Skip to main content

ডায়েরি (পরিচ্ছেদ - ১৫)

রমিজ চাচা আমাকে বাড়িতে একা রেখেই চলে গেলো পাশের গ্রামে সেই কবিরাজকে আনতে। আজ কেন জানি দিনের বেলাতেও একা বাড়িতে আমার ভয়টা আরো বেড়ে যাচ্ছে আমি অপেক্ষায় বসে ছিলাম যে কখন রমিজ চাচা আসবে। এরপর দেখতে দেখতে সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে বিকাল, বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যাঁ হয়ে গেলো। কিন্তু রমিজ চাচা এখনো বাড়িতে ফিরেনি। চাচার নাম্বারে কল দিলাম কয়েকবার কিন্তু তার নাম্বারটা বন্ধ আসছিলো। কিছুক্ষন পর হঠাৎ চারিদিকে প্রচুর ঝড় শুরু হয়ে যায়। প্রচুর বৃষ্টি সাথে বর্জপাত। পুরো এক ঘন্টা এমন চলার পরে বৃষ্টি থামে। কিন্তু এরপরেও রমিজ চাচা বাড়ি ফিরেনি। এরপর সাহস করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে রমিজ চাচাকে খুজতে রাস্তায় যাই। পুরো রাস্তা এবং পাশের গ্রামেও তাকে খুজলাম কিন্তু পেলাম না। রমিজ চাচা কোন কবিরাজের কাছে এসেছিলেন সেটা জানলেও হয়তো তার কাছে গিয়ে রমিজ চাচাকে খোজা যেতো। কিন্তু এটাও আমি জানতাম না একবার ভাবলাম হয়তো রমিজ চাচা এখন সেই হরিনাথ বাংলোতে আছে। পরে আবার মনে হলো যে রমিজ চাচাকে তো আমি এই বাংলো সম্পর্কে সব কথাই বলেছি। এত কিছু শুনেও এরপরে সে আর সেই বাংলোর দিকে পা বাড়াবে না। রমিজ চাচাকে খুজতে ব্যর্থ হয়েই বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম। বাড়িতে পৌছে তো আমি পুরোই অবাক। রমিজ চাচা বাড়ির উঠানে বসে রয়েছে। আমি দ্রুত তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,
-রমিজ চাচা! তুমি কখন এলে? তুমি জানো আমি তোমায় কত জায়গায় খুজেছি? কোথায় ছিলে সারাদিন?
-জ্যা বাবু, আমি আপনার সব ঝামেলা শেষ কইরা দিয়া আইলাম।
-মানে?
-আপনারে এরপরে আর কেউ বিরক্ত করবো না বাবু। সেই মাইয়াটার আত্মারে চিরমুক্তি দিয়া দিছি। এখন হরিনাথ বাংলোতে আর কেউ থাকে না।
-কি বলছো তুমি! কিন্তু সেই মেয়েটার আত্মা তো আমায় বলেছিলো যে সে যদি পৈশাচিক শক্তি না পায় আর তার প্রতিশোধ নিতে না পারে, তাহলে তার আত্মা কখনো মুক্তি পাবে না। আর তারতো একটা মৃত শরীরের প্রয়োজন ছিলো।
-জ্যা বাবু। তয় আমি যেই কবিরাজরে নিয়া গেছিলাম ঐ বাংলোতে, সে মেলা বড় কামের কবিরাজ। তারে সবাই ভুতের কবিরাজ কয়। সে তার সব শক্তি দিয়া সেই অভিশপ্ত মাইয়াটার আত্মারে ধ্বংস কইরা চির মুক্তি দিয়া দিছে।
-তুমি আমাকে বাঁচালে রমিজ চাচা! নাহলে যে মেয়েটার আত্মা আমাকে পাগল করেই ছাড়তো।
-তয় বাবু কবিরাজ একটা কথা কইছে!
-কি কথা চাচা?
-ইয়ে মানে বাবু। আমাদের দুই জনরে আজকা রাইতের মধ্যেই গ্রাম ছাইড়া শহরে চইলা যাইতে হইবো। এক সপ্তাহের আগে আর এই গ্রামে আসা যাইবো না। এই এক সপ্তাহ এই গ্রামে থাকলে আপনার আবার বিপদ হইতে পারে। তাই এখনি আমাগো গ্রাম থিকা চইলা যাইতে হইবো। আবার এক সপ্তাহ পর আমরা এইখানে আসুম।
-আচ্ছা ঠিক আছে। এক সপ্তাহেরই তো ব্যাপার। তুমি বরং ব্যাগটা গুছিয়ে নাও।
-জ্যা বাবু। ব্যাগ আমি আপনে আসার আগেই গুছাইয়া বিছানায় রাইখা দিছি। আপনি ব্যাগগুলা দেইখা নেন সব কিছু ঠিকঠাক নিছি কিনা।
-ঠিক আছে চাচা।

রমিজ চাচার কথাগুলো শুনে যেনো আমার মনটা শান্তিতে ভরে উঠলো। যাক অবশেষে মুক্তি পেলো সানজিদা আফজাল মিশির অভিশপ্ত আত্মা।সমাপ্তও হতে যাচ্ছে এই ডায়েরির গল্প। হয়তো আর কখনো এই ডায়েরিটা আমার কাছে ফিরে আসবে না। আর কোন আত্মাও হয়তো রমিজ চাচার বেশে আর আমার বাড়িতে এসে আমাকে ভয় দেখাবে না।
সমাপ্ত হলো আমার পিশাচ ডায়েরি গল্পের। এখন আমি আর রমিজ চাচা শহরে চলে যাবো। হয়তো ৭ দিন পরে এসে আবার নতুন করে নিজের জীবনটাকে গুছাবো।
.
রমিজ চাচা আর আমি শহরে চলে যাই। সেখানে রমিজ চাচাই ৭ দিনের জন্য একটা ভাড়া বাড়ি ঠিক করেন। এরপর আমরা সেখানেই থাকতে শুরু করি। রমিজ চাচা বলেছিলো কবিরাজ নাকি বলেছিলো আমার মোবাইলটাও বন্ধ রাখতে তাই আমি আমার মোবাইলটা বন্ধ করেই রেখেছিলাম। এছাড়াও আমাকে কল দেওয়ার মতো কেউ ছিলো না।
.
শহরের জীবনটা আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি। তাই দিনের বেশির ভাগ সময়েই আমি বাড়িতে বসে বসে বই পড়তাম। কিন্তু শহরে এসে রমিজ চাচার মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করলাম। দিনের বেশির ভাগ সময়েই সে বাড়ির বাহিরে থাকতো। আমি তার কাছে কারণ জানতে চাইলে সে বলে সে নাকি এই শহরকে চিনছে আর জানছে ঘুরে ঘুরে। আমিও আর তাকে বাঁধা দেই না। হঠাৎ একদিন লক্ষ করলাম রমিজ চাচার গলায় একটা স্বর্ণের চেইন রয়েছে। চেইনটা দেখে আমার খুব চেনাচেনা লাগছিলো। হঠাৎ মনে পড়লো আরে এটাতো সেই চেইনটা যেটা আমি সেদিন কবর খুড়ে মাঝখানের সেই কঙ্কালটার গলা থেকে নিয়েছিলাম। এই চেইনটার কথাতো আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু এটা রমিজ চাচা পেলো কোথায়। আমি অবাক হয়ে রমিজ চাচাকে প্রশ্ন করলাম,
-রমিজ চাচা! তুমি এই চেইনটা পেলে কোথায়?
-ইয়ে মানে বাবু, যেই রাইতে আপনারে হরিনাথ বাংলো থিকা নিয়া আসলাম সেইরাইতেই আপনেরে বিছানায় শুয়াইতে নিয়া আপনার পকেটে এই চেইনটা দেখছিলাম। চেইনটা আমার খুব পছন্দ হইছিলো, তাই আপনারে না বইলাই আমি নিছিলাম আর তখন থিকাই পড়তাছি। আপনি এতদিন দেখেন নাই।
-কিন্তু রমিজ চাচা এটাতো সেই অশরীরী মেয়ের গলার চেইন। তুমি পড়লে তোমার বিপদ হতে পারে।
-কিছু হইবো না বাবু। কবিরাজ মশাইরে দেখাইছি। সে বলছে এটাতে কোন সমস্যা নাই।
স্বর্ণের প্রতি রমিজ চাচার কৌতুহল সেই আমার ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। তাই তাকে আর কিছু বললাম না। রমিজ চাচা চুপচাপ ঘরেই বসেছিলো।

চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...