাই।
  - আচ্ছা।
ভেবেছিলাম এমনিই বলেছিলো কিন্তু সে তাই করলো। আজ বাসায় ফিরে দেখি ব্যাঙ রান্না করে রেখেছে। আমি বললাম,
  - কালকে আমি রাগ করে বলেছিলাম আনিকা!
  - আপনার কাজের মাঝে আমি বিরক্ত করেছিলাম। তাই রাগ করে বলবেন না তো কী হাসি মুখে বলবেন?
কথা টা বলার পরে ও ব্যাঙের বাসন টা সরিয়ে নিলো! বললাম,
  - কি ব্যাপার? রাগ করে বলেছিলাম বলে কী খেতে পারবো না?
  - কেনো পারবেন না? আপনার জন্যই তো রান্না করেছি।
বলে আবার বাসন টা সামনে দিলো। দেখলাম ব্যাঙকে আর ব্যাঙ রাখেনি। পুরো মুরগীর রোস্ট বানিয়ে ফেলেছে! কিভাবে রান্না করেছে আল্লাহ্‌ মালুম! একটু মুখে নিয়ে দেখলাম, নাহ বেশ ভালোই হয়েছে। তবুও বললাম,
  - রান্না টা বাজে হয়েছে খুব আনিকা।
  - বাজে হবে না? আমি তো রান্নাতে তেলই দেইনি।
  - কিহ? তেল ছাড়াই এতো ভালো ব্যাঙের ভাজি? সত্যি বলতে খুবই সুস্বাদু হয়েছে আনিকা।
  - সুস্বাদুই তো হবে। রান্নাটা আমি করেছি না?
  - কচু খাও।
  - আসলেই আমার কচু খাওয়া উচিত।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ব্যাঙের ভাজি খেয়ে নিজেকে উদ্ধার করলাম। এই মেয়েটাকে আল্লাহ্‌ কি দিয়ে বানিয়েছে তা আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন। এক ফোটা রাগও নেই গায়ে।

সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব। আমি তৈরি হয়ে বসে আছি। এক বন্ধুর বিয়েতে যেতে হবে। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হচ্ছে। আধঘণ্টা পর দরজা খুলে আনিকা বলল,
  - আচ্ছা আমি কী পরবো?
মেজাজটা গেলো খারাপ হয়ে। ও কাপড় পরবে বলে আমাকে বাইরে বসিয়ে রেখেছে। এখন আধঘণ্টা পর দরজা খুলে বলছে কী পরবে! রেগে গিয়ে বললাম,
  - পাঞ্জাবি পায়জামা পরে আসো।
  - আচ্ছা তাহলে আলমারি থেকে আপনার পাঞ্জাবি পায়জামা বের করে নিই।
  - উফ।
  - পরবো না? আচ্ছা থ্রী-পিচ পরি?
  - আচ্ছা।
  - ধুর, বিয়েতে কেউ থ্রী-পিচ পরে যায় না কী? শাড়ি পরি।
  - আচ্ছা।
  - না, শাড়ি আমি ঠিকমত সামলাতে পারি না। কেমন কেমন জানি লাগে।
  - বোরকা পরো।
  - বোরকা তো সব লন্ড্রিতে।
  - তাহলে কিছু না পরেই আসো যাই।
  - ছিঃ কী লজ্জার কথা।
  - তোমার পায়ে পড়ি। দয়া করে কিছু একটা পরে আসো। সময় হাতে খুব অল্প আছে।

অনাকাঙ্ক্ষিত সময় যাবার পর মহারাণী তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা।
  - আনিকা।
  - হুঁ।
  - সিএনজিতে যাবো আমরা?
  - সিএনজিতে যাবো না তো কী রিকশা দিয়ে যাবো? আমাদের হাতে তো সময় কম তাই না?
  - না আসলে আমি ভাবছি আমরা রিকশা দিয়েই যাই কেমন?
  - অবশ্যই, রিকশা দিয়েই আমাদের যাওয়া উচিৎ। একটা রোমান্টিক রোমান্টিক ব্যাপার আছে না রিকশাতে?
  - তুমি দয়া করে কোনো কথাই বলো না।
  - সেটাই তো, আপনি থাকতে আমার কিসের কথা?
  - আচ্ছা বিমান দিয়ে গেলে সবচেয়ে কম সময় লাগতো না? চলো বিমান দিয়েই যাই?
  - আমিও তাই ভাবছি। যদিও আমি বিমান খুব ভয় পাই। ওরে বাবা! কত উপর দিয়ে যায়। তবুও তো হাতে সময় নাই। চলেন বিমান দিয়েই যাই।
  - তুমি মরো না কেন? বিমানবন্দর ছাড়া তুমি বিমান পাবে কোথায় এখন?
  - আসলেই তাই। বিমানের পাইলটের তো খেয়েদেয়ে কাজ নাই। এই রাস্তায় নামবে আমাদের নিতে?
  - আল্লাহ্‌।
ওর সাথে আর কথা বাড়ালাম না। তাহলে আর বিয়েতেই যাওয়া হবে না। একটা সিএনজি ভাড়া করে বিয়েতে আসলাম।

চারিদিকে কত রমণীর আনাগোনা। বিয়ের দিনে তাঁদের যেন অতিরিক্ত সুন্দরী লাগে সাজুগুজুর কারণে। আমি আনিকার সামনে সামনে থেকে শুধু মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছি।দেখি আনিকা আমাকে মানা করে কী না। কিন্তু সে আছে কোন খেয়ালে আল্লাহ্‌ জানে। অবশেষে একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখিয়ে আনিকাকে রাগানোর চেষ্টা করে বললাম,
  - আনিকা, ঐ যে সবুজ শাড়ি পরা মেয়েটা দেখছো না? ও আমার এক্স।
  - এক্স কি?
  - এখন এক্স কি সেটাও বুঝাতে হবে! এক্স মানে হচ্ছে প্রাক্তন।
  - ওহ ভালো। মেয়েটাতো দেখতে বেশ সুন্দরী। প্রাক্তন করলেন কীভাবে?
  - প্রাক্তন মানুষ করে না আনিকা। আচ্ছা ভালো করে শুন, আমি বিয়ের আগে ঐ মেয়েটার সাথে প্রেম করতাম।
  - অবশ্যই প্রেম করবেন। কেন আপনার কি প্রেম করার অধিকার নেই?
  - আমি পানি খাব আনিকা।
  - অবশ্যই পানি খাবেন। পানি স্বাস্থ্যের জন্য অতি উত্তম।

এক গ্লাস পানি পান করার পরে দুজনে একটু বিয়ের অনুষ্ঠান টা ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য হাঁটাহাঁটি করছি। এক ফাঁকে বললাম,
  - আনিকা।
  - হুঁ।
  - তুমি বিয়ের আগে প্রেম করোনি?
  - না। কেন জানি সব ছেলেরা আমার সাথে একদিন কথা বলেই আর কথা বলতে আসত না।
  - কথা বলতে আসত যে ওটাই বেশি ছিলো।
  - আসলেই, আমার সাথে কেনো কথা বলতে হবে? আমি তো তাঁদের কেউ হই না, তাই না?
  - চুপ।
আনিকা সত্যি সত্যিই চুপ হয়ে গেলো। এতে আমি অবাক হইনি। তাকে যা বলা হয় সে যথাসাধ্য তাই করার চেষ্টা করে। হঠাৎ ও গলা বাড়িয়ে বললো,
  - কিন্তু এখন একটা ছেলেকে ভাল লাগে।
বুকের ভিতর টা নাড়া দিয়ে উঠল। বলে কি!
  - কি বল? সে কে? কতদিন ধরে ভালো লাগে?
  - হ্যাঁ, ঐ যে পাশের বাসার পুচকু আরিবকে। ওর তো সাত বছর। কিন্তু আমি মাত্র সাত মাস ধরে চিনি।
  - মরে যাও।
আনিকা দেখি হাঁটতে হাঁটতে দালানের এক পাশে চলে যাচ্ছে।
  - কই যাও?
  - লাফ দিবো, মরতে হবে না?
  - আল্লাহ্‌! আমি এমনিই বলেছি। আমার সব কথা তোমাকে শুনতে কে বলেছে?
আনিকা মনে মনে চিন্তা করলো বোধহয়, আসলেই তো! 

খাওয়ার টেবিলে সবাই। নানারকম খাবার আমাদের সামনে রাখা হলো। আনিকা এক লোকমা ভাতও মুখে দিচ্ছে না! শুধু শরবত পান করে যাচ্ছে। একের পর এক।
  - আনিকা, করছ টা কি? লোকজন কী বলবে বল তো? ভাববে জীবনেও শরবত খাওনি।
  - এত শরবত খেলে তো মানুষ তা ভাববেই।
  - তাহলে চুপ করে একটু একটু করে সব খাও।
বলতে দেরি আর তার করতে দেরি হল না। একটু একটু করে সব খাচ্ছে। এমনকি অন্য জনের জন্য আনা তরকারিও হাত দিয়ে এঁটে এনে মুখে নিয়ে একটু চুকে নিচ্ছে! কয়েকজন লোক আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। আমি ভদ্রলোকসুলভ একটা হাসি দিয়ে আনিকাকে নিয়ে বাইরে চলে আসি।

রাত বারোটা। শুতে এসে মনে হলো লুঙ্গি পরিনি। আনিকা সেটা খেয়াল করে বললো,
  - লুঙ্গি পরেননি যে?
  - প্যান্ট পরে ঘুমাব আজ থেকে।
  - আসলেই, প্রত্যেকদিন লুঙ্গি পরে ঘুমানোর কী দরকার?
  -  লুঙ্গি ছাড়া যে আমার ঘুম হয় না।
  - হবেই তো না। এতদিনের অভ্যাস কী ভুলা যায়?
  - ভাবলাম আজকে প্যান্ট পরেই ঘুমাই।
  - আমিও তাই বলি। প্যান্ট পরে ঘুমানোর স্বাদটাও একটু টেস্ট করেন।
  - আনিকা আমি কিছুই পরে ঘুমাব না।
  - আপনার কিছু পরে ঘুমানোর কি দরকার? রুমে তো আমি আর আপনিই থাকি।
  - আমি ঘুমাবই না।
  - আমারও তাই মনে হয়। যান, বিছানা থেকে উঠে বাইরে চলে যান।
  - বাতি নিভাও তো।
আনিকা সুবোধ বালিকার মতো কথা শুনলো। 

দীর্ঘ চার বছর পর। আনিকার কোলে ফুটফুটে একটা বাবু। হ্যাঁ একটাই। এই চার বছরে আনিকার সম্পর্কে জানার মতো কিছু নেই যে অজানা আছে আমার। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওকে কোনদিন কোনভাবে রাগাতে পারিনি। আজকে ভোরে উঠে বসে আনিকাকে ডাক দিলাম।
  - আনিকা।
আনিকা উঠে বসতেই আর কোনো কথা নেই। ওর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলাম। এমন জোরে থাপ্পড় কেউ কোনো শত্রুকে ও দেয় না! কষ্ট অনুভূত হলো। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার ও কোনো পতিক্রিয়া না করে বললো,
  - আস্তে মারবেন না? বাবু উঠে পরবে তো।
দুঃখে আমার চোখে পানি চলে আসলো! ওর গালে হাত বোলাতে শুরু করলাম। ও হঠাৎ বলল,
  - অনেক ব্যথা লেগেছে গালে।
  - একটাবার জিজ্ঞেস করবে না যে, কেনো থাপ্পড় মারলাম?
  - এত জিজ্ঞেস করার কী আছে? শখ করে দিয়েছেন বুঝেছি।
  - মরে যাও।
  - না, শুনেন আমি আপনাকে তুমি করে বলবো।
  - বলো, সমস্যা কী?
  - কিন্তু আমার লজ্জা লাগে।
  - তাহলে থাকুক।
  - খুব মন চাচ্ছে যে।
  - মানা করছে কে?
  - কেমন জানি লাগে যে।
  - মাফ চাই, তোমার কিছুই ডাকা লাগবে না আমাকে।
  - না আমি তুমি করে বলবো।
  - আচ্ছা।
  - না থাক, পুরান হয়ে নেন আগে।
আমার মুখে আর কোনো কথা নেই। দুঃখে শুধু চিৎকার দিতে মন চাচ্ছে!

লেখাঃ সিয়াম আহমেদ জয়

© মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...