কিছুক্ষন পর আমার জ্ঞান ফিরলো। আমার জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম আমি ঘরের বিছানায় শুয়ে আছি। আমার কপালে পানিতে ভেজানো একটা রুমাল। আমার নিজেকে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে। আমার শরীরে মনে হয় এক বিন্দু পরিমাণও শক্তি নেই। আমি ঘরের দিকে ভালো করে দেখতে লাগলাম। ঘরে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। একটু পর রমিজ চাচা হাতে এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। আমার কাছে এসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে সে আস্তে আস্তে আমায় বললো,
-বাবু, আপনার প্রচুর জ্বর হইছে। কাল রাত থিকা কিছু খান নাই। এই দুধটুকু খাইয়া নেন। ভালো লাগবো।
আমি বেশ অবাক হলাম, এত রাতে রমিজ চাচা দুধ পেলো কোথায়? কিন্তু তাকে এটা জিজ্ঞাস করার মতোও ক্ষমতা আমার নেই। আমার শরীরে কথা বলার মতো কোন শক্তিও নেই। তাই আমি রমিজ চাচাকে কিছু বলতে পারলাম না। রমিজ চাচা আমার মাথা কিছুটা উঁচু করে আমাকে দুধটা খাইয়ে দিলো। আসলেই দুধটা খাওয়ার পর একটু ভালো লাগছিলো। এরপর রমিজ চাচা একটা বাটিতে করে পানি এনে সেটাতে রুমাল ভিজিয়ে ভিজিয়ে আমার পুরো শরীর মুছে দেয়। রমিজ চাচা সব সময়ই আমার জ্বর আসলে এমন করতেন। কিন্তু আজ তার ব্যবহার একটু অদ্ভুত রকমের মনে হচ্ছিলো। তার শরীরের ভেতর কেমন যেনো একটা মেয়েলি ভাব ছিলো। তার হাঁটা-চলা, কথা-বার্তা আমার কাছে বেশ ভিন্ন রকম লাগছিলো। আমার পুরো শরীর অবশ থাকার পরেও আমি নাক দিয়ে তখনো স্পষ্ট গোলাপের গন্ধঁ পাচ্ছিলাম। এর কিছুক্ষন পরে আবার আমার চোখ গুলো লেগে গেলো। চোখ যখন খুললাম তখন সকাল হয়ে গেছে। সূর্যের আলো এসে পুরো আমার চোখের উপর পড়ছে। এখন দেখলাম আমার জ্বর এবং ক্লান্তি অনেকটাই কমে গেছে। শরীরো আর অবশ নেই। আমি আমার হাত আর পা ভালো করেই নড়াতে পারছিলাম। ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে গেলাম।
উঠানে গিয়েই প্রথমে সেই ডায়েরিটা খুজতে থাকি। কিন্তু উঠানের টেবিলটাতে ডায়েরিটা ছিলো না। আমি ভাবলাম হয়তো রমিজ চাচাই ডায়েরিটা ঘরে নিয়ে রেখেছে। এরপর রমিজ চাচাকে ডাকতে থাকি। কিন্তু সেই গতকাল রাতের মতো একই ঘটনা ঘটলো। রমিজ চাচাকে পুরো বাড়িতে খুজে পেলাম না। আবার রমিজ চাচা কোথায় গেলো?
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না যে হঠাৎ আমার সাথে এসব কি ঘটছে! রমিজ চাচা কি তাহলে গতকালকে আর আসেনি! কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে যে, রমিজ চাচা সারারাত আমার সেবা করে আমাকে সুস্থ করে তুলেছেন। এরপর আমি চুপচাপ উঠানের চেয়ারে এসে বসে ছিলাম। হঠাৎ আমার মোবাইলে একটা কল আসলো। মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দেখলাম রমিজ চাচার নাম্বার থেকে কল এসেছে। কিন্তু রমিজ চাচার মোবাইল থেকে কল আসায় আমি মোটেও অবাক হলাম না। আসলে গতকাল রাত থেকে আমার সাথে যা যা ঘটছে তাতে আমার সকল অনুভূতিগুলো মারা গেছে। এখন ধীরে ধীরে যেনো আমার চিন্তা শক্তি কমে যেতে লাগলো। প্রথমবার কলটা ধরলাম না। ২য় বার কলটা ধরে বললাম:
-হ্যালো। রমিজ চাচা! কোথায় তুমি?
-জ্যা বাবু। আমি এখনো গ্রামেই আছি। তয় আজকা রাইতেই রওনা দিমু। আপনার কাছে পৌছাইতে পৌছাইতে কালকে সকাল হইয়া যাইবো। কালকা সকালেই তাইলে আমাদের দেখা হইতাছে।
-আচ্ছা। দেখে-শুনে এসো। আর কিছু বলবে?
-না বাবু।
আমি কলটা কেটে দিলাম। চুপচাপ বসে থাকলাম বাড়ির উঠানে। রমিজ চাচা তাহলে কাল সকালে আসবেন। রমিজ চাচা বাড়িতে না আসলে আমার মাথা কিছুতেই ঠান্ডা হবে না।
মোবাইলের কল লিস্ট থেকে দেখতে লাগলাম যে গতকাল রমিজ চাচার সাথে আমার কথা হয়েছিলো কিনা! এটা দেখে কিছুটা অবাক হলাম। গতকাল রাতে যখন রমিজ চাচার সামনে মোবাইল থেকে চেক করছিলাম যে রমিজ চাচা কল দিয়েছিলো কিনা। তখন দেখেছিলাম যে গত ২ ধরে রমিজ চাচার সাথে আমার কোন কথাই হয়নি। কিন্তু এখন স্পষ্ট দেখতে পারছি গতকাল রাতে রমিজ চাচার সাথে আমার মোবাইলে কথা হয়েছে।
চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment