খালিদ আমাকে আরও একবার এই খারাপ ভ্যাম্পায়ারদের হাত থেকে বাঁচালো। আমাকে আব্বুর অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে নিজের সামনে নিয়ে বসল। আমার হাতের পুরনো ককাটা যায়গায় ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। আব্বুও অফিসেই ছিলো।
- আব্বু, আমি কি এখন ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবো? ওদের ফেনম কি আমার গায়ে লেগে গেছে?
- কয়দিন পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে। আপাতত ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাচ্ছ এমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি।
খালিদ আব্বুকে ইশারা করল আর আব্বু ঘরের থেকে বের হয়ে গেলো। আব্বু চলে গেলে খালিদ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, " হিমা, তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো?"
.
খালিদ আব্বুকে ইশারা করল আর আব্বু ঘরের থেকে বের হয়ে গেলো। আব্বু চলে গেলে খালিদ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, " হিমা, তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো?"
আমি অবাক হলাম। কারণ খালিদ আমাকে হিমা বলে ডাকছে।
- আমার নাম নওরিন। তুমি হিমা বলে ডাকলে কেনো?
-...
- চুপ করে থেকো না বলো।
- আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
- না, আমি তোমাকে ঘৃনা করি না।
- তুমি তোমার চুল কেটে ফেলেছ। তুমি জানতে যে আমার কাছে তোমার লম্বা চুলগুলো কত পছন্দ ছিলো।তারপরেও চুল কেটেছ।
- আমি চাইলেও তোমাকে ঘৃনা করতে পারব না। তুমি তো আমার জান বাঁচিয়েছ।
- শুধু কি একটাই কারণ? আমাকে ঘৃনা না করার অন্য কারণ নেই।
- দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি আসছি।
.
খালিদ আমার দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আমার মুখ থেকে কোন কথা আসল না। হয়ত আমার অভিমানটা অনেক বেশি ছিলো। খালিদের ওপর এই রাগ করে থাকার নাটকটা বন্ধ করলেই তো আবার আমি ওর প্রেমে পড়ে যাবো।
.
রাতে বিছানায় শুতে আসতেই তমার প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম।
- তুই এতোক্ষন কোথায় ছিলি?
- এই তো কাপড় ফেরত দিতে গিয়েছিলাম।
- হুম, আমাকে ওই ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে একা ফেলে তুই চলে গিয়েছিলি।
- তা থাকবে কেন। এই যা, তোর কথা তো মনেই নেই।
- যায় হোক, নিজের হাতে ব্যান্ডেজ করেছিস দেখে আমি খুশি হলাম। অবশেষে তুই বড় হচ্ছিস।
- আমার বয়স ১৭। আর ১ বছর হতে দে একবার। তারপর দেখি কিভাবে কেউ বাচ্চা বলে।
- তোর আচরণ তো বাচ্চাদের মতোই থাকবে মনে হচ্ছে।
- চুপ, এখন ঘুমা।
রাতে শুয়ে শুয়ে খালিদের কথা ভাবি। আজ আমি খালিদের অনেক কাছাকাছি ছিলাম। তবুও যেনো মন থেকে দূরে ছিলাম। কিছুই বলতে পারলাম না। খালিদকে আমি ছোটবেলার থেকে ভালোবাসি। আমি আগে সবসময় খালিদের আগে পেছনে ঘুরে বেড়াতাম। বড় হলে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো যে আমি খালিদের ভ্যাম্পায়ার ব্রাইড হবো। কিন্তু এক রাত সব কিছু পালটে দিলো। আমি খালিদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। রাতে প্রায় ঘুম এসে যাচ্ছিলো কিন্তু খালিদ আসছিলো না। বাইরে ঝড় বৃষ্টি দেখে আমার ভয় হয়ে যায়। খালিদের যদি কিছু হয়! আমি ভয়ে মারিয়ার রুমে গিয়ে খালিদের খবর নিতে বলতে গিয়েছিলাম। তখন বাইরের বজ্রপাতের সাদা আলোতে দেখলাম খালিদের মুখ মারিয়ার ঘাড়ে। মারিয়ার চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো তার খুব আরাম লাগছে। আমি খালিদ আর মারিয়াকে একসাথে দেখে সিঁড়ির ওপর বসে অনেক কান্নাকাটি করেছি। এরপর থেকে যতটা পারি খালিদকে avoid করে চলি। সেদিন কার রাত আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি মারিয়ার থেকে কতটা অযোগ্য। আমার রক্ত খালিদ কোন দিন খাবে না। একটা ভ্যাম্পায়ার আরেকটা ভ্যাম্পায়ারের রক্ত খায় আর এভাবেই একে অন্যের প্রতি চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ করে।
.
সকালে উঠে আমি কলেজের ক্যাপ্টেনের ডিউটি পালন করেই আব্বুর অফিস রুমে চলে গেলাম।
- মা, এখন কেমন আছো?
- ভালো।
- বসো।
- আচ্ছা, আব্বু তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
- কি কথা মা?
- " হিমা " কে?
আব্বু আমার মুখ থেকে নামটা শোনার সাথে সাথে আমার কাছে এসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
- এই নাম তুমি কোথায় পেলে?
- আব্বু, এমন করছ কেনো?
- কে বলল তোমাকে এই নাম?
আব্বুকে কখনো এমন চিন্তিত দেখি নি।
- কাল রাতে খালিদ আমাকে " হিমা " বলে ডেকেছিলো।
আব্বু চিন্তামুক্ত হয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলো।
- ও, ঠিক আছে।
- আব্বু " হিমা " কে?
- তোমার ছোটবেলার ডাকনাম হিমা।
- তুমি আমাকে হিমা বলে ডাকতে?
- না, আমি ডাকলে মা বলে ডাকতাম। খালিদ তোমাকে হিমা বলে ডাকতো।
- নামটা কে দিয়েছে? খালিদ?
- হুম।
আব্বু আমাকে শেষ কথাটা মিথ্যা বলল। কারণ আব্বু মিথ্যা বললে আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আমি আব্বুকে আর চিন্তায় ফেলতে চাই নি বলে আর কিছু জিজ্ঞেস করি নি।
- তোমার ওপর হামলা হয়েছে। আজ তুমি ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে থাকবা।
- না। ক্লাস আছে তো।
- ক্লাস করা লাগবে না। আজ তোমার ছুটি।
- নীল তো খাটি ভ্যাম্পায়ার শিকারি। ওর সাথে থাকলে আমি বেশি সেফ থাকব।
- যেখানেই থাকো আমি সব সময় চায় তুমি সেফ থাকো।
- আব্বু।
আমি অফিস থেকে যাওয়ার আগে একবার আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
.
নীলের রুমে চলে গেলাম। দেখি নীল রেডি হচ্ছে।
- নীল, কোথায় যাচ্ছ?
- আমি একজন ভ্যাম্পায়ার শিকারি। কাল যেই ভ্যাম্পায়ার তোমাকে আটাক করেছিলো আমি তাকে মারতে যাচ্ছি।
- আমিও তোমার সাথে যাবো।
- কিন্তু কেনো?
- আমি তো এখানে সেফ না।
- আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারব না। ভ্যাম্পায়ারগুলো তোমাকে আমার দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
আমি মুখ ফুলালাম। কিন্তু নীলের সামনে পাউট করে কোন লাভ নেই। নিরুপায় হয়ে আমাকে ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে যেতে হলো।
.
ভ্যাম্পায়ারেরা যেখানে থাকে সেটা হোস্টেল বলা যায় না। একটা বড় বাড়ি টাইপ।
- নওরিন, তুমি কি কাউকে খুজচ্ছ?
সৌরভের প্রশ্নে আমি ওর দিকে তাকালাম।
- না।
- হুম, আমার মনে হয় তুমি খালিদকে খুজচ্ছ।
- মোটেও না। কিউপিড সাজা বন্ধ করে দাও।
আমাদের কথায় অভি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
খালিদের উপর রাগ করার পর অনেক দিন হলো জায়গাটা ঘুরে দেখি নি। কেনো জানি সবার আগে লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। হয়ত মনে মনে খালিদের সাথে আবার দেখা হওয়ার আশা করছিলাম। কিন্তু আশা পুরন হলো না। খালিদ যেই বইটা এর আগে পড়ছিলো সেই বইটা খুঁজে বের করলাম। বইটা নিয়ে লাইব্রেরির সেই একই চেয়ারে বসলাম যেখানে খালিদ বসে ছিলো। বইটা খুলতেই ভেতর থেকে একটা ছবি পড়ে গেলো। ছবিটা তুলে দেখি আমার ছবি, যখন আমার চুল লম্বা ছিলো।
- খালিদের বই পড়ছ?
- মারিয়া!
লাইব্রেরির ভেতর মারিয়া ঢুকলো।
- কি চাও তুমি?
- তোমার কি হয়েছে নওরিন?
- মানে?
- আগে দেখেছি খালিদ ছাড়া তুমি কিছু বুঝতে না।
মারিয়ার কথা শুনে খালিদের সাথে কাটানো পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। বুকের ভেতর কষ্ট হতে লাগলো। আর না পেরে বুকে হাত দিয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম।
- খালিদ তোমার সাথে ভালো থাকবে।
- এসব কি বলছ? খালিদের বইয়ের পাতায় নিজের ছবি দেখেও বোঝ নি সে তোমাকে কতটা ভালোবাসে?
- যা দেখার আমি দেখেছি।
মারিয়ার কথায় আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মারিয়া আমার পথা আটকে দিলো।
- না, আমি জানতে চাই যে তুমি কি দেখেছ।
- সেই দিন খালিদের কামড় খুব ভালোভাবে মজা করে নিচ্ছিলে।
- ও, সেই ঝড়ের রাতে...
- এবার আমার পথ ছাড়ো।
- আমাদের ভ্যাম্পায়ারদের ব্যপারে তুমি কি জানো?
-.....
- সেই দিন খালিদের রক্তের প্রয়োজন ছিলো আর ঘরে অভি আর সৌরভ বা অন্য কেউ ছিলো না।
- আমি তো ছিলাম।
- তুমি একটা মানুষ। পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার যদি তোমাকে কামড় দেয় তুমি সাথে সাথে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ ভ্যাম্পায়ারের কামড়ে কেউ ভ্যাম্পায়ার হয় না।
-.......
- অযথা রাগ করে থেকে নিজেকে আর খালিদকে কষ্ট দিও না।
মারিয়া আমার পথ ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। সারাদিন আমি লাইব্রেরিতে একা বসে থাকলাম। তবুও আমার খালিদের সামনে যাওয়ার সাহস হলো না।
.
রাত হলে নিজের হোস্টেলে ফিরে গেলাম। সামনে ভ্যালেন্টাইন ডে আসছে। সকালে উঠে আব্বু আমাকে আরেকটা দায়িত্ব দিলো। কলেজে কিছু স্টুডেন্ট অবৈধভাবে ভ্যাম্পায়ারদের ছবি তুলে রাখে। আবার অনেকে খারাপ ম্যাগাজিন রাখে। সেই সব ম্যাগাজিন আর ছবি নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলাফলে কাজ শেষ হলে দেখা গেলো যে কিছু স্টুডেন্ট না বরং অনেক স্টুডেন্টের কাছে অবৈধ জিনিসপত্র পাওয়া গেলো।
.
সব জিনিস নিয়ে আমি ওপর তালার ঘরে যাচ্ছিলাম। বারান্দা দিয়ে নিচে গাছের নিচে নীলকে দেখা গেলো। আমি ঝুকে পড়লাম নীল করছে দেখার জন্য। নীলের হাতে টাবলেটের কৌটা মতো দেখা গেলো। নীলের কি হয়েছে? নীল কি অসুস্থ? কয়েকদিন ধরে ওকে অসুস্থ দেখা যাচ্ছিলো। কিসের ট্যাবলেট নীল তো তা কোনদিন বলবে না। তাই আমি আরো ঝুকে পড়লাম দেখারা জন্য। হঠাৎ ঝুকতে ঝুকতে আমার পা পিছলিয়ে গেলো!
- নীল!
আমার চিৎকারে নীলের নজর আমার দিকে পড়ল। আর নীল সাথে সাথে আমার দিকে ছুটে আসলো আমাকে বাচানোর জন্য। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে নিজেকে নীলের কোলে দেখলাম।
- নীল!
- উপর থেকে পড়লে কি করে?
- তোমাকে দেখতে গিয়ে।
আমার কথায় নীলের চোখ বড় হয়ে গেলো আর নীলের গাল লাল হয়ে গেলো।
- আমাকে দেখতে গিয়ে!
- হ্যা, তোমার হাতে কিসের ট্যাবলেট ছিলো? তোমার কি হয়েছে?
আমার কথা এবার শুনে নীল আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।
- সব কিছুর কৈফিয়ত তোমাকে দেওয়া লাগবে না আশা করি।
- নীল, দাড়াও।
আমার কথা না শুনেই নীল চলে গেলো।
.
ভ্যালেন্টাইন এর দিন সব স্টুডেন্টরা আমাকে রীতিমত থ্রেট দিলো। আজকে তারা ভ্যাম্পায়ারদের গিফট দিতে চায়। আব্বুকে বলা লাগলো। আব্বু আমাকে ডেলিভারি ম্যান বানিয়ে দিলো। আমি ছাড়া অবশ্য কিছু কলেজ ক্যাপ্টেনও ছিলো। সারা দিন স্টুডেন্টের কাছ থেকে গিফট নিয়ে লিস্ট বানাতে বানাতে বিকাল হয়ে গেলো। এই দিনে অধিকাংশ মেয়েরা চকলেট বানিয়ে ছেলের দেয়। কিন্তু আমি তো কোন সময়ই পেলাম না চকলেট বানানোর। তাই বিকাল বেলা বাজারা চলে গেলাম তমাকে সাথে নিয়ে। ভ্যাম্পায়ারের আটাক হওয়ার পর থেকে আমার একলা যাওয়া নিষেধ। বাজারে একটা ছোট্ট চকলেটের কৌটা দেখে আমার খুব পছন্দ হলো। আমি সেইটাই কিনে নিজের পকেটে রেখে দিলাম।
চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment