আজ আমাদের বিয়ের তৃতীয় দিন। পারিবারিকভাবে বিয়ে হলেও রিয়াকে পেয়ে আমি ব্যাপক উচ্ছ্বসিত। মনে হচ্ছিল আমি যেন ঠিক সমুদ্রে ভাসছি।
হঠাৎ ঘোর কাটলো সমুদ্রে নয়, মাত্রই বউ এক বালতি পানি পুরোটাই আমার গায়ে ঢেলে দিয়েছে। আমার শান্তির ঘুম তখন স্যাটেলাইট যোগে মহাকাশ প্রদক্ষিণ করছে।
হা করে তাকিয়ে দেখি বউ শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে তর্জনী উঁচিয়ে হায়েনার মত ফোৎফোত শব্দ করছে।
আমি ভয়ে একদম কুঁকড়ে গেছি। তোতলাতে তোতলাতে বললাম, "কী, কী হয়েছ?"
বউ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিলো। তারপর বজ্র কন্ঠে ঝাড়া শুরু করলো, "শোন, আজ থেকে তোর নতুন জীবন শুরু। সকাল ৬টা বাজবার আগেই ঘুম থেকে উঠবি, তারপর রান্নাঘরে যাবি, সেখানে পান্তা থাকবে, খেয়ে ঘরের থালা বাসন পরিষ্কার করবি। ঘর ঝাড়ু দিবি, ঘর মুছবি।
তারপর সকাল ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই যেন গরম কফির মগটা আমার হাতে চলে আসে। আটটা মানে আটটা, একটুও এপাশ ওপাশ হলে কিন্তু গরম কফি একদম গায়ে ঢেলে দিবো।
বউয়ের অগ্নিমূর্তি দেখে আমি তখন ঠকঠক করে কাঁপছি। আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না বউয়ের অবতার নিয়ে দাজ্জাল আমার ঘরে এসেছে। কেয়ামত ইজ নকিং এট দ্যা ডোর।
ক্ষুদার্ত বাঘিনীর মত বউ হুংকার করতে করতে আবার বলা শুরু করলো, "তারপর যত নোংরা কাপড় আছে সবগুলো ভালোভাবে কেচে পরিষ্কার করবি, ১০ টার মধ্যেই আমার জন্য নাস্তা বানায়ে সোজা অফিসে যাবি। অফিসে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশের কোন চায়ের দোকান থেকে সকালের নাস্তাটা সেরে নিবি। মনে রাখবি, বাজেট কিন্তু খুবই সীমিত। একটুও এপাশ ওপাশ না, অফিস থেকে সোজা বাসায় ফিরবি। ফেরার পর তোর কী কাজ হবে সেটা ফেরার পরই বুঝবি।
আর হ্যাঁ, বাসায় ফেরার সময় ভারী আর শক্ত দেখে ১০-১২ টা ঝাড়ু নিয়ে আসবি কিন্তু।
১০-১২টা ঝাড়ুর কথা শুনে আমার ভিতরটা হু হু করে কেঁদে উঠলো, ঝাড়ুর ব্যবহারিক পরীক্ষা যে আমার উপরেই চালানো হবে সেটা কথার ঝাঁজ শুনেই বুঝে গেছি।
বউ এবার তুড়ি বাজায়ে আড়াইশো কেজি ওজনের আরেকটা ঝাড়ি দিয়ে বলো, "আবে ওই, এখনো বসে আছিস যে......যা বলছি তাড়াতাড়ি কর।"
আমি বিছানা থেকে নেমে চির আজ্ঞাবহ দাসের মত অক্ষরে অক্ষরে সবকিছু করলাম, বউয়ের কথামত সব করেও পানি ছাড়া হজম করতে হয়েছে বউয়ের পনেরোটা ধমক।
বউয়ের কথা মনে পরায় অফিস থেকে আর বাসায় ফেরার সাহস পাইনি। সোজা গেলাম শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বিচার দিমু, তারা কী প্রোডাক্ট দিলো? জীবন তো পুরা ত্যানা ত্যানা!
শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই দেখি বাড়ির আঙ্গিনায় শ্বশুর কান ধরে উঠবস করতেছে। আমার শাশুড়ি খানদানি চেয়ারে বসে পান চিবাচ্ছে আর ডান হাতে থাকা লাঠিটা শ্বশুরের সামনে এনে নাড়তেছে।
এমন দৃশ্য দেখে আমি কাঁপতে কাঁপতে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরলাম, আর অপেক্ষা করতে লাগলাম পরবর্তী দৃশ্যের।
আমার পুচকি শালাটা শ্বশুরের কান ধরে ওঠাবসা মনযোগ দিয়ে গুনছে...... বিরাশি, তিরাশি, চুরাশি, পঁচাশি....
হঠাৎ সে চেঁচিয়ে ওঠে বললো, "মা, মা পঁচাশি নাম্বারটা ঠিকমত হয় নাই, আব্বা ঠিকমত না বসেই উঠছে।"
আমার শাশুড়ি এবার কালবৈশাখী মেঘের মত গুড়ুম গুড়ুম শব্দে গর্জে ওঠে বললেন, "এই বাঁইশ বছরে এই নিয়ে তুই সাত সাতবার থালা বাসন মাজতে দেরী করছিস। আজ তোকে ৩০০ বার উঠবস করতে হবে।"
শাশুড়ি এবার আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বললেন, "তোকে তো হাল ধরাতেই পারলাম না রে। তবে আমার মেয়েকে যে শিক্ষা দিয়েছি ওই জামাই হারামাজাদাটা তোর মত ভুল করারর সাহস পাবে না কোনদিনও।"
শাশুড়ির মুখে এই কথা শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না, কাঁপতে কাঁপতে ভেঙ্গেচুরে নিচে পরে গেলাম।
Comments
Post a Comment