Skip to main content

ভালবাসার একাল-সেকাল

"ভালবাসা নিবেদন"
সেকালেঃ

- আপনাকে আমার কিছু বলার ছিল...
হঠাৎ করে তোতলা হয়ে যাওয়া ছেলেটি ঢোক গিলে কোন মতে কথাটা বলে ফেলল ।
- বলুন , কি বলবেন । সেই কখন থেকেই তো বলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন । বলুন, আমি কিছু মনে করব না ।
গাল লাল লাল করে মেয়েটি লজ্জাবতী গাছের মত নুয়ে পড়তে পড়তে বলল ।
- এই ফুলটা না ....আপনার জন্য । 
লাল রক্তগোলাপ এগিয়ে দিল ছেলে , হাত দুটো অনবরত মৃগী রোগীর মত কাঁপছে , 
- ও আল্লাহ , এত সুন্দর ফুল!!! আমার জন্যে? মেয়ে এমন ভাব যেন জন্মে ফুল দেখে নাই ।
- আপনি না ....এই ফুল থেকেও সু ..ন্দর ।
ক্রমশ সাহসী হতে থাকা ছেলেটি এবার বলে ওঠে ।
- যাহ্, কি যে বলেন । আমি কি আর সুন্দর ..
মুখ ঝামটা মেরে বলে উঠে মেয়ে, কন্ঠে কৃত্রিম রাগের উষ্ণতা ।
- আপনি আমার চোখে সেরা । এর জন্যই তো আপনাকে আমি ....
- আমাকে আপনি ...কি ...বলেন না ।
বলা আর হল না ছেলের । কেন জানি গলা খালি খুশখুশ করে । অতএব, লজ্জাবতীই বলে দিল কাল যেন ধানমন্ডি লেকে সকাল দশটায় দেখা হয় ।
সে যুগে " ভালবাসি " শব্দটা উচ্চারিত হতে দাঁত কপাটি লেগে যেত । প্রাধান্য পেত অনুভূতি, কিছু শব্দ থাকত অনুক্ত ।

একালেঃ

- হাই । আপনার প্রোফাইল পিক'টা না ....খুব সুন্দর । যেদিন দেখেছিলাম আপনার পিক , সেদিনই ক্রাশ খেয়েছিলাম ।
- হুম, দেখলাম তো । আমার ওই পিক'টাতে আপনি লাভ সাইন দিয়েছিলেন 
- আচ্ছা, আপনার ইমো আছে ? তাহলে ভিডিও কল করতে পারতাম ।
- কেন ? আমাকে কল করবেন কেন ? 
মেয়ে একেবারে ধমকে উঠল । লজ্জার কোন অস্তিত্ব নেই ।
- না মানে কিছু প্রাইভেট কথা বলতাম ।
- কথা তো এই মেসেঞ্জারেই হচ্ছে । ইমোতে সবার সাথে আমি কথা বলি না ।
- তাহলে অন্তত ফোন নাম্বারটা দিন । এমনি কল দেব ।
- কি আশ্চর্য, আপনাকে চিনি না, জানি না । কেন নাম্বার দেব ?
চলে তাদের কথোপকথন । মেয়ে ইঙ্গিতে কিছু বলে না । কিছুদিন এমন ঘুরানোর পর মেয়ে তার ইমোতে ভিডিও কল করার অনুমতি দিয়ে দেয় ।

একালেও "ভালবাসি "শব্দটি উচ্চারিত হয় না। যুগের সাথে ভাষার ব্যবহারও পাল্টেছে । ভালবাসার সমার্থক শব্দ এখন "ক্রাশ খাওয়া"।
.

"ভালবাসার দিনগুলো"
সেকালেঃ

কাঠফাঁটা রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় মেয়েটি, ছেলে এল দৌড়াতে দৌড়াতে ।
- সরি সরি । তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছি সেই কখন থেকে । ছেলেটার মা একদম ছাড়তে চায় না, খালি বলে আরেকটু পড়াতে । ভাবছি , এই টিউশনিটা ছেড়েই দেব ।
- আমার জন্য এই টিউশনি ছেড়ে দেবে , কোন মানে হয় ? একটু যাই বা দেরি হয়, ক্ষতি তো নেই । তোমার জন্য নাহয় দাঁড়ালামই কিছুক্ষণ ....

সে যুগে, অপেক্ষার মুহূর্তগুলো কখনও বিরক্তিকর লাগত না কারন প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা করাই ছিল প্রধান ।

একালেঃ

মেয়ে অপেক্ষা করবে ছেলের জন্য ???? স্ট্যাটাস বলে কিছু থাকবে নাকি? তবুও মাঝে মাঝে ছেলের দেরী হয়ে যায় , মেয়ে বসে বসে মেগাবাইট শেষ করতে থাকে ।
- সরি । লেট করে ফেলেছি ।
- তুমি পেয়েছ কি ? হাফ আওয়ার ধরে ওয়েট করছি , এমন আরও করলে কিন্তু ব্রেক আপ ....
অতঃপর আরোও কিছু মান অভিমান এবং পরে একগাদা ছবি তুলে ফেবুতে আপলোড দিয়ে " লাইফ ইজ বিউটিফুল " জাতীয় কমেন্ট । 
একালে সম্পর্ক যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, মানুষকে দেখাতে হয় "অল ক্লিয়ার " ।
.

"ঝগড়া"
সেকালেঃ

- এই , কিসের গন্ধ পাচ্ছি, তুমি আজকেও সিগারেট খেয়ে আমার কাছে এসেছ? কতবার বলেছি , এটা বন্ধ কর । নইলে আমি চলে যাব চিরদিনের জন্য । 
- আর খাব না , প্রতিজ্ঞা করছি । আসলে খুব টেনশনে থাকি তো, তাই মাঝে মাঝে খাওয়া পড়ে আরকি ....
- আর কখনও খাবে না ...যদি আবার খাও ....

একালেঃ

- কি সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাক । আমি এতক্ষণ ধরে যে তোমার সামনে বসে আছি, চোখে দেখ না? 
মেয়ে মুখ ভার করে বলে ।
- এই তো, আরেকটু । একটা আপলোড দিয়ে নেই ।
- তুমি কার সাথে ওইদিন ঘুরলে ? ওই মেয়ে কে ? দেখলাম এত্তগুলা পিক তুলল তোমার সাথে । তাও আবার আমার সামনে, তুমি তো কিছুই বললে না । হাসি মুখে ছবি তুললা ।
- আরে আজিব । ও তো আমার খালাতো বোন । আমাদের সবার আদরের ছোট বোন বলে একটু আহ্লাদি আরকি ।
- কোন এক্সকিউজ দিবা না । সব মেয়ের সাথেই তুমি এমন কর । মেয়ে দেখলেই হুশ থাকে না , না?
-আরে, এইসব কি ধরনের কথা? 
ছেলে যতই বোঝায়, মেয়ে ততই অবুঝ হয় ।

একালের মানুষ যান্ত্রিক তাই তাদের ঝগড়াও যন্ত্র কেন্দ্রিক ।
.

"ভাব“
সেকালেঃ

- এই দেখ, আকাশে ইয়া বড় একটা চাঁদ উঠেছে । জোছনায় থৈথৈ করছে চারদিক ।
- তাই নাকি ? আমার যে ছাদে যাওয়া বারণ । বাড়িওয়ালা ছাদে যেতে দেয় না । কিন্তু তাই বলে কি জোছনা দেখব না ? রেডি থাক, আমি আসছি ।
মেয়েটার বাড়ির সামনে এসে হাজির হয় ছেলে । ছাদের কিনারে এসে দাঁড়ায় মেয়ে । জোছনায় স্নাত হয় দুজনে ...জোছনা বিলাস।

সে সময় আনন্দ খুঁজতে দুরে কোথাও যেতে হত না । চারপাশ জুড়ে ছিল কেবল আনন্দের খোরাক ।

একালেঃ

রেষ্টুরেন্টের আলো আঁধারির মাঝে দুজন মুখোমুখি ।
- এই জায়গাটা কিন্তু বেশ সুন্দর । নিরিবিলি , কেউ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে না ।
মেয়ে খুশি খুশি গলায় বলে ।
- আমি একটা রেষ্টুরেন্ট চিনি , সেটা আরোও ভাল । সার্ভিস ভাল সেইসাথে নিরিবিলি । তোমাকে নিয়ে যাব এর পরের বার ।
অতঃপর দুজনে খাবারে মন দেয় ।

একালের মানুষগুলো আনন্দ খুঁজে বেড়ায় চারপাশ দেয়াল ঘেরা কৃত্রিম শৌখিনতায় ।

"সম্পর্কের পরিণতী"
সেকালেঃ

- বাবা পাত্র দেখছে আমার জন্যে । এই নিয়ে তিনটা ছেলে পক্ষ আসল , কোনমতে আটকেছি । এবার কিছু একটা কর । বাবাকে আমি আর কি অজুহাত দেব? 
মেয়ে মরিয়া হয়ে প্রশ্ন করে ।
- ঠিক আছে , ঠিক আছে । এত টেনশন কর নাতো । আমার বাবা যে শক্ত গুটি, কিভাবে যে কথাটা তুলি ....
ছেলে মাথা চুলকায় ।
- আমি কিচ্ছু জানি না । তুমি এখনই যা করার কর । নইলে পরে কিন্তু আমি আরেক ছেলেকে বিয়ে করে ফেলব ...
মেয়ের মিথ্যা হুমকি শুনে ছেলে ভয় পেয়ে যায় । অগত্যা বুকে ফু ফা দিয়ে বাবার কাছে নিজের বিয়ের কথা বলে ।
অতঃপর দুজনকে রাশি রাশি ফুলে সজ্জিত ঘরে মুখোমুখি বসে থাকতে দেখা যায় ।

সে যুগে সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়াত । দুজনেরই সম্পর্কের প্রতি দৃঢ়তা, সততা এবং বিশ্বাস ছিল ।

একালেঃ

- তুমি কিছু করবে এবার? বিয়ে তো করতে হবে আমাদের, নাকি? 
মেয়ে শুধায় ছেলের ঢিলেঢালা ভাব দেখে । 
- হ্যা, চিন্তা করছি তো । আমি আরেকটু সেটেলড্ হয়ে নেই । বিয়ে তো পালিয়ে যাচ্ছে না । 
- তুমি সম্পর্কের ব্যাপারে সিরিয়াস তো? তোমার হাবভাব দেখলে তো মনে হয় , এখনও গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরার ইচ্ছা আছে ।
- আরে কি আজব । ঝগড়া করতে চাইছ মনে হচ্ছে? আসলে কি জান , সংসার ব্যপারটা অনেক ঝামেলার, অনেক দায়িত্বের । এত দায়িত্ব নিতে ভাল লাগে না ।
- কি বললা? তাহলে রিলেশনে আসছিলা ক্যান? জাস্ট ফান করার জন্য ? ......ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এ যুগে ছেলে মেয়েরা বিয়েটা নিজ দায়িত্বে করে । এ যুগে কারও বিয়ে হয় না ...বিয়ে করে । সম্পর্ক চলে হালকা চালে । সম্পর্কের শেষ পরিণতি নিয়ে কেউ আগে থেকেই ভাবতে বসে না । তাই এই সম্পর্কগুলোর মাঝে খুব অল্প সম্পর্কই শুভ পরিণতির দিকে গড়ায় ।
.

তো , ভাই সকল । এইসব দেখিয়া একখানা গানের কথা স্মরণে আসিল ।
"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, আমরা 
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।।"

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...