Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি

হলিউডের সিনেমাগুলো দেখা যায়, অতি সুদর্শন পুরুষ মানুষকে ধরে তাদের ঘাড়ে কামড়ে রক্ত পান করছে। তারাই ভ্যাম্পায়ার! সত্যি ধরণী কোলে ভ্যাম্পায়ার আছে কি না সেই আলোচনায় যাচ্ছি না।
হঠাৎ করেই নীলকে নিয়ে একটা ভ্যাম্পায়ার শিকারে ইচ্ছে হল।
মোঃ শামীম শিহাব
২০/০৩/২০১৮ইং


পরিচ্ছেদ  - ০১

আজও সকালে ঘুম ভাঙ্গল একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে। আমার ঘুম থেকে ওঠা দেখে পাশ থেকে আমার রুমমেট আর বেস্ট ফ্রেন্ড তমা নড়েচড়ে উঠল। সবার আগে ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে ওঠা আমার একটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ঘুম থেকে উঠেই আমি কটাকট আওয়াজ করতে লাগলাম মানে রেডি হতে লাগলাম। পাশে তমার ঘুম সম্পুর্ন ভেঙে গেলো আর তেলেবেগুনে জলে উঠলো।
- আচ্ছা, উঠবি তো উঠিবি, আমাকে কেন উঠাবি?
উত্তরে আমি শুধু হাসি দিলাম। তমা আমার কম্বল টেনে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ভোরে উঠেই আমার এই কলেজের ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য কিছু দায়িত্ব পালন করা লাগে। সকালে উঠেই সবগুলো ক্লাসের তালা খুলি আর জানালা খুলি। আমি একাই প্রায় সব কাজ করি। এই কাজগুলো যেনো আমার সংসারের কাজ। এই ভোরে বেশি আলো নেই চারিদিকে। শুধু নীল আলো। দূরে দেখি একটা মেয়ে আর একটা ছেলে ওই কলেজের বারান্দার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যপারটা কি জানার জন্য আমি কাছে গেলাম। মেয়েটা ছেলেটার দিকে মুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে আছি। আপনারা দেখলে ভাবতেন হয়ত প্রেমিক প্রেমিকা। কিন্তু না। ওই ছেলেটার চোখ লাল একদম। যেনো সে তার শিকার পেয়েছে। এই মানুষ রুপি ছেলের সাথে আমি ভালোভাবেই পরিচিত। তাই ভয় না পেয়ে একদম কাছে চলে গেলাম।
- অভি, প্লিজ এমন করো না।
- আমি নিজেকে ঠেকাতে পারছি না। আমাকে ঠেকানোর জন্য রক্ত নিয়ে আসো।
কাল বিকালে আমি কলেজের সিঁড়িতে হোচট খেয়ে হাতের কবজি কেটে ফেলেছিলাম। মনে হয় আজ এটাই আমার অস্ত্র। আমি রক্ত জমাট বাধা হাতটা অভির দিকে বাড়িয়ে দিলাম, যে একজন ভ্যাম্পায়ার।
- আমার এখান থেকে রক্ত খাও আর এই মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।
অভি সাথে সাথে আমার হাত ধরে এক টান মেরে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসলো। এমন সময় পেছন থেকে একজন অভিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
- নীল!
- অভি, যদি নওরিনের হাতের এক ফোটা রক্তও খেয়েছ এই রিভলভার দিয়ে তোমার বুক ছিদ্র করে দেবো।
নীলের হাতে ছিলো ভ্যাম্পায়ারদের মারার স্পেশাল রিভলভার । কেনোই বা থাকবে না! কারণ নীলের পরিবার ভ্যাম্পায়ার শিকার করে।
- নীল এমন করো না।
আমি নীলের ডান হাতটা ধরে ফেললাম, যেটাতে রিভলভার ধরা ছিলো।
- ওকে বরং আব্বুর কাছে নিয়ে যাও।
নীল আমার কথায় মাথা ঠান্ডা করে রাজি হলো। আমার পাশে ভ্যাম্পায়ারের বশে থাকা ওই মেয়েটাকেও নিয়ে যেতে হবে। নীল আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল, কারণ দুজনকে একসাথে ও নিয়ে যেতে পারবে না। আমার বুকের ভেতর একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। আমি জানি আব্বু মেয়েটাকে একজনের কাছে নিয়ে যাবে, যার সাথে আমি মোটেও দেখা করতে চাই না। কিন্তু এখন উপায় নেই। কথা মতো আমি মেয়েটাকে আর নীল অভিকে নিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে নিয়ে গেলাম। আব্বু এই কলেজের প্রিন্সিপাল। আব্বু এই সময় রুমেই থাকে। আব্বু অভিকে খুব করে বকল। বলা যায় বকার চেষ্টা করল। আব্বুকে কখনো বকতে দেখি নি।
- তোমাকে না কতবার বলেছি নিজেকে কন্ট্রোল করা শেখো।
- আচ্ছা, ওই মেয়েটাই তো আমার প্রেমে....
- থামো, এর আগেও এমন বলেছিলে তুমি।
আব্বু আর অভির প্রায় রোজকার ব্যাপার এইটা। আপনাদের অবাক লাগতে পারে যে একজন ভ্যাম্পায়ারের সাথে এতো ভালো ব্যাবহার কেনো। আসলে এই কলেজে দুই ধরনের স্টুডেন্ট পড়ে। এক মানুষ আর অপরটা ভ্যাম্পায়ার। আর আমি এই দুই দলের লোক। যদিও নীল তা না। তার ফ্যামিলি আগে ভ্যাম্পায়ার শিকার করত আগেই বলেছি। তাই নীলের এই ভ্যাম্পায়ারদের ওপর আগে থেকেই একটা রাগ। কিন্তু বর্তমানে ভ্যাম্পায়ারেরা নিজেদের সামলে নিচ্ছে আর মানুষের রক্ত পান করা ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষ আর ভ্যাম্পায়ারেরা মিলেমিশে থাকবে এটাই আমার আব্বুর লক্ষ্য ছিলো।
রুমের ভেতর আমার এই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষের প্রবেশ হলো। আব্বু খুব খুশি আর আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নীল তো তার গম্ভীর ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
- খালিদ, খুব ভালো করেছ যে এসেছ। আসলে এই মেয়েটা বশে পড়ে গেছে। তাই এর স্মৃতি ডিলিট করে দাও।
আমার আব্বুই পারে এতো সুন্দর করে ভ্যাম্পায়ারদের ম্যানেজ করতে। খালিদ হাসান, যে কিনা আমার জীবনের স্পেশাল একজন সে পিউর ব্লাড ভ্যাম্পায়ার। সব ভ্যাম্পায়ারের কাছে স্মৃতি ডিলিট করার মতো পাওয়ার নেই। শুধু পিউর ব্লাড ভ্যাম্পায়ার এমন করতে পারে। আমাদের কলেজে একজনই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার আছে। আর সেটা হলো খালিদ। খালিদ আগেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "কেমন আছো?" আমি কাপা গলায় বললাম, "ভালো।" আসলে এটা আমার খালিদের প্রতি ভালোবাসা না যার কারনে আমি এতো ঘাবড়িয়ে কথা বলছি, এটা খালিদের প্রতি আমার রাগ আর ক্ষোভ। যাকে ভালোবাসি তার ওপর ঠিক মতো রাগ করা যায় না। তাই আমার মনে এখন খালিদের প্রতি রাগ আর ভালোবাসার মিশ্রণ। আমি বাহানা বানিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
.
ক্লাসে বই নিয়ে জানালার পাশের একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। এই সময়টা কেউ থাকে না ক্লাসে। আজ আমি খুব ভয়ে ভয়ে আছি। আমি খালিদের সাথে মোটেও দেখা করতে চাই নি। ভ্যাম্পায়ারেরা রাতে ক্লাস করে, আর আমরা দিনে। তাই খালিদের সাথে আমার তেমন দেখা হওয়ার সম্ভবনা ছিলো না। কিন্তু আজ ছুটির পর প্রথম ক্লাস শুরু হবে। তাই দিন আর রাতের সব স্টুডেন্ট আজ উপস্থিত থাকবে। তারমানে খালিদও থাকবে। সবার চোখের আড়ালে আমি ক্লাসে এসে বসে আছি যাতে করে খালিদের সামনে না পড়তে হয়। ধীরে ধীরে সময় পার হলো। স্টুডেন্টরা জমা হতে থাকলো মাঠে। রাতের স্টুডেন্ট বা ভ্যাম্পায়ার স্টুডেন্টের সংখ্যা কম। তবুও এই কম সংখ্যক স্টুডেন্ট সবাইকে বশ করে ফেলতে পারে। ভ্যাম্পায়ারেরা দেখতে ইন্টারন্যাশনাল হিরোদের মতো। সেই রকম বডি আর ফিগার একদম সুগঠিত। গায়ের রং সাদা ফর্সা। মানুষ তো আকর্ষণ বোধ করবেই। আর তাই হলো। ভ্যাম্পায়ারেরা মাঠে আসার সাথে সাথে সব স্টুডেন্টরা চিৎকার করতে শুরু করে দিলো, যেনো কোন ফিল্মস্টার এসেছে। বাইরে এতো গ্যাঞ্জাম। খুব চেষ্টা করলাম জানালা দিয়ে বাইরে না তাকাতে। কিন্তু জানালার কাছে বসা আমার বোকামি হয়েছে। যেই সব ছেলে মেয়েরা " খালিদ, খালিদ" বলে চিল্লাতে লাগলো আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে ফেললাম। আমার খালিদ সবচেয়ে লম্বা আর সবচেয়ে সুন্দর ভ্যাম্পায়ার। তার চুলগুলো দেখে মনে হয় একদম সফট হবে। চেহারাটাও খুব মায়াবী। আমি অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি। খালিদও কিভাবে জেনো টের পেয়ে গেলো আর আমার দিকে তাকালো। আমাদের দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেলো। অভি আজ ভোরে মেয়েটার রক্ত খাওয়ার জন্য তাকে বশ করেছিলো। তখন অভির চোখ লাল হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু পিয়র ব্লাড হয়ত চোখের রং পরিবর্তন না করেই বশ করতে পারে। আমিও তাই অনুভব করলাম। মুগ্ধ হয়ে খালিদের চকলেট কালারের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে তাকানোর পর একটা দীর্ঘশ্বাস দিলাম। বাতাসে আমার নিঃশ্বাস ভেসে গেলো খালিদের কাছে। ভ্যাম্পায়ারের ঘ্রাণ শক্তি বেশিই হয়। আর পিয়র ব্লাড হলে তো কথাই নেই। খালিদ আমার নিঃশ্বাসের বাতাসটা বুক ভরে টেনে নিলো। এই দৃশ্য দেখে আমি আর না থাকতে পেরে জানালাটা বন্ধ করে দিলাম আর আমার বইয়ের ওপর কয়েক ফোটা পানি পড়ল।
ক্লাস শুরু হওয়ার আগে তমা আমার পাশে এসে বসল। ভাবলাম খালিদের ব্যপারটা মাথা থেকে ঝাড়তে পারব আর অন্য কাজে ব্যস্ত হবো। কিন্তু তমা ঝাড়তে দিলো না।
- আমি জানি তুই খালিদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলি।
- মোটেও না।
- মোটেও হ্যা। খালিদকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলি তাই তো?
- আর তুই আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলি।
- কথা ঘুরাবি না বলে দিলাম।
-.....
- খালিদকে তুই পছন্দ করিস?
- জিজ্ঞেস করছিস না বলছিস?
- খালিদ তোর ক্রাশ?
- না।
- মিথ্যা বলিস না। আমি তোর বেস্ট ফেন্ড কিন্তু।
- আমি খালিদকে খুব শ্রদ্ধা করি। খালিদ খুব ভালো।
- ভালো তো প্রোপজ করে ফেল।
- না।
- না, কেনো? জানি তুই অত আকর্ষনীয় না....
- ওই, চুপ।
- এই চারকোণা বডি খালিদের পছন্দ নাও হতে পারে। অলরেডি ভ্যাম্পায়ারে একটা সুন্দরী মেয়ে ভ্যাম্পায়ারও আছে....
- তুই থামবি?
- আচ্ছা, আচ্ছা, থামলাম।
.
পরিচ্ছেদ - ০২
ক্লাসে মন বসছিলো না। কারন এই স্যারের ক্লাস বরিং লাগে। আজ বাইরে খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। এমনি এক বৃষ্টির দিনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেদিন ফাকা রাস্তায় ছোট্ট ৬ বছরের আমি দৌড়াচ্ছিলাম। পেছনে কিছু খারাপ ভ্যাম্পায়ার আমার রক্ত খাওয়ার জন্য ছুটছিলো। আমি রাস্তায় হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম। তখন ওই খারাপ ভ্যাম্পায়ারগুলো আমার দিকে ঝাপিয়ে পড়তে যাবে এমন সময় একটা ৯ বছরের ছেলে আমার জন্য ওই খারাপ ভ্যাম্পায়াদের সাথে লড়াই করেছিলো। রক্ত মাখা ছেলেটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি নির্ভয়ে আমার রক্ষক এর হাতটা ধরলাম আর তাকে জড়িয়ে ধরলাম। সেদিনও ঠিক এমন বৃষ্টি হচ্ছিলো আর খালিদ আমার জীবন বাঁচিয়ে ছিলো। যদিও ছোট বেলার তেমন কোন কথা আমার মনে নেই। তবুও এই কথাটা আমি কোনদিন ভুলব না। আর ভুলব না এই দিনটা। ছোটবেলার থেকে মন প্রাণ দিয়ে একজনকেই ভালোবেসেছি। সেই একজন আমার রক্ষক। তার জায়গা কোনদিন কেউ নিতে পারবে না। জানি খালিদ আমাকে তুচ্ছ মানুষ ছাড়া কিছুই মনে করে না। ওর মতো ভ্যাম্পায়ার আমার মতো মেয়েকে কোনদিন ভালোবাসবে না।
বাইরে বৃষ্টি কিছুক্ষণ এর জন্য থেমে ছিলো। ক্লাস শেষে তাই বাইরে খেতে খেতে যেতে চাইলাম। তমা আমার সাথে বাইরে যেতে রাজি হলো না। তার নাকি কোন কাজ আছে। আমি গিয়ে নীলকে ডাকাডাকি শুরু করে দিলাম। ভাগ্যিস নীল রাজি হয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম আমি আর নীল পাশাপাশি। দোকানে পৌছিয়ে বসে পড়লাম টেবিলে।
- কি খাবা তুমি?
- আমি তো যত পারি তত খাবো।
- কি?
আমার কথা মতো আমি প্রায় হোটেলের সব কিছু অর্ডার করে খেতে শুরু করে দিলাম। নীল অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
- এতো খাও তো গায়ে লাগে না কেন?
- হুম,,,আম্মউয়ালস্মকাল্ল....
- আচ্ছা, আগে খেয়ে নাও তারপর বলো।
খাওয়া শেষ হলে আমি সরাসরি বাড়ির পথে হাটা দিই। যেহেতু বাইরে কালো মেঘ। শত চেষ্টাতেও আমি আর নীল পৌছাতে পারলাম না। আমরা একটা বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
- অতো খেতে বলেছিলো কে? এখন তোমার জন্য বৃষ্টিতে আটকে পড়েছ? আসলে তোমার সাথে আসায় উচিত হয় নি।
- এভাবে বলো কেন? সবসময় গোমড়া মুখ করে থাকতে ভালো লাগে?
- একেই বলে বাচ্চাদের মতো দেহ আর বাচ্চাদের মতো আচরণ।
- আর তুমি যে সবসময় বুড়ো সেজে ঘুরে বেড়াও।
- হুম, তাহলে কি খালিদের মতো ভাব নিয়ে ঘুরব?
- খালিদ ভাব নিয়ে ঘোরে না।
- আমি ভাবলাম তুমি খালিদকে পছন্দ করো না।
- কেনো? তা ভাবলে কেন?
- কেনো ভাববো না? তুমি আজ ভোরে রুমে অসস্তি বোধ করছিলে খালিদের সামনে।
মনে মনে ভাবলাম, খালিদও কি টের পায় যে আমি ওর ওপর রাগ করেছি, নাকি আমার মতো মানুষকে নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই।
আমার আর নীলের ঝগড়ায় ভেতর থেকে দরজা খুলে গেলো। এক বুড়ি মহিলা ভেতরে বসালো আমাদের।
- তা বাবা, তোমার গায়ে আমার স্বামির জামা হবে আর ওই মেয়ে তোমার গায়ে আমার মেয়ের জামা হবে।
বুড়ির কথা শুনে নীল ভ্রুকুটি করল।
- বুড়ো লোকের বুড়োর জামা জুটেছে।
- কি বললে?
আমি উত্তর না দিয়ে ভেতরের রুমে গিয়ে জামা পাল্টাতে লাগলাম। যদিও নীল বাইরে থেকে এমন আচরণ করে কিন্তু আসলে এতো কিছুর পরও সে রাজি হয়েছে আমার সাথে আসতে। নীল ভালো। এসব ভাবতে ভাবতে ঘরের দরজাটা হঠাৎ খুলে গেলো।
- তুমি এখানে কি করছ? আমি জামা পাল্টাচ্ছি ললুপ কোথাকার?
নীল ভেতরে ঢুকেই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো।
- তোমার দেহে হাড় ছাড়া দেখারা মতো কিছুই নেই।
- নেই যখন দেখতে এসেছ কেন?
- বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে তাই....
- হয়েছে যাও এখন।
বৃষ্টি থেমে গেলে ভেজা জামা কাপড় ব্যাগে ভরে কলেজের দিকে হাটা দিলাম। মেয়েদের হোস্টেলটা কলেজের সাথেই। রাতে ঘুমানোর সময় তমা আমাকে জিজ্ঞেস করল,
- তুই আর নীল এভাবে এই কাপড়ে কেনো আসলি?
- আসলে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম তো তাই এক বাড়ির বুড়ি এই জামা দিলো।
- আচ্ছা, এখন ঘুমা। আর যদি কাল সকালে আমার ঘুম ভাঙিয়েছিস তাহলে তোকে দেখে নেবো?
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
যখন আমি ব্যস্ত থাকি তখন একটু খালিদের কথা ভুলে থাকতে পারি।
.
পরিচ্ছেদ  - ০৩
স্বপ্ন, আমি একটা বড় ঘরের ভেতর একটা বিছানায় শুয়ে আছি। আমার গায়ে ডার্ক গোলাপি রঙের নাইট ড্রেস। চোখ দুইটা অস্পষ্টভাবে খোলা ছিলো। একটা বড় হাত আমার গালে আলতো করে স্পর্শ করল। আমি সেই হাতটা কার তার চেহারা না দেখেই বিছানা থেকে উঠে বসলাম। খুব ভালো লাগছিলো। পুরটা সময় হাতটা আমার গালে ছিলে। আমার গালে হাত বুলাতে বুলাতে আমি এক সময় এই হাতে চুমু দিলাম। হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মাথা উচু করে সামনে তাকালাম।
- খালিদ!
ঘুম ভেঙে গেলো এখানেই। স্বপ্নেও খালিদ আমার পেছন ছাড়ছে না। আজকে শব্দ না করেই রেডি হলাম। তা না হলে তমা সত্যিই আমার খবর করে দিতো। রেডি হয়ে কলেজের দরজা খুলতে গেলাম। একটু বেলা হলে আব্বু তেড়ে আসলো আমার দিকে।
- কাল বৃষ্টিতে ভিজেছ আমাকে বলো নি কেন? কিছু না বলেই ঘুমাতে চলে গিয়েছ। তোমার আব্বুর চিন্তা হয় না বুঝি।
- সামান্য বৃষ্টি....
- সামান্য হোক বা অসামান্য হোক না কেনো আমাকে বলবা না। কবে তোমার বয়ফ্রেন্ড হবে, বিয়ে করবা আর আমাকে একা ফেলে চলে যাবা।
- আব্বু! থামো। কিচ্ছু হয় নি। আমি ঠিক আছি।
- চলো এক্ষুনি ডাক্তারের কাছে চলো।
- আব্বু যাও এখন। আমি ক্লাস করব। ডাক্তার লাগবে না।
- ও, একটা কথা মনে পড়ে গেলো। কলেজের ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য তোমাকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
- কি দায়িত্ব?
- ফ্যান লেটার আর গিফট ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে গিয়ে দিয়ে আসতে হবে। পারলে নীলকেও নিয়ে যাও। সেও তো কলেজ ক্যাপ্টেন।
- আচ্ছা।
আব্বু তো চলে গেলো কিন্তু মস্তিষ্কে খালিদের চিন্তা আবার ঘুরপাক খাওয়া শুরু করে দিলো। ভ্যাম্পায়ারদের ওখানে যাওয়া মানেই খালিদের সাথে দেখা হওয়া, যাকে আমি প্রাণপনে Avoid করার চেষ্টা করি। ভাবতে পারি নি আমাকে কেউ avoid করবে।
ক্লাস শুরু হলো। সেই পুরাতন বরিং ক্লাস আবার। মনোযোগ হারিয়ে ফেললাম। এদিক ওদিক তাকাতেই নীল ক্লাসে আসে নি সেই দিক নজর পড়ল। বুড়োটার আবার সর্দি লাগতে পারে তাই দেখে আসা দরকার। ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি নীলের হোস্টেলের দিকে যাই। পথে কলেজের বারান্দায় ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো।
- আরে নীল, দাড়াও দাড়াও।
আমার কথা শুনেও না শোনার ভান করে চলে গেলো। আমি নীলের দিকে ছুটে গেলাম।
- কি ব্যপার বুড়ো? ঠান্ডা লেগেছে নাকি?
- না।
- ক্লাসে আসো নি কেনো?
- এমনি।
- এমনি মানে? কি হয়েছে?
- সব কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?
- না।
- হুম, এবার তাহলে সামনে থেকে সরো।
- যাওয়ার আগে একটা কথা।
- কি?
- ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে জিনিসপত্র দিতে যেতে হবে।
- কি? আমাকে তোমার সাথে যেতে হবে?
- হুম।
- তমাকে নিয়ে যাও।
- আচ্ছা। ভালো থাকো।
নীল কথার জবাব না দিয়েই চলে গেলো। কথা বলার পুরটা সময় আমার দিকে একবার তাকিয়েও দেখলো না। খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিয়ে বসে পড়লাম। তমা ঘরে নেই। হাটু দুইটা মুখের কাছে নিয়ে মুখ গুজে নিলাম।
.
নীল আমার ছোট বেলার বন্ধু। খুব ছোট বেলার থেকেই ওর মা বাবা ওকে ভ্যাম্পায়ারদের শিকার করার ট্রেনিং দিতো। নীলের গায়ে, জামায় রক্ত লেগে যেতো শিকার করে আসার সময়। আমি ওর জামা কাপড় আর ওর গা ধুয়ে দিতাম ছোট বেলায়। আজ বড় হয়ে আমার সাথে এমন আচরণ করছে। ওর মা বাবা যেখানে ব্যস্ত থাকত আমি সব সময় ওকে নিজের সবটুকু সময় দিতাম। কাল পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো। আচ্ছা, আমার যেমন নীলের ব্যবহারে কষ্ট লেগেছে, তেমনি কি খালিদও আমার ব্যবহারে কষ্ট পায়? না, না, একটা তুচ্ছ মানুষের কথায় কেনো কষ্ট পাবে একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার!
আমি চোখের পানি মুছে রেডি হয়ে তমাকে ডাকতে গেলাম। তমা রাজি হয়ে গেলো। আজ তমার ঘুম ভাঙিয়ে দিইনি বলে ওর মন ভালো। সুযোগের সৎ ব্যবহার করলাম। সব জিনিস নিয়ে ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে গেলাম। হোস্টেলে গিয়ে প্রথমে বুদ্ধিমান টাইপ বা সেন্সেবল ভ্যাম্পায়ারের সাথে দেখা হলো, সৌরভ।
- কি ব্যপার নওরিন? তোমাকে তো আর পাওয়ায় যায় না?
- ব্যস্ত থাকি।
- ব্যস্ত থাকো নাকি কাউকে avoid করো?
- স্টুডেন্টরা তোমাদের কিছু ফ্যান লেটার আর গিফট দিয়েছে।
ফ্যান লেটারের বড় ভক্ত অভি, যার সাথে প্রথম পর্বে পরিচয় হয়েছিলো।
- কই, দেখি। আমার ফ্যান লেটার সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে।
অভির গালে তাকিয়ে দেখলাম লাল হাতের ছাপ, যেনো কেউ চড় মেরেছে। ভ্যাম্পায়ারদের এখানকার সব স্টুডেন্ট ভালোবাসে ফিল্মস্টারের মতো করে। তাই তারা তো কেউ চড় মারবে না।
- অভি তোমার গালে কিসের দাগ?
- ও কিছু না। দুষ্টুমি করে মার খেয়েছি।
অভির কথায় বিশ্বাস হলো না। আমি সৌরভের দিকে তাকালাম।
- খালিদ চড় মেরেছে।
- এই সৌরভ তোকে না বলতে নিষেধ করলাম।
- তোমার রক্ত খেতে গিয়েছিলো তাই খালিদ ওকে মেরেছে।
কথা শুনে খালিদের ওপর আমার রাগ আরও বেড়ে গেলো। আমি কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই খালিদের রুমের ভেতর ঢুকে পড়লাম। খালিদ রুমে ছিলো না। আমি আবার সৌরভকে জিজ্ঞেস করলাম, " খালিদ কোথায়?" সৌরভকে বলতে না দিয়ে অভি বলল, " খালিদ কেনো আবার? থাক না নওরিন।" সৌরভ বলে দিলো, " খালিদ লাইব্রেরিতে।"
- সৌরভ, নওরিনকে কেনো বললি কথাটা?
- তোর বাহানায় নওরিন এতোদিন পর খালিদের সাথে কথা বলবে।
ভ্যাম্পায়ারদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা এখানে। আমি বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে গেলাম লাইব্রেরিতে। খালিদ চেয়ারে বসে একটা বই পড়ছিলো।
- নিজের অধিকার সব সময় আমার ওপর চাপিয়ে দাও কেন?
- মানে?
- অভিকে চড় মেরেছ কেন?
- তোমার রক্ত খেতে গিয়েছিলো তাই।
- আমি নিজে ওকে রক্ত খেতে দিয়েছিলাম।
- তোমাকে তো এখন মারতে পারি না।
- তুমি নিজে আমার রক্ত খাবা না, আমাকে তুচ্ছ করবা, তাই বলে অন্য কাউকে খেতে দিবা না।
- কি বলো এসব?
- I hate you. আমার বিষয়ে আর কোনদিন তুমি নাক গলাবা না।
আমি কথা শেষ করেই নিজের হোস্টেলে ফিরে চলে যাবো কিন্তু রাস্তায় নীলের সাথে দেখা হয়ে গেলো।
- ফ্যান লেটার দিয়েছ?
- আচ্ছা, নীল ভালো করেছ যে এসেছ। জানো কি হয়েছে...
আমি কথা বলতে বলতে নীলের হাত চেপে ধরলাম।
- খালিদ অভিকে চড় মেরেছে আমার রক্ত খেতে গিয়েছিলো বলে?
- আমি অভির দিকে রিভলভার ধরেছিলাম।
- সেটা আলাদা কথা। খালিদ তো...
আমার কথা শেষ না হতেই ওপর থেকে পানি ঢেলে দিলো কেউ। আমি আর নীল উপরে তাকিয়ে দেখি মারিয়া ( ভ্যাম্পায়ারদের ভেতরে এক সুন্দরি ভ্যাম্পায়ার) বালতি হাতে হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়ানো। নীল সাথে সাথে তার পকেট থেকে ভ্যাম্পায়ার মারার রিভলভারটা বের করে মারিয়ের দিকে তাক করল।
- নীল, না!
আমি নীলকে ঠেকালাম। উপর থেকে মারিয়া বলল, " তোমার বান্ধবীকে বলো তার ব্যবহারটা যেনো ঠিক করে।"
মারিয়া ভেতরে চলে গেলো। আর নীলও নিজের হাতটা নামিয়ে নিলো।
- ওর সাহস কি করে হয় তোমার গায়ে পানি ঢালার।
- নীল যাই হোক। চলো চলে যাই।
আমার হাত ধরে নীল আমাদের হোস্টেলের দিকে হাটতে যাব, এমন সময় নীলের চোখ আমার কাটা কবজির দিকে পড়ল।
- হাত কাটা...!
- সেদিন সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়েছিললাম। ও কিছু না। এখন তুমি আবার আব্বুর মতো শুরু করো না।
নীল জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। আমি কি হয়েছে জানার জন্য নীলের হাত ধরলাম, কিন্তু নীল আমার হাত ঝটকা মেরে ফেলে দিলো।
- আমার কাজ আছে, আমি আসছি।
- নীল, শোন...
আমার কথা না শুনেই নীল দ্রুত পায়ে চলে গেলো।
.
বিকালে আমি সেই বুড়ির বাড়ি তার দেওয়া জামা কাপড় ফেরত দিতে গেলাম। নীলের রুমে গিয়ে তার জামাটাও নিয়ে আসলাম। কিন্তু নীল রুমে ছিলো না। নীলের কি হয়েছে বুঝলাম না। একবার ভালো করে কথা বলে, আরেকবার খারাপ করে কথা বলে। বুড়ির বাড়ি জামা দিয়ে আসলাম। ফেরার পথে দেখি রাস্তায় একটা লোকও নেই। কিন্তু আসার সময় লোকজন ছিলো। হাটতে হাটতে আমার মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। আমি হাটার স্পীড বাড়িয়েদিলাম। হঠাৎ আমার মনে হলো একটা লোক পড়লো আমার পেছনে লাফ মারলো। পেছন ফিরে দেখি এরা আসলে মানুষ খাওয়া ভ্যাম্পায়ার। মানুষের রক্ত খেয়ে তারা তাদের মেরেই ফেলে। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আমার পেছনে ওই ভ্যাম্পায়ার গুলো তাড়া করতে লাগলো। আমি জানি না আমি কিভাবে নিজেকে বাচাব। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি একটা পুরাতন বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লাম। ঢুকে বাড়ির একদম ওপরের ঘরে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। দৌড়ানোর কারনে আমার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে গেছে। আমি হাপাচ্ছি। হয়তো ওই ভ্যাম্পায়ার গুলো আমার ঘ্রাণ পেয়ে গেছে। আমাকে পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে আমার মুখে আচড় কেটে দিলো। আমি চিৎকার করে পেছন ফিরে ওদের দিকে তাকালাম। ওই ভ্যাম্পায়ার গুলো আমার দিকে আস্তে আস্তে আগাতে থাকলো। এবার ওরা আমার হাতে আচড় মারলো। আমি ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলাম। আমার একদম কাছে এসে ঘাড়ে কামড় মারতে যাবে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। আমার কাছে পালানোর পথ নেই আর বাচারও পথ নেই। আমি শেষ বারের মতো নিজের মনের কথাটা প্রকাশ করলাম, " খালিদ I love you." বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো তবুও আমার ঘাড়ে কামড় পড়ল না। সামনে তাকিয়ে দেখি ভ্যাম্পায়ার গুলো ভয়ে ভয়ে আমার কাছ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। ঘরের জানালা দিয়ে খালিদ এসেছে। একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের অনেক ক্ষমতা। তাদের সামনে এই সাধারণ ভ্যাম্পায়ার কিছুই না। খালিদ আমার ঠিক পেছনে দাঁড়ালো। তারপর আমার চোখ দুইটা তার ডান হাত দিয়ে ঢেকে দিলো। খালিদ আমাকে এমন ভাবে ধরল যেনো মনে হচ্ছে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। খালিদ আমার থেকে লম্বা আর আমার মাথাটা ঠিক তার বুকে গিয়ে ঠেকলো। আমি শুধু অনুভব করলাম যে আমার চারিদিকে প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে।
.
পরিচ্ছেদ - ০৪
খালিদ আমাকে আরও একবার এই খারাপ ভ্যাম্পায়ারদের হাত থেকে বাঁচালো। আমাকে আব্বুর অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে নিজের সামনে নিয়ে বসল। আমার হাতের পুরনো ককাটা যায়গায় ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। আব্বুও অফিসেই ছিলো।
- আব্বু, আমি কি এখন ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবো? ওদের ফেনম কি আমার গায়ে লেগে গেছে?
- কয়দিন পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে। আপাতত ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাচ্ছ এমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি।
খালিদ আব্বুকে ইশারা করল আর আব্বু ঘরের থেকে বের হয়ে গেলো। আব্বু চলে গেলে খালিদ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, " হিমা, তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো?"
.
খালিদ আব্বুকে ইশারা করল আর আব্বু ঘরের থেকে বের হয়ে গেলো। আব্বু চলে গেলে খালিদ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, " হিমা, তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো?"
আমি অবাক হলাম। কারণ খালিদ আমাকে হিমা বলে ডাকছে।
- আমার নাম নওরিন। তুমি হিমা বলে ডাকলে কেনো?
-...
- চুপ করে থেকো না বলো।
- আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
- না, আমি তোমাকে ঘৃনা করি না।
- তুমি তোমার চুল কেটে ফেলেছ। তুমি জানতে যে আমার কাছে তোমার লম্বা চুলগুলো কত পছন্দ ছিলো।তারপরেও চুল কেটেছ।
- আমি চাইলেও তোমাকে ঘৃনা করতে পারব না। তুমি তো আমার জান বাঁচিয়েছ।
- শুধু কি একটাই কারণ? আমাকে ঘৃনা না করার অন্য কারণ নেই।
- দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি আসছি।
.
খালিদ আমার দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আমার মুখ থেকে কোন কথা আসল না। হয়ত আমার অভিমানটা অনেক বেশি ছিলো। খালিদের ওপর এই রাগ করে থাকার নাটকটা বন্ধ করলেই তো আবার আমি ওর প্রেমে পড়ে যাবো।
.
রাতে বিছানায় শুতে আসতেই তমার প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম।
- তুই এতোক্ষন কোথায় ছিলি?
- এই তো কাপড় ফেরত দিতে গিয়েছিলাম।
- হুম, আমাকে ওই ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে একা ফেলে তুই চলে গিয়েছিলি।
- তা থাকবে কেন। এই যা, তোর কথা তো মনেই নেই।
- যায় হোক, নিজের হাতে ব্যান্ডেজ করেছিস দেখে আমি খুশি হলাম। অবশেষে তুই বড় হচ্ছিস।
- আমার বয়স ১৭। আর ১ বছর হতে দে একবার। তারপর দেখি কিভাবে কেউ বাচ্চা বলে।
- তোর আচরণ তো বাচ্চাদের মতোই থাকবে মনে হচ্ছে।
- চুপ, এখন ঘুমা।
রাতে শুয়ে শুয়ে খালিদের কথা ভাবি। আজ আমি খালিদের অনেক কাছাকাছি ছিলাম। তবুও যেনো মন থেকে দূরে ছিলাম। কিছুই বলতে পারলাম না। খালিদকে আমি ছোটবেলার থেকে ভালোবাসি। আমি আগে সবসময় খালিদের আগে পেছনে ঘুরে বেড়াতাম। বড় হলে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো যে আমি খালিদের ভ্যাম্পায়ার ব্রাইড হবো। কিন্তু এক রাত সব কিছু পালটে দিলো। আমি খালিদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। রাতে প্রায় ঘুম এসে যাচ্ছিলো কিন্তু খালিদ আসছিলো না। বাইরে ঝড় বৃষ্টি দেখে আমার ভয় হয়ে যায়। খালিদের যদি কিছু হয়! আমি ভয়ে মারিয়ার রুমে গিয়ে খালিদের খবর নিতে বলতে গিয়েছিলাম। তখন বাইরের বজ্রপাতের সাদা আলোতে দেখলাম খালিদের মুখ মারিয়ার ঘাড়ে। মারিয়ার চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো তার খুব আরাম লাগছে। আমি খালিদ আর মারিয়াকে একসাথে দেখে সিঁড়ির ওপর বসে অনেক কান্নাকাটি করেছি। এরপর থেকে যতটা পারি খালিদকে avoid করে চলি। সেদিন কার রাত আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি মারিয়ার থেকে কতটা অযোগ্য। আমার রক্ত খালিদ কোন দিন খাবে না। একটা ভ্যাম্পায়ার আরেকটা ভ্যাম্পায়ারের রক্ত খায় আর এভাবেই একে অন্যের প্রতি চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ করে।
.
সকালে উঠে আমি কলেজের ক্যাপ্টেনের ডিউটি পালন করেই আব্বুর অফিস রুমে চলে গেলাম।
- মা, এখন কেমন আছো?
- ভালো।
- বসো।
- আচ্ছা, আব্বু তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
- কি কথা মা?
- " হিমা " কে?
আব্বু আমার মুখ থেকে নামটা শোনার সাথে সাথে আমার কাছে এসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
- এই নাম তুমি কোথায় পেলে?
- আব্বু, এমন করছ কেনো?
- কে বলল তোমাকে এই নাম?
আব্বুকে কখনো এমন চিন্তিত দেখি নি।
- কাল রাতে খালিদ আমাকে " হিমা " বলে ডেকেছিলো।
আব্বু চিন্তামুক্ত হয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলো।
- ও, ঠিক আছে।
- আব্বু " হিমা " কে?
- তোমার ছোটবেলার ডাকনাম হিমা।
- তুমি আমাকে হিমা বলে ডাকতে?
- না, আমি ডাকলে মা বলে ডাকতাম। খালিদ তোমাকে হিমা বলে ডাকতো।
- নামটা কে দিয়েছে? খালিদ?
- হুম।
আব্বু আমাকে শেষ কথাটা মিথ্যা বলল। কারণ আব্বু মিথ্যা বললে আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আমি আব্বুকে আর চিন্তায় ফেলতে চাই নি বলে আর কিছু জিজ্ঞেস করি নি।
- তোমার ওপর হামলা হয়েছে। আজ তুমি ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে থাকবা।
- না। ক্লাস আছে তো।
- ক্লাস করা লাগবে না। আজ তোমার ছুটি।
- নীল তো খাটি ভ্যাম্পায়ার শিকারি। ওর সাথে থাকলে আমি বেশি সেফ থাকব।
- যেখানেই থাকো আমি সব সময় চায় তুমি সেফ থাকো।
- আব্বু।
আমি অফিস থেকে যাওয়ার আগে একবার আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
.
নীলের রুমে চলে গেলাম। দেখি নীল রেডি হচ্ছে।
- নীল, কোথায় যাচ্ছ?
- আমি একজন ভ্যাম্পায়ার শিকারি। কাল যেই ভ্যাম্পায়ার তোমাকে আটাক করেছিলো আমি তাকে মারতে যাচ্ছি।
- আমিও তোমার সাথে যাবো।
- কিন্তু কেনো?
- আমি তো এখানে সেফ না।
- আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারব না। ভ্যাম্পায়ারগুলো তোমাকে আমার দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
আমি মুখ ফুলালাম। কিন্তু নীলের সামনে পাউট করে কোন লাভ নেই। নিরুপায় হয়ে আমাকে ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে যেতে হলো।
.
ভ্যাম্পায়ারেরা যেখানে থাকে সেটা হোস্টেল বলা যায় না। একটা বড় বাড়ি টাইপ।
- নওরিন, তুমি কি কাউকে খুজচ্ছ?
সৌরভের প্রশ্নে আমি ওর দিকে তাকালাম।
- না।
- হুম, আমার মনে হয় তুমি খালিদকে খুজচ্ছ।
- মোটেও না। কিউপিড সাজা বন্ধ করে দাও।
আমাদের কথায় অভি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
খালিদের উপর রাগ করার পর অনেক দিন হলো জায়গাটা ঘুরে দেখি নি। কেনো জানি সবার আগে লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। হয়ত মনে মনে খালিদের সাথে আবার দেখা হওয়ার আশা করছিলাম। কিন্তু আশা পুরন হলো না। খালিদ যেই বইটা এর আগে পড়ছিলো সেই বইটা খুঁজে বের করলাম। বইটা নিয়ে লাইব্রেরির সেই একই চেয়ারে বসলাম যেখানে খালিদ বসে ছিলো। বইটা খুলতেই ভেতর থেকে একটা ছবি পড়ে গেলো। ছবিটা তুলে দেখি আমার ছবি, যখন আমার চুল লম্বা ছিলো।
- খালিদের বই পড়ছ?
- মারিয়া!
লাইব্রেরির ভেতর মারিয়া ঢুকলো।
- কি চাও তুমি?
- তোমার কি হয়েছে নওরিন?
- মানে?
- আগে দেখেছি খালিদ ছাড়া তুমি কিছু বুঝতে না।
মারিয়ার কথা শুনে খালিদের সাথে কাটানো পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। বুকের ভেতর কষ্ট হতে লাগলো। আর না পেরে বুকে হাত দিয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম।
- খালিদ তোমার সাথে ভালো থাকবে।
- এসব কি বলছ? খালিদের বইয়ের পাতায় নিজের ছবি দেখেও বোঝ নি সে তোমাকে কতটা ভালোবাসে?
- যা দেখার আমি দেখেছি।
মারিয়ার কথায় আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মারিয়া আমার পথা আটকে দিলো।
- না, আমি জানতে চাই যে তুমি কি দেখেছ।
- সেই দিন খালিদের কামড় খুব ভালোভাবে মজা করে নিচ্ছিলে।
- ও, সেই ঝড়ের রাতে...
- এবার আমার পথ ছাড়ো।
- আমাদের ভ্যাম্পায়ারদের ব্যপারে তুমি কি জানো?
-.....
- সেই দিন খালিদের রক্তের প্রয়োজন ছিলো আর ঘরে অভি আর সৌরভ বা অন্য কেউ ছিলো না।
- আমি তো ছিলাম।
- তুমি একটা মানুষ। পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার যদি তোমাকে কামড় দেয় তুমি সাথে সাথে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ ভ্যাম্পায়ারের কামড়ে কেউ ভ্যাম্পায়ার হয় না।
-.......
- অযথা রাগ করে থেকে নিজেকে আর খালিদকে কষ্ট দিও না।
মারিয়া আমার পথ ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। সারাদিন আমি লাইব্রেরিতে একা বসে থাকলাম। তবুও আমার খালিদের সামনে যাওয়ার সাহস হলো না।
.
রাত হলে নিজের হোস্টেলে ফিরে গেলাম। সামনে ভ্যালেন্টাইন ডে আসছে। সকালে উঠে আব্বু আমাকে আরেকটা দায়িত্ব দিলো। কলেজে কিছু স্টুডেন্ট অবৈধভাবে ভ্যাম্পায়ারদের ছবি তুলে রাখে। আবার অনেকে খারাপ ম্যাগাজিন রাখে। সেই সব ম্যাগাজিন আর ছবি নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলাফলে কাজ শেষ হলে দেখা গেলো যে কিছু স্টুডেন্ট না বরং অনেক স্টুডেন্টের কাছে অবৈধ জিনিসপত্র পাওয়া গেলো।
.
সব জিনিস নিয়ে আমি ওপর তালার ঘরে যাচ্ছিলাম। বারান্দা দিয়ে নিচে গাছের নিচে নীলকে দেখা গেলো। আমি ঝুকে পড়লাম নীল করছে দেখার জন্য। নীলের হাতে টাবলেটের কৌটা মতো দেখা গেলো। নীলের কি হয়েছে? নীল কি অসুস্থ? কয়েকদিন ধরে ওকে অসুস্থ দেখা যাচ্ছিলো। কিসের ট্যাবলেট নীল তো তা কোনদিন বলবে না। তাই আমি আরো ঝুকে পড়লাম দেখারা জন্য। হঠাৎ ঝুকতে ঝুকতে আমার পা পিছলিয়ে গেলো!
- নীল!
আমার চিৎকারে নীলের নজর আমার দিকে পড়ল। আর নীল সাথে সাথে আমার দিকে ছুটে আসলো আমাকে বাচানোর জন্য। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে নিজেকে নীলের কোলে দেখলাম।
- নীল!
- উপর থেকে পড়লে কি করে?
- তোমাকে দেখতে গিয়ে।
আমার কথায় নীলের চোখ বড় হয়ে গেলো আর নীলের গাল লাল হয়ে গেলো।
- আমাকে দেখতে গিয়ে!
- হ্যা, তোমার হাতে কিসের ট্যাবলেট ছিলো? তোমার কি হয়েছে?
আমার কথা এবার শুনে নীল আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।
- সব কিছুর কৈফিয়ত তোমাকে দেওয়া লাগবে না আশা করি।
- নীল, দাড়াও।
আমার কথা না শুনেই নীল চলে গেলো।
.
ভ্যালেন্টাইন এর দিন সব স্টুডেন্টরা আমাকে রীতিমত থ্রেট দিলো। আজকে তারা ভ্যাম্পায়ারদের গিফট দিতে চায়। আব্বুকে বলা লাগলো। আব্বু আমাকে ডেলিভারি ম্যান বানিয়ে দিলো। আমি ছাড়া অবশ্য কিছু কলেজ ক্যাপ্টেনও ছিলো। সারা দিন স্টুডেন্টের কাছ থেকে গিফট নিয়ে লিস্ট বানাতে বানাতে বিকাল হয়ে গেলো। এই দিনে অধিকাংশ মেয়েরা চকলেট বানিয়ে ছেলের দেয়। কিন্তু আমি তো কোন সময়ই পেলাম না চকলেট বানানোর। তাই বিকাল বেলা বাজারা চলে গেলাম তমাকে সাথে নিয়ে। ভ্যাম্পায়ারের আটাক হওয়ার পর থেকে আমার একলা যাওয়া নিষেধ। বাজারে একটা ছোট্ট চকলেটের কৌটা দেখে আমার খুব পছন্দ হলো। আমি সেইটাই কিনে নিজের পকেটে রেখে দিলাম।
.
পরিচ্ছেদ  - ০৫
স্টুডেন্টরা ভ্যাম্পায়ারদের প্রতি মুগ্ধ। কারণ প্রথম পর্বেই বলা হয়েছে। ভ্যাম্পায়ারদের বডি সুগঠিত। তাদের চোখ, চুল, নাক সব কিছু একদম পারফেক্ট।
এখন ভ্যাম্পায়ারদের গিফট পেয়ে প্রতিক্রিয়া :
মারিয়া আর ছোট লেডি ভ্যাম্পায়ার লাবনি ছেলের কাছ থেকে অনেক গোলাপ ফুল পেলো। অভি মেয়েদের চকলেট পেয়ে খুশিতে আকাশে উড়ে গেলো। সব গুলো ফিগটই একসেপ্ট করে নিলো। সৌরভ তার পাওয়া গিফট অভিকে দিয়ে দিলো। আর আমার খালিদ সব মেয়েদের গিফট রিজেক্ট করে দিলো।
আর আমার এই চকলেটের গিফট আমি নিয়ে নীলের কাছে গেলাম।
- নীল, তোমাকে আমার হয়ে একটা কাজ করতে হবে। আমি জানি তুমি আমার ওপর রেগে গিয়েছে। না জানি আমি কি করেছি কিন্তু...
- কি করা লাগবে তাই বলো।
- এই গিফট খালিদের কাছে পৌছিয়ে দিবা?
নীল কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। অবশেষে আমার হাতের থেকে গিফট নিয়ে নিলো।
.
নীল খালিদকে গিফট ডেলিভারি করেছে কিনা জানতে ওর রুমে যায়। ঘরে কোথাও ওকে পাওয়া গেলো না। এ সময়ে নীলের রুমেই থাকার কথা। আমি দেখলাম বাথরুমের দরজা বন্ধ।
- নীল, আমি জানি তুমি বাথরুমে আছো।
- নওরিন, এখন যাও পরে এসো।
- তুমি আগে বাথরুম থেকে বের হও।
- বললাম না যাও।
- আমিও বলেছি বের হও। আজ avoid করা চলবে না।
আমার কথায় বাথরুমের দরজা খুলে গেলো। আমি বাথরুমের দরজা খুলে দেখি নীল মাথায় হাত দিয়ে হাটু গেড়ে বসে আছে। তার সামনে একটা চকলেট কেক, আর তার সামনে তমা।
- তমা!
আমার কথায় তমা উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাছে আসল।
- তমা, তুই এখানে কি করছিস?
- নওরিন....
- চকলেট কেক!!! নীলের জন্য!!!
- আহ! তমা তুমি এখান থেকে এখন যাও।
- আচ্ছা, চল নওরিন।
- না, নওরিন এখানেই থাকবে। ও পরে আসবে। তুমি যাও।
তমা একবার আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
আমি নীলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।
- তমা জানে না যে তুমি চকলেট একদম পছন্দ করো না।
- হুম, কিন্তু তুমি জানো নওরিন।
- তা তো জানি।
- তুমি সব সময় যাদের পছন্দ করো তাদের পেছন ছাড়ো না। এতে অন্য জন বিরক্ত হয়ে গেলেও পেছন ছাড় না।
- এটা কি আমার প্রশংসা নাকি অপমান?
নীল আমার কাধ চেপে ধরল।
- নওরিন।
- কি হয়েছে নীল? তুমি হাপাচ্ছ কেনো?
নীল আমার কথার না উত্তর দিয়েই মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়লো। আমি নীলের মাথায় হাত দিয়ে দেখালাম খুব গরম।
- একি!!! তোমার তো খুব জর!!! তোমার রুমমেট কই?
- ও বাড়ি গিয়েছে।
- তুমি শুয়ে পড় আমি আব্বুকে ডেকে আনছি।
আমি চলে যাবো এমন সময় নীল আমার হাত চেপে ধরল।
- না, প্লিজ। আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না।
- আচ্ছা, তুমি শুয়ে পড়।
- না, আমি শুয়ে পড়লেই তুমি আবার চলে যাবা।
- আমি নীল না যে কথা শেষ না হতেই চলে যাবো।
নীলকে আমি জোর করে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম। ঘর থেকে বাটিতে করে পানি নিয়ে আসলাম। আমার স্কার্টের পকেটে রুমাল ছিলো। সেই রুমাল দিয়ে বাটিতে পানি নিয়ে নীলের মাথায় দিতে লাগলাম।
- নওরিন!!!
- হুম, বলো।
- তুমি আমাকে খুব ভালোভাবে চেনো।
- হুম।
- সবার থেকে ভালোভাবে চেনো।
- হুম।
- ওই, চকলেট কেক তুমি খেও।
- আমার পরের কেকের ওপর লোভ নেই। তবে এতো করে বলছ যখন আমিই কেকটা খেয়ে শেষ করব।
- খালিদ....
নীলের মুখে খালিদের নাম শুনে এবার আমি চমকে উঠলাম।
- খালিদ পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার। তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
- খালিদের সাথে আমার কি সম্পর্ক তা আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না।
আমার কথায় নীল উঠে বসে পড়ল।
- খালিদকে কি তুমি ভালোবাসো?
- নীল!! তোমাকে শুতে বলেছি।
- না আগে তুমি আমাকে বলো খালিদের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
আমি নীলকে আবারও ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলাম।
- চুপ। একদম চুপ। আর কথা না। এবার উঠলে বিছানার সাথে দড়ি দিয়ে বেধে দেবো।
- খালিদের কাছে সব আছে। ওর এতো পাওয়ার ও যা চাইবে তাই পাবে। কিন্তু আমার কাছে তুমি ছাড়া কেউ নেই নওরিন। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ বোঝে না।
আমি নীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
- আমি কোথাও যাচ্ছি না নীল। আমি তোমার পাশেই আছি। ঘুমাও।
নীল আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেলো। এই নীল জরে পড়ে সব সত্যি কথা বলছে। তাছাড়া সবার সামনে কঠিন আর গম্ভীর সেজে বেড়ায়।
.
কয় মাস আগে নীলের মা বাবা একটা পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার শিকার করতে গিয়ে মারা যায়। তার পর থেকেই নীল কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেছে।
.
বাইরে খুব বাতাস হচ্ছিলো। নীলের রুমের জানালাটা খোলা ছিলো। নীল পুরোপুরি ঘুমালে আমি উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এখান থেকে ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলটা দেখা যায়। ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলের বারান্দায় আমি একটা ছায়া দেখতে পেলাম। ছায়াটা বেশ লম্বা। খালিদ এই কলেজের সব চেয়ে লম্বা ছেলে। তাই ফলাফল দাঁড়ায় যে ছায়াটা খালিদের। খালিদের দিকে মুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় খাকিদের চোখ আমার ওপর পড়ে। আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নি আর জানালা বন্ধ করে দি।
.
সকালে নীলের জর ছেড়ে যায়। আমি আমার রুমে ফিরে যায়।
- তুই রাতে কোথায় ছিলি?
জানতাম যে তমা প্রশ্ন করবে।
- নীলের খুব জর ছিলো তাই ওখানে ছিলাম।
- কি? নীলের জর? আমাকে ডাকলি না কেনো?
- আরে নীল আমাকে কাউকেই ডাকতে দেয় নি। এমনি তে তো খুব জেদি। জর হয়েছে বলে আরো বাচ্চা জেদি হয়ে গেছিলো।
- ও আচ্ছা।
- হুম।
- আমার না ভ্যাম্পায়ারদের ওপর খুব রাগ লাগে।
- কেনো?
- তুই জানিস না নীলের মা বাবাকে মেরে ফেলেছে?
- জানি তো।
- ভ্যাম্পায়ার খুব খারাপ জিনিস। মানুষের রক্ত খায় আর পারলে তাদের মেরেই ফেলে। একদম নিষ্ঠুর।
- কিন্তু এই কলেজের ভ্যাম্পায়ারগুলো খুব ভালো আর আমাদের মতো সাধারণ খুব।
- সাধারণ!
- মানে আমাদের মতোই আর কি।
- যাই বলিসস রক্তচোষা পশুদের আমি ঘৃনা করি।
- কিন্তু আমি তো এক জন রক্তচোষা কে চিনি যে খুব ভালো। আর যে আমার জীবন বাঁচিয়েছে।
- কি বললি?
- না, কিছু না।
.
সকালে আব্বুর দেওয়া নতুন দায়িত্ব এর মুখোমুখি হলাম।
- মা, কিছু স্টুডেন্ট নিখোঁজ।
- তো?
- আমরা সন্দেহ করছি যে যেই ভ্যাম্পায়ার তোমাকে আটাক করেছিলো এটা তাদের কাজ।
- তাদের আসল উদ্দেশ্য কি?
- সেটা জানা যায় নি।
- নীলের তো জর ছিলো। ওকে এসব না বলায় ভালো।
- আমি নতুন একজন ভ্যাম্পায়ার হান্টারকে কলেজে ডেকেছি। সে আজ থেকে টিচার হিসেবে তোমাদের আশেপাশে থাকবে।
- আর নীল?
- নীল তো এখনো খুব ছোট। যাকে ডেকেছি সে একজন অভিজ্ঞ ভ্যাম্পায়ার শিকারি।
- আমার কি করণীয়?
- তুমি নিজেকে সেফ রাখবা যেগেতু একবার তোমার ওপর হামলা হয়ে গেছে।
- নিজেকে সেফ করার জন্য আমি পড়ালেখা বাদ দিয়ে রোজ ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে থাকতে পারব না।
- তো কি করব এখন?
- আমাকেও ভ্যাম্পায়ার মারার কিছু অস্ত্র দাও। আমি জানি আব্বু তোমার কাছে ওগুলো আছে।
- তুমি ব্যবহার করতে পারবে?
- কেনো পারব না। কলেজ ক্যাপ্টেন হিসেবে আর তোমার মেয়ে হিসেবে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে।
- তুমি যখন বলছ তখন তোমাকে ভ্যাম্পায়ারদের মারার স্টিক দিচ্ছি। কিন্তু প্রমিছ করো এই স্টিক ধরতে গিয়ে অসস্তি লাগলে ছেড়ে দিবা।
- ঠিক আছে।
.
ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিক। দেখতে কালো রং এর। ধরতে আমার কোন অসুবিধা হলো না। আব্বু বরাবরই বেশি ভয় পায়। সারা দিন ক্লাস হলো। সেই নতুন টিচারকেও দেখলাম। টিচারের নাম রানা আর আমার আব্বুর বয়সী। দেখে রাগী আর গম্ভীর মনে হলো। কেনো জানি নীলের ছাপ পেলাম এই টিচারের ওপর।
.
রাতেই সাধারণত ভ্যাম্পায়ার নিজেদের শিকার খোঁজে। তাই আমিও স্টিক নিয়ে রাতেই বের হলাম। কলেজের বারান্দায় হাটতে হাটতে আমার মনে মনে থ্রিল আসছিলো। আগে খালিদ আর নীল আমাকে সব সময় প্রটেক্ট করত। এই প্রথম আমি পুরো কলেজটাকে প্রটেক্ট করতে পারব। আমার পেছনে কারো হাটার আওয়াজ পেলাম। কিন্তু পেছনে ফিরে কাউকে দেখলাম না। আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। নিজের পেছনে একদম কাউকে অনুভব করতে পারছিলাম। তাই চিন্তা ভাবনা না করেই স্টিকটা সোজা পেছনে ঘুরে মেরে দিলাম। আমার পেছনে খালিদ দাঁড়িয়েছিল। আমার স্টিক সে তার হাত দিয়ে ধরে ফেলল। তার হাতে যেখানে স্টিক ধরা ছিলো, সাদা বিদুৎ এর মতো আলো ছুটছিলো। কিন্তু খালিদের চেহারা দেখে মনে হলো না তার কোন কষ্ট বা ব্যাথা হচ্ছে। পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের সত্যিই অনেক পাওয়ার। খালিদ আমার স্টিকটা টান মেরে আমাকে তার বুকের ভেতর টেনে নিলো। আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। বিষয়টা এতো তাড়াতাড়ি ঘটল যে আমার মাথা ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছিলো। কিছুক্ষণ পর হুস ফিরে পেয়ে খালিদের বুকের ওপর হাত দিয়ে নিজেকে খালিদের কাছ থেকে সরিয়ে নিলাম।
- তোমার হাতে কি লেগেছে? সরি?
- হিমা, আমি পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার। এসব অস্ত্র আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
- আচ্ছা ভালো।
.
আমি পেছন ফিরে ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলাম ঠিক তখনই নীলের সাথে ধাক্কা খেলাম।
- নীল জানো, কিছু স্টুডেন্টরা উধাও হয়ে গেছে। আমার খুব ভয় লাগছে।
-....
- নীল, শুনছ?
নীল আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো। এর আগে ওর মাথা নিচু ছিলো। নিজের পকেট হাতড়াচ্ছিলো।
- নীল, কিছু খুজচ্ছ? আমি খুঁজে দেবো?
আমি নীলের হাত ধরতেই নীলের চোখ আমার গলার কাছে পড়ল। নীল আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরল।
- নীল, কি করছ? ছাড়ো?
নীল আমাকে এমন ভাবে ধরল যেনো আমার পেছনে ওর বুক থাকে। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু একটা ছেলের গায়ে স্বভাবতই অনেক শক্তি থাকে। নীল আমার ঘাড়ে তার মুখ লাগিয়ে দিলো। এর পর তার মুখ খুলে গেলো আর আমি নিজের ঘাড়ে অনুভব করলাম নীলের দাত। নীল আমার ঘাড়ে দাত বসিয়ে টেনে টেনে রক্ত খাওয়া শুরু করল। আমার সারা শরীর রক্ত স্রোতে গরম হয়ে গেলো। আমার চোখ নিচের দিকে পোড়ল। সেই ট্যাবলেটের দিকে। ধাক্কায় নীলের পকেট থেকে ওটা পড়ে গেছে। এই ট্যাবলেট ভ্যাম্পায়ারদের কাছে থাকে। এই ট্যাবলেট খেয়ে তারা তাদের রক্ত খাওয়ার ইচ্ছা দমন করে রাখে।
.
পরিচ্ছেদ  - ০৬
বেশ কিছুক্ষন পর নীল আস্তে করে আমাকে ছেড়ে দিতে লাগলো। নীলকে দুর্বল পেয়ে আমি নিজেকে ঝটকা মেরে সরিয়ে নিলাম। পেছন ফিরে দেখি নীলের চোখ লাল হয়্র গেছে আর নীলের গালে আর গায়ে আমার রক্ত লেগে গেছে।
- নীল, তুমি ভ্যাম্পায়ার!!!!
- নওরিন, I am sorry.
আমার পেছন পেছন খালিদ ছুটে আসল। আমাকে আর নীলকে এই অবস্থায় দেখে খালিদের বুঝতে বাকি রইল না যে কি ঘটেছে। খালিদের চোখেমুখে রাগ। খালিদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো সে এখনি নীলকে খুন করে ফেলবে। আমি খালিদ আর নীলের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।
- খালিদ, না....
আমার চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায় আর আমি রক্তশুন্যতায় জ্ঞান হারায়।
.
জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আব্বুর অফিসের সোফায় পেলাম। আব্বু আমাকে উঠে বসতে দেখে জিজ্ঞেস করল,
- মা, ঠিক আছো?
- হুম। নীল কেমন আছে?
আমার প্রশ্নে খালিদ রেগে গিয়ে আমার দিকে তাকায়।
- নীল ঠিক আছে। নীলের বাবা মা যেই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের হাতে মারা গিয়েছিলো সে নীলকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দেয়।
- তারপর....
আমি প্রশ্ন করতে গিয়ে কল্পনায় হারিয়ে গেলাম। নিজেকে একটা বন্দি ঘরের মধ্যে মনে হচ্ছে। আমাকে ছটফট করতে দেখে খালিদ আমার পাশে এসে বসে গালে হাত দেয়।
- হিমা? তুমি ঠিক আছো?
- না, আমার এমন মনে হচ্ছে আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
- কিছু না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমাদের কথায় নীলের জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে নীলের চোখ লাল হয়ে আসে। তার রক্ত লাগবে। খালিদ আমার পাশ থেকে উঠে নীলের কাছে গেলো। নীল খালিদকে আকড়ে ধরল আর তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিলো।
- নীল না!!! আব্বু ঠেকাও ওদের।
- চিন্তা করো না, মা। নীল আর খালিদ দুজনেই ভালো থাকবে। কোন ক্ষতি হবে না। আমার চিন্তা তো তোমাকে নিয়ে।
- আমাকে নিয়ে?
- নীল নতুন নতুন ভ্যাম্পায়ার হয়েছে। নিজের রক্তের পিপাসা মেটানোর জন্য সে সব কিছু করতে পারে।
- নীল আমার কোন ক্ষতি করবে না।
- তুমি নিজেও জানো না ভ্যাম্পায়ারদের রক্তের পিপাসার ব্যপারে।
-....
- আজ থেকে নীলের কাছ থেকে দূরে থাকবা।
- কখনোই না। আমি পারব না।
- আমি জানতাম তুমি এমন কিছুই বলবে। তাই এই লকেট পরে রাখো। এতে করে নীল তোমার ওপর হামলা করবে না।
- ঠিক আছে।
লকেটটা দেখতে গোলাপের মতো। কালো রঙের গোলাপের ডিজাইন করা। অপরদিকে নীল খালিদের রক্ত খেয়ে শান্ত হলো আর আমি আর নীল হোস্টেলে ফিরে গেলাম।
.
নীল পুরোটা রাস্তা আমার দিকে তাকায় নি। আমি নীলকে তার ঘরে পৌছিয়ে দিলাম।
- নওরিন!
- হুম।
- I am sorry.
- তোমাকে কিছু বলা লাগবে না।
- নিজেকে ঠেকাতে পারি নি। আজকের পর থেকে আমার কাছ থেকে দূরে থাকো।
- কখনওই না।
- তুমি বুঝতে পারছ না রক্তের পিপাসা উঠলে আমি জ্ঞান হারায়। কি করছি নিজেই জানি না।
- আমার খারাপ লাগে নি।
- মানে?
- তুমি আমার রক্ত খেয়েছ। আমার তাতে খারাপ লাগে নি। তুমি ভ্যাম্পায়ার বলে আমি কখনওই তোমাকে ঘৃনা করব না।
আমার কথা শুনে নীল আমাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরল। আমিও নীলকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে নীল প্রশ্ন করল,
- হুম, খালিদকেও ঘৃনা করো না তাই তো?
- মানে?
- কিছু না।
- একটা আফসোস থেকে গেলো।
- কি?
- তুমি পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার না। তাই তোমার রক্ত খাওয়াতে আমি ভ্যাম্পায়ার হবো না।
- তুমি ভ্যাম্পায়ার হতে চাও?
-..... অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি নীলের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। কারণ আমি নিজেই জানি না আমি কি চাই।
.
নীলের রক্তের প্রয়োজন। যেই ট্যাবলেট দিয়ে ভ্যাম্পায়ারেরা নিজেদের পিপাসা দমন করে তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। নীল প্রতিদিন খালিদের রক্ত খাওয়া শুরু করল। এভাবে দিন যেতে থাকলো। ভ্যাম্পায়ারদের জন্য পূর্নিমা রাতে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো কলেজে। আমার এমন পরিবেশে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কোন ইচ্ছা হলো না। তাই বিকালের দিকে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। পথে একটা ছোট্ট ছেলে আমার জামা ধরে টানলো।
- কি হয়েছে তোমার?
- আপু আমার বেলুন ওই বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকে গেছে এনে দাও না।
মনে মনেই ভাবলাম আবার সেই বিল্ডিং যেখানে আমার ওপর ভ্যাম্পায়ার হামলা করেছিলো। তবুও ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে ভেতরে গেলাম। বিল্ডিং এর এক কোনায় বেলুনটা আটকিয়ে ছিলো। আমি ওখান থেকে ওইটা পেড়ে ছেলেটার হাতে দেওয়ার জন্য ছেলেটার সামনে হাটু গেড়ে বসলাম। ছেলেটা আমার হাত থেকে বেলুনটা নিয়ে আমার গালে একটা চুমু দিলো। চুমু দেওয়ার সাথে সাথে আমার চারিদিকে ঘোলাটে অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এক সময় নিজের জ্ঞান হারালাম।
.
চোখ খুলে নিজেকে ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে পেলাম। আমি উঠে বসতেই খালিদ আমার পাশে এসে বসল।
- আমি তো বাইরে ছিলাম। এখানে কিভাবে এলাম?
- যেই ছোট ছেলেটা তোমাকে চুমু দিয়েছিলো সেইটা আসলে একটা ভ্যাম্পায়ার ছিলো।
-....
- আমি জানতাম তুমি সহজে আসতে না এই অনুষ্ঠানে।
খালিদ কথা বলছিলো এমন সময় অভি ঘরের ভেতর ঢুকলো।
- আরে, লাভ বার্ডের ঝগড়া মিটে গেছে মনে হচ্ছে।
অভির পেছন পেছন সৌরভ ঘরে ঢুকলো।
- অভি, আমার মনে হয় আমাদের লাভ বার্ডকে বিরক্ত না করায় ভালো।
- আচ্ছা, নওরিন তুমি আজ আমার সাথে অনুষ্ঠানে ডান্স করবে কিন্তু।
অভির কথা শুনে খালিদ আমার কাধের ওপর হাত দিয়ে আমাকে নিজের দিকে টেনে নিলো।
- নওরিন শুধু আমার সাথে ডান্স করবে।
- আরে ভাইয়া কিন্তু....
- অভি চুপ। খালিদকে আজ রাতে রাগানোর দরকার নেই। কাল রাগিও।
- কিন্তু আমি তো....
সৌরভ অভিকে জোর করে টেন হিচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেলো।
- নওরিন, তমার কাছে আমি একটা জামা দিয়েছি। তুমি আজকে অনুষ্ঠানে ওইটা পরে আসবে।
- কিন্তু স্টুডেন্টরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিলো সেই বিষয়ে কি হলো?
- নীল গার্ড দেবে। আর তাছাড়া অভিজ্ঞ ভ্যাম্পায়ার শিকারিও আছে।
.
আমি খালিদের কথা মতো রুমে গিয়ে জামা পালটিয়ে আসলাম। রুমে অতো মানুষের সামনে ডান্স করতে আমার লজ্জা লাগছিলো। খালিদ আমার হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেলো। খালিদ আর আমি ছাদে ডান্স করলাম। ডান্স করতে করতে খালিদ প্রশ্ন করল,
- নওরিন, তুমি আমাকে পছন্দ করো?
- আমি আগেও বলেছি আমাকে তোমাকে কোন দিন ঘৃনা করতে পারব না।
- আর তুমি নীলের জন্য কি ফিল করো?
খালিদের প্রশ্নে আমি থমকে গেলাম। ডান্স বন্ধ হয়ে গেলো। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে খালিদ আমাকে জড়িয়ে ধরল।
.
পেছন থেকে নীল আমাদের দিকে তার ভ্যাম্পায়ার মারার রিভলভারটা তাক করে ছিলো। খালিদ বুঝতে পেরে আমাকে ছেড়ে দিলো।
- খালিদ নওরিনকে ছেড়ে দাও।
নীলের ককথা মতো খালদ আমাকে ছেড়ে দিতেই নীল আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল। নীলের সাথে চলে যাওয়ার সময় আমি পেছনে খালিদের দিকে তাকালাম। ওর চোখ দুটো পানিতে ভরা ছিলো। আমি দেখারা সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলি। নীল আমাকে নিয়ে যেতে যেতে একটা ব্রিজের কাছে আসলো। আমার হাত ছেড়ে দিয়ে এবার নীল আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমার গলার দিকে নীলের নজর পড়তেই নীলের চোখ লাল হয়ে গেলো। আজ আমি খালিদের দেওয়া জামা পরার সময় লকেট খুলে রেখেছিলাম। পরে আর পরতে মনে নেই। এদিকে নীলের আবার রক্তের পিপাসা জেগেছে। আমার দিকে এসে নীল আমার কোমর চেপে ধরল।
- নীল না....
আমার কথা শেষ হতে না হতেই নীল আমাকে উচু করে ধরে তার দাত আমার ঘাড়ে বসিয়ে দিলো। আমাকে আস্তে আস্তে নিচে রাখার সময় আমি নীলকে ধাক্কা দিয়ে কোন রকমে পানিতে ফেলে দিই। আমরা দুজনেই পানিতে পড়ে যায়।
.
পরিচ্ছেদ  - ০৭
পানিতে পড়ার সাথে সাথে নীলের কাধে গুলি লাগে। সামনে তাকিয়ে দেখি আমাদের নতুন স্যার আর ভ্যাম্পায়ার শিকারি।
- নীল, আপনি নীলকে গুলি করলেন কেনো?
- গুলি না করলে তোমাকে মেরে ফেলত।
- না, মেরে ফেলতো না। আমি ওকে পানিতে ফেলে দেওয়ার পর ও শান্ত হয়ে গিয়েছিলো। তারপর ও কেনো গুলি চালালেন।
- এই মেয়ে আমি কে জানো?
- আপনি একটা গাধা লোক। যে খারাপ ভ্যাম্পায়ারদের পেছনে না গিয়ে নীলকে আহত করছেন। নীল তুমি ঠিক আছো?
- আমি তোমার নীলের গুরু। নীল আমার কাছেই ভ্যাম্পায়ার শিকারের ট্রেনিং নিয়েছে।
আমাদের কথা আর গুলির আওয়াজে আব্বু ঘটনার যায়গায় চলে আসে।
- আরে এসব কি হচ্ছে? নওরিন, নীলকে নিয়ে উঠে আসো পানির ভেতর থেকে। আর আমার কলেজের ভেতরে এসব গোলাগুলি হবে না। এটা কলেজ যুদ্ধের ময়দান না। প্রতিশোধ নিতে হয় কলেজের বাইরে গিয়ে নাও। নীল আমার কলেজের স্টুডেন্ট। তার নিরাপত্তা আমার দায়িত্ব।
- খুকি সামান্য গুলি লেগেছে। তোমার নীলের কিছু হবে না। এখন তো আবার ও ভ্যাম্পায়ার। ভ্যাম্পায়ারদের জখম তাড়াতাড়ি সারে।
- আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে চায় না।
আমি নীলকে নিয়ে উঠে যায়।
.
নীলকে রুমে নিয়ে গিয়ে আমি ওর গুলির জায়গাটায় ব্যান্ডেজ করতে লাগলাম।
- নীল, তুমি ঠিক আছো?
- আমার নিজের উপর খুব রাগ লাগছে।
আমি নীলের গালে হাত দিলাম।
- নীল কিছু হয় নি। আমার তোমার ওপর কোন রাগ নেই।
- যখন আমি তোমার রক্ত খায় তখন তোমার স্মৃতি গুলো দেখিতে পায়।
- মানে?
- তোমার রক্ত নেশার মতো।
- আমার স্মৃতি মানে?
- ছোট বেলায় তুমি আর খালিদ কত ক্লোজ ছিলা, তোমাকে খালিদ বাঁচিয়েছিল....
- এসব তুমি কি করে জানো?
- যখন তোমার রক্ত খায় তখন তোমার স্মৃতি আমার মনে ভাসে। যেনো ছোটবেলার আটকানো স্মৃতিগুলো আমার ভেতর মুক্তি পায়।
- এমন করা ঠিক না। এখন আমার তোমার ওপর খুব রাগ লাগছে যে তুমি আমার অজান্তে আমার ব্যপারে সব জেনে যাচ্ছ। ডায়রি পড়ার মতো করে।
-.......
- অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।
.
রাতে আমি ঠিক মতো ঘুমাতে পারি নি। সকালে আবার কলেজের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করি। এই প্রথম কলেজ ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করতে আমার নিজের ওপর রাগ হলো। একটা চিঠি পেয়ে আমার মাথায় রাগ উঠে গেলো। আমি আব্বুর অফিসে সজা চলে যায়।
- আব্বু এইসব কি?
- কি?
- তুমি নীলকে টিসি দিচ্ছ কেনো?
- কারণ তুমি নিজের যত্ম নিতে পারো না।
-......
- লকেট পরে থাকতে বলেছিলাম। এখন নীলকে অন্য কলেজে পাঠিয়ে দিতেই হবে।
- এসব বুদ্ধি তোমার মাথায় কে দিলো?
- আ....কেউ না।
- মিথ্যা কথা। আমি জানি এই বুদ্ধি খালিদ দিয়েছে।
-......
- ঠিক আছে। খালিদকে রাজি করাতে পারলে তুমি নীলকে টিসি দিবা না।
-.....
- হুম, কথা দিলে তো।
- না....শোনো....
আব্বুর কথা শেষ না হতেই আমি ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে চলে যায়। ভ্যাম্পায়ারের ক্লাস রাতে নেওয়া হয়। আমি ভেতরে যাবোই এমন সময় সৌরভ আমার পথ আটকায়।
- নওরিন, না।
- কেনো?
- খালিদের কাছে যেও না।
- অন্য সময় তো নিজে থেকে আমাকে খালিদের কাছে পাঠাতে।
- আমি জানি তোমার খুব রাগ হয়েছে।
- নীলকে কেনো টিসি দেওয়া হচ্ছে?
- খালিদ আর কি করবে? তোমাকে নীলের কাছে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যেতে দেখবে।
- নীল আমার ফ্রেন্ড।
- আর খালিদ?
- আমার জীবনে নাক গলাতে নিষেধ করেছিলাম খালিদকে।
- নীল নিজেই টিসি চেয়েছে।
- কি?
- হ্যা। যা বলার ওকে গিয়ে বলো।
.
সৌরভের কথা শুনে আমি আবার নীলের কাছে যায় ওর রুমে।
- নীল তুমি টিসি নিচ্ছ কেনো?
- আমি তোমার আশে পাশে থাকলে নিজেকে ঠেকাতে পারি না।
- তাই বলে তুমি চলে যাচ্ছ কেনো?
- তোমাকে মেরে ফেলার চেয়ে নিজেকে মেরে ফেলা ভালো।
কথা শেষ করে নীল তার পকেট থেকে ভ্যাম্পায়ার মারার রিভলভার বের করে নিজের মাথায় ধরল।
- নীল, না। প্লিজ।
আমি নীলকে ঠেকায়। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরি।
- প্লিজ নীল। আমাকে একা ফেলে কোথাও যেও না। তুমি আমার ক্ষতি করবা না। আমি জানি। আমি সব সময় তোমাকে মনে করিয়ে দেবো যাতে তোমার আমার প্রতি রক্তের পিপাসা কন্ট্রোলে থাকে।
নীল আমাকেও জড়িয়ে ধরল। নিজের চোখের পানি মুছে আমি হাসি মুখে রুম থেকে চলে যায়।
.
রুমে গিয়ে তমার মুখোমুখি হলাম।
- এই আজ কাল নীলের কি হয়েছে বল তো?
- কেনো?
- কলেজ ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করতে দেখি না তো।
- তুই গিয়ে দেখা করে আয়। রুমে আছে হয়ত।
- তুই কি করে জানলি রুমে আছে?
- না, আমার মনে হলো।
- ও আচ্ছা। চকলেট কেক বানিয়ে নিয়ে যাবো নাকি আবার? কি বলিস?
- নীলের চকলেট পছন্দ না।
- তুই কি করে জানলি?
- ইয়ে মানে আমরা তো ছোট বেলার থেকে একসাথে পড়েছি তাই।
- ও, তোর কি মনে হয়? নীল আমাকে পছন্দ করবে?
- এইটা তুই নিজে ওকে জিজ্ঞেস কর।
- আর তোর ঘাড়ে অমন ব্যান্ডেজ করা কেনো রে?
- ইয়ে, তুই তো জানিস আমি কত কেয়ারলেস।
- ও, আচ্ছা।
.
তমাকে আসল কথা বলার সাহস হলো না। যদিও সে আমার ভালো ফ্রেন্ড। বিকালের দিকে আমি, আব্বু, খালিদ আর সেই পচা টিচার যে গুলি করেছিলো একসাথে নীলকে নিয়ে মিটিং করি।
- হিমার সেফটি আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- আমার ব্যাপারে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না।
নতুন টিচারটা বলে উঠলো,
- খালিদকে আমি যতদূর চিনি তার তো এতোদিনে নীলকে মেরে ফেলার কথা। মারো নি কেনো?
- কি বলছেন এসব?
- আমার ভয় ছিলো, নীলকে মেরে ফেললে হিমা আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে।
রুমের ভেতর সবাই নিরব হয়ে গেলো। তমা ছুটতে ছুটতে রুমে এসে বলল,
- নওরিন, নীল কলেজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
- কি!!!
আমি আর তমা তখন কলেজের মেন গেটের কাছে ছুটতে ছুটতে যায়। নীলকে পেছন দিক থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। নীলের ব্যাগটা আচমকায় পড়ে যায়।
- নীল, এসব কি? আজ সকালেই তো তোমাকে বোঝালাম।
- আমাকে একলা ছেড়ে দাও নওরিন।
- না, নীল। তুমি চলে গেলে আমি একা হয়ে যাবো। তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। প্লিজ যেও না।
- হ্যা, তোমার বেস্ট ফেন্ড। তাই তোমার সেফটি বেশি জরুরি। আমি আশেপাশে থাকলে তুমি সেফ থাকবা না।
- নীল,,, না।
নীলের সাথে কথা বলতে বলতে আমার মাথা ঘুরে যায় আর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।
.
পরিচ্ছেদ  - ০৮
চোখ খুলে নিজেকে ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে দেখি। তমার আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে ছিলো,
- নওরিন, তুই ঠিক আছিস?
- হ্যা।
- নীলের সাথে তুই সেফ থাকবি না কেনো?
আসল কথা তমা যানে না যে নীল এখন ভ্যাম্পায়ার।
-.....
- দেখ আমাকে বল। নীল কি সেইরকম ছেলে?
- সেই রকম মানে?
- মানে ওই রকম।
- কোন রকম?
- আরে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।
- ও আচ্ছা।
পাশ থেকে অভি উত্তর দেয়।
- হ্যা, হ্যা। সেই রকম ছেলে নীল। কন্ট্রোল হয় না মেয়ে দেখলে।
- অভি এসব....
অভি আমাকে বলতে না দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে।
- নওরিন এখন ছোট বেলার বন্ধু বলে নীলের ব্যাপারে খারাপ বলতে পারে না আর শুনতেও পারে না।
- ছি!!!!
তমা উঠে দাঁড়ায়।
- তুই এখানে থাক। আমি চললাম। নীল এই ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলেই আছে। ওর কাছে না থাকায় ভালো।
তমা রুম থেকে পালিয়ে যায়। আর সৌরভ পেছন থেকে এসে অভির মাথায় বই ছুড়ে মারে।
- এইটা করা একদম ঠিক হয় নি।
- আরে, এতো লাভ ট্রাই এঙ্গেল ভালো লাগে না। দুইটা একটা কম হয়ে যাক।
আমি নিজের মুখ থেকে অভির হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলি,
- নীল কোথায়?
আমার প্রশ্নে সৌরভ উত্তর দেয়,
- খালিদের সাথে আছে।
.
আমি যখন অভি আর সৌরভের সাথে নিচে বসে ছিলাম অন্য দিকে নীল আর খালিদ উপরের রুমে ছিলো। দুজনের মধ্যে কথা চলছিলো।
- এখন তুমি কি করবে নীল? হিমা তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
- আমি থাকলে ওর ক্ষতি করে দেবো।
- আপাতত তোমার এখানে থাকায় ভালো।
- হুম।
- কিন্তু যদি আমি দেখেছি তুমি হিমার রক্ত খাওয়ার চেষ্টা করেছ বুঝতেই পারছ আমি কি করব।
নীল নিজের পকেট থেকে রিভিলভার বের করে খালিদের দিকে তাকা করল।
- বিশ্বাস তো আমিও তোমাকে করি না।
- হা...কেনো?
- আমি জানি তুমিও নওরিনের ওপর দুর্বল।
- ঠিক বলেছ।
- নওরিনের রক্ত খাওয়ার ইচ্ছা হয় না তোমার?
- আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না আমার হিমার রক্ত খাওয়ার কতটা পিপাসা।
- আর নওরিন এমন এক মেয়ে যে নিজের রক্ত ভ্যাম্পায়ারকে খাওয়ানোর জন্য পাগল হয়ে যায়।
- হুম।
- কেনো জানো?
- জানি।
- সব তোমার দোষ।
- আমি জানি হিমার ওপর যা কিছু ঘটছে সব আমার দোষ।
- পিয়র ব্লাড ছাড়া নওরিন ভ্যাম্পায়ার হতে পারবে না।
- আমি ওকে কখনো ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারব না।
- I don't trust you.
- আমিও অবশ্য বুঝতে পারি না আর কতদিন হিমার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারব!
.
ক্লাস শেষ করেই আমি প্রথমে নীলের রুমে চলে গেলাম।
- নীল, কেমন আছো? কেমন লাগছে এখন?
- মাথা ঘুরে গিয়েছিলো তোমার, প্রশ্নটা আমার তোমাকে করা উচিৎ।
-.....
নীল কি বলে বোঝাবো আমি ভাষা হারিয়ে ফেলি। নীল নিজের রিভলভার আবার বের করে নিজের মাথায় তাক করল। আমি নীলের হাত থেকে রিভলভারটা কেড়ে নিতে চাইলাম। কাড়াকাড়িতে রিভলভারটা আমাদের দুজনের হাতে, কিন্তু এর মুখ নীলের বুকের দিকে তাক করা।
- আমাকে মেরে ফেলো নওরিন।
- না।
- কেনো?
আমি রিভলভারটা নিজের হাতে নিয়ে নিলাম।
- নীল, আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইব দিবা?
- কি?
- আমি চাই তুমি আমার রক্ত খাও।
- কিন্তু....
- প্লিজ।
- ঠিক আছে।
নীল আমার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে রক্ত টানতে লাগলো।
.
নীল যখন আমার রক্ত খায় তখন শুধু নীলের ভেতরেই আমার স্মৃতি চলাচল করে না, আমার ভেতরেও চলে। আমার মনে হয় না রক্ত স্বল্পতায়য় জন্য আমার মাথা ঘোরে, কারণটা অন্য।
.
ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলে আমাকে আর নীলকে ডাকা হয়। আমরা রাতে ওখানে গেলাম। ভেতরে ঢুকেই দুজন অপরিচিত মানুষ কি ভ্যাম্পায়ারের সাথে দেখা হলো। একজন ছেলে আর অপরটা মেয়ে। মেয়েটা হয়ত ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড। দুজনের দাঁড়িয়ে থাকা আর চোখাচোখি করা দেখে মনে হলো। ছেলেটা দেখতে কিছুটা নীলের মতো। আমার ধারনা ঠিক করে ছেলেটা নীলকে দেখে জড়িয়ে ধরল।
- কেমন আছো ছোট ভাইয়া?
ছেলেটা নীলকে প্রশ্ন করল।
- অনেকদিন তোমাকে দেখি নি। তা কি মনে করে?
- আমার গার্লফ্রেন্ড প্রভা। তোমার হবু ভাবীও বলতে পারো।
- প্রভা!!!
- হুম।
নীল রেগে গিয়ে নিজের ভাই আর প্রভার দিকে তাকালো।
- প্রভা একটা ভ্যাম্পায়ার।
- তো কি হয়েছে?
- ভ্যাম্পায়ার শিকারি হয়ে তুমি এই ভ্যাম্পায়ারের প্রেমে পড়লে। তাও আবার প্রভা!!
- তোর ভাবী হয় বুঝলি।
- না, বুঝি নি। তুমি বোঝ প্রভা মোটেও ভালো না। ওর সাথে সম্পর্ক করো না। ও তোমাকে মিসইউজ করবে....
নীলের কথা শেষ না হতেই তার ভাই ওকে চড় মেরে দিলো।
- আমাকে শিখাবি না। আমার যা ইচ্ছা তাই করব।
নীল চুপ হয়ে গেলো। নীলেত ভাইয়ের নজর এবার আমার দিকে পড়ল।
- এইটা কে? তোর গার্লফ্রেন্ড?
- নওরিনকে এসবের ভেতর টেনো না।
- আবার আমার মুখের ওপর কথা বললি!!!
নীল আবার চুপ হয়ে গেলো আর আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল যেনো আমি কিছু না মনে করি।
- হ্যালো, আমার নাম বিপ্লব। আমি নীলের বড় ভাই।
- হ্যালো, আমার নাম নওরিন। আমি আপনার ভাইয়ের ফ্রেন্ড।
- আমাকে তুমি করে বলতে পারো। আর শুধুই কি বন্ধু?
-.......
- তুমি কি সত্যিটা জানো?
- কোন সত্যি?
প্রশ্নটা আমি না, খালিদ রাগি সুরে জিজ্ঞেস করল।
- এই যে নীল একজন ভ্যাম্পায়ার।
- জানি।
- তারপরেও একটা ভ্যাম্পায়ারের সাথে এভাবে থাকো?
- আমি ভ্যাম্পায়ারদের ভয় পায় না।
কথাটা অবশ্য বলা মিথ্যা হয়ে গেলো। কারণ খারাপ মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ারদের আমি ভয় পায়।
- বাহ, তুমি তো দেখছি আমার মতো।
- মানে?
- আমিও ভ্যাম্পায়ার শিকারি হয়ে ভ্যাম্পায়ারের প্রেমে পড়ি।
নীল এবার বলে উঠলো,
- তুমি হয়ত প্রভাকে মারতে চেয়েছিলে বলে ও এখন তোমার সাথে নাটক করছে নিজের জীবন বাচানোর জন্য।
- না, আমি তোর মতো ভালো শিকারি না যে আমার কাছ থেকে জীবন বাচানো লাগবে তার।
এতক্ষণ পর প্রভা বলল,
- চলো না, অনেক রাত হয়েছে। আবার কাল আলাপ করো।
- যাওয়ার আগে একটা কথা। আমি প্রভাকে বিয়ে করছি। খবরটা দেওয়ার জন্যই এখানে আসা।
.
আমি আর নীল নিজেদের রুমে ফিরে যাওয়ার সময় আমি হাটতে হাটতে নীলকে প্রশ্ন করলাম,
- প্রভা হয়ত পালটিয়ে গিয়েছে। তাই হয়ত বিপ্লব ভাইয়া ওকে ভালোবাসে।
- প্রভার মতো মেয়েদের আমি ভালোভাবেই চিনি। তারা কখনোই পাল্টাই না।
- প্রভাকে তুমি আগে থেকে চেনো?
- অবশ্যই। প্রভা মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ারদের ভেতরেই পড়ে। কিন্তু বুদ্ধি আছে খুব। জটিল প্রকৃতির।
- তাহলে এখন কি হবে?
- সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। আমি জানি প্রভা এখানে কিছু না কিছু ঘটবেই। চোখ খোলা রেখে আমাকে ব্যস ইভিডেন্স জোগাড় করতে হবে ওর বিরুদ্ধে।
- আমিও তোমার সাথে আছে নীল।
নীল এতক্ষণ রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাটছিলো। আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরল।
.
পরের দিন নীলের কথা সত্যি প্রমাণ করে ঘটনা ঘটল। কলেজের স্টুডেন্ট এর ডেডবডি পাওয়া গেলো সিঁড়িরর নিচে। আমি আর নীল অবশ্যই দেখতে গেলাম লাশ।
- নীল, তোমার কি মনে হয়? আমাদের কি বিপ্লব ভাইয়াকে সব.....
- না, এখন না। কাল রাতে তো বললাম ইভিডেন্স লাগবে।
- ওকে।
- তুমি ব্যস সতর্ক থেকো।
- হুম।
.
প্রভা কতটা মারাত্মক তা আমি জানি না। তবে আমার উপর আগে মানুষ খেকো ভ্যাম্পায়ার হামলা করেছিলো। তারা কতটা মারাত্মক সেটা আমি জানি। তাই নিজের গলায় আব্বুর দেওয়া লকেট পরে নিলাম। ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিকটা ভাজ করা যায়। তাই খুব সহজেই নিজের পকেটে রাখলাম। নীল অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু ৪ দিন হয়ে আসলো তবুও নীল কিছু খুঁজে পেলো না।
.
অপরদিকে খালিদকে আমি আবারও avoid করা শুরু করেছিলাম তার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে। খালিদ আর নীল আমার সমস্যা না। এরা দুজন আমার কোন choice ও না। এরা তা বোঝে না। আমি ব্যস চাই সবাই ভালো থাকুক আর এই প্রতিদিনের মরণ খেলা বন্ধ হয়ে যাক।
.
আমার শরীর যেনো ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হতে লাগলো। স্বপ্ন এ ঘুমের ভেতরে আমি খারাপ জিনিস দেখি। গা ঘাম দিয়ে আমার ঘুম ভেঙে যায়। শুধু তাই না। আমার মাঝে মাঝে খুব মাথা ঘোরে।
.
এমন এক দিন আমি ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে যায়। সেখানে তাদের জিনিসপত্র ডেলিভারি করতে করতে আমি একেবারে সেন্সলেস হয়ে যায়।
.
আমাকে ছোট লেডি ভ্যাম্পায়ার লাবণির ঘরে শুতে দেওয়া হয়েছিল। আমি চোখ খুলে নিজেকে ওখানেই পায়। সৌরভ পাশে দাঁড়ানো ছিলো। এমন সময় বিপ্লব ভাইয়া রুমে ঢুকলো।
- নওরিন, তুমি খুব অসুস্থ। আমার মনে হয় তুমি রক্তস্বল্পতায় ভুগছো। তাই তোমার জন্য রক্ত এনেছি।
- আমি ভ্যাম্পায়ার না যে রক্ত খাবো।
- না, এই রক্ত আমি সাধারণভাবে তোমার গায়ে দেবো।
বিপ্লব ভাইয়া রক্তের ব্যাগ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো, কিন্তু সৌরভ ঠেকিয়ে দেয়।
- না।
- না কেনো?
- এই রক্ত নওরিনের গায়ে দেওয়া যাবে না।
- তা কেনো?
- নওরিনের আসলে কি হয়েছে তা আমরা জানি না। ভুল ভাল রক্ত নওরিনের গায়ে দেওয়া যাবে না।
- আরে O positive রক্ত সবাইকে দেওয়া যায়।
- তবুও এখন কেউ নেই ঘরে তাই দেওয়া যাবে না।
বিপ্লব ভাইয়া আমার দিকে রাগের দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর দ্রুত পায়ে চলে গেলো।
- নওরিন, তুমি ঠিক আছো?
- আছি।
- বিপ্লব ভাইয়া তো নীলের ভাই। আমার ভালোই চাইবে। রক্তটা দিতে দিলে না কেনো?
- বিপ্লব এখন প্রভার সাথে আছে।
- তো?
- নীল তোমাকে প্রভার ব্যপারে কিছু জানায় নি?
- জানিয়েছে।
- তাহলে আর প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো না। এখন বিশ্রাম করো।
.
পরিচ্ছেদ  - ০৯
সত্যিই খুব ক্লান্ত লাগছিলো। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম। এদিকে যখন চোখ খুললাম নিজেকে অন্য জায়গায় পেলাম।
- আমি কোথায়?
- তুমি আমার কাছে নওরিন।
- প্রভা!!!
- হ্যা, আমি।
- আজ তাহলে আমার রক্ত খাওয়ার প্ল্যান তোমার।
- না,প্ল্যান তো তা ছিলো না। কিন্তু তোমার রক্তের গন্ধ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।
- প্ল্যান ছিলো না মানে?
- আমাদের বস শুধু তোমাকে তুলে আনতে বলেছিলো। কিন্তু আমি কারো কথা শুনি না। নিজের মতো করে চলি।
- তোমার বস?
- হ্যা, আমার বস।
- আমাকে তার কি দরকার? আমি একটা সাধারণ মানুষ।
- তুমি কোনো সাধারণ মানুষ না।
- না, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে....
- এসব বলে লাভ নেই খুকি। তুমি এখন আমার রক্তের পিপাসা মিটাবা।
- প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দাও।
- প্লিজ!!!! তুমি ভ্যাম্পায়ার আর ভ্যাম্পায়ার শিকারিকে নিজের আঙ্গুলে করে ঘোরাও আর আমাকে প্লিজ বলছ!!! শুনে ভালোই লাগলো।
- তুমিই কি প্রতিদিন আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট মারছ?
- অবশ্যই। একজন ভ্যাম্পায়ার মানুষের রক্ত ছাড়া শক্তিশালী হতে পারে না। তাছাড়া আমাদের বসের প্রতিদিন শক্তির প্রয়োজন জোয়ান থাকার জন্য।
- আর বিপ্লব ভাইয়া তো তোমাকে ভালোবাসে।
- হা....ভালোবাসা কি জানেমন। আমি তো জানি না।
- বিপ্লব ভাইয়া তোমার জন্য নীলকে চড় মেরেছে।
- মারুক। নীলের ভেতরে যা আছে তা বিপ্লবের ভেতর নেই। ইশ, তবে নীলকে আমি পটাতে পারব না। না জানি তোমার মতো শুকনো বডির মেয়ে নীলকে কীভাবে পটালে।
-.....
- গল্প অনেক হলো। নিজের শিকারের সাথে বেশি ভাব বাড়াতে নেই। পরে খেতে মায়া লাগবে।
প্রভা আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে লাগলো। ওর ছোটের মণি একদম লাল হয়েগেছে.....
.
প্রভা আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে লাগলো। ওর চোখের মণি একদম লাল হয়ে গেছে.....
আমার কাছে ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিক ছিলো। কিন্তু প্রভার কথা শুনে আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। এদিকে প্রভা আমার কাছে চলে এসেছে। অনুতাপ আমার হাত পা বেধে দিয়েছে।
- ১ মিনিট প্রভা।
কন্ঠটা নীলের ছিলো। নীল আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েছিল। প্রভা নীলের দিকে তাকিয়ে হাসলো যেন তার কোন ভয় নেই।
- ও নীল। তুমি এসেছ ভালোই হয়েছে। এখন তোমার সামনে।আমি তোমার প্রিয়তমার রক্ত খাবো। তার শরীরে এক বিন্দু রক্তও থাকবে না।
- তাই! আর তোমার কি মনে হয় যে আমি দাঁড়িয়ে এসব দেখব।
- একদম না। তোমার পেছনে তাকিয়ে দেখো।
নীলের পেছনে ৪/৫ টা মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ার চলে আসলো।
- আমি জানি তো নীল তোমাকে ঠেকানো মুশকিল। তবে যতক্ষণ এ এই ভ্যাম্পায়ারগুলো মারবা আমার রক্ত খাওয়া শেষ হয়ে যাবে।
- হুম, বুঝলাম। তবে আমি এখানে একা আসি নি।
এইবার মানুষ খেকো ভ্যাম্পায়ারের পেছনে অভি, সৌরভ, মারিয়া, লাবনি দাঁড়িয়েছিল।
- তোমরা এখানে!!!
- নওরিনকে আজ এখান থেকে আমি বাঁচিয়ে নিয়ে যাবো আর তোমাকে শেষ করে দিয়ে যাবো।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। প্রতিটা ভ্যাম্পায়ারের কাছে আলাদা শক্তি থাকে। প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তি। ঝড় সৃষ্টি করতে পারে, পানি টেনে আনতে পারে, আগুন ধরাতে পারে বা বরব জমাতে পারে। শারিরীক ভাবেই অনেক শক্তিশালী হয়। মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ার গুলো খুব সহজেই কাবু হয়ে গেলো। কিন্তু প্রভাকে কাবু করা সহজ ছিলো না। প্রভার সাথে প্রথমে মারিয়া আর লাবনি লড়াই করছিলো। প্রভার তো অভ্যাস আছে এসব করার। লাবনি আর মারিয়ার ছিলো না। তারা খুব খরাপভাবে আহত হয়ে পড়ল। নীল দেখতে পেয়ে নিজের রিভলভারটা প্রভার দিকে তাক করল। প্রভার চোখে এবার আমি ভয় দেখতে পেলাম। গুলি চলল। কিন্তু সেটা প্রভার গায়ে লাগলো না। প্রভার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিপ্লব ভাইয়া। গুলিটা তার গায়ে লেগে গেলো। নিজে হাতে ভাইকে গুলি করার ঘটনা নীল পাথর হয়ে গেলো। তার হাত থেকে রিভলভারটা পড়ে গেল। নীল ছুটে গিয়ে তার ভাইকে ধরল। আমার চোখ দিয়ে পুরটা ঘটনা চলাকালীন পানি পড়ছিলো। কাপা হাতে আমি রিভলভারটা তুলে নিলাম। সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি প্রভার দিকে তাক করে চোখ বন্ধ করে গুলি চালিয়ে দিলাম। গুলিটা প্রভার গায়ে লাগলো যদিও আমার চোখ বন্ধ ছিলো।
.
আমি আর বাকি সবাই আব্বুর অফিসে গেলাম প্রথমেই। আমাকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছে আব্বু।
- মা, তুমি ঠিক আছো?
আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল।
- হ্যা।
- আমি বুঝতে পারি নি যে কেউ ভ্যাম্পায়ার হোস্টেল থেকে তুলে নিয়ে যাবে।
- হুম।
- আমি জানি তুমি অনেক শক পেয়েছ। বিশ্রাম নাও মা।
- ঠিক আছে।
.
প্রভা যেই কথাগুলো বলল, আমার কানে বাজচ্ছিলো। আমার জন্য এসব কিছু হয়েছে। তাদের বস তো আমাকে চাই। তাই সে এতো গুলো মানুষকে এতো দিন মেরে আসছে। সব আমার জন্য হয়েছে। এতো চিন্তার মধ্যেও আমার মনে পড়ে গেলো কাল আমার জন্মদিন। কালকেই যদি মরে যায় ভালো হবে। সুইসাইড করব কালকে আমি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বিপ্লব ভাইকে গুলি মেরেছে নীল। মারিয়া আর লাবনি এতো আহত হয়েছে। আমার মরে যাওয়ায় ভালো।
.
হোস্টেলের রুমে আমি যায় নি। আব্বুর কোয়াটারে ছিলাম। সকালে উঠেই আব্বু আর আমার ভালো ভ্যাম্পায়ারগুলো আমাকে শুভেচ্ছা জানালো।
- আমি একদম খুশি না।
- কেনো আব্বু?
- ১৮ বছর হয়ে গেছে। তুমি বড় হয়ে যাচ্ছ আর ককবে বিয়ে করে আআমাকে ছেড়ে চলে যাবা।
- আব্বু!!!
আব্বু জানে না যে আমি বিয়ের আগেই ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এমন জায়গায় যাবো যেখান থেকে কেউ আর ফেরত আসে না।
- আরে প্রিন্সিপাল এমন কাদে না।
অভি বলল।
- তুমি চুপ করো।
আব্বু টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল।
.
এদিকে নীল আর খালিদ আমাকে শুভেচ্ছা জানায় নি তাই আমি নিজে গিয়ে ওদের সাথে দেখা করব ঠিক করলাম। কারণ আজ তো আমার জীবনের শেষ দিন।
.
বিপ্লব ভাইয়া গুলি খেয়েছিল। এখন বেডে ব্যান্ডেজ। নীল সেই ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো। আমি নীলের কাছে গেলাম। তার ঘাড়ে হাত দিলাম। নীলের চোখ আমার দিকে পড়ল। এতক্ষণ খেয়াল করে নি যে আমি এসেছি।
- নওরিন।
নীল আমাকে জড়িয়ে ধরল। তার চোখের পানি আমার ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। আমি না থাকলে না জানি নীল কার ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদবে। তমা কি....
- সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীল আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
- নীল, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার কথা সব সময় সত্যি হয়।
আমার কথা শেষ হতেই ওদিকের বিছানায় বিপ্লব ভাইয়ার জ্ঞান ফিরে আসলো। আমি আর নীল তার পাশে গেলাম।
.
আমার দিকে তাকিয়ে বিপ্লব ভাইয়া বলল,
- নওরিন, আমাকে মাফ করে দিও। আমি খুব বোকা। আমার জন্য প্রভা এমন সুযোগ পেয়েছে।
- এসব কথা এখন থাক না।
- আর নীল তুমিও গিলটি ফিল করা বন্ধ করে দাও। আমি ঠিক আছি।
.
আমি জানি নীলের এতো সহজে গিলটি ফিলটা যাবে না। নীল আমাকে আমার রুমে পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য আমার সাথে হাটলো। সুযোগ পেয়ে আমি নীলকে বললাম,
- আমার আজ জন্মদিন।
নীলের মুখে হাসি ফুটলো না। কিন্তু বুঝলাম ও একটু খুশি হয়েছে।
- জন্মদিনে আমাকে কি দিবা?
- হুম, চকলেট কেক, চিপস, মাংস....
- আমি খাবার নেবো না।
- আরে নেও। প্রভাকে মেরে ভ্যাম্পায়ার শিকার এজেন্সি থেকে অনেক টাকা পেয়েছি।
- বললাম তো। আমি খাবার নেবো না।
- তাহলে কি নিবা?
- আমি চাই আমার জন্মদিনে তুমি নিজেকে মাফ করে দেও। তুমি কোন খারাপ কাজ করো নি। পরিস্থিতি অমন ছিলো। প্লিজ নীল।
নীল আমার গালে হাত রেখে বলল,
- ঠিক আছে। Happy birthday.
.
নীলের পরে আমার জীবনের স্পেশাল মানুষটার সাথে দেখা ককরার কথা। ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে গিয়ে আমি লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। খালিদকে বই পড়তে দেখে আমার খালিদের বইয়ের ভেতর নিজের ছবি পাওয়ার ককথা মনে পড়ে গগেলো। বুকের ভেতর ধুকধুক করছে হাই স্পীডে। মমনে হচ্ছে না যে আমি শেষ বারের মতো খালিদের সাথে দেখা করতে এসেছি, মনে হচ্ছে যেনো তাকে I love you বলতে এসেছি। অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকতে দেখে খালিদ নিজে আমআমাকে প্রশ্ন করল।
- কিছু বলবা?
- না......মানে.....আসলে.....
খালিদ বইটা বন্ধ করে দিয়ে আমার কাছে চলে আসলো। একদম আমার মুখের কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
- হিমা, তুমি কি রাগ করেছ আমি তোমাকে ববাঁচাতে যায় নি বলে?
- না....
- তুমিই আমাকে তোমার ব্যপারে নাক গলাতে নিষেধ করেছিলে। Happy birthday হিমা।
- তোমার মনে আছে?
- হুম, আমার কাছে কি চাও বলো? আমি সব কিছু দিতে রাজি আছি তোমার জন্য।
- আমি....
- যা চাও একবার বলে দেখো।
- আমি চাই তুমি আমাকে সব সত্যি কথা বলো।
- মানে?
- প্রভার বস কে? কেনো আমার মতো সাধারণ মানুষের পিছে পড়ে আছে। আবার আমি নাকি সাধারণ মানুষ না। আমি কে?
খালিদ চুপ হয়ে গেলো।
- কি হলো বলো? নিজের জন্মদিনে আমি সব সত্যি কথা জানতে চাই।
.
পরিচ্ছেদ  - ১০
মরার আগে সব কিছু জেনে মরতে চাই আমি। এটা অবশ্য খালিদকে বলা যাবে না।
- ঠিক আছে।
- কি ঠিক আছে?
- আমি তোমাকে সব বলব।
- সত্যি!!!
- আমার একটা শর্ত আছে।
- কি শর্ত?
আমার হাতটা খালিদ নিজের হাতের ভেতর নিলো আর হাতের উপর চুমু খেয়ে বলল,
- আমার জীবনসঙ্গী হও হিমা।
.
আমার উত্তর দেওয়ার আগেই পেছন থেকে ঘুষির শব্দ এলো। যেনো কেউ দরজায় ঘুষি মেরেছে। আমার আর খালিদের নজর পেছনে চলে গেলো। খালিদের প্রশ্নে নীল দরজায় ঘুষি মেরেছে। খালিদের সব কথায় হয়ত সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শুনেছে।
- হিমা, এখনি বলো। তুমি কি চাও? আমার সাথে সারাটা জীবন থাকবা?
আমার মাথা নিচু হয়ে গেলো। আমার গাল লাল হয়ে গেছে আর বুকের ভেতর ধুকধুক করছে। ঠিক করেছিলাম আজ সুইসাইড করব। কিন্তু খালিদের প্রশ্নে আমি দিশেহারা হয়ে যায়। আমার হাতটা তখনো খালিদের হাতের ভেতর ছিলো। আমি নিজে ওই হাতটা শক্ত করে খালিদের হাতের ভেতর ধরলাম।
- হ্যা। আমি তোমার জীবনসঙ্গী হবো।
রাতে খারাপ স্বপ্ন দেখছি। সবাই মারা যাচ্ছে। চারিদিকে রক্তের ছড়াছড়ি। প্রভা নিয়ে ঘটনা ঘটার পর থেকে আব্বুর কোয়াটারে থাকি। কিন্তু ঘুম আমার হয় না।
.
খালিদের প্রপোজ করার পর আমি খালিদের সাথে কলেজে হাটি। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। খালিদ আমাকে সবার সামনে প্রপোজ করতে চেয়েছিলো। সব তার ইচ্ছা তে চলছে।
- হিমা, আজ আমাদের প্রথম ডেট। কোথায় যেতে চাও তুমি?
- এখান থেকে দূরে। শহরের ভেতর।
- ঠিক আছে।
.
খালিদ আমাকে পার্কে নিয়ে গেলো। নিরিবিলি জায়গা দেখে আমি বেঞ্চে বসলাম। আমার পাশে খালিদ বসল। খালিদের দিকে আমি মাথা উচু করে তাকাতে পারছিলাম না। পুরোটা সময় মাথা নিচু ছিলো।
- হিমা?
-.....
খালিদ আমার হাত ধরল। আমার গাল লাল হয়েছে। জানি না এমন কেন লাগছে। মরার প্ল্যান ভেস্তে গেছে। এখানে যেনো আমি অভিনয় করে বসে আছি।
- হিমা?
- হুম।
- কি হয়েছে? তুমি আমার সাথে খুশি না?
- না, আমি খুশি না।
-.....
-কেনো জানো? কারণ শর্ত দিয়ে আমাকে এখানে এনেছ তুমি।
- হুম। তাহলে এখন?
- আমাকে সত্যিটা বলো। এখন তো আমি তোমার লাভার।
- হিমা, তুমি সত্যিটা মেনে নিতে পারবা না। আসল সময় হলে তোমাকে বলব।
- আসল সময় আর কবে হবে? প্লিজ, হিমা কেনো? হিমা বলে ডাকো কেনো?
খালিদ আমার হাত ছেড়ে দিলো।
- চলো, বাসায় ফিরে যায়।
.
খালিদ আমাকে কোন উত্তর দেয় না। এদিকে আমি আর খালিদ যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা খেলছি ওদিকে নীল নিজের সমস্যায় ভুগছে। নীলের ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ। সৌরভ বিপ্লব ভাইয়ের খুব খেয়াল রাখছে। তবুও....
-সৌরভ, আমি জানি আমি আর বাচব না।
- না, ভাইয়া এভাবে বলো না।
- নীল কোথায়?
- ভ্যাম্পায়ার শিকারে গিয়েছে। ওর ডিউটি পড়েছে।
- ভালো, ও খুব ভালো ভ্যাম্পায়ার শিকারি। আমাদের আব্বু আম্মুর গর্ব। সব সময় আমাকে নীলের মতো হতে বলা হতো। কিন্তু আমি তার বড় ভাই।
- হুম, শুনছি।
- কতটা অপমানের তুমি জানো?
- জানি।
- হুম, সেই জন্য আমি প্রভার দলে যোগ দি। জানি ও খারাপ। মিথ্যা ভালোবাসায় আমাকে টেনে নিয়েছে অন্ধকারে।
- জানি তো আমি। আমি পাশেই আছি।
- নীলের অস্তিত্ব যেনো আমার জীবনের একটা বড় বোঝা।
- চুপ, শরীর খারাপ করবে। আর কিছু বলো না।
-.......
পেছন থেকে নীল সব শুনছিলো। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য খালিদের কাছে ছুটে গেলো।
.
খালিদের দিকে রিভলভার তাক করল।
- আমি মরব তবে তোমাকে মেরে যাবো।
- হুম, আমি পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার আমাকে মারা সহজ না। তুমি নিজে একটা ভ্যাম্পায়ার। আমাকে সম্মান করা উচিত তোমার।
- নিজের জীবনে কতজন নিষ্পাপ কে মেরেছ কে জানে!!! নওরিনকে ভ্যাম্পায়ার বানাবা আর ব্রাইড বানাবা তাই তো? আমি তা হতে দেবো না। নওরিন কখনো তোমার আর আমার মতো পশু হবে না।
- সময় আসলেই দেখা যাবে।
তখনি ঘরে আরেকটা খারাপ খবর চলে আসলো। সৌরভ ঘরে এসে খালিদ আর নীলের লড়াই তো থামিয়েছে কিন্তু....
- বিপ্লব ভাইয়ার অবস্থা খুব খারাপ। নীল একবার এসো।
.
নীল আর খালিদ দুজনেই ছুটে গেলো বিপ্লব ভাইয়ার কাছে।
- নীল, আমার কাছে আসো।
- জি, ভাইয়া। বলো?
- আমার রক্ত খাও।
- কি?
পাশ থেকে খালিদ বলল,
- নীল, তোমার ভাই ঠিক বলেছে। তোমার ভাইকে বাচানোর আর উপায় নেয়। তোমাকে রক্ত খেতেই হবে।
- আমার ভাই এভাবে বাচবে কিভাবে?
- আমি তোমার মধ্যে বাচব নীল। আমার সব রক্ত খেয়ে নিজের মধ্যে নিয়ে নাও। এরপর যখনি তুমি কোন ভ্যাম্পায়ার সফলভাবে মারবা আমি মনে করব আমি সফল হয়েছি।
- ভাইয়া!!!
- নীল, আমি যা বলছি তাই করো। আমার হাতে সময় নেই।
খালিদ নীলের ঘাড়ে হাত দিলো।
- হুম, আমি আছি। রক্ত খাও।
নীলের চোখে পানি ছলছল করছে। তার ভাইয়ের শেষ ইচ্ছা এইটাই। নীল নিজের ভাইকে বুকে টেনে নিলো। তারপর তার ভাইয়ের ঘাড়ে কামড় দিলো।
.
আপনারা মনে করবেন, এ আবার নতুন কি, নীল তো আমার রক্ত প্রায় খেত। কিন্তু এখন সে রক্ত খেলো নিজের ভাইয়ের প্রাণ নেওয়ার জন্য যা মানুষ খেকো ভ্যাম্পায়ার করে। খুব সহজ ছিলো না ব্যপারটা।
.
যাওয়ার আগে বিপ্লব ভাইয়া নীলকে শক্তি দিয়ে গেলো। নীল রাত টা তার ভাইয়ের পাশেই কাটিয়ে দিলো।
.
সৌরভ ভালোভাবেই জানত খালিদের আসল উদ্দেশ্য কি।
- তুমি নীলকে কেনো এমন করছ?
- কেমন করছি?
- তাকে ইউজ করছ মাত্র।
- হিমাকে বাচানোর জন্য আমি সব করতে পারি।
- তা আমিও পারি। হিমা, সাধারণ মেয়ে তার এসবে কি কাজ?
- হাসালে। হিমা সাধারণ মেয়ে না।
- মানে?
- হুম। সামনে হিমার খুব বিপদ আর আমি বা তোমরা মিলে ওকে বাঁচাতে পারব না। নীল একটা অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে আমার জন্য।
- পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার আর আমার বন্ধু হওয়ার জন্য আমি তোমার সেবা করব, তোমার হয়ে লড়াই করব। যত দিন এই প্রাণ আছে।
- হুম,
- কিন্তু তোমার উপর আমি নজরও রাখব।
- তাই?
- তুমি চাইলে বিপ্লব ভাইয়াকে বাঁচাতে পারতে।
-......
- সেই দিন হিমাকে বাচানোর জন্য যদি তুমি আমাদের সাথে যেতে এসব কিছুই হতো না।
- চুপ। আমাকে প্রশ্ন করবা না। আমি যা করি ভেবে চিনতে করি।
.
সবাই নিজের নিজের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। আমিও নিজের অসুস্থতা নিয়ে ব্যস্ত। আমার অসুস্থতা যেন ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। খালিদ আমাকে ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলে ডেকে পাঠালো। আমি অভির সাথে করে ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলে গেলাম। বাকিরা আমাকে আর খালিদকে একা ছেড়ে দিলো। আমার চারিদিকটা ঘুরতে লাগলো। আম সোফার উপর শুয়ে পড়লাম। খালিদ আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলো।
- হিমা, আমি তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানাবো? আমার ভ্যাম্পায়ার ব্রাইড হবা।
যেইটা আমি ছোট বেলার থেকে চেয়েছি তা আমি আজ পেয়েছি। খুশিতে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। খালিদের নজর আমার গলার উপর পড়লো। তার চোখ লাল হয়ে গেলো। খালিদের ও রক্তের পিপাসা লেগেছে।
- হ্যা, আমাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দাও।
খালিদ আমার গলার কাছে মুখ নিয়ে আসলো। পাশে সোফায় নিজের হাত মুট করে ফেলল পিপাসা ঠেকাতে। আমার গলায় চুমু দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো।
- হিমা, তোমাকে আমার প্রেমিকা হওয়ার নাটক করা লাগবে না।
খালিদ আমাকে একা ফেলে চলে গেলো। আমিও অভির সাথে নিজের ঘরে ফিরে গেলাম। অভি আমাকে বিপ্লব ভাইয়ার মৃতুর খবরটা দিলো। আমি তখনি নীলের কাছে যেতে যাব এমন সময় নীল আমার ঘরে ঢুকলো। অভি আমাকে আর নীলকে একা ছেড়ে দিলো।
.
আমি নীলের হাত স্পর্শ করতেই আমার শরীর আরো খারাপ লাগতে লাগলো। নীলের সারা গায়ে রক্ত মাখা দেখলাম। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি চারিদিকে রক্ত। আমি নীলের হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে উঠে বসি ভয়ে ভয়ে।
- আমার কাছে আসবা না বলে দিলাম।
- নওরিন!!! আমি...
নীল আমার কাছে আসতেই আমি ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিকটা বের করে তার উপর হামলা করে দিলাম। নীল নিচে পড়ে গেলো আর আমি ওর উপর উঠে বসলাম। নীল আমার হাত থেকে স্টিকটা নিয়ে তার রিভলভারটা ধরিয়ে দিলো।
.
আমার সেন্স ফিরে আসতেই আমি ছুটে বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে। নীলকে একটু আগে মারতে গিয়েছিলাম। আমি হয়ত পাগল হয়ে যাচ্ছি। নীল আমার পেছন পেছন ছুটল।
আমি আব্বুর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়লাম। চারিদিকে এখনো আমার চোখের সামনে রক্ত ভাসিছিলো।
.
বাইরে খুব ঝড় আর বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সবার জীবনেও ঝড় আর বৃষ্টি। আমি হাটুগুলো নিজের মুখের কাছে এনে মুখ গুছে কাঁদতে লাগলাম। আমার কানে জানালার কাচ ভাঙ্গার শব্দ হলো। আমি মাথা উচু করে তাকিয়ে খালিদকে দেখতে পেলাম। আমি ছুটে গিয়ে কিছু চিন্তাভাবনা না করেই ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
.
পরিচ্ছেদ  - ১১
খালিদ আমার মাথায় হাত রাখল আর আমি সব কিছু ভুলে গেলাম। আমাকে কোলে করে আব্বুর অফিসে নিয়ে গেলো। আমার মাথা ঘুরছিলো।
- কি হয়েছে?
- ওর শরীর খারাপ লাগছে।
- আমার মনে হয় আসল সময় হয়ে গেছে নওরিনের জাগার।
আব্বুর কথায় আমি খালিদের জামার কলার চেপে ধরলাম,
- কি...হয়েছে আমার....
খালিদ আমাকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। আমাকে নিচে শুয়িয়ে দিলো আর আমার মাথাটা নিজের বাহুতে নিলো। আমার চোখ বন্ধ ছিলো। আমার গলায় খালিদ মুখ লাগিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর আমার গলায় একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব হলো যেনো কেউ ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। আমি ব্যাথায় খালিদের জামা চেপে ধরলাম। ছটফট করে পা ছুড়ছিলাম।
- খালিদ, আমার গলায় কি দিয়েছ....প্লিজ.....খুব ব্যাথা।
আমার চেঁচানোতে খালিদ আমার মুখ চেপে ধরল। খালিদের দাত আমার গলায়, এক হাত আমার মুখে আর এক হাত দিয়ে আমাকে ধরে আছে। আমার শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলো। খালিদের জামা ছেড়ে দিলাম। কিছুক্ষণ এর জন্য অজ্ঞান হয়ে গেলাম। খালিদ আমার গলার থেকে নিজের দাঁত সরিয়ে নিলো। তারপর নিজের হাতে কামড় দিয়ে রক্ত টেনে নিলো। আমার ঠোট ফাক করে দিয়ে নিজের মুখ লাগিয়ে দিলো। আমি চোখ খুললাম। আমার জ্ঞান ফিরে আসতেই আমি বুঝলাম আমার মুখে খালিদের রক্ত। আমি চোখ দুইটা আবার বন্ধ করে খালিদের মুখ থেকে তার রক্ত খেতে লাগলাম।
.
সব রক্ত আমার মুখে খাওয়ানোর পর খালিদ আমাকে ছেড়ে দিলো।
- হিমা, তোমার মনে পড়েছে আমি কে?
আমার চোখ পানিতে ভরে আসলো। আমি খালিদের গালে হাত দিলাম। পেছন থেকে গুলির আওয়াজ আসলো। আমি আর খালিদ পেছনে তাকালাম। নীল রিভলভার তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে আগুন। এতো রাগ করতে তাকে আমি কখনো দেখি নি তাকে।
- খালিদ, তোমার সাহস কি করে হলো নওরিনকে ভ্যাম্পায়ার বানাতে।
আমি খালিদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ালাম।
- নীল তুমি খালিদকে ভুল বুঝচ্ছ। তুমি খালিদকে মারতে পারো না। খালিদ আমার বাগদত্তা।
.
রাতের ওই ঘটনার পর আমার ৭ দিন পর ঘুম ভাঙ্গলল। চোখ খুলে দেখি খালিদ আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে। খালিদের গলার দিকে নজর পড়তেই আমি তার শিরা অনুভব করলাম। রক্তের পিপাসা লেগে গেলো। আমি উঠে বসে খালিদের সাদা শার্ট চেপে ধরলাম।
- খালিদ....আমি.....
- আমি জানি হিমা। তোমার লজ্জা পাওয়ার কোন দরকার নেই। আমি জানি তুমি কি চাও।
খালিদের বলার সাথে সাথে আমি ওকে ধরে বিছানায় ফেলে দিলাম। আমার চুলগুলো ৭ দিনের তুলনায় অনেক বড় হয়ে গেছে। চুলগুলো খালিদের গায়ে ছড়িয়ে পড়ল। আমি খালিদের ওপর উঠে বসে ওর ঘাড়ে জিহবা দিয়ে টেনে নিলাম। ওকে শক্ত করে ধরে ওর ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিলাম। খালিদ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
.
আমার রক্তের পিপাসা মিটে গেলে আমি উঠে বসলাম। খালিদও উঠে বসল।
- তোমার সব মনে পড়েছে হিমা?
- হ্যা।
- কি কি মনে পড়েছে?
- আমি পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার। আব্বু আম্মুও পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার ছিলো। হিমা নাম আমাকে আম্মু দিয়েছিলো।
- হিমা মানে কি জানো?
- কি?
- রক্ত।
- আমাকে আমাদের বংশের এক পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার মারতে চেয়েছিলো। আমার রক্ত খেয়ে সে আরও শক্তি শালী হতে চেয়েছিলো। আমাকে বাচানোর জন্য আম্মু আমাকে মানুষ বানিয়ে দিয়েছে।
-.....
- আমার মতো মেয়েকে বাচানোর জন্য....
আমি সহ্য করতে না পেরে নিজেকে জড়িয়ে ধরলাম। আশে পাশে আরো জোরে ঝড় হতে লাগলো। হয়ত এটা আমার পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার হওয়ার পাওয়ার।
.
খালিদ আমাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরল।
- চুপ, একদম চুপ। তোমার আব্বু আম্মু তোমাকে ভালোবাসত। তাদের ভালোবাসাকে তুচ্ছ করবা না কখনো।
- আর আমাকে এতদিন আমার আব্বুর বন্ধু মানুষ করেছে। আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা দিয়েছে।
- আর আমি কে?
- তুমি আমার সব।
- হিমা!!
খালিদ আমার ঠোঁটে লাগা তার রক্ত হাতে নিয়ে চেটে খেলো।
- I love you হিমা। I miss you.
আমি নতুন ভ্যাম্পায়ার না। আমি মুলত জন্মগত পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার ছিলাম।
.
পরিচ্ছেদ  - ১২
খালিদ আমাকে বিশ্রাম করার জন্য ঘরে রেখে গেলো। খালিদ চলে গেলে আমি খালি পায়ে রুম থেকে বের হয়ে নীলের রুমে চলে গেলাম। দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই নীল আমাকে বলল,
- রক্তচোষা দানব এই ঘরে ঢুকলে আমি তাকে এই রিভলভার দিয়ে গুলি করে দেবো।
আমি নীলের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
- একজন ভ্যাম্পায়ারের আমার জীবনে কোন জায়গা নেই।
- হ্যা, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি এখন ভ্যাম্পায়ার। আমার মানুষরুপটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
.
আমি ভেবেছিলাম নীল হয়ত আমাকে বুঝবে। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার শিকারি একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারকে কেনোই বা বুঝবে।
.
আমি ঘর থেকে পালিয়েছিলাম চুপিচুপি নীলের সাথে দেখা করতে। খালিদ টের পেয়ে যায় আর এবার পাহারা দেওয়ার জন্য অভিকে রেখে যায়।
.
- অভি আমি দেখতে কেমন হয়েছি?
- মানে, ভ্যাম্পায়ার যেমন সুগঠিত সুন্দর হয়...
- নওরিন, তুমি দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছ। এই লম্বা চুলে তোমাকে দেখে তো আমি প্রেমে পড়ে গেছি।
- তাহলে নীল আমাকে আজ এতো ঘৃনা করে কেনো?
-......
অভির কাছে আমার প্রশ্নের কোন উত্তর ছিলো না।
.
ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলের ঘরে আমার দিন কাটে। মারিয়া আমার রুমে খোজ নিতে আসে।
- কেমন আছো হিমা?
- হিমা শুধু খালিদ আমাকে ডাকে।
- হাহাহা....ঠিক আছে নওরিন। আমার ওপর রাগ করে আছো?
- কেনো?
- খালিদকে রক্ত দিয়েছি বলে।
- না।
- হুম, আমাকে হিংসে করে কি লাভ খালিদ তো শুধু তোমার ভালোবাসার উপসনা করে গেছে।
- ও কোথায়?
- হুম, তুমি কিছু জানো না?
- কি জানি না?
- কলেজে ভ্যাম্পায়ার আর্মি হামলা করবে। আর তোমাকে পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারটা নিয়ে যেতে চাই। বা বলা ভুল হচ্ছে, তোমার রক্ত চায়। তোমাকে বাচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
-......
.
আমাকে বাচানোর জন্য এসব। আর আমি একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার হয়েও কাউকে প্রটেক্ট করতে পারব না?
আমার নিজের ভেতর খুব খারাপ লাগতে লাগলো।
.
হয়ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিলো। অভি চিন্তিত মনে আমার রুমে আসে।
- কি হয়েছে অভি?
- বাইরে খুব খারাপ অবস্থা।
- আমি বাইরে যাবো।
- না। খালিদ জানতে পারলে আমাকে খুন করে ফেলবে।
- আমাকে নিয়ে না গেলে আমি নিজে খুন হয়ে যাবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
অভি আমাকে বাইরে নিয়ে গেলো। সব স্টুডেন্টরা ছোটাছুটি করছিলো। তাদেরকে আর এই কলেজে রাখা যাবে না। ভ্যাম্পায়ার আর্মি এদের শেষ করে দেবে। ভিড়ের ভেতর আমি অনেক কষ্টে তমাকে খুঁজে পেলাম। ওকে অনেক দিন দেখি নি।
তমার দিকে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছিলাম না। একদিন ওই বলেছিলো যে সে ভ্যাম্পায়ার ঘৃনা করে।
- তমা আমার আজ এই অবস্থা....তুই কি আমাকে ঘৃনা করিস?
- না, একদম না। যদিও তুই ভ্যাম্পায়ার তবুও তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর ভেতরটা পালটায় নি। নিজের বিপদ জেনেও আমাদের বাঁচাতে ছুটে এসেছিস....
আমি তমাকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরলাম।
.
আব্বু স্টুডেন্টদের যাওয়ার ব্যবস্থা করছিলো। কিন্তু মেন গেটের সামনে ভ্যাম্পায়ারের দল দাঁড়িয়েছিল। আব্বু আর ভ্যাম্পায়ার শিকারি টিচার রানা মিলে ওই ভ্যাম্পায়ারগুলোকে শেষ করে দিতে লাগলো।
- আব্বু তুমি....
আমার জবাব টিচার রানা দিলো,
- খুকি তুমি হয়ত জানো না যে তোমার আব্বুও আগে একজন ভ্যাম্পায়ার শিকারি ছিলো। তাই এতো দক্ষ।
যেই আব্বু রাগ করা জানত না সেই আব্বু ভ্যাম্পায়ার মারতে জানে। এই স্টুডেন্টদের বাঁচাতে সে আবার অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
- আব্বু, Thank you.
- কেনো, মা?
- আমার আসল আব্বু না হয়েও আমাকে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।
আব্বু আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিলো।
.
এতো ভিড়ে নীলকে কোথাও দেখলাম না। ছাদে কিছু স্টুডেন্ট আটকা পড়েছিলো। তাদের বের করে আনতে আমিও ছাদে যায়। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার আমাকে আর বাকি স্টুডেন্টদের আটকে নেয়। তখন সেই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের সাথে আমার দেখা হলো।
- হিমা, কেমন আছো তুমি? সেই ছোটবেলায় তোমাকে দেখেছি। কত বড় হয়ে গেছ আর নিজের আম্মুর মতো হয়েছ।
- আমাকে হিমা শুধু খালিদ বলে ডাকে।
- কে? খালিদ? সেই অনাথটা যাকে তোমার আব্বু আম্মু তুলে এনে মানুষ করে?
-........
- হুম, তোমাকে বাচানোর জন্য তাকে তোমার আব্বু নিজের সব শক্তি দিয়ে পিয়র ব্লাড বানিয়েছিলো। সে এখন কোথায়?
-.........
- মানুষ থেকে ভ্যাম্পায়ার হয়েছ আর আমি আসব না দেখা করতে? তাই হয় বলো?
- আমি শুধু ভ্যাম্পায়ার না।
- কি?
- আমি ভ্যাম্পায়ার শিকারিও।
আমি নিজের স্কর্টের পকেট থেকে ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিক টা বের করি। আমার সারা গায়ে কারেন্ট লাগার মতো অনুভুতি হতে লাগলো। আমি জোরে জোরে চিৎকার দিলাম।
- হাহাহা... ওটা খেলনা না সোনা। ছেড়ে দাও। কোন ভ্যাম্পায়ার এসব অস্ত্র ছুতে পারে না।
আমার কাছে এসে আমার গলা টিপে ধরল।
- ডাকো এবার খালিদকে। কে তোমায় বাচায় দেখি।
- আ...মি...নিজে....কে...বাচা...তেপারি।
আমি নিজের সব শক্তি দিয়ে স্টিক ধরে হামলা করলাম।
.
সফলভাবে তার হাত ছেড়ে দিলো। আমি এখন অ্যান্টি ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়েছি। এখন আমার স্টিক ধরতে কোন কষ্ট হচ্ছিলো না।
- চেষ্টাটা ভালো তবে কি জানো আমি এখন খুব শক্তিশালী। তোমারই সহপাঠীদের রক্ত খেয়ে।
আমাকে ধরে আমার ঘাড়ে কামড় বসানোর চেষ্টা করল। আমি খুব ছোটাছুটির চেষ্টা করছিলাম।
- ওকে ছেড়ে দাও।
- নীল......
- আমি বললাম ওকে ছেড়ে দাও।
- তুমি আবার কে?
- আমি নওরিনের রক্ষক। ওকে ছেড়ে দাও বলছি।
নীকের হাতে ভ্যাম্পায়ার মারার বন্দুক ছিলো।
- এই সামান্য গুলি আমার কোন ক্ষতি করবে না। হুম, মনে পড়েছে তুমি সেই ছেলে না যার বাবা মাকে আমি মেরে দিয়েছিলাম।
- কি? নীলের বাবা মাকে তুমি মেরেছ।
- এখন তোমাদের সবার পালা।
এই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারকে কোন ভাবে দমন বা ভয় দেখানো যাচ্ছিলো না। নীল গুলি চালালো বহু বার। কিন্তু তাতে শুধু লোকটা আমাকে ছেড়ে দিলো, নিজে মরল না।
- গুলি কি শেষ খোকা?
আমি আর নীল নিরুপায়ের মতো দাঁড়িয়েছিলাম।
- এখন তবে আর কিছু করার নেই। ধীরে ধীরে আমি সব কয়টা মানুষকে শেষ করে দিয়ে ভ্যাম্পায়ারের রাজত্ব চালাবো।
- এক মিনিট।
খালিদ আমাদের পেছনে দাঁড়িয়েছিল।
- তুমি আবার কখন এলে? আসো এবার তোমাদের তিনজনকে এক সাথে শেষ করি।
.
আমি আর নীল গিয়ে খালিদের পাশে দাঁড়ালাম।
- খালিদ, তুমি কোথায় ছিলে।
- এসব কথা পরে হবে হিমা।
খালিদ নিজের হাত থেকে ছুরি বের করে আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আমার হাত কেটে দিলো। নীল তা দেখে খালিদের কলার চেপে ধরল।
- এ তুমি কি করলে?
- ঠান্ডা হও।
খালিদ ছুরি দিয়ে এবার নিজের হাত কেটে আমার কাটা হাতের সাথে লাগালো। আমাদের দুজনের হাতের রক্ত একসাথে মাখিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করল। ধীরে ধীরে আমাদের রক্ত দিয়ে একটা গুলি তৈরি হয়ে গেলো।
- আমি এত বছর পড়াশোনা করে এই গুলির রহস্য খুঁজে পেয়েছি। এটা দিয়ে পিয়র ব্লাডকে মারা যাবে।
খালিদ আমার আর তার রক্ত মিলে তৈরি গুলিটা নীলের হাতে ধরিয়ে দিলো।
.
নীল গুলিটা তার রিভলভারে ভরে গুলি করে দিলো। পিয়র ব্লাডটার গায়ে লাগতেই ছাই হয়ে বাতাসে মিশে গেলো।
.
আমি খালিদকে জড়িয়ে ধরলাম।
- হিমা, আমার সাথে যাবা?
- তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে যাবো।
নীল আমার আর খালিদের দিকে রিভলভার তাক করে বলল,
- তবে একটা কথা তোমরা দুজন মনে রেখ। যেদিন আবার তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে, সেদিন তোমাদের শিকার করব।
.
.
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জন্য  ব্যবহার করা  হয়। ২. পার-অক্সাইড : ফেব্রিকের মধ্যে থাকা ন্যাচারাল গ্রে কালার রিমুভ করতে ব্যবহার করা হয়। ৩. স্টেবিলাইজার : পার-অক্সাডের রিয়েকশন স্টেবল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাবহার না করললে পার-অক্সাইড খুব দ্রুত ভেঙে পার-হাইড্রোক্সিল আয়ন গুলি শেষ করে ফেলবে, যা ব্লিচিং এর জন্য দায়ী। ৪. ডিটারজেন্ট :  ওয়েটিং অথবা ক্লিনিং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ৫. এন্টিক্রিজিং এজেন্ট:  নিটিং এর পর ও ওয়েট প্রসেসিং এর সময়  ফেব্রিকে ভাজ অথবা ক্রিজ পরে ফলে সেড আন-ইভেন আসতে পারে। ডাইং এর সময় তাই তা দূর করতে এক ধরনের ক্রিজ রিমুভার ব্যবহার করা হয় যেন ক্রিজ না পরে। এটি লুব্রিকেশন টাইপ এর কেমিক্যাল। ৬. সিকুস্টারিং এজেন্ট: পানির মধ্যে থাকা মেটাল আয়ন, হার্ডনেস রিমুভ করতে  ও পানিকে সফট করতে ব্যবহার করা হয়। ৭. ওয়েটিং এজেন্ট :  সারফেস টেনশন দূর করে ফেব্রিকের ভিজানোর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ওয়েটিং প্রপার

উপন্যাসের গঠন কৌশল

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E.M. Forster- এর মতে, কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তাঁর মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। উপন্যাসকে এক সুবিশাল ক্যানভাস হিসেবে ধরা যায়, লেখক তাঁর পরিকল্পনা মাফিক একেকটি অধ্যায়কে জায়গা করে দেন সেখানে। স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা, মানুষের হৃদয়ের গভীর তলদেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা—ইত্যাদি দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য। উপন্যাস বিশ্লেষকগণ একটি সার্থক উপন্যাসের গঠন কৌশল নিয়ে ছয়টি রীতির কথা বলেছেন। প্লট বা আখ্যান সম্পাদনাঃ উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনি। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। প্লটের মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা বাস্তব জীবনকে প্র

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ছানা سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ- উচ্চারণ- সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বি-হামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। রুকূর তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْمِ উচ্চারণ- সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম। অর্থাৎ- আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করতছি। তাসমীহ سَمِعَ اللّٰهُ لِمَنْ حَمِدَهْ উচ্চারণ- সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ। অর্থাৎ- যে তাহার (আল্লাহর) প্রশংসা করে, আল্লাহ তাহা শুনেন। তাহমীদ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ উচ্চারণ- রাব্বানা লাকাল হামদ। অর্থাৎ- হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি প্রশংসিত। সিজদার তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى উচ্চারণ- সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা। অর্থাৎ- আমার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করতেছি। আত্তাহিয়্যাতু اَلتَّحِيّ