Skip to main content

স্বাদ

"এত দেরি লাগলো তোমার রেডি হয়ে আসতে? সব সময় তুমি আসতে দেরি করো।" হুমায়রা রেগে আছে। আবরারকে আসতে বললে প্রায়ই দেরি করে আসে। যেখানে মেয়ে হয়ে হুমায়রা আগে আগে রেডি হয়ে আসে, সেখানে ছেলে হয়ে আবরারের দেরি করাটা একদম বেমানান।

"আমি কি আর প্রতিদিন তোমার মা বাবার সাথে দেখা করার জন্য রেডি হই নাকি? আজ একটু দেরী হয়েছে।" তাড়াহুড়া করে এসে হাতঘড়িটা পরতে পরতে বললো আবরার।

"তোমাকে সেই কবে থেকে বলছি আমার বাবা-মার সাথে দেখা করতে। এতদিন ঢিলেমি করে করে দিন পিছানোর পর আজ তোমাকে রাজি করানো গেলো, তোমার জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের সাথে ডিনার করবে। সেইসাথে আমার পরিবারের সাথে তোমার পরিচয়টাও হয়ে যাবে।"

"ইশ, যদি আমি জন্মই না নিতাম!" আক্ষেপের কন্ঠে বলা আবরারের কথাটা হুমায়রার কানে গেল।

"এ কথা কেন বলছো?

"তাহলে তোমার বাবা মার সাথে আমার আজ দেখা করতে হতো না।"

"কেন? আমার বাবা-মা বাঘ নাকি যে তোমাকে খেয়ে ফেলবে।" কোমরে দু হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে হুমায়রা।

"না, বাঘ তো না। তুমি তো আর বুঝতে পারছো না একজন বেকার যুবক তার হবু শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করার জন্য মনে কতোটা সাহস জোগাতে করতে হয়।" কাচুমাচু হয়ে বললো আবরার। বাকি রাস্তা চুপ করে চলাই সঠিক মনে করলো। হুমায়রাকে এই বিশেষ দিনে আর রাগাতে চাচ্ছে না। এমনিতে একবার হুমায়রা রাগ করলে সেই রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে তিনদিন পার হয়ে যায়।

"আরে চলো তো। প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। আমার বাবা-মা অনেক ভালো। একবার পরিচয় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।" আবরারের হাত ধরে হাঁটতে লাগলো হুমায়রা। আবরার বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে। এক সুন্দরী মেয়ে হাত ধরে থাকলে আশাপাশের মানুষের ঈর্ষার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য দেখতে ভালোই লাগে তার। সেও হুমায়রার হাতটা একটু জোরে চাপ দিয়ে শক্ত করে ধরে হাঁটতে লাগলো।

.
"আসছো বাবা, আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?"

"জি না আন্টি, আসতে কোনো সমস্যা হয় নি।" হুমায়রাদের বাসায় চলে এসেছে আবরার। হুমায়রা তার বাবা-মার একমাত্র আদরের মেয়ে। সারা বাড়িতে এই তিনজন মানুষ থাকে।

"তোমার কথা প্রায়ই বলে হুমায়রা। বাসায় এলে তোমার একটা একটা না গল্প বলবেই বলবেই।" ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো আবরার হুমায়ারর মাকে। হুমায়রার বয়স এখন চব্বিশ। যদিও ওকে দেখে বিশ বছরের বেশি একটুও মনে হয় না। ওর মার বয়স পয়তাল্লিশের কাছাকাছি হবে। অথচ বয়সের তেমন কোনো ছাপ পড়েনি। দেখলে মনে হয় হুমায়রার বড়ো বোন। হুমায়রা দেখতে ওর মার মতোই হয়েছে।

"জি আন্টি, আংকেলকে দেখছি না যে?" ঘরে আংকেল আছে নাকি এটা জেনে উচিৎ ভাবলো আবরার।

"তোমার আংকেল উনার রুমে বসে বই পড়ছেন। খাওয়ার সময় ঠিকই চলে আসবেন খাওয়ার টেবিলে।"

"আপনার যা রান্না, না এসে কি আর পারেন নাকি! এই যে আমিও কিন্তু আপনার রান্না খেতেই আজ চলে এসেছি।" হুমায়রা প্রায়ই আবরারের জন্য বাসা থেকে রান্না করা কিছু নিয়ে আসে। আবরার তো দুষ্টামী করে বলেও, 'আমি তোমার প্রেমে পড়েছি, নাকি আন্টির সুস্বাদু রান্নার প্রেমে পড়েছি তা নিয়ে সংশয় আছে আমার।

"আজ তো বাবা আমি রান্না করি নি। হুমায়রা রান্না করেছে। শুধু আমি ভালো রান্না করলেই হবে বলো? মেয়েটাকেও তো রান্না শিখাতে হবে।"

.
ডাইনিং টেবিলে হুমায়ারার বাবার সাথে পরিচিত হলো আবরার। আশ্চর্য! উনাকেও যতোটা বয়স্ক ভেবেছিলেন ততোটাও বয়স্ক নন তিনি। আবারারের কাছে মনে হলো, পুরো ফ্যামিলিই মনে হয় পন্ডস এজ মিরাকেল ক্রিম ব্যবহার করে। দেখে কারোরই বয়স আন্দাজ করা যায় না।

হুমায়রার মা মাংসের প্লেটটা এগিয়ে দিলেন আবারারের দিকে। আবরার দু'পিস মাংস নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু খেতে পারছে না। একে তো স্বাদটাও কেমন অন্যরকম আর সিদ্ধও হয়নি ঠিক মতো। আবারার বুঝে গেলো, হুমায়রা ওর মার মতো দেখতে হলেও ওর মার মতো রান্না করতে পারে না। টেবিলের অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখলো, সবারই খেতে কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে আংকেল তো বারবার বিরক্তির চোখে আন্টির দিকে তাকাচ্ছেন।

আবারার ওর মার কথা মনে করতে লাগলো। আবারারের মা বলতেন, বউ সুন্দরী হোক আর না হোক রান্না যেন ভালো হয়। নাহয় কপালে সারাজীবন দুঃখ আছে। এতোদিন আবরার জানতো না দুঃখটা কী। আজ সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বিয়ের পর এই রান্না খেলে সত্যিই কপালে দুঃখ আছে সারাজীবন।

খাওয়া শেষ হওয়ার পর হুমায়রা এক গ্লাস স্প্রাইট নিয়ে এলো। আবরারের স্প্রাইট পছন্দ। মাংস খেলে কোল্ড ড্রিংকস ছাড়া খাবারে তৃপ্তি আসে না ওর। কিন্তু হুমায়রাদের কেউ কোল্ড ড্রিংকস পান করে না। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে হুমায়রা আবরারকে আগেও না করেছে।

আবরার গ্লাসে হালকা চুমুকে কোল্ড ড্রিংকস পান করতে লাগলো। এদিকে হুমায়রার বাবা বলতে বললেন, "তোমার মেয়েকে রান্না করা শিখাচ্ছো ভালো কথা। তা বলে রান্নার সময় তুমিও তো থাকবে মেয়ের পাশে। দেখেছো, ঠিকমতো সিদ্ধ করতে পারেনি, আর স্বাদটাও ভালো হয় নি। জানোই তো, এ মাংস রান্নার প্রক্রিয়াটা একটু ভিন্ন। শুধু বলে দিলেই হয় না, রান্নার সময় পাশে থাকতে হয়।"

গ্লাসের কোল্ড ড্রিংকস প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবরারের মাথা ঘোরাচ্ছে। চোখে ঝাপসা ঝাপসা দেখতে পেল হুমায়ারর বাবা চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন। জ্ঞান হারানোর আগে আবরার শুনতে পেল, হুমায়রারর বাবা বলছেন, "আজ যে ছেলেটাকে তোমার মেয়ে এনেছে সে দেখতে তো ভালোই। পছন্দ হয়েছে আমার। এখন খেতে ভালো হলেই হলো। ঠিক মতো রান্না করলে খেতে ভালোই হবে আশা করছি। ওর মাংসটা রান্না করার সময় তোমার মেয়ের পাশে থেকো। নাহয় আজকের মতো একটুও খেতে পারবো না স্বাদ করে।"

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...