Skip to main content

ডায়েরি (পরিচ্ছেদ - শেষ)

পরেরদিন সন্ধ্যা বেলায় আমাকে কিছু না বলেই রমিজ চাচা বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন গেলো। রাত ১২ টা বেজে গেলো তাও রমিজ চাচা বাড়িতে ফিরলো না। আমি খুব চিন্তায় পড়ে যাই যে রমিজ চাচা কোথায় গেলো এতো রাতে? সারা রাত রমিজ চাচার জন্য অপেক্ষা করলাম কিন্তু সে আসলো না। পরের দিন সকাল বেলা বাড়ি থেকে বের হলাম রমিজ চাচাকে খুজতে। যদিও নতুন শহর কিছুই তেমন চিনি না আমি। তাও সারাদিন তাকে খুজার চেষ্টা করলাম কিন্তু কোথাও তাকে খুজে পেলাম না। হতাশ হয়েই বাড়িতে ফিরলাম। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না যে রমিজ চাচা হঠাৎ কোথায় যেতে পারে।

রাত তখন প্রায় ৯ টা একা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ মনে পড়লো যে অনেকদিন ধরেই মোবাইলটা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই একটু চালু করলাম। এরপর মোবাইলটা হাতে নিয়েই চুপচাপ বারান্দায় বসে বসে রমিজ চাচার কথা চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার তেকে কল আসলো। কল এসেছে দেখেই দ্রুত কলটা ধরলাম। ধরে বললাম,
-হ্যালো। কে বলছেন?
-হ্যাঁ। আমি কবিরাজ বলছি। যাকে নিয়ে রমিজ, হরিনাথ বাংলোতে গিয়েছিলো। আপনাকে এতদিনে কতবার কল দিয়েছি। আপনার মোবাইল বন্ধ রেখেছেন কেনো? আর আপনিই বা এখন কোথায়?
-আপনিইতো বলেছিলেন যে আমাকে মোবাইলটা বন্ধ রাখতে আর গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতে। রমিজ চাচাইতো আমাকে এটা বললো। আর আপনি বা আমাকে এতবার কল দিয়েছিলেন কেন?
-হ্যাঁ বলছি! আসলে আপনি যার সাথে গ্রাম থেকে শহরে গিয়েছেন সেটা আপনার রমিজ চাচা না। এটা সেই অশরীরী মেয়েটার আত্মা। শহরে আপনি রমিজ চাচার বেশে যার সাথে আছেন সেটা ঐ মেয়েটারই আত্মা। সে তার খুনের প্রতিশোধ নিতে আপনাকে বোকা বানিয়ে শহরে নিয়ে গেছে। আর আপনার রমিজ চাচা গ্রামেই মারা গিয়েছেন।
-কি বলছেন এসব? এর মানেটা কি? আপনি সেই মেয়েটা সম্পর্কে জানলেন কিভাবে? আর এসব কিভাবে হলো? রমিজ চাচা তাহলে কোথায়?

আর ওপাশ থেকে কোন উত্তর আসলো না। শুধু একটা ভয়ংকর চিৎকার শুনতে পেলাম। মৃত্যু চিৎকার! কলটা কেটে গেলো। এরপর আমি কয়েকবার সেই নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু কলগুলো ঢুকলো না । আমি কবিরাজের কথা শুনে পুরোই অবাক হয়ে গেলাম। কি বলছে এসব সে! রমিজ চাচা মারা গেছে! আর সেই অশরীরী মেয়েটার আত্মাটা রমিজ চাচার বেশে এতোদিন আমার সাথে ছিল? কিন্তু এসব কিভাবে ঘটলো? এর উত্তর আমার কাছে নেই। আমি পুরো নির্বাক হয়ে গেলাম। এরপর চুপচুপ মনমরা হয়ে বারান্দা থেকে নিজের ঘরে গেলাম। ঘরে গিয়ে বিছানায় যা দেখলাম আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। বিছানায় সেই ডায়েরিটা পরে রয়েছে। আমি অবাক হয়ে ডায়েরিটা বিছানা থেকে তুলে নিলাম। ডায়েরিতে যা লিখাছিলো তা পড়ে আমি পুরো নিশ্চল হয়ে গেলাম। ডায়েরিতে যা লেখাছিলো,

"কেমন আছেন আপনি? হ্যাঁ আমিই সানজিদা আফজাল মিশি। আমিই হরিনাথ বাংলোর সেই অভিশপ্ত আত্মা। কিন্তু আমার এই অভিশপ্ত আত্মা হয়ে উঠার পেছনের গল্পটাতো আপনি ভালো করেই জানেন। আমিই আপনার রমিজ চাচাকে খুন করে তার শরীরে প্রবেশ করি এবং আপনাকে বোকা বানিয়ে এই শহরে নিয়ে আসি। বিশ্বাস করুন আমার আর অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। আমার একমাত্র লক্ষই হচ্ছে সেই নরপশু গুলোকে খুন করে আমার স্বামী আর মেয়েকে খুন করার প্রতিশোধ নেওয়া। আর এর জন্য আমি যেকোন কিছু করতে পারি। যে কাউকেই ব্যবহার করতে পারি। আর আমিতো আপনার কাছে ভালোভাবেই সাহায্য চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি আমাকে সাহায্য করেননি। উল্টো আপনার রমিজ চাচাকে দিয়ে আমাকে ধ্বংস করারা চেষ্টা করেছেন। তাহলে এবার শুনুন আপনার রমিজ চাচাকে আমি কিভাবে খুন করেছি। আপনার রমিজ চাচা অনেক বোকা আর লোভী। সে কবিরাজের সাহায্য নিয়ে আমার আত্মাকে ধ্বংস করতে হরিনাথ বাংলোতে আসেনি। সে এসেছিলো আমাকে আটকে রেখে সেই হীরাগুলো চুরি করতে। এটাই তার সবচেয়ে বড় ভুল আর বোকামি ছিলো। সারাদিন হীরা খোজার পরেও যখন আপনার রমিজ চাচা হীরা পায়নি।তখন সে রাতেও হীরা খুজতে থাকে এখানে সেখানে গর্ত করে করে। আর সে আরো বোকামি দেখিয়েছিলো আপনার কাছে থাকা আমার অভিশপ্ত চেইনটা নিজের গলায় পড়ে হরিনাথ বাংলোতে এসে। আপনার রমিজ চাচা পাগলের মতো চারিদিকে হীরা খুজে যাচ্ছিলো আর তখনি ঝড় আর বর্জপাত শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সে তার তোয়াক্কা করে না। সে হীরা খুজতেই থাকে। এক পর্যায়ে একটা বর্জপাত হয় আমার হরিনাথ বাংলোতে এবং আমিই এই বর্জটা আপনার রমিজ চাচার শরীরে নিক্ষেপ করি এবং সে মারা যায়। এবং এরপর আমার সামনে পরে থাকে শুধু আমার অভিশপ্ত চেইন পড়া একটা মৃত শরীর। তার শরীরে প্রবেশ করার জন্য এরচেয়ে বেশি আমার আর কিছুরই প্রয়োজন ছিলো না এবং এরপর আমি আপনার রমিজ চাচার শরীরে প্রবেশ করি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি এই রমিজের বেশেই আপনার সাথে রয়েছি। সেই হরিনাথ বাংলোতেই কবিরাজকে আটকে রেখে আপনার সামনে রমিজ চাচা সাজার অভিনয় করি এবং আপনাকে বোকা বানিয়ে এই শহর পর্যন্ত নিয়ে আসি। আপনার নিশ্চই এখন খুব রাগ হচ্ছে এটা ভেবে যে কেনো আমি আপনার প্রিয় একজন মানুষ রমিজ চাচাকে খুন করলাম। কিন্তু এখন আমি আপনাকে যা বলবো তা শুনে আপনার নিজেরই ইচ্ছা হবে এখন রমিজ চাচাকে আবার বাঁচিয়ে খুন করতে। আসলে আপনার রমিজ চাচা এতোটাও ভালোমানুষ না যতোটা আপনি তাকে মনে করেন। সে একজন বেঈমান এবং লোভী। আপনার বাবা, ভাই, স্ত্রী কিংবা ছেলে কেউই কিন্তু দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। তাদের সবাইকে খুন করা হয়েছে এবং এটা করেছে আপনার রমিজ চাচা। সেই আপনার বাবাকে খুন করে বলে দুর্ঘটনায় মারা গেছে, সেই আপনার ভাইকে পানিতে ফেলে খুন করেছে। সেই আপনাকেও এক্সিডেন্ট করে খুন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আপনার স্ত্রী আর সন্তান মারা গেলেও আপনি কোনভাবে বেঁচে যান। সে এসব করেছে শুধু আপনাদের সম্পত্তির লোভে আর ক্ষোভে। সে এরপরেও আপনাকে অনেকবার খুন করতে চেয়েছে। কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। থাক এসব কথা। আমি এর জন্য তাকে খুন করিনি। আমি খুন করেছি শুধু আমার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একটা শরীর চাই তাই। এখন থেকে আপনি মুক্ত। আপনাকে এই পিশাচ ডায়েরি বা আমি আর বিরক্ত করবো না। আমি সেই নরপশুগুলোর ঠিকানা পেয়ে গেছি। তাদের খুন করার সাথে সাথে আমিও মুক্তি পেয়ে যাবো। চিরমুক্তি। ভালো থাকবেন। "
.
ডায়েরিটা পড়ে আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না ডায়েরির লেখাগুলো। কিন্তু এগুলোই সত্য ছিল। এগুলোই বাস্তব কথা আর বাস্তবতা ছিলো।

পরেরদিন সকাল বেলা শুনতে পেলাম শহরের ডাস্টবিনের পাশে ৪টা মাথা কাটা লাশ পাওয়া গিয়েছিলো। তাদের কারোই হৃৎপিন্ড আর মাথা খুজে পাওয়া যায়নি।
আমি আবার আমার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি।
এরপর থেকে আমার জীবনে হরিনাথ বাংলো, রমিজ চাচা, মিশি বা তার সেই পিশাচ ডায়েরি কিছুই আসেনি। আমার জীবনটা একাকীত্বের ভেতরেও কেমন যেন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো। আমি ভালোই ছিলাম #পিশাচ_ডায়েরি গল্পে।

                    * * * * সমাপ্ত * * *

লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব


Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...