ভয়ে তখন আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু স্বপ্নের মতো কবরের ভেতর কোন সাদা কাপড় দেখিনি। হঠাৎ কবরের মাটিতে কি যেনো একটা শক্ত জিনিসে পা লাগলো। পা লাগতেই ভয়ে শিহরে উঠলাম। মেয়েটা তখনো কবরের উপর থেকে মোমবাতিটা আমার দিকে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। এরপর আমি মোমের আলোতেই কবরের নিচের মাটিগুলো কোদাল দিয়ে সড়াতে লাগলাম। মেয়েটা যা বলেছিলো ঠিক তাই হলো। আমি কবরের নিচে ৩ টা কঙ্কাল দেখতে পেলাম। দুইটা বড় কঙ্কাল ও একটা ছোট কঙ্কাল। কঙ্কালগুলো দেখে আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। কঙ্কাল দেখতে যে এতোটা ভয়ংকর হতে পারে এটা আমি আগে কখনো কল্পনাও করিনি।কঙ্কালগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো এখনো কঙ্কাল গুলোর শরীরে মানুষের পঁচা মাংস লেগে রয়েছে। জায়গায় জায়গায় রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছিলো। এছাড়াও একটা বিছ্রি গন্ধ আসছিলো কঙ্কাল গুলো থেকে। কবরের ভেতর থেকে দাঁড়িয়ে অনেকদিন আগে মারা যাওয়া মানুষগুলোর কঙ্কাল দেখার অনুভুতিটাই অন্যরকম ছিলো। ভয়ে প্রতি মুহুর্তে যেনো আমার ধম বন্ধ হয়ে আসছিলো। এরপর মেয়েটার কথামতো মাঝখানের কঙ্কালটার গলার দিকে তাকালাম। দেখলাম আসলেই একটা স্বর্ণের চেইন সেখানে ছিলো। আমি কঙ্কালটাকে না ধরে উপর থেকে কোনমত চেইনটা বের করে হাতে নিলাম। এরপর যেই কবরের উপরের মেয়েটাকে দেখাতে যাবো যে, এটাই কি সেই চেইন নাকি যেটা, আমাকে সে নিতে বলেছে। হঠাৎ কবর থেকে উপরে তাকিয়ে দেখলাম উপরে ঘন অন্ধকার। সেই মেয়েটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা কবরের আশেপাশে কোথাও নেই। এরপর আবার যেই কবরের দিকে তাকালাম দেখলাম মোমবাতিটা মাঝখানের সেই কঙ্কালটার হাতে, যার গলা থেকে মাত্র আমি চেইনটা খুললাম। হঠাৎ সেই কঙ্কালটার হাতে মোমবাতিটা দেখে আমি পুরো ভয়ে শিহরে উঠলাম। জানি না এটা আমার মনের ভুল ছিলো নাকি সত্যি! আমার মনে হচ্ছিলো যে সেই কঙ্কালের চোখ দুটো ধীরে ধীরে আরো বেশি উজ্জল আর ভয়ঙ্কর হচ্ছে। এরপর মনে হলো কঙ্কালটা ধীরে ধীরে নড়তে শুরু করলো। আমি এখনো কবরের ভেতরেই একা দাঁড়িয়ে রয়েছি আর আমার সামনে এখন এসব ঘটনা ঘটছে দেখে ভয়ে আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার দশা। হঠাৎ আমার ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিলো কবরের উপরে উঠানে কারো জোড়ে জোড়ে হেঁটে আসার শব্দ। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম যে কে আসছে!
.
হঠাৎ দেখলাম একটা লাইট হাতে দৌড়ে দৌড়ে রমিজ চাচা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে যেনো আমার প্রানটা আবার ফিরে আসলো। আমার ভয় অনেকটাই কমে গেলো। এরপর রমিজ চাচা এসে আমার দিকে লাইটটা ধরে আমাকে প্রশ্ন করলো,
-বাবু! আপনে এতো রাইতে এই বাড়িতে কেন? আর গর্তের ভেতরেই বা কি করেন?
আমি রমিজ চাচার এই প্রশ্নটা শুনে বেশ অবাক হলাম। রমিজ চাচার চোখে শুধুমাত্র কৌতুহলতা দেখতে পেলাম। তার চোখে কোন ভয় ছিলো না। তাহলে কি রমিজ চাচা এই কঙ্কালগুলো দেখে ভয় পায়নি! এরপর রমিজ চাচাকে যেই সেই কঙ্কালগুলো দেখাতে যাবো হঠাৎ দেখলাম আমার সামনে কোন কঙ্কাল নেই। আমি অবাক হয়ে গেলাম! একটু আগও তো আমি এখানে কঙ্কালগুলোকে দেখেছি। এক মূুহুর্তে কঙ্কালগুলো কোথায় উধাও হয়ে গেলো? আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সেই মেয়েটাই বা কোথায় গেলো? এগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার পুরো শরীর ভয়ংকর ভাবে কাঁপতে শুরু করলো। আমি রমিজ চাচাকে কিছু বলার আগেই অজ্ঞান হয়ে কবরের ভেতর পরে রইলাম।
.
যখন আমার জ্ঞান ফিরলো আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম নিজের ঘরে। আমি আমার ঘরের বিছানায় শুয়ে ছিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো যে আমার পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে গেছে। আমি আমার শরীর কিছুতেই নাড়াতে পারছিলাম না। আমার মাথার পাশে এখন রমিজ চাচা বসে আছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই রমিজ চাচা আমার কাছে এসে জানতে চায় আমি
কিছু খাবো কিনা। কিন্তু তখনও আমার কথা বলার শক্তি নেই। রমিজ চাচা একটা বাটিতে করে পানি নিয়ে এসে একটা রুমাল দিয়ে আমার পুরো শরীর মুছে দিচ্ছিলো। আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে কোন একটা ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে আমার সাথে। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। কারণ আমার পুরো শরীর এখনো অবশ হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর আবার আমার চোখটা লেগে গেলো। যখন চোখ খুললাম তখন প্রায় অনেক বেলা হয়ে গেছে। কিন্তু আমার শরীরটা আর এখন অবশ নেই। আমি ভালো মত শরীর নাড়াতে পারছিলাম। আমি বিছানা থেকে উঠে বাড়ির উঠানে গেলাম। দেখলাম, রমিজ চাচা মনমরা হয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে। আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেখেই ছুটে আমার কাছে আসলো। এরপর আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলো,
-বাবু! আপনে সুস্থ্য হইছেন? আমি মেলা চিন্তায় পইড়া গেছিলাম আপনারে নিয়া। আপনার কি হইছিলো গতরাইতে? আপনি একা একা সেই বাংলোতে কেন গেছিলেন? আর গর্তেই বা কী করতাছিলেন?
রমিজ চাচার প্রশ্ন শুনে আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে তারপর তাকে সব কথা খুলে বলি। সেই ডায়েরি পাওয়া থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা তাকে বলি। সেই হীরা , ডাকাত আর মিশির কোথাও বলি। রমিজ চাচা আমার কথাগুলো শুনে বেশ অবাক হয়। এরপর আমাকে বলে, এতকিছু যে আমার সাথে ঘটেছে এটা কেন আগে তাকে বলিনি। আমি বললাম,
-তুমি শুধু শুধু চিন্তা করবে তাই আর বলিনি। আর এমনিতেই আমার অশরীরীর উপর তেমন বিশ্বাস ছিলো না। কিন্তু গতকয়েক দিনে আমার সাথে যা ঘটলো তাতে আমার অবিশ্বাসগুলো সব ভেঙে দিয়ে গেছে।
রমিজ চাচা কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে কিছু একটা ভেবে আমাকে বললো,
-বাবু! এইটা নিয়া আপনে কোন চিন্তা কইরেন না।আমার পরিচিত এক কবিরাজ আছে যে এই আত্মারে বশ কইরা পৃথিবী থিকা মুক্তি দিতে পারবো। আমি তারে লইয়া আইতাছি।
চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment