একদিন রাতে আসিফ হঠাৎ এসে আমার হাতে একটা খাম গুজে দেয়। খামটা খুলে দেখলাম সেখানে ৩ টা পাসপোর্ট ছিলো। পাসপোর্টগুলো বাংলাদেশে যাওয়ার। আমি বেশ অবাক হলাম। আসিফ আমাকে বললো, আমরা এই ছুটিতে বাংলাদেশে যাবো ঘুরতে। সেখানেই আমরা ছুটি কাটাবো। আমি আর আমার মেয়ে রাত্রি দুজনেই অনেক খুশি হলাম। এরপর আমরা বাংলাদেশে চলে আসি। প্রথমে আমরা চট্রোগ্রামের কক্সবাজারে যাই, এরপরে সিলেটের জাফলং, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ বাংলাদেশের আরো অনেক সুন্দর এলাকা ঘুরে বেড়াই। দেখতে দেখতে আমাদের ছুটির এক মাস কেটে যায়। কিন্তু আমরা ৩ জনেই বাংলাদেশের প্রেমে পরে যাই। আমি আর রাত্রি দুজনেই আসিফকে অনুরোধ করলাম যে, আমরা আর আমেরিকায় ফিরে যাবো না। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই। এই দেশেই আমার মেয়ে বেলার হাজারো স্মৃতি রয়েছে। আসিফও এই দেশকে অনেক ভালোবাসে। তাই সে আর না করলো না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশেই থাকবো। এরপর আমেরিকায় আমাদের যে সম্পদ ছিলো সেগুলো বিক্রি করে ফেলি আমরা। আসিফও তার চাকরি ছেড়ে দেয়। আমরা বাংলাদেশের ভেতরেই একটা গ্রামাঞ্চলের দিকে একটা পরিত্যাক্ত বাড়ি কিনি। বাড়িটা আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছিলো। আসলে বাড়িটার সৌন্দর্য বলে প্রকাশ করার মতো না। কিন্তু বাড়িটার সৌন্দর্যের তুলনায় দাম ছিলো
খুবই কম। এর প্রধান কারণ ছিলো, বাড়িটা নাকি ভুতের বাড়ি নামে খ্যাত। এখানে নাকি ভূতেরা থাকে। এর আগেও কয়েকটা পরিবার এখানে এসে থাকার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তারা নাকি ভুত থেকে পালিয়ে গেছে। ভূতের কথা শুনে আমরা বেশ মজা পেলাম। ভুতে বিশ্বাস আমাদের কখনোই ছিলো না। কিন্তু বাড়িটা যেহেতু শহর থেকে অনেক দুরে, গ্রামেরও অনেক ভেতরে নির্জন একটা জায়গায় রয়েছে সেহেতু এই বাড়ি সম্পর্কে একটু কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা এইকোথায় কোন কান দিলাম না। এরপর আমরা সেই বাড়িতে গিয়ে উঠি। বাড়িটা আসলেই অনেক বড় ছিলো। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিলো যে বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয়নি। তাই পুরো বাড়িতেই ময়লা দিয়ে ভরা ছিলো। এরপর আমি আর আসিফ মিলে পুরো বাড়ি পরিষ্কারের কাজে লেগে পড়ি। আমাদের মেয়ে রাত্রিও যতটুকু পারে আমাদের সাহায্য করছিলো। এছাড়াও আমাদের প্রয়োজনীয় সব আসবাব পত্র আসিফ বাজার থেকে কিনে এনেছিলো। আমরা পুরো এক সপ্তাহ কঠোর পরিশ্রম করে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে গুছাতে পেরেছিলাম। কিন্তু এত পরিশ্রমের পরেও আমরা অনেক খুশি ছিলাম। কারণ, আমরা যে জন্য বাংলাদেশে আসি সেটা হলো এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। আর আমাদের বাড়িটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটা রুপ।
চারপাশে গাছে ঘেরা একটা বাড়ি আমাদের। বাড়ির উঠানেও নানান প্রজাতির গাছ লাগালাম আমরা। এতো সুন্দর একটা বাড়িকে মানুষ ভূতের বাড়ি কিভাবে বলে এটাই জানা নেই আমাদের। আমরা খুব আনন্দের সাথেই দিন কাটাতে লাগলাম সেখানে। কিন্তু আমাদের ভালো দিন বেশিদিন থাকলো না। এক রাতে হঠাৎ বাহিরে প্রচুর বাতাস হচ্ছিলো। মনে হয়েছিলো বড় কোনো ঝড় হবে। তাই আমি দ্রুত ঘরের জানালা আটকাতে গেলাম। জানালা আটকাতে গিয়ে যেই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম দেখলাম আমাদের বাড়ির উঠানে একটা সাদা কাপড় পড়া বৃদ্ধা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃদ্ধার দৃষ্টিটা অনেক ভয়ংকর ছিলো। সে যেনো তার চোখের ইশারায় আমায় কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আমি হঠাৎ বৃদ্ধাকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। ভয় পেয়ে চিৎকার করে আসিফকে ডাকতে লাগলাম,
-আসিফ! কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি এইদিকে আসো!
আমার চিৎকার শুনে আসিফ দ্রুত আমার কাছে এসে জানতে চাইলো যে, আমি কেনো চিৎকার দিলাম। যেই আসিফকে সেই বৃদ্ধাকে দেখাতে বাহিরে তাকালাম। দেখলাম, সেখানে কেউ নেই। আমি আসিফকে বৃদ্ধাটার কথা বললাম। আসিফ আমাকে বললো যে এটা হয়তো আমার মনের ভুল ছিলো। আমিও তাই এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম। এরপরে যখন রাতে ঘুমাতে যাবো ঠিক তখনি আমি আর আসিফ দুজনেই ঘরের বাহির থেকে একটা বৃদ্ধার কান্নার আওয়াজ পেলাম। একে রাত ছিলো, এরপর আবার নির্জন একটা বাড়িতে শুধু আমরা ৩ জন ছিলাম। তারপর প্রচন্ড ঝড়-বাতাস বইছিলো। সেই বৃদ্ধার কান্নার শব্দও যেনো আমাদের কাছে বেশ ভয়ংকর লাগছিলো। রাত্রি তখন ঘুমিয়ে ছিলো, না হলে সে হয়তো আরো বেশি ভয় পেয়ে যেতো।
এরপর আমি আসিফকে বলি যে,
-এতরাতে এখানে কোন ভালো মানুষ আসবে না। আর আমাদের আশেপাশেও তো কোন বাড়িও নেই। তাহলে নিশ্চই এখানে খারাপ কেউ এসেছে। .
কিন্তু আসিফ আমার কথা শুনলো না। সে বললো,
-আর যেই হোক না কেনো! কোন ভুত তো আর আসবে না। হয়তো কোন বৃদ্ধা বিপদে পরেই এখানে এসেছে। আমাদের তাকে সাহায্য করা উচিত। এরপর আসিফ ধীরে ধীরে দরজাটা খুলতে যায়। আমি বেশ ভয় পেয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার চোখে শুধু ভেসে আসছিলো জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা সেই বৃদ্ধাটার মুখ আর তার ভয়ানক দৃষ্টি। এরপর আসিফ দরজাটা খুলে যা দেখলো...
চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment