মেয়েটার চোখে পানি। ছেলেটার চোখও ছলছল। হয়ে গেল বিচ্ছেদ। বিদায় বলার পরও একজন আরেকজনের পাশে বসে আছে। যতটুকো থাকা যায় শেষ বেলায়। তাদের সম্পর্কের ইতি এখানেই। এর মাঝে কেটে গেছে কত সময়, জমেছে কত ব্যথা কে জানে! শিলাকে বললাম, দেখ এরা কেমন জুটি? শিলা বলল- ধুর এদের দেখে লাভ নাই। এরা কেমন প্রেম করেছে যে বিয়ে করতে পারলো না! এক হতে পারলো না! শিলার কথাগুলো শুনে আমার চোখ ভিজে আসে। কতই না ভালবাসে সে আমাকে। মনে মনে বলছি শিলা তুমি এমনই থেকে।
কী হলো কথা বলছো না কেন? শিলার প্রশ্নে আমি নড়েচড়ে উঠি। বলি, আসলে তোমার কথা শুনতেই আমার বেশ লাগে। চলো আমরা অন্য কোথাও যাই।
শিলা কড় গুণে গুণে বলল- এই জানো আমাদের রিলেশনের বয়স কত? বললাম, নাতো, জানিনাতো। আমারতো মনে হচ্ছে এইতো গত পরশু আমরা প্রেমে পড়লাম।
শিলা হিহি করে হেসে বলল- আরে বুদ্ধ তুমিতো একেবারেই বুদ্ধ। কিচ্ছু মনে রাখো না। আজ আমাদের ছয় বছর হলো রিলেশনের।
একটু চমকে উঠলাম। ছয়টা বছর হয়ে গেছে! আমারই বা দোষ কী! আমি শিলার প্রেমে রোজ মাতি। প্রতিটাদিনই আমার নতুন লাগে। যেন জনম জনম ধরে শিলা আমার কাছে অচেনাই থেকে যাবে। আমি তাকে নিত্য আবিষ্কার করি একেক রুপে। তার নিঃশ্বাস আমার চেনা, তার চুলের বেণীর কয়টা গাঁথুনি সবই আমার জানা। তবুও মনে হয় আমি কিচ্ছু জানিনা।
রোজ রাতে কান পেতে রাখি মোবাইলে। বলি- শিলা তুমি কল কেটে দাও । সে কাটে না। কাটবে কী করে! আমাকে ছাড়া যে তারও চলেনা। যদি চলতোই একের পর এক সেমিস্টার গ্যাপ দেয় কোন মেয়ে? পড়া শেষ হলে যদি বাবা মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় তাকে? যদি আমাকে হারিয়ে ফেলে সে! এমন ছেলে মানুষী আতঙ্কে কেটে গেল ছয়টা বছর।
বড় পাগল মেয়ে শিলা! বলি, আচ্ছা তুমি আমাকে কতটুকো ভালবাস? ও খুব রাগ করে এমন প্রশ্নে। প্রকাশ্যে সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। বলি – ছিঃ ছিঃ করছ কী শিলা? ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে আর বলে, ফের যদি এমন প্রশ্ন করো আমি মেঘানার জলে ঝাঁপ দিবো।
আমি অবাক হয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। তার কান্না দেখতেও আমার ভাল লাগে। যে কান্না আমার জন্য সে কান্না আমিইতো দেখবো!
মাঝে মাঝে আমার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা করতো। ও হাত বুলিয়ে দিতো। শিলাকে বুঝতে দিতাম না। আমার ব্যথা তাকে ‘হারিয়ে ফেলবো’ এই দুশ্চিন্তায়। আমি খুব বাস্তববাদি। অন্যদিকের শিলার আবেগী চোখে শুধুই আমি। কতবার বলেছি আমাকে ভুলে যাও। সে শুনেনি। কিন্তু...
আজ বিকেলে মেঘনার পাড়ে বসে ছিলাম। কত বড় বড় ঢেউ আপনা আপনি মিলিয়ে যাচ্ছে! কোনো পিছুটান নেই তাদের। কতটা বছর এমনি করেই মিলিয়ে গেল। কিন্তু তুমি যেন আজও আমার কাছে আগের মতই আছো। যেখানেই থাকো ভাল থেকো শিলা। কোনো দোষ দিবো না তোমায়। ভবিষ্যতের ভাবনা সবাইকেই ভাবতে হয়। তুমিও নাহয় ভেবেছো। বিয়ে করেছো প্রতিষ্ঠিত জনকে। এতে দোষ কী! শুনলাম তোমার স্বামী তোমাকে খুব ভালবাসে। ভালবাসার মানুষ ভাল আছে এমনটা শুনতে কার না ভাল লাগে। আমার যে খুব ভাল লাগে। রোজ আমি মেঘনার জলের ঢেউ দেখি। তাদের মিলিয়ে যাওয়া দেখি।
জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...
Comments
Post a Comment