Skip to main content

ডায়েরি (পরিচ্ছেদ - ০৯)

আমি আসিফকে সব ঘটনা খুলে বললাম। সেই ঘরের কথা, চাবির কথা, সিন্দুকের আর বাক্সের কাঁচের টুকরাগুলোর কথা। এরপর আসিফ আমাকে যা বললো তা শুনে আমি পুরো আকাশ থেকে পড়লাম।

-এইগুলো একটাও কাঁচের টুকরা না। এগুলো হীরার টুকরা। এইগুলো যে সে হীরা না। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী হীরা গুলোর মধ্যে একটি এগুলো। এর মূল্য কয়েকশো কোটি টাকার উপরে।

আসিফের মুখে এইসব কথা শুনে আমি আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম। আমরা ভাবছিলাম যে এতো মুল্যবান হীরাগুলো এই বাড়িতে আসলো কিভাবে?

রাত্রি অনেক ছোট তাই সে আমাদের কথার মানে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। আমি আর আসিফ চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম যে এই হীরা গুলোকে নিয়ে এখন কি করা উচিত। এরপর আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম যে সেই লোকগুলোর ভুত সেজে আমাদের ভয় দেখানোর কারণ কি ছিলো। হয়তো তারা জানতো যে এই বাড়িতে হীরা রয়েছে! কিন্তু তারা এটা জানতো না যে বাড়ির কোথায় হীরা রয়েছে! তাই তারা ভুত সেজে আমাদের ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়াতে চাচ্ছিলো। হয়তো এর আগের পরিবারগুলোকে এইভাবেই তারা তাড়িয়েছে। এরপর আসিফ বললো যে, এই হীরাগুলো আমাদের কাছে রেখে কোন লাভ নেই। এইগুলো আমরা সরকারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আসবো। হীরার প্রতি বা দ্রুত বড়লোক হওয়ার প্রতি লোভ আমারো কখনো ছিলো না। তাই আমিও আসিফের সাথে একমত হই এই ব্যাপারে। আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে, আগামীকাল সকালেই আমরা সরকারের কাছে এইগুলো বুঝিয়ে দিবো।

কিন্তু পরের দিন সকাল আর আমাদের জীবনে আসেনি। এই এক রাতই আমাদের জীবনকে পুরো পাল্টে দিয়ে যায়। আমরা সেই হীরার টুকরা গুলোকে ঘরের এক পাশে যত্ন করে লুকিয়ে রাখি এবং এরপর ঘুমানোর প্রস্তুতি নেই। কিন্তু ঘুমটা আর আমাদের চোখে আসেনি। আমরা ঘুমাতে যাবো ঠিক তখনি হঠাৎ ঘরের বাহির থেকে আমরা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই। এত রাতে বাহিরে কারা গুলি করছে?

একটু পর আমাদের ঘরের দরজাগুলো কেউ এসে জোড়ে জোড়ে ধাক্কাতে থাকে। আমি, আসিফ আর রাত্রি ৩ জনেই অনেক ভয় পেয়ে যাই। আমি আর রাত্রি দুজনেই ভয়ে আসিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলাম। আসিফের চোখের ভয়টা আমাকে আরো বেশি ভীত করে দিচ্ছিলো। আমরা ভেবেছিলাম যে, যাই হোক না কেনো দরজা আমরা কিছুতেই খুলবো না। কিন্তু ভাগ্য আমাদের সহায় হলো না। বাহিরের লোকগুলো ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজা ভেঙে আমাদের ঘরে ঢুকে গেলো। আমাদের ঘরে ৫ টা লোক ঢুকেছিলো। তাদের সবার হাতেই বন্দুক ছিলো। তাদের দেখেই মনে হচ্ছিলো যে তারা ডাকাত। তারা এসেই সোজা আমাদের দিকে বন্দুক ধরে জিজ্ঞাস করলো যে,

-হীরা কোথায়?

আমরা জানতাম যে তাদের যদি আমরা হীরা দিয়ে দেই, তাহলে তারা এইগুলো অসৎ পথে ব্যবহার করবে। তাই আমরা বললাম যে হীরার কথা আমরা কিছুই জানি না। তাদের মধ্যে একজন আমাদের কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইলো না। সে বললো যে সে নাকি কান পেতে শুনেছে যে আমরা হীরা নিয়ে কথা বলছি। আমরা আর কিছুই বলতে পারলাম না। তারা আমাদের শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললো এবং এরপর আমাদের উপর অমানবিক অত্যাচার শুরু করে দেয় হীরা কোথায় এটা জানার জন্য। কিন্তু আমরা নির্বাক হয়ে থাকি কোন উত্তর দেই না। এরপর সেই ডাকাত লোকগুলো যা করলো তা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। তারা রেগে আর কিছু না ভেবে বন্দুক দিয়ে আমার চোখের সামনে আমার মেয়ে রাত্রি এবং আমার স্বামী আসিফের মাথায় গুলি চালিয়ে দেয়। আমি কষ্টে চিৎকার দিয়ে উঠি,

-তোমরা এটা কি করলে! তোমরা আমার হাত পা খুলে দাও। আসিফ আর রাত্রিকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

কিন্তু তারা আমার চিৎকার শুনে না। তারা আমার আর্তচিৎকারে আরো আনন্দ পায়। তারা হাসতে থাকে। এদিকে আমার সামনে মাটিতে পরে রয়েছে দুটি দেহ। একটি আসিফের আরেকটি আমার মেয়ে রাত্রির। বন্দুকের গুলিতে তাদের মাথা ছিদ্র হয়ে গেছে। তাদের রক্তে পুরো মাটি ভিজে গেছে। আমি অনেক চিৎকার করলাম, অনেক অনুরোধ করলাম কিন্তু আমার চিৎকার তাদের কান পর্যন্ত পৌছালো না। আমার চোখের সামনে আমার স্বামী আর মেয়ে ছটফট করতে করতে মারা গেলো। আমি চুপচাপ তাকিয়ে শুধু দেখছিলাম।

কিন্তু ডাকাতগুলো এখনো আমাকে কেনো খুন করেনি? এটা কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। এদের কথায় বেশ বুঝতে পারছিলাম যে, এরাই ভুত সেজে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু এখন আমি চাচ্ছিলাম আসিফ আর রাত্রি যখন আর বেঁচে নেই। তাহলে আমি বেঁচে থেকে কি করবো? তারা তাহলে আমাকেও মেরে ফেলুক। আমাদের ৩ জনকে একসাথে কবর দিয়ে দিক। কিন্তু তারা এটা করলো না। তারা আমার বাড়ির উঠানে আমার প্রিয় গোলাপ চারাটা উপরে ফেললো।

সেখানে অনেকটা কবরের মতো একটা গর্ত খুড়লো। এরপর আসিফ আর রাত্রিকে সেই কবরের ভেতর রক্তাক্ত অবস্হায় ফেলেই মাটিচাপা দিয়ে দিলো। আমি চিৎকার করে তাদের এটা করতে নিষেধ করছিলাম। কিন্তু তাদের নিষ্ঠুর হৃদয়ে আমার কান্না পৌছালোই না। আসিফ আর রাত্রিকে মাটি চাপা দেওয়ার পর তারা আরো কয়েকবার আমার কাছে হীরা কোথায় আছে এটা জানতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি নির্বাক ছিলাম তখন। আমার চোখে তখন শুধু আসিফ আর রাত্রির রক্তমাখা মুখটাই ভেসে আসছিলো। তাই আর কোন উত্তরই দিতে পারিনি তাদের।

এরপর তারা আমার সাথে যা করলো তা আমাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিলো। সেই ডাকাতগুলো আমাকে জোড় করে ঘরে নিয়ে গিয়ে একের পর এক জন নির্দয় ভাবে আমাকে ধর্ষন করলো। আমার আকুতি তাদের কান পর্যন্ত পৌছালো না। তারা আমার সাথে নরপশুর মতো ব্যবহার শুরু করে দেয়।তারা আমাকে হত্যা করলো না। তারা আমাকে সেই ছোট ঘরটাতে আটকে রাখতো সারাদিন এবং রাতে নরপশুর মতো একের পর এক আমার উপর ঝাপিয়ে পরতো। হয়তো এর জন্যই আমাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিলো। এইদিকে আমাদের খোঁজ নিতেও কেউ আসছিলো না এই ভুতুড়ে বাড়িতে। আমি কয়েকবার ভেবেছিলাম যে আত্মহত্যা করে মরে যাবো। কিন্তু পরে ভাবলাম আত্মহত্যা করা মানে হেরে জাওয়া। আমি কিছুতেই এই নরপশুগুলোর কাছে হারবো না। এরা আমার চোখের সামনে আমার নিরোপরাধ স্বামী এবং মেয়েকে খুন করেছে। এর প্রতিশোধ না নিয়ে আমার কিছুতেই মৃত্যু হতে পারে না। এরপর সারাদিন সেই ছোট ঘরটাতেই আটকে থাকতাম। একদিন আমার সেই বুক সেলফে চোখ গেলো।

সেখানে কিছু বই ছিলো। সেগুলো সব পৈশাচিক বিষয় নিয়ে লিখাছিলো। সেখানে লিখাছিলো পিশাচ দেবীকে পৃথিবীতে আহ্বানের নিয়ম। যদিও আমি কখনো এই অলৌকিকে বিশ্বাস করি না। তারপরেও এই বইগুলো ভালো করে পড়তে থাকলাম এবং এক পর্যায়ে আমার মনে পিশাচিক শক্তির উপর বিশ্বাস জন্মালো। এরপরে একদিন . . 

এতটুকু লেখাই ছিলো ডায়েরিটাতে। ডায়েরিটাতে আর কোন পৃষ্ঠা ছিল না। কিন্তু এখানে তো ডায়েরিটা শেষ হওয়ার কথা না। এরপরে সানজিদা আফজাল মিশি কি করেছিলো? সে কি পিশাচ দেবীকে পৃথিবীতে আনতে পেরেছিল? সে কি তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলো? সে এখন কোথায় আছে? আর এই ডায়েরিটাই বা কখনকার লেখা? এই ডায়েরিতে যেই বাড়িটার কথা উল্লেখ আছে সেটাই বা কোথায়? 

আর এই ডায়েরিটা পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে আমার কাছেই কেনো আসলো!

এত প্রশ্ন আর এত রহস্য রেখে একটা ডায়েরি কি করে শেষ হতে পারে! ডায়েরিটার কি আরও কোন অংশ আছে? তাহলে সেটা কোথায়?

বুঝলাম যে এইসব প্রশ্ন এবং রহস্যের সমাধান আমাকে একমাত্র সেই বাড়িটাই দিতে পারবে যেখানে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। আর এই ডায়েরিতেই বাড়িটার স্পষ্ট বিবরণ দেওয়া আছে। আমাকে প্রথমে সেই বাড়িতেই যেতে হবে যেখানে মিশিকে আটকে রাখা হয়েছিলো। সেখানেই সব রহস্যের সমাধান আছে। কিন্তু সেই বাড়িটার নাম আর ঠিকানা পাবো কোথায়?

এরপর হঠাৎ চোখ গেলো ডায়েরিটার একেবারে শেষ পৃষ্ঠার নিচে। সেখানে লেখিকা যে বাড়িটায় বসে ডায়েরিটা লিখেছে সেই বাড়িটার নাম ছোট করে লেখা ছিল।

চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...