Skip to main content

অমীমাংসিত মৃত্যু

ক্লোজআপ এবং পেপসোডেন্ট - ঘরে থাকা দুই রকম পেস্ট দিয়ে দুই দুইবার দাঁত ব্রাশ করার পর শিহাবের মনে হলো, আরেকটা পেস্ট দিয়ে আরেকবার দাঁত ব্রাশ করলে আরেকটু ভালো হয়। সুতরাং, জলদি মোড়ের দোকানে গিয়ে মেডিপ্লাস কিনে এনে তৃতীয় দফায় দাঁত ব্রাশ করলো শিহাব। ব্যাপারটা এই না যে ওকে কোন পেস্টের কোম্পানির বিজ্ঞাপনে দাঁত বের করে হাসতে হবে। ব্যাপারটা এই যে আজ বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছে। মূল ব্যাপারটা ঠিক এটাও না। মূল ব্যাপারটা হচ্ছে আজ ঘর ফাঁকা! যে কোন মূল্যে আজ তমাকে ঘরে আনা চাই। রাজি করাতে হয়তো একটু কষ্ট হবে। কিন্তু যত যাই হোক, প্রেমের শুরুর দিকে সব প্রেমিকই প্রেমিকার কাছে মহাসাধু হিসেবে পরিচিত থাকে। একটু আগে কি পরে বেশির ভাগ সময় সব প্রেমিকাই সাধু প্রেমিকের সব কথা রাখতে বাধ্য।

ঘড়িতে বিকাল চারটা। সকালের বাসে বাবা-মাকে তুলে দেয়ার পরই শিহাব নিজের মোবাইলটা বন্ধ করে দিয়েছিল। অবশ্য বাসার টিএনটি নাম্বার থেকে বাবা-মা পৌঁছেছে কি না সে খবর নিয়েছে। টানা দশ ঘণ্টা তমাকে ফোন দেয়ার ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রেখেছে। বড় কিছু পেতে হলে ছোট অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয় এটা শিহাব জানে। ওর এক ডেন্টিস্ট বন্ধু বলেছিল মেডিপ্লাস দাঁতের জন্য খুব ভালো। আরেকবার ব্রাশ করবে কি না ভাবতে ভাবতেই মোবাইলটা সুইচ অন করল শিহাব। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরপর কয়েকবার এসএমএস টোন শোনা গেল। নিশ্চিত এগুলো তমার এসএমএস। শিহাব কোন মেসেজ না পড়ে লিখে পাঠালো "আমার খুব জ্বর!"
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফোন বেজে উঠল। ওপাশ থেকে প্রথম প্রশ্ন,
- ফোন বন্ধ কেন তোমার? জ্বর হলো কী করে! কাল রাতেও তো ঠিক ছিলে!
- শেষ রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। মোবাইলে চার্জ ছিল না।
- তোমাদের বাড়িওয়ালা না রাতে ছাদে যেতে দেয় না!

গলাটা একটু ভারি বা অসুস্থ শোনানোর জন্য শিহাব কাঁথা মুড়ি দিয়ে কথা বলছিল। সেই অবস্থাতেই জিহ্বায় কামড় দিল। উত্তেজনার বশে কী সব ছাইপাশ বলে ফেলেছে। রাতে ছাদে তালা মারা থাকে। কবে থেকে কী কারণে ছাদে তালা মারা থাকে সেই গল্প তো শিহাবই তমাকে শুনিয়েছিল। ধুর! এমন হাদারাম মার্কা মিথ্যেও মানুষ বলে! নিজেকে মনেমনে গালি দিলেও মুহূর্তে সুর বদলে নিল শিহাব।

- আরে! বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে গেছে। সেই ভোররাতে বাসে তুলে দিতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে কাকভেজা হয়েছি। মোবাইলটাও যে বন্ধ হয়ে গেছে খেয়াল করিনি।
- ও! কী অবস্থা এখন? জ্বর কত?
- থার্মোমিটার কোথায় জানি না।
- ঘরে নাপা বা প্যারাসিট্যামল কিছু আছে?
- জানি না।
- কী খেয়েছ সারাদিনে?
- কিছু না।
- বলো কী! তোমার অবস্থা কি বেশি খারাপ? পাশের ফ্ল্যাটে কেউ নেই?
- জানি না।
- আমি কি ডাক্তার নিয়ে আসব?
- ডাক্তার নিয়ে নয়, তুমি ডাক্তার হয়ে আসো।
- প্রলাপ বকছো তুমি!
- তমা, আমার খুব ভুনা খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে ভুনা খিচুড়ি খেতে না পারলে আমি মরেই যাব! তুমি কি আমার জন্য একটু খিচুড়ি রান্না করে আনতে পারবে? আমি সারাদিন কিছু খাইনি।

এরচেয়ে ভালো টোপ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। অসুস্থ অবস্থায় পছন্দের মানুষটা কিছু খেতে চেয়েছে। এই আবদার অবহেলা করার সাধ্য পৃথিবীর কোন নারীরই নেই। সুতরাং, তমাকে আসতেই হবে, আসতে সে বাধ্য!

রাত আটটা নাগাদ শুরু হলো লোডশেডিং, বাইরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি, শিহাব যখন এমন বৈরি আবহাওয়ায় তমার আসার বিষয়ে খানিকটা সন্দিহান হয়ে উঠছিল, তখনি কাকভেজা অবস্থায় তমা রুমে ঢুকল। কাঁথা-কম্বল গায়ে দিয়ে শিহাব আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। দরজাটাও যে খোলাই রেখেছে সেটা তমা কড়া না নেড়ে রুমে ঢুকার পর বুঝতে পারল।

তমার উচিত ছিল বাইরে থেকে এসেই শিহাবের কপালে হাত রাখা, জ্বর কেমন সেটা দেখা, কী খেয়েছে না খেয়েছে সেসব খোঁজখবর নেয়া। অথচ তমা তার কিছুই না করে সোজা বাথরুমে ঢুকল। বৃষ্টিতে ভেজা কাপড় বদলাবে মনেহয়। বাথরুমে ক্যামেরা ফিট না করায় শিহাবের খুব আফসোস হলো। বেডরুমে ক্যামেরা সেট করা হয়ে গেছে। কিন্তু বাথরুমেও দরকার ছিল। অবশ্য এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ নেই। সুতরাং, ক্যামেরা থাকা না থাকা একই। শিকারকে এত সহজে টোপ গিলাতে পেরে শিহাব নিজের ওপর যথেষ্ট সন্তুষ্ট বোধ করলো। এদিকে অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও তমা বাথরুম থেকে বের হচ্ছে না দেখে খানিকটা অধৈর্যও হয়ে উঠল। অপেক্ষার সময় এমনই, কিছুতেই কাটতে চায় না। কটা বাজে দেখার জন্য মোবাইলটা হাতে নিতেই ব্যাপারটা নজরে পড়লো শিহাবের। একবার নয়, পরপর তিনবার মেসেজটা পড়লো ও।

"বাইরে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আজ হলের গেট বন্ধ করে দিয়েছে। এমন ঝড়-বৃষ্টির রাতে হল সুপার কিছুতেই বাইরে বেরুতে দিবে না। আমি খিচুড়ি রান্না করে রেখেছি। তুমি আজ রাতটা কোনরকম পার করো। কাল সকালেই আমি আসব। আর শোনো, ফ্রিজে দেখো খাবার কিছু অবশ্যই পাবে। না খেয়ে ঘুমিও না।"

শিহাব মোবাইল হাতে বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। মেসেজটা এসেছে এখন থেকে আধ ঘণ্টা আগে। তাহলে যে মেয়েটা কিছুক্ষণ আগে বাথরুমে ঢুকল সে কে?
দ্বিতীবার ভাবার আগেই দরজা খুলে মেয়েটা বেরিয়ে এলো। ঢুকার সময় ভালোভাবে খেয়াল না করলেও এবার শিহাব ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটাকে। মোমবাতির কাঁপা আলোয় স্পষ্ট দেখা না গেলেও এই মেয়ে যে তমা নয় সেটা এবার শিহাব স্পষ্ট বুঝতে পারলো। তবে মেয়েটা অপরিচিতও নয়। ওর সাথে আগে কোথায় যেন দেখা হয়েছিল! হঠাৎ যেন বজ্রপাত হলো শিহাবের মাথায়। এ যে বাড়িওয়ালার মেয়ে। ওর জন্যই বাড়িওয়ালা এখন আর কাউকে ছাদে যেতে দেয় না। গতবছর ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করার পর থেকেই ভাড়াটিয়াদের জন্য ছাদ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

শিহাবের মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো মুহূর্তে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতে গিয়ে খেয়াল করলো মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এসব স্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। ঘুম ভাঙলেই দেখবে সব ঠিক। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলার পরিবর্তে শিহাব চোখ বড়বড় করে দেখল একপাশ থেঁতলে যাওয়া মুখে নিজের ভেজা শরীর দেখিয়ে মেয়েটা বলছে,
- অনেকক্ষণ ধুয়েছি। রক্ত যায় না।

শিহাব অবাক হয়ে খেয়াল করলো মেয়েটার শুধু মুখের একপাশই থেঁতলানো নয়, মাথার একপাশের খুলিও ভাঙা। মোমবাতির আলোয় ভিতরের যে বস্তুটা দেখা যাচ্ছে সেটা সম্ভবত মগজ!
.

পুনশ্চ - ১ঃ ডাক্তার লাশ পরীক্ষা করে বলেছিল মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ছেলেটির হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।

পুনশ্চ - ২ঃ ছেলেটির বন্ধুদের দাবি নারীর প্রতি আসক্তি থাকলেও নেশার প্রতি কখনোই তার আগ্রহ ছিল না। এমনকি একটা সিগারেটও কখনো সে খায়নি।

লেখাঃ খাদিজাতুল কোবরা সনিয়া

© মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...