=>স্যার ১০টাকা বাড়িয়ে দিন প্লিজ? (আবির)
=>কেন? ভাড়াতো ৩০টাকা! (প্যাসেঞ্জার)
=>জ্বি স্যার ভাড়া ৩০টাকাই। কিন্তু স্যার আপনি যদি
খুশিমনে আমাকে ১০টা টাকা বাড়িয়ে দেন তাহলে
আমার অনেক বড় উপকার হবে। আমার বোনের
চিকিৎসার জন্য হেল্প হবে।
=>ওহ আচ্ছা ঠিকাছে, এই নাও ৪০টাকা।
=>থ্যাংক ইউ স্যার।
.
=>এই খালি প্রবর্তক মোড় যাবেন?(তমা)
=>হ্যা আপা যাবো?
=>ভাড়া কত?
=>৪০টাকা। কিন্তু আপা কাইন্ডলি আমাকে ১০টা টাকা
বাড়িয়ে দিয়েন।
=>না, বাড়িয়ে দিতে পারবোনা। ৪০টাকা গেলে
চলেন নাহলে অন্য রিক্সায় যাবো।
=>আচ্ছা ঠিকাছে আপা, উঠেন।
.
রিক্সায় উঠার পর তমা লক্ষ্য করলো এই রিক্সাওয়ালা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। একটু স্মার্ট টাইপের। তমা একটু কৌতুহলী বোধ করলো
.
=>আচ্ছা আপনি আমার থেকে ১০টাকা বাড়তি চাইছেন কেন?
=>একচুয়ালি আপা ১০টাকা বাড়িয়ে দিলে আমার অনেক উপকার হত..
.
এমা এত দেখি ইংরেজী শব্দও বলে। রিক্সায় উঠার
আগেও একটা বলেছিলো। এমন রিক্সাওয়ালা তো
আর দেখিনি। এসব তমা মনে মনে ভাবতে
লাগলো
.
=>১০টাকায় এমন কি উপকার হত? আর আপনাকে তো রিক্সাওয়ালা মনে হচ্ছে না।
=>আসলে আপা আমি পেশাদার রিক্সাওয়ালা নই। আর আপনার কাছে ১০টাকা আমার কাছে ১০০০টাকার সমান। কারণ, আমি সারাদিন ৫০জন প্যাসেন্জার বহন করলে ১০টাকা বাড়তি হিসেবে ৫০০টাকা বেশি পাই। যেগুলো দিয়ে আমার বোনের চিকিৎসার খরচ চালাই।
=>আপনার বোনের কি হয়েছে? আপনি রিক্সা
চালান কেন? একটু ক্লিয়ার করে বলুন ত..
.
বাবু সব বলতে লাগলো...
.
হৃদয়=বাবু তোর বোন মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।
বাবু= কি!!
হৃদয়= হ্যা, জলদি চল।
বাবু= চল চল!
স্যার= এই কোচিং ফেলে কই যাও?
বাবু= ধেত্তেরি। রাখেন আপনার কোচিং। আমার
বোন অসুস্থ আর আপনি আছেন কোচিং নিয়ে।
.
এটা বলেই ভার্সিটি ভর্তি কোচিং ক্লাস থেকে
বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে দৌড়াতে লাগলো
বাবু ও হৃদয়।
বাবুরা দুই ভাই বোন। তার ছোট বোনটার নাম পিংকি। ক্লাস নাইনে পড়ে। সে ছোট বোনটাকে তার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। ছোট বোনের বিন্দু পরিমাণ কিছু হলে বাবু তা সহ্য করতে পারেনা।
ছোটবেলায় একবার পিংকি পানিতে পড়ে
গিয়েছিলো বাবু পিংকিকে বাঁচাতে সাঁতার না জানা সত্ত্বেও পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে। পরে দুজনেই
একসাথে পানিতে ডুবে মরতে বসে। বাড়ির
কয়েকজন লোক দেখে ফেলাতে তাদের
উপরে উঠায়।
বাবুর বাবা একজন দিনমজুর। তিনি মজুরি করে যা পান তা দিয়ে ৪ জনের সংসার কোন রকমে চলে যায়। কিন্তু বাবু তার বোনের কোন চাওয়া যেন অপূর্ণ না থাকে তাই সে টিউশনি করে বোন যা চায় তা কিনে দেয়। বোনকে সবসময় স্কুলে দিয়ে আসে নিয়েও আসে। একদিন ক্লাসে পিংকি পড়া না পারাতে স্যার পিংকির হাতে বেত দিয়ে মেরেছিলো, বাবু তা দেখে স্যারকে বকে আসে। তার বোনকে কেউ কিছু বললেই বাবু তাকে পেয়ে বসে। এমনকি তার মা পিংকিকে তার জন্য বকতেও পারেনা।
সে সবসময় বলে, আমার বোন হচ্ছে আমার রাজকুমারী। কেউ ওকে কিছু বলতে পারবেনা।
ঈদানিং বাবুর বোনের কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে আর শরীরও দুর্বল। প্রায়ই মাথা ঘুরে পড়ে যায়। আজও সে কোচিং এ আসার পর মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। বাড়ি থেকে কোচিং এর দূরত্ব কম তাই ওর বন্ধু ওকে খবরটা দিয়েছে।
বাবু= আম্মু ও আম্মু, পিংকিকে ডাক্তারের কাছে
নিয়ে চলো।
মা= কিন্তু টাকা নেই তো।
বাবু= তুমি চলো। টাকার কথা চিন্তা করোনা।
পিংকি= ভাইয়া আমি ঠিকআছি। তুই চিন্তা করিস না।
বাবু= তুই চুপ থাক।
.
এটা বলে বাবু তার রুমে গিয়ে বইয়ের ভেতরে রাখা ২০০০টাকা বের করে নিয়ে আসলো। সে এবার ভার্সিটিতে ভর্তি হবে তাই টাকাগুলো ভর্তির জন্য রেখেছিলো। কিন্তু সবকিছুর আগে তার বোন।
.
ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেকগুলো টেষ্ট
করালো।
বাবু= আঙ্কেল রিপোর্টে কি আসছে?
ডাক্তার= বাবা তোমরা অনেক ভাগ্যবান তাড়াতাড়ি রোগ ধরা পড়েছে। তোমার বোনের লিভার ক্যান্সার?
বাবু= কি? আপনি ভালো করে চেক করেন।
ডাক্তার= হ্যা। আমি কয়েকবার চেক করেছি। লিভার ক্যান্সারের ফলে তোমার বোনের শরীরে
রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়েছে তাই ওর স্বাস্থ্য
কমে গেছে আর শরীরও খুব দুর্বল।
বাবু= আঙ্কেল আমার বোন সুস্থ হয়ে যাবে
তো!
ডাক্তার= বললাম না, তোমরা অনেক ভাগ্যবান। ঠিকমত থেরাপি দিলে ৩মাসের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে যাবে।
বাবু= আঙ্কেল খরচ কত যাবে?
ডাক্তার= বাবা খরচ ৯০হাজার টাকা যাবে, তবে আমি তোমার জন্য ৫হাজার সেক্রিফাইস করবো।
বাবু= থ্যাংক ইউ আঙ্কেল। আপনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
.
বাবু এটা বলে চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এলো। ডাক্তারকে বলে এসেছে, কিন্তু এত টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবে তা ভেবে কুল পাচ্ছেনা বাবু। তার বাবাটারও বয়স হয়েছে তাই দিনরাত পরিশ্রম করতে দেওয়া যাবেনা।
.
নাহ আমাকেই কিছু করতে হবে। তারপর দিন
থেকেই রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। দৈনিক সকাল ৭টা থেকে রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে সবার থেকে ১০টাকা ভাড়া বেশি নিয়ে ১৫০০-১৮০০টাকা পাই। আর হসপিটালে প্রতি সপ্তাহে ১০৫০০ টাকা করে দিতে হয়।
.
তমা= তো আপনি ঘুমান কখন?
বাবু= ঐ যে বাসায় যাই রাত ৩টায়। সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ি।
.
এসব কথা শুনে তমা কেঁদে ফেললো। একটা
ভাই তার বোনকে এতটা ভালোবাসতে পারে তা
আগে কোনদিন দেখেনি। আসলে তারও তো
কোন ভাই নেই। জানবে কি করে!
.
তমা= আচ্ছা চিকিৎসা খরচ আর কত লাগবে?
বাবু= এখন পর্যন্ত ৪৫০০০টাকা দিলাম। আরো
৪০০০০টাকা লাগবে। অসুবিধা নেই, ইনশাআল্লাহ
এভাবে আমি প্রতিদিন টাকা জোগাড় করে ফেলবো।
তমা= হুমম। এই দাড়ান আমার বাসার কাছে এসে
গেছি, আমাকে এখানে নামিয়ে দিন। এই নিন ৫০টাকা।
বাবু= ধন্যবাদ ম্যাডাম।
.
তমা বাসায় গিয়ে তার বাবাকে সব খুলে বললো। আর এটাও বললো ছেলেটাকে সে বিয়ে করবে এবং পিংকির চিকিৎসার বাকি টাকাগুলো সে
দিবে। কয়েকদিন পর ন্যাশনাল হসপিটালে গিয়ে তমা পিংকির চিকিত্সার বাকি টাকা দিয়ে এলো।বাবু যখন সপ্তাহ শেষে টাকা দিতে গেলো তখন
জানলো তমা নামের একটি মেয়ে সব টাকা পরিশোধ করে গেছে। রেজিষ্ট্রি চেক করে দেখলো তমার সাথে যোগাযোগের কোন ঠিকানা ও নাম্বার দিয়ে যায়নি।
.
দুইমাস পর। এখন পিংকি পুরোপুরি সুস্থ্য। আজকে পিংকিকে রিলিজ করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে বাবু ও তার বাবা-মা। হাসপাতাল থেকে বের হবে এমন সময় তমা একটি ফুলের তোড়া হাতে ওখানে এলো। ফুলের তোড়াটা পিংকিকে দেওয়ার পর..
পিংকি= থ্যাংকস। কিন্তু আপু, আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।
তমা= আমি তোমার ভাবি।(কানে কানে বললো)
পিংকি= কি!
তমা= এই চুপ চুপ।
বাবু= এই যে আপনি এখানে কি চান? আর
আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি মনে হচ্ছে।
তমা= আন্টি আপনারা পিংকিকে নিয়ে বাসায় যান। বাবু একটু এদিকে আসুন।
.
পিংকিকে নিয়ে তার বাবা মা চলে গেলো।
বাবু= আপনি কে বলুন ত! আপনাকে খুব চেনা
চেনা লাগছে, ও হ্যা মনে পড়েছে আপনি একদিন
আমার রিক্সায় করে মার্কেট থেকে প্রবর্তক মোড়ে আসছিলেন।
তমা= মনে রেখেছেন তাহলে!
বাবু= আচ্ছা আপনাকে তো আমার অনেক কিছু
বলেছি, তারমানে..
তমা= হ্যা আমিই তমা।
বাবু= তো আপনি টাকাগুলো কেন দিলেন? আমাকে দয়া করেছেন?
তমা= ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছেন! আমি তো আপন ভেবে আপনাকে হেল্প করলাম।
বাবু= আমি আপনার কেমন আপন?
তমা= না মানে, স্ত্রী হিসেবে হেল্প করলাম।
বাবু= মানে?
তমা= আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আপনার
হৃদয়ে একটু জায়গা দিতে পারবেন?
বাবু= ম্যাডাম কোথায় আপনি আর কোথায় আমি!
তমা= শোনেন, যে ভাই তার বোনকে এতটা ভালোবাসতে পারে, তার কাছে আমি অসুখী থাকবো না এটার গ্যারান্টি আছে। আপনার বোনকে দেওয়ার পর একটু ভালোবাসা
আমায় দিবেন, আর কিছু লাগবেনা।
বাবু= সবকিছুতো প্ল্যান করেই বসে আছেন, তো আমি রাজি না হয়ে উপায় আছে...এহহহ এখন
একদম লজ্জাবতী হয়ে যাচ্ছে...
তমা= হি হি হি...
লেখাঃ নাদিম মাহমুদ
© মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment