১.
- ওই বছির!
ডাক শুনে বছির ভাই পেছনে তাকালেই বললাম,
- ভাই কেমন আছেন?
- তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি করো?
- আপনি আমার শালা না বিয়াই যে আপনার সাথে ফাজলামি করবো?
- আমি তোমার সিনিয়র। মাইন্ড ইট।
- এইটা রাস্তা, অফিস না। আরেক বার সিনিয়র সিনিয়র করবি তো ঠুয়াইয়া পাগল কইরা দিমু। আর একদিন খালি অফিসে কোন অর্ডার দিয়া দেখিস। অফিস থেকে বের হয়ে পা ভাইংগা লুলা কইরা দিমু।
বছির ভাই আর কিছু বললেন না। মাথা নিচু করে হেটে গেলেন। নতুন অফিসে আমি সবচেয়ে বেশী অপছন্দ করি এই বছির ভাই নামক লোকটাকে। কারণ তার সিনিয়র গিরির জ্বালায় আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। অফিসে ঢুকেই আমাকে বলবে,
- শুভ সাহেব, এক গ্লাস পানি দিন।
এরপর বলবে, "স্টাপলার দিন।" এরপর হয়তো বলবে, "ক্যালকুলেটর দিন।" এরকম জানা ধরণের ফরমায়েশ সারাদিন দিতেই থাকবে। মাঝে মাঝে তো বলবে, "টিস্যু দিন তো নাক মুছবো।"
আমি তার জুনিয়র কিন্তু তার অ্যাসিস্ট্যান্ট না। এই জিনিসটা সে কখনো বুঝে না। তাই আজ বাইরে পেয়ে থ্রেট দিয়ে দিলাম।
২.
অফিসে নিজের ডেস্কের সামনে গিয়ে আর বসতে ইচ্ছে করে না। পাশের ডেস্কের ললিতা আপা একটু একটু করে আমার ডেস্কের অর্ধেক দখল করে ফেলেছে।
ডেস্কের উপর থাকা একটা জরাজীর্ণ ময়লা কাপড়ের টুকরো বাম হাতে তুলে ললিতা আপাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- ললি আপা এইটা কি?
- আমার রুমাল। ঠাণ্ডা লেগেছে তো। নাক মুছার জন্য ব্যবহার করি।
- গুড। ঠাণ্ডা লেগেছে আপনার। নাক আপনার। রুমাল আপনার। আমার ডেস্কে কি করে?
- ইয়ে মানে স্যরি।
স্যরি বলে ললিতা আপা আমার হাত থেকে তার রুমালটা নিলেন। এবার ডেস্কের উপর পরে থাকা ব্যবহৃত টিস্যু বাম হাতে তুলে বললাম,
- ললি আপা এইটা কি ? "
- ইয়ে মানে টিস্যু। ঘাম মুছার জন্য।
- গুড। ত্বক আপনার। ঘাম আপনার। টিস্যু আপনার। আমার ডেস্কে কি করছে?
- ইয়ে মানে স্যরি।
আমার হাত থেকে টিস্যুটা নিলেন ললিতা আপা। এবার ডেস্কের উপর থাকা লেডিস ভ্যানিটিব্যাগটা দেখিয়ে বললাম,
- এই মালটা কার ? "
- আমার।
- গুড। আপনার কি মনে হয় না আমি মানুষ? এখানে বসে কাজ করি। নাকি মনে হয় আমি আপনার রুমাল, টিস্যু আর ব্যাগ পাহারা দেবার জন্য ডেস্কে বসে থাকি?
পুনরায় স্যরি বলে ললিতা আপা তার ভ্যানিটিব্যাগটা নিচে নামিয়ে রাখলেন। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
- নিজের অফিসের কলিগ নানা অজুহাতে ডেস্কের অর্ধেকটা দখল করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে ভাবি বর্ডার থেকে যদি কিছুক্ষণের জন্য বাংলার জোয়ানদের সরিয়ে নেয়া হয়; তাহলে দেশটার কতোটুকু দখল হতে বাকী থাকবে?
ললিতা আপা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলেন। নতুন অফিসে জয়েন করে আমি একটা জিনিস বুঝলাম। তা হলো সিনিয়ররা শুধুই সিনিয়র। তারা মানুষ নন।
৩.
ঘড়ির কাটায় পাঁচটা বাজতেই আমি ডেস্ক থেকে উঠে দাঁড়ালাম বের হবো বলে। যথারীতি বছির ভাই ডাক দিলেন। সকালে ঘটনার পর অবশ্য সারাদিন কোন ফরমায়েশ দেন নি। এখন কেনো ডাক দিলেন বুঝলাম না।
- বলেন বছির ভাই।
- কই যান?
- বাসায়। পাঁচটা তো বাজে।
- পরে যান। দেখেন না আমি কাজ করতেছি।
সে কাজ করলে আমাকে থাকতে হবে কেনো বুঝলাম না। প্রচণ্ড রাগে দাঁত কামড়ে জবাব দিলাম ওকে। কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। সাড়ে পাঁচটার সময় বছির ভাই বললেন,
- শুভ সাহেব। চলেন বের হই।
আমি বছির ভাই এর কাছে গিয়ে বললাম,
- আপনার মানিব্যাগটা দেন তো ভাই।
- কেনো?
- আহা দেন না।
বছির ভাই তার মানিব্যাগ বের করতেই আমি ছোঁ মেরে নিয়ে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে নিলাম। তারপর মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে বললাম,
- নেন।
- তুমি টাকা নিলে কেন?
- রোজার প্রথম দিন নোটিশ দিছিলেন - পাঁচটার পর অফিসে থাকতে হলে কোম্পানি ইফতার বিল আর কনভেন্স দিবে। তাই ইফতারির জন্য পাঁচশো। আর সিএনজি ভাড়া বাবদ পাঁচশো টাকা নিলাম। আপনি ম্যানেজন্টের কাছ থেকে বিল করে নিয়েন।
আমার কথা শুনে বছির ভাই হা করে তাকিয়ে রইলেন। তাতে অবশ্য আমার কিছু আসে যায় না। আমি তখন অন্য চিন্তায় ব্যস্ত। বাসায় যেয়ে সিভিটা আবার আপডেট করতে হবে। সারাদিন যা করেছি এরপর আর চাকরী থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। নতুন চাকরী খুঁজতে হবে আজ থেকে।
তবে সমস্যাটা অন্যখানে। সব অফিসেই কিছু বছির ভাই আর ললিতা আপা রয়েছে। তাদের এই সকল অফিশিয়াল প্যারা থেকে দূরে থাকবো কি করে?
® মোঃ শামীম শিহাব
( সমস্ত গল্প, ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই।কোন অংশ বা পুরো গল্প এবং কোন চরিত্র কোন ব্যক্তি বা কোন ঘটনার সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়। শুকরিয়া। )
Comments
Post a Comment