Skip to main content

রাজ হেমন্ত

     গোধুলির আবছা আলো জালানার ফাঁক দিয়ে এসে পড়ছে অন্ধকার ঘরে। ঘরের এক কোনায় জানালার পাশে উদাস হয়ে বসে আছে নন্দিতা। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, তার চোখে এখন আর জল নেই, চোখের আলোও ঝাপসা হয়ে আসছে। ঝাপসা হয়ে যাওয়া নিভু নিভু দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকাল সে। জালানার কাছেই লকলকিয়ে বেড়ে উঠছে ওর বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত রাজ হেমন্ত ফুলের গাছটি। এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল গাছটির দিকে। বাইরে আর তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
     “কি দেখে যেন মন মুগ্ধ হতে চায়” এই ভাবনায় দূর তেপান্তরের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল নন্দিতা। তার এই মুগ্ধতা এমনই সুখময় ছিল যেন নৌকাহারা নাবিক তার হারানো নৌকা আবার ফিরে পেয়েছে। সূর্য তখন ডুবি ডুবি করছে, দূরের মাঠে পরিশ্রান্ত যুবকের ছায়ার আবির্ভাব দেখ যাচ্ছিল। আর মুগ্ধ নয়নে সেদিকে তাকিয়েছিল নন্দিতা। প্রতি বিকালেই আবির্ভাব ঘটে এই মুগ্ধকর ছায়ার। ও বেশ কিছুদিন ধরেই মুগ্ধভাবে দেখছিল মুগ্ধকর এই অবয়ব। কি আছে এই অবয়বের মধ্যে? এতে মুগ্ধ হবারই বা কি আছে? সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর পরিশ্রান্ত দেহে ঘাম ঝরছে, ক্লান্ত দেহ জুড়ে আছে শুধু তৃষ্ণা। তার ছায়াতেই যেন ভেসে উঠে তার পুরুষত্ব। এই রকম পৌঢ়-পুরুষত্ব দেখে যে কোন মেয়েরই মুগ্ধ হবার কথা।
     কুল-কিনারা হারিয়ে এই দ্বীপে এসে আশ্রয় সেই এই যুবক। বানের জলে বিসর্জন দিয়েছিল নিজের পরিবারকে। মা-বাবা আর ছোট্ট একটি বোন নিয়ে ছিল তাদের সুখের সংসার। বেশ প্রভাব ছিল তাদের পরিবারের। বলতে গেলে গ্রামের মধ্যমণিই ছিল তারা। কিন্তু তাদের এই সুখ বেশিদিন টিকলো না। ভয়াবহ দুর্যোগ ও বন্যায় সবকিছু বিসর্জন দিতে হল তাকে। মা-বাবা, একমাত্র ছয় বছরের ছোট বোনটিকেও ভাসিয়ে নিয়ে যায় সেই বন্যায়। ঘর-বাড়ি, জমি-জমা, সম্পত্তির একবিন্দুও রইল না। পরিবারের শব বিসর্জনটাও কপালে জুটে নি তার।
   বানের দস্যুজল নেমে গেলে স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে চেপে বিদায় দেয় নিজের পিতৃভূমিকে। তারপর সন্ন্যাসীর মত ঘুরতে ঘুরতেই একদিন হাজির হয় এই দ্বীপে। প্রথম প্রথম অন্যের জমিতে কাজ করেই নিজের পেট চালাত হেমন্ত নামের এই যুবক। তারপর আস্তে আস্তে নিজের অবস্থাটা একটু সচল করে ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর বানিয়ে সেখানেই থাকার বন্দোবস্ত করে নেয়। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তাতে চাষ করে, ফসল ফলিয়ে সেটা বাজারে বেচে যা পেত তাতেই চলত তার একার সংসার। সারাদিন ফসলের মাঠে কাজ করে রাতে আবার মাঝে মাঝে মাঝিপাড়ার বড় মাঝির কাছ থেকে নৌকা ধার নিয়ে গঙ্গায় যেত মাছ ধরতে। এত পরিশ্রমের পরও তার একবিন্দুও বিশ্রামের সময় মেলে না। তারপরও কখনও এতটুকু ক্লান্ত হয় না হেমন্ত।
   সারাদিনের কাজের শেষে সেদিন একটু ক্লান্ত হয়ে পরেছিল হেমন্ত। তাই বারান্দায় পাটি পেতে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল সে। ক্লান্ত শরীর, শুতেই ঘুম নেমে আসে চোখের পাতায়। তখন ছিল বিকেল বেলা, সন্ধ্যের আগেই আবার বেড়িয়ে পড়ে মাঝি বাড়ির দিকে। অন্ধকার নামার আগেই নৌকা নিয়ে গঞ্জে যেতে হবে মোড়লের পাঁটের খেপ আনতে।
গঞ্জের হাট থেকে............

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...