এতটুকু লেখা একটানা পড়লাম ডায়েরি থেকে। কিন্তু এর পরে কি হলো? আসিফ আর মিশি কাকে দেখেছিলো?
এই প্রশ্নটাই মাথা দিয়ে ঘুরতে লাগলো। এরপরে কি ঘটেছে তা জানতে পরের পৃষ্ঠা উল্টাতে গেলাম কিন্তু কিছুতেই পরের পৃষ্ঠা উল্টাতে পারছিলাম না। আমি স্পষ্ট দেখছিলাম ডায়েরিতে আরও অনেকগুলো পৃষ্ঠা রয়েছে পড়ার জন্য এবং মনে হচ্ছিল সেগুলো আঠা দিয়ে লাগানো। কিন্তু আমি হাজার চেষ্টা করেও পরের পৃষ্ঠাটা কিছুতেই পাল্টাতে পারছিলাম না। একে মনে থাকা প্রশ্নগুলো আমার মাথায় ঘুরে মাথাটা নষ্ট করছিলো, তার উপর এতো চেষ্টা করার পরেও কিছুতে পৃষ্ঠা পাল্টাতে পারছিলাম না। এর মধ্যেই আমার মাথায় প্রচুর যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায়। আমার মাথা প্রচুর ব্যথা করতে শুরু করে।
হঠাৎ আবার আমি সেই গোলাপের গন্ধ পেয়ে আৎকে উঠলাম। গোলাপের গন্ধ পেয়ে যেই পিছনে তাকালাম দেখলাম, রমিজ চাচা চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি রমিজ চাচাকে দেখে আৎকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে উঠলাম। রমিজ চাচা না একটু আগে মোবাইলে আমাকে বললো যে সে এখনো গ্রামেই আছে! তাহলে এখন আবার কে আসলো! অবাক হয়ে রমিজ চাচাকে প্রশ্ন করলাম,
-রমিজ চাচা! তুমি?
এরপর রমিজ চাচা উত্তর দিলো,
-জ্যা বাবু। আসলে চা বানাইতে গিয়া একটু ঘুমাইয়া গেছিলাম। হঠাৎ ঘুম থিকা উইঠা মনে পড়লো যে, আপনে চা খাইতে চাইছিলেন। তাই আপনের লাইগা চা বানাইয়া নিয়া আইছি।
এরপর আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম, কিছুক্ষন আগেই তো আমি পুরো বাড়ি খুজে এসেছিলাম কিন্তু রমিজ চাচাকে তো কোথাও খুজে পাই নি। আর রমিজ চাচাতো মোবাইল করার পর আমাকে বললেন যে, সে এখনও গ্রামের বাড়িতেই আছেন আর তার ফিরতে আরো ২ দিনের বেশি সময় লাগবে। তাহলে আমার সামনে এখন কে দাড়িয়ে আছে? আমি কিছুটা কাঁপা কন্ঠে রমিজ চাচাকে প্রশ্ন করলামঃ
-আমি তো পুরো বাড়ি তোমায় ডাকতে ডাকতে খুজলাম কিন্তু তোমাকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না। তুমি কোথায় ঘুমিয়ে ছিলে?
-জ্যা বাবু। খুব গরম লাগতাছিলো তাই ছাদে গিয়া ঘুমাইতাছিলাম। আপনে তো জানেনই যখন আমি ঘুমাই আমার আর কোন হুশ থাকে না। তাই হয়তো ডাক শুনতে পাই নাই।
-কিন্তু আমিতো তোমায় কল দিলাম। তুমি বললে যে তুমি এখনো তোমার গ্রামের বাড়িতেই আছো! আসতে আরো ২ দিন লাগবে?
-কি কন বাবু? আমার মোবাইল তো নষ্ট। আর এইসব কথা আমি কেন কমু?
আমি রমিজ চাচার কথা শুনে অনেক চিন্তায় পরে গেলাম। রমিজ চাচাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে সে মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু আমিতো একটু আগেই রমিজ চাচার সাথে ফোনে কথা বললাম। এরপর মোবাইলটা বের করে যেই দেখতে গেলাম যে রমিজ চাচার সাথে কয়টা বাজে মোবাইলে কথা বলেছি। তখন আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম। আমার মোবাইলে দেখাচ্ছিলো গত ২ দিনের মধ্যে রমিজ চাচার সাথে মোবাইলে আমার কোন কথাই হয়নি। আমি অবাক হয়ে রমিজ চাচার মুখের দিকে তাকালাম। তাহলে আমি একটু আগে কার সাথে মোবাইলে কথা বললাম! আমার মাথায় তখন কিছুই আসছিলো না। আমি দ্বন্দ্বের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার সাথে এসব কি ঘটছে! কি এই ডায়েরির রহস্য! আর কোনটা আসল রমিজ চাচা! এটা নাকি যার সাথে আমি কিছুক্ষন আগে কথা বললাম সে! আর এই ডায়েরির পরের পৃষ্ঠাগুলোই বা কেনো খুলছে না!
এইরকম আরো অনেক প্রশ্নই আমার মস্তিস্কে ঘুরতে থাকে। তখন আমার মাথা প্রচন্ড যন্ত্রনা আরও বাড়তে থাকে। আমি প্রচুর ভয় পেতে থাকি। আমি বুঝতে পারছিলাম যে, ভয়ে আমার পুরো
শরীর কাঁপছিলো। আমি তখন অজ্ঞানপ্রায়। ঠিক তখনি রমিজ চাচা আমার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায়। আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-বাবু। আপনে অনেক ক্লান্ত। আপনে অনেক অসুস্থ হইয়া পড়ছেন। আপনের এখন ঘুম প্রয়োজন। আপনে আমার লগে ঘরে চলেন। আপনে এখন ঘুমাইবেন।
আমি আর কিছুই বলতে পারছিলাম না। আমার যেনো মনে হচ্ছিল, কেউ আমাকে হিপনোটাইস করেছে। আমার পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে যেতে লাগলো। আমার চোখ গুলো লেগে আসতে লাগলো। আমি বুঝতে পারলাম যে রমিজ চাচা আমাকে ধরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর আমার চোখ লেগে গেলো। আমি মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment