Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - শেষ)

খালিদ আমাকে বিশ্রাম করার জন্য ঘরে রেখে গেলো। খালিদ চলে গেলে আমি খালি পায়ে রুম থেকে বের হয়ে নীলের রুমে চলে গেলাম। দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই নীল আমাকে বলল,
- রক্তচোষা দানব এই ঘরে ঢুকলে আমি তাকে এই রিভলভার দিয়ে গুলি করে দেবো।
আমি নীলের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
- একজন ভ্যাম্পায়ারের আমার জীবনে কোন জায়গা নেই।
- হ্যা, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি এখন ভ্যাম্পায়ার। আমার মানুষরুপটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
.
আমি ভেবেছিলাম নীল হয়ত আমাকে বুঝবে। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার শিকারি একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারকে কেনোই বা বুঝবে।
.
আমি ঘর থেকে পালিয়েছিলাম চুপিচুপি নীলের সাথে দেখা করতে। খালিদ টের পেয়ে যায় আর এবার পাহারা দেওয়ার জন্য অভিকে রেখে যায়।
.
- অভি আমি দেখতে কেমন হয়েছি?
- মানে, ভ্যাম্পায়ার যেমন সুগঠিত সুন্দর হয়...
- নওরিন, তুমি দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছ। এই লম্বা চুলে তোমাকে দেখে তো আমি প্রেমে পড়ে গেছি।
- তাহলে নীল আমাকে আজ এতো ঘৃনা করে কেনো?
-......
অভির কাছে আমার প্রশ্নের কোন উত্তর ছিলো না।
.
ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলের ঘরে আমার দিন কাটে। মারিয়া আমার রুমে খোজ নিতে আসে।
- কেমন আছো হিমা?
- হিমা শুধু খালিদ আমাকে ডাকে।
- হাহাহা....ঠিক আছে নওরিন। আমার ওপর রাগ করে আছো?
- কেনো?
- খালিদকে রক্ত দিয়েছি বলে।
- না।
- হুম, আমাকে হিংসে করে কি লাভ খালিদ তো শুধু তোমার ভালোবাসার উপসনা করে গেছে।
- ও কোথায়?
- হুম, তুমি কিছু জানো না?
- কি জানি না?
- কলেজে ভ্যাম্পায়ার আর্মি হামলা করবে। আর তোমাকে পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারটা নিয়ে যেতে চাই। বা বলা ভুল হচ্ছে, তোমার রক্ত চায়। তোমাকে বাচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
-......
.
আমাকে বাচানোর জন্য এসব। আর আমি একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার হয়েও কাউকে প্রটেক্ট করতে পারব না?
আমার নিজের ভেতর খুব খারাপ লাগতে লাগলো।
.
হয়ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিলো। অভি চিন্তিত মনে আমার রুমে আসে।
- কি হয়েছে অভি?
- বাইরে খুব খারাপ অবস্থা।
- আমি বাইরে যাবো।
- না। খালিদ জানতে পারলে আমাকে খুন করে ফেলবে।
- আমাকে নিয়ে না গেলে আমি নিজে খুন হয়ে যাবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
অভি আমাকে বাইরে নিয়ে গেলো। সব স্টুডেন্টরা ছোটাছুটি করছিলো। তাদেরকে আর এই কলেজে রাখা যাবে না। ভ্যাম্পায়ার আর্মি এদের শেষ করে দেবে। ভিড়ের ভেতর আমি অনেক কষ্টে তমাকে খুঁজে পেলাম। ওকে অনেক দিন দেখি নি।
তমার দিকে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছিলাম না। একদিন ওই বলেছিলো যে সে ভ্যাম্পায়ার ঘৃনা করে।
- তমা আমার আজ এই অবস্থা....তুই কি আমাকে ঘৃনা করিস?
- না, একদম না। যদিও তুই ভ্যাম্পায়ার তবুও তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর ভেতরটা পালটায় নি। নিজের বিপদ জেনেও আমাদের বাঁচাতে ছুটে এসেছিস....
আমি তমাকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরলাম।
.
আব্বু স্টুডেন্টদের যাওয়ার ব্যবস্থা করছিলো। কিন্তু মেন গেটের সামনে ভ্যাম্পায়ারের দল দাঁড়িয়েছিল। আব্বু আর ভ্যাম্পায়ার শিকারি টিচার রানা মিলে ওই ভ্যাম্পায়ারগুলোকে শেষ করে দিতে লাগলো।
- আব্বু তুমি....
আমার জবাব টিচার রানা দিলো,
- খুকি তুমি হয়ত জানো না যে তোমার আব্বুও আগে একজন ভ্যাম্পায়ার শিকারি ছিলো। তাই এতো দক্ষ।
যেই আব্বু রাগ করা জানত না সেই আব্বু ভ্যাম্পায়ার মারতে জানে। এই স্টুডেন্টদের বাঁচাতে সে আবার অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
- আব্বু, Thank you.
- কেনো, মা?
- আমার আসল আব্বু না হয়েও আমাকে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।
আব্বু আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিলো।
.
এতো ভিড়ে নীলকে কোথাও দেখলাম না। ছাদে কিছু স্টুডেন্ট আটকা পড়েছিলো। তাদের বের করে আনতে আমিও ছাদে যায়। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার আমাকে আর বাকি স্টুডেন্টদের আটকে নেয়। তখন সেই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের সাথে আমার দেখা হলো।
- হিমা, কেমন আছো তুমি? সেই ছোটবেলায় তোমাকে দেখেছি। কত বড় হয়ে গেছ আর নিজের আম্মুর মতো হয়েছ।
- আমাকে হিমা শুধু খালিদ বলে ডাকে।
- কে? খালিদ? সেই অনাথটা যাকে তোমার আব্বু আম্মু তুলে এনে মানুষ করে?
-........
- হুম, তোমাকে বাচানোর জন্য তাকে তোমার আব্বু নিজের সব শক্তি দিয়ে পিয়র ব্লাড বানিয়েছিলো। সে এখন কোথায়?
-.........
- মানুষ থেকে ভ্যাম্পায়ার হয়েছ আর আমি আসব না দেখা করতে? তাই হয় বলো?
- আমি শুধু ভ্যাম্পায়ার না।
- কি?
- আমি ভ্যাম্পায়ার শিকারিও।
আমি নিজের স্কর্টের পকেট থেকে ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিক টা বের করি। আমার সারা গায়ে কারেন্ট লাগার মতো অনুভুতি হতে লাগলো। আমি জোরে জোরে চিৎকার দিলাম।
- হাহাহা... ওটা খেলনা না সোনা। ছেড়ে দাও। কোন ভ্যাম্পায়ার এসব অস্ত্র ছুতে পারে না।
আমার কাছে এসে আমার গলা টিপে ধরল।
- ডাকো এবার খালিদকে। কে তোমায় বাচায় দেখি।
- আ...মি...নিজে....কে...বাচা...তেপারি।
আমি নিজের সব শক্তি দিয়ে স্টিক ধরে হামলা করলাম।
.
সফলভাবে তার হাত ছেড়ে দিলো। আমি এখন অ্যান্টি ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়েছি। এখন আমার স্টিক ধরতে কোন কষ্ট হচ্ছিলো না।
- চেষ্টাটা ভালো তবে কি জানো আমি এখন খুব শক্তিশালী। তোমারই সহপাঠীদের রক্ত খেয়ে।
আমাকে ধরে আমার ঘাড়ে কামড় বসানোর চেষ্টা করল। আমি খুব ছোটাছুটির চেষ্টা করছিলাম।
- ওকে ছেড়ে দাও।
- নীল......
- আমি বললাম ওকে ছেড়ে দাও।
- তুমি আবার কে?
- আমি নওরিনের রক্ষক। ওকে ছেড়ে দাও বলছি।
নীকের হাতে ভ্যাম্পায়ার মারার বন্দুক ছিলো।
- এই সামান্য গুলি আমার কোন ক্ষতি করবে না। হুম, মনে পড়েছে তুমি সেই ছেলে না যার বাবা মাকে আমি মেরে দিয়েছিলাম।
- কি? নীলের বাবা মাকে তুমি মেরেছ।
- এখন তোমাদের সবার পালা।
এই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারকে কোন ভাবে দমন বা ভয় দেখানো যাচ্ছিলো না। নীল গুলি চালালো বহু বার। কিন্তু তাতে শুধু লোকটা আমাকে ছেড়ে দিলো, নিজে মরল না।
- গুলি কি শেষ খোকা?
আমি আর নীল নিরুপায়ের মতো দাঁড়িয়েছিলাম।
- এখন তবে আর কিছু করার নেই। ধীরে ধীরে আমি সব কয়টা মানুষকে শেষ করে দিয়ে ভ্যাম্পায়ারের রাজত্ব চালাবো।
- এক মিনিট।
খালিদ আমাদের পেছনে দাঁড়িয়েছিল।
- তুমি আবার কখন এলে? আসো এবার তোমাদের তিনজনকে এক সাথে শেষ করি।
.
আমি আর নীল গিয়ে খালিদের পাশে দাঁড়ালাম।
- খালিদ, তুমি কোথায় ছিলে।
- এসব কথা পরে হবে হিমা।
খালিদ নিজের হাত থেকে ছুরি বের করে আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আমার হাত কেটে দিলো। নীল তা দেখে খালিদের কলার চেপে ধরল।
- এ তুমি কি করলে?
- ঠান্ডা হও।
খালিদ ছুরি দিয়ে এবার নিজের হাত কেটে আমার কাটা হাতের সাথে লাগালো। আমাদের দুজনের হাতের রক্ত একসাথে মাখিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করল। ধীরে ধীরে আমাদের রক্ত দিয়ে একটা গুলি তৈরি হয়ে গেলো।
- আমি এত বছর পড়াশোনা করে এই গুলির রহস্য খুঁজে পেয়েছি। এটা দিয়ে পিয়র ব্লাডকে মারা যাবে।
খালিদ আমার আর তার রক্ত মিলে তৈরি গুলিটা নীলের হাতে ধরিয়ে দিলো।
.
নীল গুলিটা তার রিভলভারে ভরে গুলি করে দিলো। পিয়র ব্লাডটার গায়ে লাগতেই ছাই হয়ে বাতাসে মিশে গেলো।
.
আমি খালিদকে জড়িয়ে ধরলাম।
- হিমা, আমার সাথে যাবা?
- তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে যাবো।
নীল আমার আর খালিদের দিকে রিভলভার তাক করে বলল,
- তবে একটা কথা তোমরা দুজন মনে রেখ। যেদিন আবার তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে, সেদিন তোমাদের শিকার করব।

লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

                         ~~~সমাপ্তি~~~

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...