Skip to main content

নবীন লেখকরা কিভাবে বই বের করবেন

নবীন লেখকলেখিকাদের জন্য এটি একটি অবশ্যপাঠ্য প্রবন্ধ। রেডি রেফারেন্স হিসাবে প্রিন্ট করে রাখলে বেশি উপকার পাবেন বলে মনে করি।

মূল প্রবন্ধটি নিচে 'ভূমিকা' থেকে শুরু হয়েছে। ভূমিকার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে নিই। একটা বই প্রকাশের আগে আপনাকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি যদি ব্লগলেখক হয়ে থাকেন, ব্লগে প্রকাশিত নিজের লেখাগুলো কিছুদিন পর পর পড়ুন। দেখবেন, অনেক কিছুই আপনার বদলাতে ইচ্ছে করছে, অনেক শব্দ বা বাক্য আপনার মনঃপুত হচ্ছে না, অনেক শব্দ বা বাক্য বাহুল্য মনে হচ্ছে। এগুলো একটা একটা করে গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ুন আর এডিট করুন। একটা শব্দের পরিবর্তন আপনার লেখার মান অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারে। প্রথমবার যে-শব্দটার জন্য আপনার অনেক তৃষ্ণা ছিল, কিন্তু কিছুতেই আপনার মনে সেটি উদয় হয় নি, এডিটিং এর সময় হুট করে তা মাথায় ঢুকে যেতে পারে। ওটি জায়গামতো বসিয়ে দিন। যে-কথাগুলো নিস্প্রয়োজন তা কেটে বা ছেঁটে ফেলুন। এটি নিরীক্ষা করার উপায় হলোঃ 'এ লাইনটি কেটে ফেললে কি কোনো ক্ষতি হচ্ছে?' ক্ষতি না হলে তা রেখে দেয়ার দরকার নেই।

বানানের ব্যাপারে খুব বেশি সতর্ক থাকুন। 'বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান' বইটি সব সময় হাতের কাছে রাখুন। এমনকি সবচেয়ে পরিচিত শব্দটির বানানও অভিধান দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন। ধারনা, নাকি ধারণা? ধরণী, নাকি ধরণি? সরণী, নাকি সরণি? তীর, নাকি তির? দাদী, নাকি দাদি? ধরণ, নাকি ধরন? আপনি জানেন যে, প্রথমোক্ত বানানগুলোই সঠিক, কিন্তু অভিধান খুলে অবাক হয়ে দেখবেন যে ২য় বানানগুলো সঠিক। অতএব, বানানের ব্যাপারটা খুব সহজ না। আপনি একজন লেখক অথচ প্রতিটি বাক্য ভুল বানানে পরিপূর্ণ, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বানানের জন্য বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মটাটা আগে ভালোভাবে রপ্ত করে নিন। যাঁরা কবিতা লেখেন, তাঁদের জন্য এ পোস্টটা অনেক উপকারে আসবে মনে হয়।

আরো কিছু ছোটোখাটো ভুলভ্রান্তি থাকে, যা ঠিক করে লিখলে ছাপার হরফ বা পৃষ্ঠা দেখতে সুন্দর লাগে। যেমন যতিচিহ্নের ব্যবহার:

ক) যতিচিহ্ন সবসময় অক্ষরের পর কোনো 'স্পেস' ব্যবহার না করে লিখুন। 

খ) যতিচিহ্নের পর সবসময় একটি 'স্পেস' ব্যবহার করুন (হাইফেন ছাড়া)।

এগুলো না করলে ছাপা হওয়া বইটি অসুন্দর দেখাবে। কিংবা, প্রকাশকের কাছে উপস্থাপন করার সময় তিনি এটি নতুন করে ছাপতে কিংবা এডিট করতে বলবেন, যা অনেক সময়-সাপেক্ষ হবে।

ভূমিকা - এ আর্টিকেলটি কারা পড়বেন?

এ আর্টিকেলটি শুধু তাঁদের জন্য, যাঁরা লেখালেখি করেন, এবং বই প্রকাশ করতে আগ্রহী, কিন্তু কীভাবে এ কাজটি করতে হবে সে ব্যাপারে কোনো ধারনা রাখেন না। তাঁদের জন্য কিছু টিপস।

এ আর্টিকেলটি পড়ে নবীন লেখকলেখিকাগণ যেমন উপকৃত হবেন, প্রকাশকগণও চোখের আড়ালে পড়ে থাকা অনেক প্রতিভার সন্ধান পেয়ে আনন্দিত হবেন বলে ধারনা করছি। এতে নবীন লেখকদের সাথে প্রকাশকদের একটা সেতু বন্ধন গড়ে উঠবে।

এ আর্টিকেলটি আমার অভিজ্ঞতার ফসল। অনেকের পক্ষেই এটা পড়ে সবকিছু বুঝে ওঠা সম্ভব না। আরো কিছু জানতে চাইলে মন্তব্যের ঘরে প্রশ্ন করুন, অথবা মেইল করুন এই ই-মেইলে : farihanmahmud@yahoo.com 

প্রথম অধ্যায়

বই ছাপতে গেলে মোটামুটি সাতটি প্রধান ধাপেরমধ্য দিয়ে এগোতে হয়, যেমন: 
ক। প্রচ্ছদ 
খ। কম্পোজ বা টাইপ করা ও ট্রেসিং বের করা 
গ। পেস্টিং, প্লেট ও মেকিং 
ঘ। কাগজ 
ঙ। ছাপা 
চ। বই বাঁধাই
ছ। বই বাজারজাত করণ। এটিই হলো প্রধান ধাপ

কতোগুলো বই ছাপবেন? এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা সর্বাগ্রে ঠিক করে নিতে হবে। নবীন লেখক হিসেবে আমার পরামর্শ ২০০-৩০০ বই ছাপুন। বই বিক্রির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকলে ৫০০ কপি পর্যন্ত ছাপতে পারেন।

১। প্রচ্ছদ। 

নিজে আঁকতে পারেন, বা কোনো নামিদামি শিল্পীকে দিয়ে আঁকাতে পারেন। শৌখিন কোনো বন্ধুকে দিয়েও এ-কাজটি করানো যেতে পারে। যে কোনো লেখকের প্রথম পছন্দ বর্তমানে ধ্রুব এষ, সচরাচর হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী তিনি। তসলিমা নাসরিনের ক-এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। বিখ্যাত শিল্পীরা দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন, এমনকি এর চেয়েও বেশি। কম খরচে করতে চাইলে শিক্ষা-নবিশদের খোঁজ করুন, যাঁরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় টুকিটাকি কাজ করছেন। তাঁদের প্রচ্ছদ দেখে আপনি সন্তুষ্ট হলে তাঁদেরকেও সন্তুষ্ট করে দিন। কারো সন্ধান না পেলে আপনার প্রকাশককে বলুন, তিনি মুহূর্তের মধ্যে অনেক রেডিমেড প্রচ্ছদ কিংবা পরিচিত শিল্পীর খোঁজ দিতে পারবেন। প্রচ্ছদ হওয়ার পর এটি প্রকাশকের নিকট হস্তান্তর করুন। পজিটিভ বের করার জন্য এটিকে এবার কম্পিউটারে নিতে হবে। দশ ফর্মা সাইজের তিনশত কপি প্রচ্ছদের কম্পিউটার গ্রাফিক্স সহ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ পড়বে। এই খরচ কিন্তু প্রচ্ছদশিল্পীর পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত, যা গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে দিতে হয়।

২। কম্পোজ বা টাইপ করা। 

আপনার পুরো পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে দেয়ার পর মনোনীত হলে তিনি ওটা কম্পোজ করতে দিয়ে দিবেন। ১৬ পৃষ্ঠা বা প্রচলিত কথায় ৮ পাতায় এক ফর্মা। প্রতি ফর্মা টাইপিং সহ ট্রেসিং বের করতে বর্তমান বাজারদর গড়ে তিনশত টাকা; প্রুফ চেকিং হবে দু বার। আপনি নিজে টাইপ করতে পারলে এ খরচটি বেঁচে যাবে। সেক্ষেত্রে বই ছাপবার জন্য আপনাকে পেইজ সেট-আপ করে নিতে হবে। 

পেইজ সেট-আপ। পৃষ্ঠার/কাগজের যে অংশটুকুতে লেখা থাকে, তাকে ‘ম্যাটার’ বলা হয়। একেক প্রকাশনিতে ম্যাটারের একেক রকম সাইজ অনুসরণ করা হয়, যেমন ৩.৭৫ ইঞ্চি বাই ৬.৭৫ ইঞ্চি, ৪ ইঞ্চি বাই ৭ ইঞ্চি, ৪ ইঞ্চি বাই ৭.২৫ ইঞ্চি, ৪.২৫ ইঞ্চি বাই ৭ ইঞ্চি, ৪.২৫ ইঞ্চি বাই ৭.২৫ ইঞ্চি। প্রকাশকের সাথে আলোচনা করে আপনি যে-কোনো মাপের ম্যাটারই নির্বাচন করতে পারেন। 

ফাইল মেনুতে যান> পেইজ সেট-আপ> পেপার সাইজ> ১১ বাই ৮.৫ (Letter) সিলেক্ট করুন। 

ওরিয়েন্টেশন দিন ‘ল্যান্ডস্কেপ’। 

এক জায়গায় লেখা দেখুন : Multiple Pages. এর ডানের বক্স থেকে 2 pages per sheet সিলেক্ট করুন।

মার্জিনে যান। ৩.৭৫ ইঞ্চি বাই ৬.৭৫ ইঞ্চি মাপের জন্য টপ .৮৫ এবং বটম .৯। আউট সাইড .৮৮ এবং ইনসাইড .৮৭। গাটার ০। ব্যস, পেইজ সেট-আপ হয়ে গেলো। 

৪ ইঞ্চি বাই ৭ ইঞ্চি মাপের জন্য টপ .৭৫ এবং বটম .৭৫। আউটসাইড .৭৫ এবং ইনসাইড .৭৫। গাটার ০।

৪ ইঞ্চি বাই ৭.২৫ ইঞ্চি মাপের জন্য টপ .৬৩ এবং বটম .৬২। আউটসাইড .৭৫ এবং ইনসাইড .৭৫। গাটার ০।

৪.২৫ ইঞ্চি বাই ৭.২৫ ইঞ্চি মাপের জন্য টপ .৬৩ এবং বটম .৬২। আউটসাইড .৬৩ এবং ইনসাইড .৬২। গাটার ০।

৪.২৫ ইঞ্চি বাই ৭ ইঞ্চি মাপের জন্য টপ .৭৫ এবং বটম .৭৫। আউটসাইড .৬৩ এবং ইনসাইড .৬২। গাটার ০।

এভাবে সেটিং সম্পন্ন করার পর যা হলো তাতে বইয়ের পাতার মাপ হবে উচ্চতা ৮.৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ প্রায় ৫.৫ ইঞ্চি। কিন্তু যে-অংশটুকুতে লেখা উঠবে (একে ম্যাটারিয়াল বা ম্যাটার বলে) তার মাপ হবে ৩.৭৫ ইঞ্চি বাই ৬.৭৫ ইঞ্চি বা ৪ ইঞ্চি বাই ৭ ইঞ্চি বা ৪ ইঞ্চি বাই ৭.২৫ ইঞ্চি বা ৪.২৫ ইঞ্চি বাই ৭ ইঞ্চি বা ৪.২৫ ইঞ্চি বাই ৭.২৫ ইঞ্চি। 

এরপর টাইপের জন্য ফন্ট নির্বাচন। সব ফন্টেই সুন্দর ছাপা ওঠে না। বর্তমানে বেশিরভাগ টাইপিস্ট সুটুন্নি এমজে-তে টাইপ করেন। যেসব পিসি থেকে ট্রেসিং বের করা হয়, ওগুলোতে সুনন্নি এমজে-তেই কোনোরূপ ঝামেলা ছাড়া কাজ করা যায়। আদর্শলিপি এক্সপ্যান্ডেড (স্কেল ৭৫ পার্সেন্ট)-এও ভালো ছাপা হয়। আপনি নিজে টাইপ করে ট্রেসিং বের করার জন্য বাংলাবাজারে আসুন, আপনার প্রকাশকের মাধ্যমে ট্রেসিং বের করুন। নিজেও করতে পারেন। অথবা, যারা ছাপার কাজ করে তাদের কাছে যান, তারা তাদের প্রিন্টার থেকে ট্রেসিং বের করে দিতে পারবে। ভালো ট্রেসিং পেপারে এক ফর্মা প্রিন্ট করতে ৮০ থেকে ১২০ টাকা লাগবে। মনে রাখবেন, এটি হতে হবে মিরর প্রিন্ট।

৩। পেস্টিং, প্লেট ও মেকিং। 

প্রতি ফর্মা পেস্টিং বাবদ ৩০ থেকে ৬০ টাকা। শুরুতেই প্রকাশকের সাথে চুক্তি করতে হবে আপনি কী ধরনের প্লেট ব্যবহা করবেন। মোটামুটি মানের নতুন (পিএস) প্লেটের দাম মেকিং সহ ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। ডিপিএস (একবার ব্যবহৃত) প্লেটের দাম এর অর্ধেক। তবে আপনি পিএস নাকি ডিপিএস প্লেটে বই ছাপবেন তা আগেই প্রকাশকের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিন। পিএস প্লেটে ছাপা হয় খুব পরিষ্কার ও কোনোরূপ দাগ বা কালো ফোটামুক্ত; ডিপিএস প্লেটে কালো কালো ছোটো বিন্দু পড়ে কাগজের উপর, এতে ছাপা ঝকঝকে দেখায় না। অনকে দামি প্লেটও আছে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তাঁর প্রকাশনীতে পেস্টিং বাবদ ফর্মা প্রতি ৫০ টাকা এবং প্লেট ফর্মা প্রতি ২৭০ টাকা হিসাবে নেয়া হয়।

৪। কাগজ। 

ধরুন বইটি পাঁচ ফর্মা সাইজের। এক রিমে ১০০০ তা (ডাবল ডিম ৫০০ তা-য় এক রিম, যা সিংগেল ডিম-এ ১০০০ তা হয়)। ১০০০ তা-কে ৫ ফর্মা দিয়ে ভাগ করুন। ভাগফল ২০০। অর্থাৎ, ১ রিম কাগজে ৫ ফর্মা সাইজের ২০০ কপি বই হয়। ৫৫, ৬০/৬১, ৬৫, ৭০, ৮০, ১২০ গ্রাম, ইত্যাদি ওজনের কাগজ পাওয়া যায় বই ছাপবার জন্য। তবে বেশিরভাগ বই ছাপা হয় ৭০ গ্রাম ওজনের কাগজে, এরপর ৮০ গ্রাম। ১২০ গ্রাম ওজনের কাগজের বই খুব কম দেখা যায়। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে বর্তমানে ভালো মানের ৮০ গ্রাম ওজনের কাগজ ২৬০০ টাকার ওপরে; ৭০ গ্রাম ওজনের কাগজ ২১০০-২৫০০ টাকা রিম। আপনার বই ছাপতে যে পরিমাণ কাগজ লাগবে, তার চেয়ে প্রতি পাঁচ রিমের জন্য অতিরিক্ত হাফ থেকে এক রিম কাগজ বেশি কিনতে হবে; কারণ, ছাপাখানায় প্রচুর কাগজ নষ্ট হয়ে যায়। 

৫। ছাপা। 

প্রতি ফর্মা ছাপাখরচ ২০০-৪০০ টাকা, একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বই পর্যন্ত। তারপর বাড়বে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তাঁর প্রকাশনীতে বর্তমানে ২৫০ টাকা হারে ছাপাখরচ নেয়া হয়ে থাকে।

৬। বাঁধাই। 

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তাঁর প্রকাশনীতে ৫ ফর্মা সাইজের জন্য ১১-১২ টাকা এবং ১০ ফর্মা সাইজের জন্য ১৩-১৪ টাকা দরে প্রতিটি বই বাঁধাই করা হয়ে থাকে। উৎকৃষ্ট বাঁধাইয়ের জন্য বই-প্রতি ১৫ টাকার উপরে খরচ পড়ে। সাধারণ মানের ছোট বইয়ের ক্ষেত্রে পাঁচ-সাত টাকায় হয়ে যায়। তবে সবকিছুই আপনাকে আগেভাগে ঠিক করে নিতে হবে। 

৭। বই বাজারজাত করণ। 

আপনি নতুন লেখক হয়ে থাকলে আমার পরামর্শ হলো সমস্ত বই আপনি আপনার নিজের কাছে নিয়ে যান। হ্যাঁ, শুরুতেই আপনি চুক্তি করুন, সমস্ত বই আপনাকে একদিনেই সরবরাহ করতে হবে। মনে রাখবেন, নবীন লেখক কখনো বই বিক্রির টাকা নিজের পকেটে নিতে পারেন না। পনর হাজার টাকায় বই ছাপলে আপনাকে ধরে নিতে হবে সতর হাজার টাকাই আপনি জলে ফেলে দিচ্ছেন।
অতিরিক্ত দুই হাজার হলো আকিকা ও আনুষঙ্গিক খরচ; একজনকে বই হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতে হবে আমার এই বইটি পড়ে শেষ করতে পারলে তোমাকে একশ, দুইশ, হাজার টাকা পুরস্কার দিব, তবেই না কেউ আপনার বই পড়বে। অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে, তা হতে পারে আপনার ক্ষেত্রেও। এবার বইগুলো নিজের কাছে নেয়ার পর, বন্ধুদের মাঝে বিনা মূল্যে বা ন্যায্য মূল্যে কিংবা চড়াদামে বিক্রি করুন (যেহেতু আপনি এতো কষ্ট করে লিখেছেন)। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করুন। সৌজন্য সংখ্যা পাঠান। দশজনকে দশটা বই পাঠালে হয়তো তিনচার জনে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনজন খুব প্রশংসা করে চিঠি লিখবে। সেই প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়ে হয়তো আরেকটা বই সত্বর লিখে ফেলবেন, এমন সময় দেখবেন যার একটুখানি প্রশংসার জন্য আপনি অধীর আগ্রহে দিন গুনছিলেন, তাঁর একটা চিঠি পেলেন- এটা কোনো বই-ই হয় নি, এতো বিরক্তিকর। যে কোনো লেখকের জন্য এই ধাক্কাটা হলো দুঃসহনীয়। এটা কাটিয়ে ওঠাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকেই এই এতোটুকু আঘাতে ভর্তা হয়ে যান, আর কোনো লেখাই লিখতে পারেন না। এটা আপনার জন্য সতর্ক বাণী- আপনার লেখা সবাই খাবেন না; যাঁরা খান না তাঁদের খাওয়ানোর জন্য জোর করবেন না; যাঁরা খাচ্ছেন ভেবে নিন তাঁরাই আপনার প্রকৃত বন্ধু; তাঁরা আপনার লেখার মান সম্বন্ধে সম্যক অবহিত আছেন, তারপরও আপনাকে উৎসাহিত করবার জন্য অতোটুকু প্রশংসা করে থাকেন। তাঁদেরকে শ্রদ্ধা করুন।
লিখুন। লিখুন। লিখুন।

সারাংশঃ

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, প্রকাশক মহোদয়কে সবিনয়ে অনুরোধ করুন আপনার ৩০০ বই আপনাকে একদিনেই সরবরাহ করবার জন্য। ঢাকায় একুশে বইমেলায় লেখকদের বই কিন্তু নিজস্ব প্রকাশক ছাড়া অন্য প্রকাশকের স্টলে রাখা নিষিদ্ধ। বইমেলার বাইরে বাজারের স্টলগুলোতে আপনি বই নিয়ে তাঁদের কাছে অফার করে আশাহত হবেন- তাঁরা নিতে চাইবেন না, বলবেন- জায়গা নেই। আপনার সমস্ত বইয়ের খরচ বাবদ পুরো টাকা একবারই প্রকাশকের হাতে দিয়ে দিতে হবে, বই ছাপাবার আগে। টানাটানি থাকলে এ টাকা ধাপে ধাপে দিতে পারেন; প্রকাশককে এ ব্যাপারে অনুরোধ করতে পারেন। সাধারণত সবগুলো বই একবার ছাপা হলেও সবগুলো একসাথে বাঁধাই করা হয় না। বই ধীরে ধীরে বিক্রি হয়, আর নতুন করে বাঁধাই করা হয়। আর এতোসব চুক্তি সম্ভব হবে তখনই যখন আপনি কোনো ছোটোখাট প্রকাশকের সাথে এ কাজ করবেন। বড় বড় প্রকাশকগণের সাথে এহেন হাঙ্গামা করতে পারবেন না। আপনার পাণ্ডুলিপি ভালো হলে বড় প্রকাশকগণ বই ছাপতে রাজি হবেন সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়; শুধু একটাই শর্ত হয়তো তাঁরা দেবেন যে প্রকাশিতব্য বইটির ৮০% বই আপনাকে কিনে নিতে হবে।

Comments

Post a Comment

Popular Posts

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জন্য  ব্যবহার করা  হয়। ২. পার-অক্সাইড : ফেব্রিকের মধ্যে থাকা ন্যাচারাল গ্রে কালার রিমুভ করতে ব্যবহার করা হয়। ৩. স্টেবিলাইজার : পার-অক্সাডের রিয়েকশন স্টেবল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাবহার না করললে পার-অক্সাইড খুব দ্রুত ভেঙে পার-হাইড্রোক্সিল আয়ন গুলি শেষ করে ফেলবে, যা ব্লিচিং এর জন্য দায়ী। ৪. ডিটারজেন্ট :  ওয়েটিং অথবা ক্লিনিং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ৫. এন্টিক্রিজিং এজেন্ট:  নিটিং এর পর ও ওয়েট প্রসেসিং এর সময়  ফেব্রিকে ভাজ অথবা ক্রিজ পরে ফলে সেড আন-ইভেন আসতে পারে। ডাইং এর সময় তাই তা দূর করতে এক ধরনের ক্রিজ রিমুভার ব্যবহার করা হয় যেন ক্রিজ না পরে। এটি লুব্রিকেশন টাইপ এর কেমিক্যাল। ৬. সিকুস্টারিং এজেন্ট: পানির মধ্যে থাকা মেটাল আয়ন, হার্ডনেস রিমুভ করতে  ও পানিকে সফট করতে ব্যবহার করা হয়। ৭. ওয়েটিং এজেন্ট :  সারফেস টেনশন দূর করে ফেব্রিকের ভিজানোর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ওয়েটিং প্রপার

উপন্যাসের গঠন কৌশল

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E.M. Forster- এর মতে, কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তাঁর মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। উপন্যাসকে এক সুবিশাল ক্যানভাস হিসেবে ধরা যায়, লেখক তাঁর পরিকল্পনা মাফিক একেকটি অধ্যায়কে জায়গা করে দেন সেখানে। স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা, মানুষের হৃদয়ের গভীর তলদেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা—ইত্যাদি দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য। উপন্যাস বিশ্লেষকগণ একটি সার্থক উপন্যাসের গঠন কৌশল নিয়ে ছয়টি রীতির কথা বলেছেন। প্লট বা আখ্যান সম্পাদনাঃ উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনি। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। প্লটের মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা বাস্তব জীবনকে প্র

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ছানা سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ- উচ্চারণ- সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বি-হামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। রুকূর তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْمِ উচ্চারণ- সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম। অর্থাৎ- আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করতছি। তাসমীহ سَمِعَ اللّٰهُ لِمَنْ حَمِدَهْ উচ্চারণ- সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ। অর্থাৎ- যে তাহার (আল্লাহর) প্রশংসা করে, আল্লাহ তাহা শুনেন। তাহমীদ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ উচ্চারণ- রাব্বানা লাকাল হামদ। অর্থাৎ- হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি প্রশংসিত। সিজদার তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى উচ্চারণ- সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা। অর্থাৎ- আমার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করতেছি। আত্তাহিয়্যাতু اَلتَّحِيّ