ক্লাসে মন বসছিলো না। কারন এই স্যারের ক্লাস বরিং লাগে। আজ বাইরে খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। এমনি এক বৃষ্টির দিনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেদিন ফাকা রাস্তায় ছোট্ট ৬ বছরের আমি দৌড়াচ্ছিলাম। পেছনে কিছু খারাপ ভ্যাম্পায়ার আমার রক্ত খাওয়ার জন্য ছুটছিলো। আমি রাস্তায় হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম। তখন ওই খারাপ ভ্যাম্পায়ারগুলো আমার দিকে ঝাপিয়ে পড়তে যাবে এমন সময় একটা ৯ বছরের ছেলে আমার জন্য ওই খারাপ ভ্যাম্পায়াদের সাথে লড়াই করেছিলো। রক্ত মাখা ছেলেটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি নির্ভয়ে আমার রক্ষক এর হাতটা ধরলাম আর তাকে জড়িয়ে ধরলাম। সেদিনও ঠিক এমন বৃষ্টি হচ্ছিলো আর খালিদ আমার জীবন বাঁচিয়ে ছিলো। যদিও ছোট বেলার তেমন কোন কথা আমার মনে নেই। তবুও এই কথাটা আমি কোনদিন ভুলব না। আর ভুলব না এই দিনটা। ছোটবেলার থেকে মন প্রাণ দিয়ে একজনকেই ভালোবেসেছি। সেই একজন আমার রক্ষক। তার জায়গা কোনদিন কেউ নিতে পারবে না। জানি খালিদ আমাকে তুচ্ছ মানুষ ছাড়া কিছুই মনে করে না। ওর মতো ভ্যাম্পায়ার আমার মতো মেয়েকে কোনদিন ভালোবাসবে না।
.
বাইরে বৃষ্টি কিছুক্ষণ এর জন্য থেমে ছিলো। ক্লাস শেষে তাই বাইরে খেতে খেতে যেতে চাইলাম। তমা আমার সাথে বাইরে যেতে রাজি হলো না। তার নাকি কোন কাজ আছে। আমি গিয়ে নীলকে ডাকাডাকি শুরু করে দিলাম। ভাগ্যিস নীল রাজি হয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম আমি আর নীল পাশাপাশি। দোকানে পৌছিয়ে বসে পড়লাম টেবিলে।
- কি খাবা তুমি?
- আমি তো যত পারি তত খাবো।
- কি?
আমার কথা মতো আমি প্রায় হোটেলের সব কিছু অডার করে খেতে শুরু করে দিলাম। নীল অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
- এতো খাও তো গায়ে লাগে না কেন?
- হুম,,,আম্মউয়ালস্মকাল্ল....
- আচ্ছা, আগে খেয়ে নাও তারপর বলো।
খাওয়া শেষ হলে আমি সরাসরি বাড়ির পথে হাটা দিই। যেহেতু বাইরে কালো মেঘ। কিন্তু শত চেষ্টাতেও আমি আর নীল পৌছাতে পারলাম না। আমরা একটা বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
- অতো খেতে বলেছিলো কে? এখন তোমার জন্য বৃষ্টিতে আটকে পড়েছ? আসলে তোমার সাথে আসায় উচিত হয় নি।
- এভাবে বলো কেন? সবসময় গোমড়া মুখ করে থাকতে ভালো লাগে?
- একেই বলে বাচ্চাদের মতো দেহ আর বাচ্চাদের মতো আচরণ।
- আর তুমি যে সবসময় বুড়ো সেজে ঘুরে বেড়াও।
- হুম, তাহলে কি খালিদের মতো ভাব নিয়ে ঘুরব?
- খালিদ ভাব নিয়ে ঘোরে না।
- আমি ভাবলাম তুমি খালিদকে পছন্দ করো না।
- কেনো? তা ভাবলে কেন?
- কেনো ভাববো না? তুমি আজ ভোরে রুমে অসস্তি বোধ করছিলে খালিদের সামনে।
মনে মনে ভাবলাম, খালিদও কি টের পায় যে আমি ওর ওপর রাগ করেছি, নাকি আমার মতো মানুষকে নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই।
আমার আর নীলের ঝগড়ায় ভেতর থেকে দরজা খুলে গেলো। এক বুড়ি মহিলা ভেতরে বসালো আমাদের।
- তা বাবা, তোমার গায়ে আমার স্বামির জামা হবে আর ওই মেয়ে তোমার গায়ে আমার মেয়ের জামা হবে।
বুড়ির কথা শুনে নীল ভ্রুকুটি করল।
- বুড়ো লোকের বুড়োর জামা জুটেছে।
- কি বললে?
আমি উত্তর না দিয়ে ভেতরের রুমে গিয়ে জামা পাল্টাতে লাগলাম। যদিও নীল বাইরে থেকে এমন আচরণ করে কিন্তু আসলে এতো কিছুর পরও সে রাজি হয়েছে আমার সাথে আসতে। নীল ভালো। এসব ভাবতে ভাবতে ঘরের দরজাটা হঠাৎ খুলে গেলো।
- তুমি এখানে কি করছ? আমি জামা পাল্টাচ্ছি ললুপ কোথাকার?
নীল ভেতরে ঢুকেই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো।
- তোমার দেহে হাড় ছাড়া দেখারা মতো কিছুই নেই।
- নেই যখন দেখতে এসেছ কেন?
- বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে তাই....
- হয়েছে যাও এখন।
.
বৃষ্টি থেমে গেলে ভেজা জামা কাপড় ব্যাগে ভরে কলেজের দিকে হাটা দিলাম। মেয়েদের হোস্টেলটা কলেজের সাথেই। রাতে ঘুমানোর সময় তমা আমাকে জিজ্ঞেস করল,
- তুই আর নীল এভাবে এই কাপড়ে কেনো আসলি?
- আসলে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম তো তাই এক বাড়ির বুড়ি এই জামা দিলো।
- আচ্ছা, এখন ঘুমা। আর যদি কাল সকালে আমার ঘুম ভাঙিয়েছিস তাহলে তোকে দেখে নেবো?
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
যখন আমি ব্যস্ত থাকি তখন একটু খালিদের কথা ভুলে থাকতে পারি।
চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment