Skip to main content

ডায়েরি (পরিচ্ছেদ - ১১)

রমিজ চাচা আমার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছাদ থেকে সেই হরিনাথ বাংলোর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এরপর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রমিজ চাচা বললো,
-বাবু! সব রহস্যের সমাধান কি এই ছাদ থিকা পাওয়া যাইবো নাকি? চলেন হরিনাথ বাংলোর ভেতরে যাইয়া দেখি কিছু জানা যায় নাকি।

আমি আর রমিজ চাচা ধীরে ধীরে হরিনাথ বাংলোর ভেতরে প্রবেশ করলাম। বাংলোটা আসলেই অনেক অন্ধকার ছিলো। অন্ধকারে বাংলোর ভেতরের কিছুই ভালোমতো দেখা যাচ্ছিলো না। আমি মোমের আলোতে হালকা হালকা পরিবেশটা দেখতে পারছিলাম। আসলেই বাড়িটা বেশ ভুতুরে আর ভয়ঙ্কর। হঠাৎ আমার চোখ গেলো বাড়ির উঠানের একটা মৃত গোলাপ গাছের দিকে। গাছটা দেখে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছিলো। হঠাৎ মনে পড়লো, আরে! এটাতো সেই গোলাপ গাছটা। যেটা আমি সেদিন ভয়ংকর স্বপ্নে দেখেছিলাম। যেই গাছের নিচে একটা কবর ছিলো এবং কবরে ৩টা লাশ ছিলো। কিন্তু স্বপ্নটাতো অনেক বেশি ভয়ংকর ছিলো। আসলেই কি এই গোলাপ গাছের নিচে কোন কবর রয়েছে! এটা ভেবেই আবার ভয় পেতে থাকি। আসলেই এই রাত্রিবেলা আমার এই হরিনাথ বাংলোতে আসা উচিত হয়নি। যদিও আমি এখানে একা না রমিজ চাচাও আছে আমার সাথে। কিন্তু রমিজ চাচা কোথায়?
আশেপাশে রমিজ চাচাকে খুজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও তাকে খুজে পেলাম না। আমি রমিজ চাচাকে জোড়ে জোড়ে ডাকছিলাম। কিন্তু সে কোন উত্তরই দিলো না। এরপর হঠাৎ করে আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলাম রমিজ চাচার নাম্বার। কিন্তু রমিজ চাচাতো আমার সাথেই এই বাড়িতে ঢুকলো। তাহলে আবার কোথা থেকে কল দিলো। আর আমিতো ভয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার কাছ মোবাইল আছে, আর রমিজ চাচার কাছেও তো মোবাইল ছিলো। তাহলে আমরা এতো কষ্ট করে মোমবাতি জ্বালিয়ে হাঁটছিলাম কেনো? থাক এইগুলো বাদ দেই। রমিজ চাচা কোথায় উধাও হয়ে গেলো। কলটা ধরেলেই জানা যাবে। কলটা ধরেই আমি রমিজ চাচাকে প্রশ্ন করলাম,
-রমিজ চাচা! কোথায় তুমি?
-জ্যা বাবু। আমিতো মাত্র পাশের গ্রাম থিকা বাড়িতে আসলাম। কিন্তু আপনেরে পুরা বাড়ি খুইজা পাইলাম না। এতো রাইতে আপনে কই?
-তুমি আবার পাশের গ্রামে কখন গেলে?
-কি বলেন বাবু! আমি না আপনারে বইলাই গেলাম যে আমি পাশের গ্রামের কৃষকের সাথে কথা কইতে যাইতেছি। আসতে রাত হইবো।
-তুমি না আবার ফিরে আসলে?
-কি কন এইসব বাবু? আমি আবার ফিরা আসুম কেন? আপনার কি হইছে? আপনে এখন কই সেইটা আগে কন?
-আচ্ছা চিন্তা করো না চাচা। আমি বাড়িতেই আসছি!
.
এই কথা বলেই কলটা আমি কেটে দিলাম। তার মানে আমি আবার ধোকা খেয়েছি! এবারও রমিজ চাচা আমার সাথে হরিনাথ বাংলোতে আসেনি। তাহলে রমিজ চাচার বেশে কে ছাদে এসেছিলো আর আমাকে এই হরিনাথ বাংলোতে নিয়ে আসলো? নিশ্চয়ই এতক্ষণ আমার পাশে রমিজ চাচার বেশে যে দাড়িয়ে ছিলো সে কোন একটা অশরীরী আত্মা। তার মানে এই ভয়ংকর বাড়িতে এখন শুধু আমি একা রয়েছি! এটা ভেবেই ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যেতে লাগলো। আমার হাত-পা ঠান্ডা হতে লাগলো। আমি ভাবছিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে এখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। না হলে, আমার সাথে যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে। যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ির গেটের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পেছনে ঘরের ভেতর থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেলাম। সে আমাকে ডেকে বলছিলো,
-একটু দাঁড়াউ প্লিজ। আমাকে একা ফেলে রেখে চলে যেও না ।

হঠাৎ এই নির্জন বাড়িতে একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। আমার জানা মতে এই বাড়িতে এখন আর কেউ থাকে না। আর একটা মেয়ের পক্ষে থাকা তো অসম্ভব। তাহলে ভেতর থেকে কে আমাকে ডাকছে? আর রমিজ চাচাওতো এখানে নেই। পুরো বাংলোতে এখন আমি শুধু একা। আমার ভয় আরো বাড়তে থাকে। একেই ভুতুরে বাড়িতে আমি একা, তার উপর আবার একটা মেয়ের কন্ঠ। একবার ভাবলাম যে এখানে থাকা উচিত হবে না। আমি বরং দ্রুত বাড়িতেই চলে যাই। সেখানে রমিজ চাচা আমার অপেক্ষায় বসে আছে। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোন একটা মায়া যেনো আমাকে যেতে দিচ্ছিলো না। আমার কৌতুহল বেড়েই যাচ্ছিলো যে ঘরের ভেতর কে আছে! আমার মনে হলো হয়তো সেই মেয়েটা অর্থাৎ মিশি এখনো বেঁচে আছে। হয়তো সে এখনো ঘরেই আটকা পড়ে রয়েছে। হয়তো আমার থেকে তার সাহায্য চাই। তাই আমি সাহস করে ধীরে ধীরে সেই ঘরটার দিকে এগোতে লাগলাম। আমি সেই ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাহিরে থেকে দেখে মনে হচ্ছিলো দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো। এরপর আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে দরজায় টুকা দিতে দিতে প্রশ্ন করলাম,
-ঘরের ভেতরে কে আছেন? কে আমায় ডাকলো? দরজাটা খুলুন।

কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোন উত্তরই আসছিল না। আমার ভয় আরো বাড়তে লাগলো। এরপর সাহস করে দরজাটা আস্তে করে ধাক্কা দিলাম। দরজাটা ধাক্কা দিতেই সাথে সাথে খুলে গেলো।

তার মানে হয়তো দরজাটা শুধু চাপিয়ে দেওয়া ছিলো। ভেতর থেকে আটকানো ছিলো না। কিন্তু ভেতরে যে কেউ একজন রয়েছে সেটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম।

চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...