Skip to main content

ডায়েরি (পরিচ্ছেদ - ১২)

ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ঢুকলাম, ঢুকেই ঘরের লাইট জালানোর বৃথা চেষ্টা করলাম। আসলে বাংলোটা অনেক বছর ধরে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই বাংলোটাতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকাটাই স্বাভাবিক। এরপর মোবাইলের লাইটটা জ্বালিয়ে চারিদিক ভালো করে খুজতে লাগলাম যে, কে আমাকে এই ঘর থেকে ডাকলো? কিন্তু অবাক হলাম এটা দেখে যে, ঘরে কেউই নেই! তাহলে আমি যে ডাকটা শুনলাম সেটা কি আমার মনের ভুল ছিলো? ভাবলাম হয়তো অতিরিক্ত ভয় পাওয়ার কারণে আমার মনে হচ্ছিলো যে বাড়ির ভেতরে অন্য কেউ আমাকে ডাকছে। এরপর ঘর থেকে যেই বেরিয়ে যেতে নিলাম হঠাৎ আবার সেই গোলাপের গন্ধ নাকে ভেসে আসতে শুরু করলো।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আরে এই গন্ধ এখানে আসছে কিভাবে! এই গন্ধটাতো আমি আমার বাড়িতেই পেয়েছিলাম যখন রমিজ চাচার বেশে সেই অশরীরী আত্মাটা আমার বাড়িতে এসেছিল। তার মানে কি, সেই আত্মাটা এখনো আমার পাশেই রয়েছে! কিছুক্ষন পর সেই গোলাপের গন্ধটা আর তীব্র হতে লাগলো আর আমার ভয় আরো বেশি বাড়তে লাগলো। আমি ভয় পেয়ে চুপচাপ ঘরের ভেতরেই দাড়িয়ে ছিলাম। ঘরটা তখনো বেশ অন্ধকার। আমার মোবাইলের আলোতে ভালোমতো চারিদিকটা বোঝা যাচ্ছিলো না। হঠাৎ আমার মোবাইলটা কেনো জানি বন্ধ হয়ে গেলো। এরপর আমার কাধে একটা শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম। আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে কোন একটা মেয়ের হাতের স্পর্শই এটা। আমি ভয়ে ভয়ে পেছনে ঘুরলাম। যদিও অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে কোন একটা মেয়ে আমার সামনে এখন দাড়িয়ে রয়েছে। আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম । তাই ভয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে মেয়েটাকে প্রশ্ন করলাম,
-কে আপনি! এই বাংলোতে কি করছেন? আমিতো শুনেছি যে এই বাংলোতে এখন আর কেউ থাকে না।
-আমার নাম সানজিদা আফজাল মিশি। (মেয়েটা)
-মিশি! আপনিই কি সেই মিশি যার কথা আমি ডায়েরিতে পড়েছি! আপনার স্বামীকে আর মেয়েকেই কি এই বাড়িতে খুন করা হয়েছে!?

এরপর মেয়েটা কিছুটা গম্ভীরভাবে উত্তর দিলো,
-হ্যাঁ।
-আচ্ছা আপনিই কি রমিজ চাচার বেশে আমার বাড়িতে এসে আমায় ডায়েরিটা দিয়েছিলেন।
-হ্যাঁ।
-কিন্তু কেনো? আমিতো আপনাকে চিনি না। হয়তো এর আগে আপনাকে কখনো দেখিওনি। আপনি কি আমাকে কোনভাবে আগে থেকে চিনতেন?
-না।
-তাহলে আপনি আমাকে ডায়েরিটা কেনো দিলেন? আমি আপনার সম্পর্কে জেনে কি করবো?
-একমাত্র আপনিই আমাকে এখন সাহায্য করতে পারেন। তাই আমি চেয়েছিলাম আগে আপনি আমার সম্পর্কে সব জানুন এবং তাই আপনাকে ডায়েরিটা দিয়েছিলাম।
-সাহায্য! আমি! কি সাহায্য? আচ্ছা! তার আগে আমাকে এটা বলুন ডায়েরিতে আমি যেটুকু পড়েছি, এরপরে কি হয়েছিলো আপনার সাথে? আপনি সেই পৈশাচিক শক্তির বই পড়ে পরে কি করেছিলেন? সেই ডাকাতগুলোই বা এখন কোথায়? আর আপনি তাদের হাত থেকেই বা মুক্তি পেলেন কিভাবে? আর এতদিন আপনি এই বাড়িতেই বা লুকিয়ে আছেন কেনো?
-তাহলে শুনুন। সেই পৈশাচিক শক্তির বই পড়ে আমার আবার পিশাচ শক্তির উপর বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে এবং সেই বইয়ে লেখাছিলো যে কিভাবে পিশাচ দেবীকে পৃথিবীতে আহ্বান করা যায়। আমি বইয়ের নিয়ম মতো মন্ত্র পড়ে পিশাচ দেবীকে পৃথিবীকে আসার জন্য আহ্বান জানাই। পিশাচ দেবীকে পৃথিবীতে আনতে হলে সামান্য হলেও মানুষের তাজা রক্তের প্রয়োজন হয়। আমি বুঝতে পারছিলাম যে এখন অন্য কোন মানুষকে আমি আর পাবো না। তাই নিজের হাত কেটে সেই রক্ত দিয়েই পুজা শুরু করি এবং এক পর্যায়ে আমার ঘরের সব আলো নিভে যায়। আমি অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছিলাম না। শুধু কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পারছিলাম। বুঝতে পারছিলাম হয়তো কেউ আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি কিছুক্ষন চুপ থাকার পর প্রশ্ন করি যে, পিশাচ দেবি আপনি কি এসেছেন? আমার সামনে থেকে একটা ভয়ংকর মেয়েলি কন্ঠে উত্তর আসে, -হ্যাঁ। আমায় কেনো ডাকলে তুমি? তোমার কি সাহায্য চাই? এরপর আমি আমার সব কথা পিশাচ দেবীকে খুলে বলি। সেই ডাকাতদের কথা, তাদের অপরাধের কথা, আমার স্বামী আর মেয়েকে খুন করার কথা, আমার উপর নরপশুর মতো ব্যবহারের কথা সব পিশাচ দেবীকে খুলে বলি। এরপর পিশাচ দেবী আমার কাছে জানতে চায় যে এখন আমি কি করতে চাই? আমি পিশাচ দেবীকে বললাম -আমি প্রতিশোধ নিতে চাই। তারা যতোটা নির্দয়ভাবে আমার স্বামী আর মেয়েকে খুন করেছে তার চেয়ে বেশি শাস্তি আমি তাদের দিতে চাই। আমি এই রকম জীবন থেকে মুক্তি চাই। আমি সেই ডাকাতগুলোকে খুন করবো না। কিন্তু তাদের সুখ-আনন্দ সব কেরে নিতে চাই। তাদের জীবনকে আমি অভিশপ্ত করতে চাই। তাদের ধ্বংস করে দিতে চাই। পিশাচ দেবী আমাকে বললেন -এর জন্য আমাকে পৈশাচিক শক্তির অধিকারী হতে হবে, তাহলে আমি যেকোন মানুষকে অভিশপ্ত করতে পারবো। এরপর আমি তার কাছে জানতে চাইলাম যে পৈশাচিক শক্তির অধিকারী কিভাবে হবো আমি? সে বললো, -পৈশাচিক শক্তির অধিকারী হতে হলে আমাকে একজন মানুষকে খুন করে তার রক্ত দিয়ে স্নান করতে হবে! এরপর আমাকে একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিলো যেটা স্নান করার পর পড়লে আমি সহজেই পৈশাচিক শক্তির অধিকারী হয়ে যাবো। এরপর পিশাচ দেবী চলে গেলেন। আমি যেনো একটা নতুন আশা খুজে পেলাম প্রতিশোধ নেওয়ার। আমার অন্য কিছুর জন্য পৈশাচিক শক্তি চাই না। শুধু এই নরপশুগুলোর থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই আমি এই পৈশাচিক শক্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন একটা মানুষ পাবো কোথায়! মানুষের রক্ত ছাড়াতো এটা কিছুতেই সম্ভব হবে না। প্রতিরাতেই সেই ৫জন ডাকাত আমার ঘরে আসতো। তারা আমার কাছে সেই হীরাগুলোর সন্ধান চাইতো। কিন্তু আমি এটা কিছুতেই বলতাম না। এরপর এরা আমার উপর শারীরিক অত্যাচার চালাতো। কিন্তু সেদিন মাথায় একটা অন্যরকম বুদ্ধি আসলো। আমি ভাবলাম যে তাদের ৫ জনের মধ্য থেকে ১ জনকে আজ বোকা বানাতে হবে। তাকেই বলি দিয়ে আজ পৈশাচিক শক্তির অধিকারী হবো। কিন্তু কিভাবে বোকা বানাবো সেটা আমার মাথায় কিছুতেই আসছিলো না। এরপর হঠাৎ একটা বুদ্ধি মাথায় এলো।
জানতাম যে প্রতিরাতের মতো আজকেও একজন ডাকাত আসবে আমার কাছে হীরার সন্ধানে । তাকেই বোকা বানাতে হবে। এরপর অপেক্ষায় বসে রইলাম ঘরে। আসলেই একটুপর তাদের মধ্যে একজন ডাকাত ঘরের দরজা খুলে আমার কাছে আসলো। এরপর যথারিতী সে আমাকে প্রশ্ন করলো, -সেই হীরাগুলো কোথায়? আমি রোজ উত্তর দিতাম যে, জানি না। কিন্তু আজ উত্তর দিলাম এই ঘরেই রয়েছে। আমার কথা শুনে ডাকাতটা অবাক হয়ে গেলো। সে অনেকটা কৌতুহলতা নিয়ে জানতে চাইলো, -কোথায় সেই হীরার বাক্সটা? আমি আমার আঙুল দিয়ে ইশারা করে তাকে দেখিয়ে দিলাম। এই সিন্দুকটার ভেতরে। আমার কথাশুনে লোকটা পাগলের মতো হয়ে গেলো। দ্রুত ছুটে গেলো সেই সিন্দুকটার কাছে হীরা নিতে। এরপর সে বসে সিন্দুকটা খোলার চেষ্টা করছিলো। আমি প্লানমতো ঘরের এককোণা থেকে একটা রড নিয়ে সোজা লোকটার পেছন থেকে তার মাথায় আঘাত করলাম। লোকটা সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এরপর আমি ধীরে ধীরে লোকটাকে টেনে অন্য একটা ভেতরের ঘরে নিয়ে গেলাম যাতে সেখানে ডাকাতগুলো আমাকে খুজে না পায়। এরপর একটা ছুরি নিয়ে সোজা চালিয়ে দিলাম ডাকাত লোকটার গলায়। ছুরিটা বেশ ধারালো ছিলো তাই এক আঘাতেই লোকটার গলা থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে গেলো। তার রক্ত পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো। আমি লোকটার পুরো শরীর ছুরি
দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে রক্ত বের করছিলাম। সব সময় আমি রক্ত দেখে বেশ ভয় পেতাম। কিন্তু সেদিন কেনো যেনো খুব আনন্দ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো যে আমি আমার প্রতিশোধ নেওয়া মনে হয় শুরু করে দিয়েছি। এরপর আনন্দে সেই রক্ত দিয়ে রক্ত স্নান করতে শুরু করলাম। সব কিছুই আমার প্লানমতো চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে ঘরের দরজা খুলে বাকি ৪জন ডাকাত এসে হাজির হলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এরা এখানে কিভাবে আসলো!! এরপরে বুঝলাম যে , আমি যে একে টেনে টেনে এই ঘরে নিয়ে এসেছি। তারা হয়তো রক্তের দাগ দেখে দেখে এই ঘর পর্যন্ত চলে এসেছে। কিন্তু এখন আমাকে থেমে গেলে হবে না। আমাকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অবশ্যই পৈশাচিক শক্তি অর্জন করতে হবে। আমার কাজ অনেকটাই শেষ। এখন শুধু মন্ত্রগুলোই পড়া বাকি আছে। এরপর আর তারা আমাকে কিছু করতে পারবে না। ডাকাতগুলোও আমার এই রক্তাক্ত শরীর আর তাদের এক ডাকাতের ভয়ংকর লাশ দেখে ভয়ে শিহরে উঠলো। তাদের চোখে ভয় দেখে আমার বেশ আনন্দ হলো। এরপর তাদের মধ্যে দুইজন ডাকাত এসে আমাকে শক্ত করে ধরে টেনে ঘরের বাহিরে নিয়ে গেলো। আমি বলছিলাম, -আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে প্রতিশোধ নিতে হবে। আমি তোমাদের রক্ত দিয়ে স্নান করবো। এরপর আমি যেই মন্ত্র পড়া শুরু করবো ঠিক তখনি তাদের মধ্যে একজন ডাকাত একটা ছুরি এনে সোজা আমার গলায় চালিয়ে দেয়। আমার গলা থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে। আমি আর কোন শব্দ করতে পারিনা। আমি মারা যাই। এরপর তারা আমার লাশটাকে বাড়ির উঠানে নিয়ে যায় এবং সেই গোলাপ গাছটার নিচে যেখানে আমার স্বামী আসিফ আর মেয়ে রাত্রিকে কবর দিয়েছিলো তারা সেখানে আবার গর্ত করে আমার লাশটাকেও রক্তাক্ত অবস্হায় মাটি চাপা দিয়ে দেয়। (আত্মা)
-কি বলছেন এসব! আপনার লাশ মানে! আপনি মারা গেছেন? আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? আপনি যদি মারাই গিয়ে থাকেন তাহলে আমার সামনে এখন দাঁড়িয়ে কথা বলছেন কিভাবে? আর সেই ডায়েরিটাই বা কিভাবে লিখলেন?

চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...