Skip to main content

ডায়েরি (পরিচ্ছেদ - ০৬)

আমি এবার মাথা ঠান্ডা করে সব কিছু চিন্তা করতে লাগলাম। বুঝতে পারলাম যে গতকাল রাতে যে, আমার কাছে এসেছিলো সে রমিজ চাচা ছিলো না। কারণ তার ভেতর একটা অন্য রকম আচরণ আমি দেখতে পেয়েছিলাম। হয়তো সে কোন অন্য দুনিয়ার মানুষ ছিলো। কিন্তু সে যেই হোক না কেনো আমার কাছে কেনো আসলো? আর সে আমাকে এই ডায়েরিটাই বা কেনো দিলো? আর এই ডায়েরির পরের অঃশেই বা কি আছে? কে এই সানজিদা আফজাল মিশি? আর সে এখন কোথায় আছে?

এই সকল প্রশ্নের উত্তর এবং সকল রহস্যের সমাধান পেতে আমাকে প্রথমে সেই ডায়েরিটা খুজে বের করতে হবে। কিন্তু ডায়েরিটা এখন কোথায়? পুরো বাড়িতে ভালো করে কয়েক বার ডায়েরিটা খুজলাম। কিন্তু পুরো বাড়ি খুজেও কোথাও ডায়েরিটা খুজে পেলাম না। আমি খুব হতাশ হয়ে পড়লাম। তাহলে কি আমার আর রহস্য জানা হবে না?

ভাবলাম। থাক, ডায়েরিটা আর খুজে না পেলেই ভালো হবে। এই ডায়েরিটা আমার জন্য অভিশপ্ত। ডায়েরিটাই আমার বাড়িতে অভিশাপ বয়ে নিয়ে এসেছে। এই একটা অভিশপ্ত আত্মাকে রমিজ চাচার বেশে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছে। এরপর সারাদিন স্বাভাবিক ভাবেই কাটিয়ে দিলাম। সারাদিনে আর সেই ডায়েরিটা চোখে পড়েনি। আমি শুধু ভাবছিলাম যাতে রমিজ চাচা কাল সকালেই দ্রুত চলে আসুক।

দেখতে দেখতে রাত প্রায় ১০ টা বেজে গেলো। আমি ভাবলাম তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুমানোর পর রাতে একটা অদ্ভুত ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলাম।
"আমি একটা অচেনা অদ্ভুত বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। বাড়িটা দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। বাড়িটা বেশ নির্জন ছিলো। তাই দেখতে কিছুটা ভূতুড়ে, কিন্তু বাড়িটা চারিদিক থেকে অনেক সুন্দর গাছে ঘেরা। বাড়ির উঠানেও নানান রকমের সুন্দর গাছপালা কিন্তু হঠাৎ দেখলাম চারদিক পুরো অন্ধকার হয়ে গেলো।
আমি অন্ধকারে কিছুই আর দেখতে পারছিলাম না। হঠাৎ মোমবাতি হাতে একটা মেয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো। মোমবাতির আলোতে মেয়েটাকে ভালোমতে দেখা যাচ্ছিলো না। তার মুখটা একটু একটু দেখতে পারছিলাম। এরপর মেয়েটা মোমবাতিটা আমার হাতে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে আমাকে বলে,
-বাড়ির ভেতরে চলুন।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। মোমবাতিটা হাতে নিয়ে মেয়েটার সাথে ধীরে ধীরে বাড়িটার ভেতরে ঢুকলাম। এরপর মেয়েটা আমাকে ইশারা করে একটা গোলাপ গাছ দেখালো এবং আমাকে একটা কোদাল দিয়ে বললো গোলাপ গাছটার নিচে খুঁড়তে। আমি তখনও তাকে কিছু বলতে পারলাম না। আমি কোদালটা নিয়ে গোলাপ গাছটার নিচের মাটি খুঁড়তে লাগলাম। মেয়েটা মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি কিছুক্ষন খোঁড়ার পর বুঝতে পারলাম যে আমি শুধু কোন গোলাপ গাছের নিচে খুড়ছিলাম না। আমি একটা পুরাতন কবর খুঁড়ছিলাম। একটা পুরাতন কবরের উপর এই গোলাপ গাছটা ছিল। এটা একটা কবর ভেবে আমি ভয়ে ভয়ে কবরটা খুঁড়তে লাগলাম। কবর খুঁড়ার পর যা দেখলাম তাতে আমি একটু বেশিই ভয় পেয়ে গেলাম। দেখলাম কবরটার নিচে একটা পাটি বিছানো রয়েছে। মনে হচ্ছিলো যে পাটির নিচে কিছু একটা আছে। এরপর আমি ভয়ে ভয়ে পাটিটা সড়ালাম। দেখলাম কাফনে মোরা ৩ টা তাজা লাশ। কবরটা অনেক পুরাতন ছিলো কিন্তু লাশগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো কিছুক্ষন আগেই কেউ একজন এখানে কবর দিয়ে গেছে। আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম এই লাশগুলো দেখে। এখানে ২ টা বড় মানুষের এবং একটা বাচ্চার লাশ ছিলো। এরপর সেই মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা আমাকে বললো লাশ গুলোর উপর থেকে কাফনের কাপড় সড়াতে। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু কিছু বলতে পারি না। কি ভয়ানক দেখতে লাগছিলো সেই কাফনে মোড়ানো লাশগুলো। তার উপর আমি আবার একা কবরের ভেতরে ছিলাম। আমি ভয়ে ভয়ে লাশ গুলোর শরীর থেকে কাফনের কাপড় সড়ালাম। দেখলাম সেখানে এক পাশে একটা বাচ্চা মেয়ের লাশ ছিলো, আরেকপাশে একজন পুরুষের লাশ। আর মাঝখানে একটা মেয়ের লাশ। ৩ টা লাশের চেহারাই বেশ ভয়ংকর ছিলো। কিন্তু আমার কাছে মাঝখানের সেই মেয়েটার লাশের চেহারা বেশি ভয়ংকর আর চেনা চেনা লাগছিলো। এরপর মনে পড়লো। আরে এটাতো সেই মেয়েটার লাশ যে এখন কবরের উপর থেকে মোমবাতি ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরপর আমি ভয়ে ভয়ে কবরের উপরে তাকালাম। দেখলাম সেই মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা আর এই কবরে যে মেয়েটার লাশ রয়েছে দুজনে একই চেহারার। এরপর কবরের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা আমার দিকে বড় বড় লাল চোখ করে তাকিয়ে ভয়ংকর ভাবে হাসছিলো। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। এরপর মেয়েটার কাছে জানতে চাই,
-তুমি হাসছ কেন!
কিন্তু মেয়েটা কোন উত্তর না দিয়ে হেসেই চলে। এরপর আমি মেয়েটার লাশের দিকে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটার লাশ ভয়ংকর ভাবে চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ভয়ে আৎকে উঠলাম। এরপর মেয়েটার লাশ আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ভয়ংকর ভাবে হাসতে শুরু করলো। আমি উপরে তাকিয়ে দেখলাম মোমবাতি হাতে সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর ভাবে হাসছিলো। আবার সেই মেয়েটার লাশই আমার হাত শক্ত করে ধরে কবরের ভেতর ভয়ংকর ভাবে হাসছে। একই চেহারার দুজন মেয়ের এই ভয়ংকর হাসি দেখে আমি ভয়ে চিৎকার করতে শুরু করলাম,
বাঁচাও! কে কোথায় আছো? আমাকে সাহায্য কর! রমিজ চাচা!

আমার ঘুমটা ভেঙে যায়। আমি আৎকে শুয়া থেকে বসে পড়লাম। এত রাতে এইরকম ভয়ংকর স্বপ্ন দেখার কোন মানে হয় না। এই রকম একটা স্বপ্নই বা কেন দেখলাম তার উত্তর আমার কাছে নেই।
ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত তখন প্রায় ২ টা বাজে। হঠাৎ আমার চোখ গেলো আমার বিছানায় আমার পায়ের কাছে। আমি দেখলাম আমার পায়ের পাশেই সেই ডায়েরিটা খোলা অবস্হায় পরে রয়েছে। হঠাৎ ডায়েরিটা এখানে কিভাবে আসলো তাও বুঝলাম না।

চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...