Skip to main content

ব্যাক টু কবর

এক সকালে জন ও'রুক নিজেকে আবিষ্কার করল শহরের ব্যস্ত এলাকার রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। বিভ্রান্ত চোখে দোকানপাট, গাড়ি-ঘোড়ার দিকে তাকাচ্ছে সে। বুঝতে পারছে না, সে এখানে কেন এসেছে এবং কোথায় যাচ্ছে। যেন এইমাত্র স্বপ্নের জগতে ফিরে উঠেছে জন, ঢুকছে বাস্তব দুনিয়ায়।

রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়াল জন। তাকাল মাথার ওপরে সকালের উজ্জ্বল সূর্যের দিকে। রোদে চোখ ধাঁধিয়ে গেল তার, মাথায় খচ করে বিঁধল তীক্ষ্ণ ব্যথার ছুরি। কপালে হাত দিয়ে আলোটা আড়াল করল ও, চোখ পড়ল হাতে লাল ফুটকি লেগে আছে। অদ্ভুত তো! ভাবল জন, ফুটকিগুলো যেন শুকিয়ে যাওয়া রক্তবিন্দু।

হঠাৎ খুব দুর্বল লাগল জনের, ফুটপাতে বসে পড়ল। ওর কী হয়েছে ভাবার চেষ্টা করল। কয়েক সেকেন্ড পরে একটা গাড়ি হুশ করে পাশ কাটাল ওর। আর একটু হলে ধাক্কা খাচ্ছিল। ঝট করে পেছন দিকে হেলে গেল জন, লাফ মেরে সিধে হওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু শরীরে এমন ব্যথা, খাড়া হতে রীতিমতো কসরৎ করতে হলো। কাপড় থেকে ধুলো ছাড়ল জন। লক্ষ করল সে তার সেরা সুট এবং জুতো পরে আছে। কোর্টের আস্তিন গোটাল ঘড়ি দেখার জন্য। কিন্তু কব্জিতে ঘড়ি নেই। আশ্চর্য তো! জন ও'রুক কখনোই ঘড়ি খোলে না। এমন কী ঘুমাবার সময়ও না। একটু পরপর সময় দেখা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

নিজেকে ওর মনে হচ্ছে হারিয়ে গেছে। শহরের মাঝখানে সে করছেটা কী? এখন ক’টা বাজে? উদ্দেশ্যহীনভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগল জন। সামনে, ফুটপাথে এক মহিলাকে দেখে চিনতে পারল ও। তার অফিসে কাজ করে মহিলা। মহিলার পেছনে হেঁটে গেল জন, টোকা দিল কাঁধে।

- মাফ করবেন, মিসেস এন্ডারসন, এখন ক’টা বাজে বলতে পারবেন? আমার ঘড়ি নেই সঙ্গে।

ওর কণ্ঠ শুনে সাঁই করে ঘুরল মহিলা। জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বিস্ফারিত হয়ে উঠল চোখ। তারপর আর্তচিৎকার দিয়েই ছুটল সে। ফুটপাতে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকল জন। দেখছে পলায়নরত মহিলাকে। মহিলা ওকে দেখে এমন ভয় পেল কেন বুঝতে পারছে না। ওর চেহারায় কি ভীতিকর কোনও ব্যাপার আছে? মুখে হাত বুলাল জন। কপালটা আলুর মতো ফুলে আছে। আবার হাতে লাল ফুটকি দেখতে পেল ও।

ঘুরল জন। চলল ফুটপাত ঘেঁষা বড় কাঁচের জানালাওলা দোকানের দিকে। জানালার কাঁচে ওর প্রতিবিম্ব ফুটল। সকালের আলোয় ভুতুড়ে লাগল। জনের কপালে একটা অদ্ভুত দাগ, মুখখানা কাগজের মতো সাদা, পরনের শার্ট কোঁচকানো।

জন রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। বাসায় যাচ্ছে। ওখানে সে দুই বেডরুমের ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকে সস্ত্রীক। ওদের সন্তান নেই। কারণ জন কখনোই বাবা হতে চায়নি। সন্তান মানেই ঝামেলা, কাজে বাধার সৃষ্টি। এজন্য জন বাচ্চাকাচ্চা নিতে দেয়নি তার স্ত্রীকে। কাজে দেরী হওয়া সে মোটেই সহ্য করতে পারে না।

এখন, কী কারণে জানে না জন। মনে হচ্ছে খুব জরুরী একটা কাজে দেরী হয়ে যাচ্ছে তার। ওর স্ত্রী বলতে পারবে কাজটা কী। সে জনের জন্য সুস্বাদু গরম নাস্তা নিয়ে অপেক্ষা করছে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, একটুও খিদে লাগছে না জনের।

এমন সময় একটা বাস ওর পাশ কাটাচ্ছে, জানালার দিকে তাকাল জন। দেখল ওর দিকে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে আছে ওদের পড়শীর ছোট মেয়ে লুসি পার্কার। জন মেয়েটিকে লক্ষ্য করে হাত তুলল। মুখ হাঁ হয়ে গেল লুসির, তবে সে হাসছে নাকি চিৎকার করছে ঠিক বুঝতে পারল না জন। তবে বাসের জানালায় সব ক’টা বাচ্চা যে ওর দিকে ভয়ে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে তা বেশ বুঝতে পারল সে ওদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকল। চলে গেল বাস।

জনের পা আর চলতে চাইছে না। যদি কোনও সহৃদয় ড্রাইভার পেত তাকে অনুরোধ করত বাড়ি পৌঁছে দিতে। রাস্তার মোড়ে একটা স্পটলাইটে হেলান দিল জন, তাকাল রাস্তায়। দূর থেকে একটি গাড়ি আসছে। উজ্জ্বল, হলুদ রঙের। গাড়িটি দেখেই চিনতে পারল জন। ওর সেক্রেটারির গাড়ি। মেরুদণ্ড টানটান করল জন, হাত নাড়তে লাগল। স্পটলাইটের বাতি জ্বলে উঠল লাল হয়ে। থেমে গেল গাড়ি। কিন্তু জনের সেক্রেটারি মিস স্পেনসার তার বসকে লক্ষ্য করেনি। গাড়ি থামার ফাঁকে সে রূপচর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে।

জন হেঁটে গাড়ির পাশে চলে এল, প্যাসেঞ্জার সাইডের দরোজা খোলার চেষ্টা করল। বন্ধ। জানালায় আঙুলের গাঁট দিয়ে টোকা দিল সে। উঁকি দিল মিস স্পেনসারের দিকে। ফিরে চাইল সেক্রেটারি। নির্জলা আতঙ্ক ফুটল তার চেহারায়। স্টিয়ারিং হুইল চেপে ধরল সে, চাপ দিল গ্যাস পেডালে। ট্রাফিকের বাতি তখনও সবুজ হয়নি, কিন্তু গাড়ি নিয়ে ঝড়ের বেগে সামনে বাড়ল মিস স্পেনসার। ছিটকে রাস্তায় পড়ে গেল জন।

অফিসে ফিরেই মিস স্পেনসারের চাকরি নট করে দেবে, কসম খেল জন। উঠে পড়ল রাস্তা থেকে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে ফিরে এল ফুটপাথে। তীব্র যন্ত্রণায় ফেটে যেতে চাইছে মাথা। হাত কাঁপছে। চামড়াটা বিবর্ণ, ফ্যাকাসে এবং শুকনো।

টলতে টলতে একটা দোকানের সামনে চলে এল জন ওরুক। তাকাল আয়নায়। তার গর্তে ঢোকা চোখের চারপাশে গভীর কালি, ঠোঁট জোড়া রক্তশূন্য, হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু নড়ল না ঠোঁট। কপালের ভীষণ ক্ষতটার মতোই নীলচে ওর গায়ের চামড়া।

একটা ভয় গ্রাস করল জনকে, আতঙ্ক ঘিরে ধরল। কাজে যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে। যার সঙ্গেই অ্যাপয়েনমেন্টটা করা হোক না কেন, মিস করা যাবে না কিছুতেই।

আয়নায় একটা ফোনবুথের প্রতিবিম্ব ফুটে আছে। ওই তো জবাব পাওয়া গেছে। জন তার স্ত্রীকে ফোন করবে। বলবে এখানে এসে তাকে নিয়ে যেতে। স্ত্রী ক্যালেন্ডার চেক করে দেখলেই বুঝতে পারবে কার সঙ্গে কাজের সিডিউল আছে তার স্বামীর। আড়ষ্ট পা নিয়ে ঘুরল জন, চলল ফোনবুথের দিকে। দরজা খুলে ঢুকে পড়ল ভেতরে। পেছনে বন্ধ করে দিল দরজা। এক মুহূর্তের জন্য ক্লস্ট্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত হলো সে। মনে হলো বন্ধ ফোনবুথ তার দম বন্ধ করে দিচ্ছে। বুথটি এত সরু, কফিনের মতো।

কয়েনের জন্য পকেট হাতড়াল জন। খালি। মেঝেতে চকচক করে উঠল কী যেন। ঝুঁকল জন। একটা মুদ্রা। ফোন করতে আসা কারও পকেট থেকে পড়ে গেছে নিশ্চয়। সে কয়েনটা স্লটে ঢোকাল। বাড়ির নাম্বারে ডায়াল করল।

প্রথম রিংটা মনে হলো অনেক দূর থেকে হচ্ছে। জনের নিঃশ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে। ছোট ফোনবুথের বাতাসই যেন ঢুকছে না। দ্বিতীয় রিং হলো। জনের স্ত্রীর দ্বিতীয় রিং হবার পরে সাধারণত ফোন ধরে। কিন্তু সে ফোন ধরছে না।

ফোন বুথে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না জন। সে দরজার হাতলের দিকে হাত বাড়াল। এমন সময় ফোন লাইনের ওপর পাশে ক্লিক করে শব্দ হলো। কেউ তুলেছে রিসিভার। অচেনা নারী কণ্ঠ সাড়া দিল।
- হ্যালো?
-অ...ইয়ে মিসেস রুক আছেন?
হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল জন। মহিলা চুপ করে থাকল এক মুহূর্তের জন্য। তারপর জবাব দিল,
-জি না। মিসেস রুক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে গেছেন। আপনি জানেন না? তাঁর স্বামীর দুইদিন আগে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন...

মহিলা বকবক করে আরও কিসব বলছে, কানে গেল না জনের। তার হাড্ডিসার হাতের ফাঁক গলে পড়ে গেল রিসিভার, ঝুলতে লাগল। ধাক্কা মেরে দরোজা খুলে জন বেরিয়ে এল।

তাকে তাড়াতাড়ি করতে হবে। সময় মতো ফিরতে হবে নিজের কবরে।

© মোঃ শামীম শিহাব
১৮/০৪/২০১৮ইং

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...