Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - ১০)

মরার আগে সব কিছু জেনে মরতে চাই আমি। এটা অবশ্য খালিদকে বলা যাবে না।
- ঠিক আছে।
- কি ঠিক আছে?
- আমি তোমাকে সব বলব।
- সত্যি!!!
- আমার একটা শর্ত আছে।
- কি শর্ত?
আমার হাতটা খালিদ নিজের হাতের ভেতর নিলো আর হাতের উপর চুমু খেয়ে বলল,
- আমার জীবনসঙ্গী হও হিমা।
.
আমার উত্তর দেওয়ার আগেই পেছন থেকে ঘুষির শব্দ এলো। যেনো কেউ দরজায় ঘুষি মেরেছে। আমার আর খালিদের নজর পেছনে চলে গেলো। খালিদের প্রশ্নে নীল দরজায় ঘুষি মেরেছে। খালিদের সব কথায় হয়ত সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শুনেছে।
- হিমা, এখনি বলো। তুমি কি চাও? আমার সাথে সারাটা জীবন থাকবা?
আমার মাথা নিচু হয়ে গেলো। আমার গাল লাল হয়ে গেছে আর বুকের ভেতর ধুকধুক করছে। ঠিক করেছিলাম আজ সুইসাইড করব। কিন্তু খালিদের প্রশ্নে আমি দিশেহারা হয়ে যায়। আমার হাতটা তখনো খালিদের হাতের ভেতর ছিলো। আমি নিজে ওই হাতটা শক্ত করে খালিদের হাতের ভেতর ধরলাম।
- হ্যা। আমি তোমার জীবনসঙ্গী হবো।
রাতে খারাপ স্বপ্ন দেখছি। সবাই মারা যাচ্ছে। চারিদিকে রক্তের ছড়াছড়ি। প্রভা নিয়ে ঘটনা ঘটার পর থেকে আব্বুর কোয়াটারে থাকি। কিন্তু ঘুম আমার হয় না।
.
খালিদের প্রপোজ করার পর আমি খালিদের সাথে কলেজে হাটি। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। খালিদ আমাকে সবার সামনে প্রপোজ করতে চেয়েছিলো। সব তার ইচ্ছা তে চলছে।
- হিমা, আজ আমাদের প্রথম ডেট। কোথায় যেতে চাও তুমি?
- এখান থেকে দূরে। শহরের ভেতর।
- ঠিক আছে।
.
খালিদ আমাকে পার্কে নিয়ে গেলো। নিরিবিলি জায়গা দেখে আমি বেঞ্চে বসলাম। আমার পাশে খালিদ বসল। খালিদের দিকে আমি মাথা উচু করে তাকাতে পারছিলাম না। পুরোটা সময় মাথা নিচু ছিলো।
- হিমা?
-.....
খালিদ আমার হাত ধরল। আমার গাল লাল হয়েছে। জানি না এমন কেন লাগছে। মরার প্ল্যান ভেস্তে গেছে। এখানে যেনো আমি অভিনয় করে বসে আছি।
- হিমা?
- হুম।
- কি হয়েছে? তুমি আমার সাথে খুশি না?
- না, আমি খুশি না।
-.....
-কেনো জানো? কারণ শর্ত দিয়ে আমাকে এখানে এনেছ তুমি।
- হুম। তাহলে এখন?
- আমাকে সত্যিটা বলো। এখন তো আমি তোমার লাভার।
- হিমা, তুমি সত্যিটা মেনে নিতে পারবা না। আসল সময় হলে তোমাকে বলব।
- আসল সময় আর কবে হবে? প্লিজ, হিমা কেনো? হিমা বলে ডাকো কেনো?
খালিদ আমার হাত ছেড়ে দিলো।
- চলো, বাসায় ফিরে যায়।
.
খালিদ আমাকে কোন উত্তর দেয় না। এদিকে আমি আর খালিদ যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা খেলছি ওদিকে নীল নিজের সমস্যায় ভুগছে। নীলের ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ। সৌরভ বিপ্লব ভাইয়ের খুব খেয়াল রাখছে। তবুও....
-সৌরভ, আমি জানি আমি আর বাচব না।
- না, ভাইয়া এভাবে বলো না।
- নীল কোথায়?
- ভ্যাম্পায়ার শিকারে গিয়েছে। ওর ডিউটি পড়েছে।
- ভালো, ও খুব ভালো ভ্যাম্পায়ার শিকারি। আমাদের আব্বু আম্মুর গর্ব। সব সময় আমাকে নীলের মতো হতে বলা হতো। কিন্তু আমি তার বড় ভাই।
- হুম, শুনছি।
- কতটা অপমানের তুমি জানো?
- জানি।
- হুম, সেই জন্য আমি প্রভার দলে যোগ দি। জানি ও খারাপ। মিথ্যা ভালোবাসায় আমাকে টেনে নিয়েছে অন্ধকারে।
- জানি তো আমি। আমি পাশেই আছি।
- নীলের অস্তিত্ব যেনো আমার জীবনের একটা বড় বোঝা।
- চুপ, শরীর খারাপ করবে। আর কিছু বলো না।
-.......
পেছন থেকে নীল সব শুনছিলো। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য খালিদের কাছে ছুটে গেলো।
.
খালিদের দিকে রিভলভার তাক করল।
- আমি মরব তবে তোমাকে মেরে যাবো।
- হুম, আমি পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার আমাকে মারা সহজ না। তুমি নিজে একটা ভ্যাম্পায়ার। আমাকে সম্মান করা উচিত তোমার।
- নিজের জীবনে কতজন নিষ্পাপ কে মেরেছ কে জানে!!! নওরিনকে ভ্যাম্পায়ার বানাবা আর ব্রাইড বানাবা তাই তো? আমি তা হতে দেবো না। নওরিন কখনো তোমার আর আমার মতো পশু হবে না।
- সময় আসলেই দেখা যাবে।
তখনি ঘরে আরেকটা খারাপ খবর চলে আসলো। সৌরভ ঘরে এসে খালিদ আর নীলের লড়াই তো থামিয়েছে কিন্তু....
- বিপ্লব ভাইয়ার অবস্থা খুব খারাপ। নীল একবার এসো।
.
নীল আর খালিদ দুজনেই ছুটে গেলো বিপ্লব ভাইয়ার কাছে।
- নীল, আমার কাছে আসো।
- জি, ভাইয়া। বলো?
- আমার রক্ত খাও।
- কি?
পাশ থেকে খালিদ বলল,
- নীল, তোমার ভাই ঠিক বলেছে। তোমার ভাইকে বাচানোর আর উপায় নেয়। তোমাকে রক্ত খেতেই হবে।
- আমার ভাই এভাবে বাচবে কিভাবে?
- আমি তোমার মধ্যে বাচব নীল। আমার সব রক্ত খেয়ে নিজের মধ্যে নিয়ে নাও। এরপর যখনি তুমি কোন ভ্যাম্পায়ার সফলভাবে মারবা আমি মনে করব আমি সফল হয়েছি।
- ভাইয়া!!!
- নীল, আমি যা বলছি তাই করো। আমার হাতে সময় নেই।
খালিদ নীলের ঘাড়ে হাত দিলো।
- হুম, আমি আছি। রক্ত খাও।
নীলের চোখে পানি ছলছল করছে। তার ভাইয়ের শেষ ইচ্ছা এইটাই। নীল নিজের ভাইকে বুকে টেনে নিলো। তারপর তার ভাইয়ের ঘাড়ে কামড় দিলো।
.
আপনারা মনে করবেন, এ আবার নতুন কি, নীল তো আমার রক্ত প্রায় খেত। কিন্তু এখন সে রক্ত খেলো নিজের ভাইয়ের প্রাণ নেওয়ার জন্য যা মানুষ খেকো ভ্যাম্পায়ার করে। খুব সহজ ছিলো না ব্যপারটা।
.
যাওয়ার আগে বিপ্লব ভাইয়া নীলকে শক্তি দিয়ে গেলো। নীল রাত টা তার ভাইয়ের পাশেই কাটিয়ে দিলো।
.
সৌরভ ভালোভাবেই জানত খালিদের আসল উদ্দেশ্য কি।
- তুমি নীলকে কেনো এমন করছ?
- কেমন করছি?
- তাকে ইউজ করছ মাত্র।
- হিমাকে বাচানোর জন্য আমি সব করতে পারি।
- তা আমিও পারি। হিমা, সাধারণ মেয়ে তার এসবে কি কাজ?
- হাসালে। হিমা সাধারণ মেয়ে না।
- মানে?
- হুম। সামনে হিমার খুব বিপদ আর আমি বা তোমরা মিলে ওকে বাঁচাতে পারব না। নীল একটা অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে আমার জন্য।
- পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার আর আমার বন্ধু হওয়ার জন্য আমি তোমার সেবা করব, তোমার হয়ে লড়াই করব। যত দিন এই প্রাণ আছে।
- হুম,
- কিন্তু তোমার উপর আমি নজরও রাখব।
- তাই?
- তুমি চাইলে বিপ্লব ভাইয়াকে বাঁচাতে পারতে।
-......
- সেই দিন হিমাকে বাচানোর জন্য যদি তুমি আমাদের সাথে যেতে এসব কিছুই হতো না।
- চুপ। আমাকে প্রশ্ন করবা না। আমি যা করি ভেবে চিনতে করি।
.
সবাই নিজের নিজের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। আমিও নিজের অসুস্থতা নিয়ে ব্যস্ত। আমার অসুস্থতা যেন ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। খালিদ আমাকে ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলে ডেকে পাঠালো। আমি অভির সাথে করে ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলে গেলাম। বাকিরা আমাকে আর খালিদকে একা ছেড়ে দিলো। আমার চারিদিকটা ঘুরতে লাগলো। আম সোফার উপর শুয়ে পড়লাম। খালিদ আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলো।
- হিমা, আমি তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানাবো? আমার ভ্যাম্পায়ার ব্রাইড হবা।
যেইটা আমি ছোট বেলার থেকে চেয়েছি তা আমি আজ পেয়েছি। খুশিতে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। খালিদের নজর আমার গলার উপর পড়লো। তার চোখ লাল হয়ে গেলো। খালিদের ও রক্তের পিপাসা লেগেছে।
- হ্যা, আমাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দাও।
খালিদ আমার গলার কাছে মুখ নিয়ে আসলো। পাশে সোফায় নিজের হাত মুট করে ফেলল পিপাসা ঠেকাতে। আমার গলায় চুমু দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো।
- হিমা, তোমাকে আমার প্রেমিকা হওয়ার নাটক করা লাগবে না।
খালিদ আমাকে একা ফেলে চলে গেলো। আমিও অভির সাথে নিজের ঘরে ফিরে গেলাম। অভি আমাকে বিপ্লব ভাইয়ার মৃতুর খবরটা দিলো। আমি তখনি নীলের কাছে যেতে যাব এমন সময় নীল আমার ঘরে ঢুকলো। অভি আমাকে আর নীলকে একা ছেড়ে দিলো।
.
আমি নীলের হাত স্পর্শ করতেই আমার শরীর আরো খারাপ লাগতে লাগলো। নীলের সারা গায়ে রক্ত মাখা দেখলাম। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি চারিদিকে রক্ত। আমি নীলের হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে উঠে বসি ভয়ে ভয়ে।
- আমার কাছে আসবা না বলে দিলাম।
- নওরিন!!! আমি...
নীল আমার কাছে আসতেই আমি ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিকটা বের করে তার উপর হামলা করে দিলাম। নীল নিচে পড়ে গেলো আর আমি ওর উপর উঠে বসলাম। নীল আমার হাত থেকে স্টিকটা নিয়ে তার রিভলভারটা ধরিয়ে দিলো।
.
আমার সেন্স ফিরে আসতেই আমি ছুটে বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে। নীলকে একটু আগে মারতে গিয়েছিলাম। আমি হয়ত পাগল হয়ে যাচ্ছি। নীল আমার পেছন পেছন ছুটল।
আমি আব্বুর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়লাম। চারিদিকে এখনো আমার চোখের সামনে রক্ত ভাসিছিলো।
.
বাইরে খুব ঝড় আর বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সবার জীবনেও ঝড় আর বৃষ্টি। আমি হাটুগুলো নিজের মুখের কাছে এনে মুখ গুছে কাঁদতে লাগলাম। আমার কানে জানালার কাচ ভাঙ্গার শব্দ হলো। আমি মাথা উচু করে তাকিয়ে খালিদকে দেখতে পেলাম। আমি ছুটে গিয়ে কিছু চিন্তাভাবনা না করেই ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...