Skip to main content

ভাইয়া

-১-

মেয়েটা দেখি তোমাকে ভাইয়া ডাকতে ডাকতে জান দিয়ে দিচ্ছে।
-ওপেনে ভাইয়া আর গোপনে জান; সুযোগের অভাবে চরিত্রবান।
আমার উত্তর শুনে ম্যানেজার স্যার হেসে ফেললেন। বললেন,
-ছন্দ মিলিয়ে উত্তর দিলে। ভালো লাগলো।
-একটা গানের দু'টো লাইন বলেছি।
-আচ্ছা। এখন আসো। "

আমি নিচু স্বরে একটা ছোট খাটো সালাম দিয়ে ম্যানেজারের রুম থেকে বের হতেই রাইসা হাপাতে হাপাতে এসে বললো,
-ভাইয়া! আমার আজ আগামীকাল ছুটি লাগবে।
-তো আমি কি করবো?
-ভাইয়া! কি যে বলেন ভাইয়া। আপনি যদি স্যারকে বলেন ভাইয়া; তবে কি আর স্যার না করবে ভাইয়া।

তিন লাইনের বাক্যতে মেয়েটা আমাকে চারবার ভাইয়াই ডেকেছে। ভেবেছে কোন উর্বশীর ঠোঁটে ভাইয়া ডাক শুনে আমি গলে যাবো। কড়া স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,
-তোমার কি মনে হয় তোমার কাকের কণ্ঠে তিন আলিফ টান দেয়া ভাইয়া ডাক শুনে আমি গলে যাবো?

রাইসা বুঝতে পারলো ভাইয়া ডাকে চিড়া ভিজবে না। তাই মুখ ভেংচি দিয়ে এবার ছুটলো অন্যদিকে। এখান থেকেই মিষ্টি করে ডাকতে ডাকতে গেলো,
-নাসির ভাইয়া। নাসির ভাইয়া।

-২-

-ভাইয়া। এক্সকিউজ মি ভাইয়া।
বাসে বসে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। স্বপ্নে শুনতে পেলাম কে যেনো আমাকে ভাইয়া ডাকছে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না।
-এই যে ভাইয়া।
কাঁধ ধরে কে যেনো ঝাঁকুনি দিলো। চোখ মেলে দেখি এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষণ সেই ডাকছিলো। তাই স্বপ্নে দেখতে পাই নি। আমি বললাম,
-বলুন।
-একটু এদিকে বসবেন? আমি জানালার পাশে বসবো।

মেয়েটার কথা শুনে কোলের মাঝে রাখা ব্যাগপ্যাকটা হাতে নিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর আড়মোড়া দিয়ে আবার জানালার পাশে বসে বললাম,
-নাহ।
-আমার বমি হয়।
-আমারো বমি হয়। ওয়াক! ও ইয়াক। উয়াক। উয়াক।

মেয়েটা বুঝতে পারলো তার ভাইয়া ডাকে আমার মন গলবে না। তাই প্রচণ্ড রাগ নিয়ে পাশের সীটে বসলো। আর বিড়বিড় করে বললো,
-অসভ্য কোথাকার।
আমিও বিড়বিড় করে বললাম,
-বৃটিশ কোথাকার।

-৩-

বাস থেকে নেমে বাসায় ফেরার পথেই উর্মির সাথে দেখা। সাথে অবশ্য একটা ছেলে রয়েছে। আমায় দেখেই উর্মি অন্যদিকে তাকালো। আমিও কম না। সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
ওই এই ছেলেটা কে?
-হুহ! এটা আমার খালাতো ভাই।
-খালাতো ভাইয়া নাকি হনেয়ালা পার্ট টাইম ছাইয়া?
-সব কি ধরনের কথা শুভ ভাই?
-তোর তো আবার অভ্যেস আছে। ক'দিন দেখলাম চাচাতো ভাইয়ের সাথে প্রেম করলি। তারপর ফুফাতো ভাই। তারপর মামাতো ভাই। আর এখন হাটছিস খালাতো ভাইয়ের সাথে। তোদের বংশে কি সবাই ভাইদের সাথেই প্রেম করে?

আমার কথা শুনে উর্মি রাস্তা থেকে একটা ভাঙা ইটের টুকরো কুড়িয়ে নিলো। মেয়েটার মাথায় সমস্যা রয়েছে। সত্যি সত্যি মেরে দিতে পারে। আমি আর দাঁড়ালাম না। আবার হাটা শুরু করে দিলাম।

-৪-

পরদিন সকালে অফিসের জন্য বাসে উঠতেই রাইসার কল আসলো। রিসিভ করতেই বললো,
-ভাইয়া আপনি কোথায়?
-বাসে।
-বাসে তো বুঝলাম ভাইয়া। কিন্তু বাসটা কোথায় ভাইয়া?
-এগারো নাম্বার।
-আমি বারো নাম্বারে দাঁড়িয়ে আছি ভাইয়া। আমার জন্য একটা সীট নিয়ে আইসেন ভাইয়া।

আমি ওকে বলে কল কেটে দিলাম। ভাগ্য ভালো ছিলো বিধায় পেছনের দিকে একটা সীট পেয়েছি। বাস ভর্তি লোক। দাঁড়ানোর জায়গা নেই। এখন আমি রাইসার জন্য সীট পাবো কোথায়?

-৫-

প্রায় দু'ঘন্টা লেট করে অফিসে আসলো রাইসা। এসেই আমার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-আপনাকে না বললাম আমার জন্য একটা সীট নিয়ে আসতে।
-দুইশো টাকা দাও।
-কিসের টাকা?
-এর আগে দশ দিন তোমাকে নিয়ে এসেছি। আর দশ দিনই তোমার ভাড়া আমি দিয়েছি। বিশ টাকা করে দশ দিনে দুইশো টাকা।

টাকার কথা শুনে রাইসার মুখটা কালো হয়ে গেলো। একটা ভেংচি কেটে বললো,
-ছিঃ ভাইয়া আপনি এতো চিপ। মাত্র দুইশ টাকা বাস ভাড়া দিয়েছেন, সেটা আবার ফেরত চাইছেন।

রাইসা আর দাঁড়ালো না। নিজের ডেস্কের দিকে চলে গেলো। আমিও বুঝলাম না, মাত্র দুইশো টাকা ফেরত দিতে কিসের এতো সমস্যা?

-৬-

কাজের চাপ কম বলে একটু ফেসবুকে উকি দিলাম। আর নিউজ ফিড ওপেন করেই বেক্কল হয়ে গেলাম। উর্মি ইন এ রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছে। আর ট্যাগ করেছে সেই খালাতো ভাইকে। আমি মজা করে কমেন্ট করলাম, -কতো নাম্বার রিলেশনশিপ এটা?

টুং করে মেসেঞ্জারটা বেজে উঠলো। ভাবলাম উর্মি রেগে মেসেজ দিয়েছে। ভিউ করে দেখি তিথির মেসেজ। লিখেছে, -তুমি আমার বান্ধবী কে ব্লক মেরেছো কেনো?
-ভাইয়া ডাকে তাই।
-ভাইয়া তে তোমার এতো সমস্যা কিসের? এতো এলার্জি কেনো?

আমি রিপ্লাই না দিয়েই অফলাইনে চলে আসলাম। অফিসের বারান্দায় এসে সিগারেট জ্বালিয়ে খুব প্রিয় একটা মুখ চোখ বুজে কল্পনা করার চেষ্টা করলাম। সেই প্রিয় মুখ যাকে আমি বোন বলতাম।

বছর চারেক আগের বসন্তের বিকেলে কোচিং-এ যাবে বলে সেই যে ঘর থেকে বের হলো.... আর জীবিত ফিরে নি। পরদিন সকালে খবরের পাতার শিরোনামে ওর রক্তাক্ত ছবির সাথে লেখা ছিলো,
-শহরের ডাস্টবিনে অজ্ঞাত বালিকার লাশ উদ্ধার।

মাঝে মাঝে মনে হয়, সেদিন বিকেলে আমিও সাথে গেলেই পারতাম। একটা ব্যর্থতার দায়ভার ভারী হয়ে বসে আছে বুকের মাঝে। এরপরও অন্য কারো মুখে ভাইয়া ডাক শুনি কি করে?

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...