Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - ০৫)

স্টুডেন্টরা ভ্যাম্পায়ারদের প্রতি মুগ্ধ। কারণ প্রথম পর্বেই বলা হয়েছে। ভ্যাম্পায়ারদের বডি সুগঠিত। তাদের চোখ, চুল, নাক সব কিছু একদম পারফেক্ট।
এখন ভ্যাম্পায়ারদের গিফট পেয়ে প্রতিক্রিয়া :
মারিয়া আর ছোট লেডি ভ্যাম্পায়ার লাবনি ছেলের কাছ থেকে অনেক গোলাপ ফুল পেলো। অভি মেয়েদের চকলেট পেয়ে খুশিতে আকাশে উড়ে গেলো। সব গুলো ফিগটই একসেপ্ট করে নিলো। সৌরভ তার পাওয়া গিফট অভিকে দিয়ে দিলো। আর আমার খালিদ সব মেয়েদের গিফট রিজেক্ট করে দিলো।
আর আমার এই চকলেটের গিফট আমি নিয়ে নীলের কাছে গেলাম।
- নীল, তোমাকে আমার হয়ে একটা কাজ করতে হবে। আমি জানি তুমি আমার ওপর রেগে গিয়েছে। না জানি আমি কি করেছি কিন্তু...
- কি করা লাগবে তাই বলো।
- এই গিফট খালিদের কাছে পৌছিয়ে দিবা?
নীল কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। অবশেষে আমার হাতের থেকে গিফট নিয়ে নিলো।
.
নীল খালিদকে গিফট ডেলিভারি করেছে কিনা জানতে ওর রুমে যায়। ঘরে কোথাও ওকে পাওয়া গেলো না। এ সময়ে নীলের রুমেই থাকার কথা। আমি দেখলাম বাথরুমের দরজা বন্ধ।
- নীল, আমি জানি তুমি বাথরুমে আছো।
- নওরিন, এখন যাও পরে এসো।
- তুমি আগে বাথরুম থেকে বের হও।
- বললাম না যাও।
- আমিও বলেছি বের হও। আজ avoid করা চলবে না।
আমার কথায় বাথরুমের দরজা খুলে গেলো। আমি বাথরুমের দরজা খুলে দেখি নীল মাথায় হাত দিয়ে হাটু গেড়ে বসে আছে। তার সামনে একটা চকলেট কেক, আর তার সামনে তমা।
- তমা!
আমার কথায় তমা উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাছে আসল।
- তমা, তুই এখানে কি করছিস?
- নওরিন....
- চকলেট কেক!!! নীলের জন্য!!!
- আহ! তমা তুমি এখান থেকে এখন যাও।
- আচ্ছা, চল নওরিন।
- না, নওরিন এখানেই থাকবে। ও পরে আসবে। তুমি যাও।
তমা একবার আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
আমি নীলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।
- তমা জানে না যে তুমি চকলেট একদম পছন্দ করো না।
- হুম, কিন্তু তুমি জানো নওরিন।
- তা তো জানি।
- তুমি সব সময় যাদের পছন্দ করো তাদের পেছন ছাড়ো না। এতে অন্য জন বিরক্ত হয়ে গেলেও পেছন ছাড় না।
- এটা কি আমার প্রশংসা নাকি অপমান?
নীল আমার কাধ চেপে ধরল।
- নওরিন।
- কি হয়েছে নীল? তুমি হাপাচ্ছ কেনো?
নীল আমার কথার না উত্তর দিয়েই মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়লো। আমি নীলের মাথায় হাত দিয়ে দেখালাম খুব গরম।
- একি!!! তোমার তো খুব জর!!! তোমার রুমমেট কই?
- ও বাড়ি গিয়েছে।
- তুমি শুয়ে পড় আমি আব্বুকে ডেকে আনছি।
আমি চলে যাবো এমন সময় নীল আমার হাত চেপে ধরল।
- না, প্লিজ। আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না।
- আচ্ছা, তুমি শুয়ে পড়।
- না, আমি শুয়ে পড়লেই তুমি আবার চলে যাবা।
- আমি নীল না যে কথা শেষ না হতেই চলে যাবো।
নীলকে আমি জোর করে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম। ঘর থেকে বাটিতে করে পানি নিয়ে আসলাম। আমার স্কার্টের পকেটে রুমাল ছিলো। সেই রুমাল দিয়ে বাটিতে পানি নিয়ে নীলের মাথায় দিতে লাগলাম।
- নওরিন!!!
- হুম, বলো।
- তুমি আমাকে খুব ভালোভাবে চেনো।
- হুম।
- সবার থেকে ভালোভাবে চেনো।
- হুম।
- ওই, চকলেট কেক তুমি খেও।
- আমার পরের কেকের ওপর লোভ নেই। তবে এতো করে বলছ যখন আমিই কেকটা খেয়ে শেষ করব।
- খালিদ....
নীলের মুখে খালিদের নাম শুনে এবার আমি চমকে উঠলাম।
- খালিদ পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার। তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
- খালিদের সাথে আমার কি সম্পর্ক তা আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না।
আমার কথায় নীল উঠে বসে পড়ল।
- খালিদকে কি তুমি ভালোবাসো?
- নীল!! তোমাকে শুতে বলেছি।
- না আগে তুমি আমাকে বলো খালিদের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
আমি নীলকে আবারও ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলাম।
- চুপ। একদম চুপ। আর কথা না। এবার উঠলে বিছানার সাথে দড়ি দিয়ে বেধে দেবো।
- খালিদের কাছে সব আছে। ওর এতো পাওয়ার ও যা চাইবে তাই পাবে। কিন্তু আমার কাছে তুমি ছাড়া কেউ নেই নওরিন। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ বোঝে না।
আমি নীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
- আমি কোথাও যাচ্ছি না নীল। আমি তোমার পাশেই আছি। ঘুমাও।
নীল আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেলো। এই নীল জরে পড়ে সব সত্যি কথা বলছে। তাছাড়া সবার সামনে কঠিন আর গম্ভীর সেজে বেড়ায়।
.
কয় মাস আগে নীলের মা বাবা একটা পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার শিকার করতে গিয়ে মারা যায়। তার পর থেকেই নীল কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেছে।
.
বাইরে খুব বাতাস হচ্ছিলো। নীলের রুমের জানালাটা খোলা ছিলো। নীল পুরোপুরি ঘুমালে আমি উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এখান থেকে ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলটা দেখা যায়। ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলের বারান্দায় আমি একটা ছায়া দেখতে পেলাম। ছায়াটা বেশ লম্বা। খালিদ এই কলেজের সব চেয়ে লম্বা ছেলে। তাই ফলাফল দাঁড়ায় যে ছায়াটা খালিদের। খালিদের দিকে মুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় খাকিদের চোখ আমার ওপর পড়ে। আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নি আর জানালা বন্ধ করে দি।
.
সকালে নীলের জর ছেড়ে যায়। আমি আমার রুমে ফিরে যায়।
- তুই রাতে কোথায় ছিলি?
জানতাম যে তমা প্রশ্ন করবে।
- নীলের খুব জর ছিলো তাই ওখানে ছিলাম।
- কি? নীলের জর? আমাকে ডাকলি না কেনো?
- আরে নীল আমাকে কাউকেই ডাকতে দেয় নি। এমনি তে তো খুব জেদি। জর হয়েছে বলে আরো বাচ্চা জেদি হয়ে গেছিলো।
- ও আচ্ছা।
- হুম।
- আমার না ভ্যাম্পায়ারদের ওপর খুব রাগ লাগে।
- কেনো?
- তুই জানিস না নীলের মা বাবাকে মেরে ফেলেছে?
- জানি তো।
- ভ্যাম্পায়ার খুব খারাপ জিনিস। মানুষের রক্ত খায় আর পারলে তাদের মেরেই ফেলে। একদম নিষ্ঠুর।
- কিন্তু এই কলেজের ভ্যাম্পায়ারগুলো খুব ভালো আর আমাদের মতো সাধারণ খুব।
- সাধারণ!
- মানে আমাদের মতোই আর কি।
- যাই বলিসস রক্তচোষা পশুদের আমি ঘৃনা করি।
- কিন্তু আমি তো এক জন রক্তচোষা কে চিনি যে খুব ভালো। আর যে আমার জীবন বাঁচিয়েছে।
- কি বললি?
- না, কিছু না।
.
সকালে আব্বুর দেওয়া নতুন দায়িত্ব এর মুখোমুখি হলাম।
- মা, কিছু স্টুডেন্ট নিখোঁজ।
- তো?
- আমরা সন্দেহ করছি যে যেই ভ্যাম্পায়ার তোমাকে আটাক করেছিলো এটা তাদের কাজ।
- তাদের আসল উদ্দেশ্য কি?
- সেটা জানা যায় নি।
- নীলের তো জর ছিলো। ওকে এসব না বলায় ভালো।
- আমি নতুন একজন ভ্যাম্পায়ার হান্টারকে কলেজে ডেকেছি। সে আজ থেকে টিচার হিসেবে তোমাদের আশেপাশে থাকবে।
- আর নীল?
- নীল তো এখনো খুব ছোট। যাকে ডেকেছি সে একজন অভিজ্ঞ ভ্যাম্পায়ার শিকারি।
- আমার কি করণীয়?
- তুমি নিজেকে সেফ রাখবা যেগেতু একবার তোমার ওপর হামলা হয়ে গেছে।
- নিজেকে সেফ করার জন্য আমি পড়ালেখা বাদ দিয়ে রোজ ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে থাকতে পারব না।
- তো কি করব এখন?
- আমাকেও ভ্যাম্পায়ার মারার কিছু অস্ত্র দাও। আমি জানি আব্বু তোমার কাছে ওগুলো আছে।
- তুমি ব্যবহার করতে পারবে?
- কেনো পারব না। কলেজ ক্যাপ্টেন হিসেবে আর তোমার মেয়ে হিসেবে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে।
- তুমি যখন বলছ তখন তোমাকে ভ্যাম্পায়ারদের মারার স্টিক দিচ্ছি। কিন্তু প্রমিছ করো এই স্টিক ধরতে গিয়ে অসস্তি লাগলে ছেড়ে দিবা।
- ঠিক আছে।
.
ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিক। দেখতে কালো রং এর। ধরতে আমার কোন অসুবিধা হলো না। আব্বু বরাবরই বেশি ভয় পায়। সারা দিন ক্লাস হলো। সেই নতুন টিচারকেও দেখলাম। টিচারের নাম রানা আর আমার আব্বুর বয়সী। দেখে রাগী আর গম্ভীর মনে হলো। কেনো জানি নীলের ছাপ পেলাম এই টিচারের ওপর।
.
রাতেই সাধারণত ভ্যাম্পায়ার নিজেদের শিকার খোঁজে। তাই আমিও স্টিক নিয়ে রাতেই বের হলাম। কলেজের বারান্দায় হাটতে হাটতে আমার মনে মনে থ্রিল আসছিলো। আগে খালিদ আর নীল আমাকে সব সময় প্রটেক্ট করত। এই প্রথম আমি পুরো কলেজটাকে প্রটেক্ট করতে পারব। আমার পেছনে কারো হাটার আওয়াজ পেলাম। কিন্তু পেছনে ফিরে কাউকে দেখলাম না। আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। নিজের পেছনে একদম কাউকে অনুভব করতে পারছিলাম। তাই চিন্তা ভাবনা না করেই স্টিকটা সোজা পেছনে ঘুরে মেরে দিলাম। আমার পেছনে খালিদ দাঁড়িয়েছিল। আমার স্টিক সে তার হাত দিয়ে ধরে ফেলল। তার হাতে যেখানে স্টিক ধরা ছিলো, সাদা বিদুৎ এর মতো আলো ছুটছিলো। কিন্তু খালিদের চেহারা দেখে মনে হলো না তার কোন কষ্ট বা ব্যাথা হচ্ছে। পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের সত্যিই অনেক পাওয়ার। খালিদ আমার স্টিকটা টান মেরে আমাকে তার বুকের ভেতর টেনে নিলো। আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। বিষয়টা এতো তাড়াতাড়ি ঘটল যে আমার মাথা ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছিলো। কিছুক্ষণ পর হুস ফিরে পেয়ে খালিদের বুকের ওপর হাত দিয়ে নিজেকে খালিদের কাছ থেকে সরিয়ে নিলাম।
- তোমার হাতে কি লেগেছে? সরি?
- হিমা, আমি পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার। এসব অস্ত্র আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
- আচ্ছা ভালো।
.
আমি পেছন ফিরে ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলাম ঠিক তখনই নীলের সাথে ধাক্কা খেলাম।
- নীল জানো, কিছু স্টুডেন্টরা উধাও হয়ে গেছে। আমার খুব ভয় লাগছে।
-....
- নীল, শুনছ?
নীল আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো। এর আগে ওর মাথা নিচু ছিলো। নিজের পকেট হাতড়াচ্ছিলো।
- নীল, কিছু খুজচ্ছ? আমি খুঁজে দেবো?
আমি নীলের হাত ধরতেই নীলের চোখ আমার গলার কাছে পড়ল। নীল আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরল।
- নীল, কি করছ? ছাড়ো?
নীল আমাকে এমন ভাবে ধরল যেনো আমার পেছনে ওর বুক থাকে। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু একটা ছেলের গায়ে স্বভাবতই অনেক শক্তি থাকে। নীল আমার ঘাড়ে তার মুখ লাগিয়ে দিলো। এর পর তার মুখ খুলে গেলো আর আমি নিজের ঘাড়ে অনুভব করলাম নীলের দাত। নীল আমার ঘাড়ে দাত বসিয়ে টেনে টেনে রক্ত খাওয়া শুরু করল। আমার সারা শরীর রক্ত স্রোতে গরম হয়ে গেলো। আমার চোখ নিচের দিকে পোড়ল। সেই ট্যাবলেটের দিকে। ধাক্কায় নীলের পকেট থেকে ওটা পড়ে গেছে। এই ট্যাবলেট ভ্যাম্পায়ারদের কাছে থাকে। এই ট্যাবলেট খেয়ে তারা তাদের রক্ত খাওয়ার ইচ্ছা দমন করে রাখে।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...