Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - ০৬)

বেশ কিছুক্ষন পর নীল আস্তে করে আমাকে ছেড়ে দিতে লাগলো। নীলকে দুর্বল পেয়ে আমি নিজেকে ঝটকা মেরে সরিয়ে নিলাম। পেছন ফিরে দেখি নীলের চোখ লাল হয়্র গেছে আর নীলের গালে আর গায়ে আমার রক্ত লেগে গেছে।
- নীল, তুমি ভ্যাম্পায়ার!!!!
- নওরিন, I am sorry.
আমার পেছন পেছন খালিদ ছুটে আসল। আমাকে আর নীলকে এই অবস্থায় দেখে খালিদের বুঝতে বাকি রইল না যে কি ঘটেছে। খালিদের চোখেমুখে রাগ। খালিদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো সে এখনি নীলকে খুন করে ফেলবে। আমি খালিদ আর নীলের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।
- খালিদ, না....
আমার চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায় আর আমি রক্তশুন্যতায় জ্ঞান হারায়।
.
জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আব্বুর অফিসের সোফায় পেলাম। আব্বু আমাকে উঠে বসতে দেখে জিজ্ঞেস করল,
- মা, ঠিক আছো?
- হুম। নীল কেমন আছে?
আমার প্রশ্নে খালিদ রেগে গিয়ে আমার দিকে তাকায়।
- নীল ঠিক আছে। নীলের বাবা মা যেই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের হাতে মারা গিয়েছিলো সে নীলকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দেয়।
- তারপর....
আমি প্রশ্ন করতে গিয়ে কল্পনায় হারিয়ে গেলাম। নিজেকে একটা বন্দি ঘরের মধ্যে মনে হচ্ছে। আমাকে ছটফট করতে দেখে খালিদ আমার পাশে এসে বসে গালে হাত দেয়।
- হিমা? তুমি ঠিক আছো?
- না, আমার এমন মনে হচ্ছে আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
- কিছু না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমাদের কথায় নীলের জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে নীলের চোখ লাল হয়ে আসে। তার রক্ত লাগবে। খালিদ আমার পাশ থেকে উঠে নীলের কাছে গেলো। নীল খালিদকে আকড়ে ধরল আর তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিলো।
- নীল না!!! আব্বু ঠেকাও ওদের।
- চিন্তা করো না, মা। নীল আর খালিদ দুজনেই ভালো থাকবে। কোন ক্ষতি হবে না। আমার চিন্তা তো তোমাকে নিয়ে।
- আমাকে নিয়ে?
- নীল নতুন নতুন ভ্যাম্পায়ার হয়েছে। নিজের রক্তের পিপাসা মেটানোর জন্য সে সব কিছু করতে পারে।
- নীল আমার কোন ক্ষতি করবে না।
- তুমি নিজেও জানো না ভ্যাম্পায়ারদের রক্তের পিপাসার ব্যপারে।
-....
- আজ থেকে নীলের কাছ থেকে দূরে থাকবা।
- কখনোই না। আমি পারব না।
- আমি জানতাম তুমি এমন কিছুই বলবে। তাই এই লকেট পরে রাখো। এতে করে নীল তোমার ওপর হামলা করবে না।
- ঠিক আছে।
লকেটটা দেখতে গোলাপের মতো। কালো রঙের গোলাপের ডিজাইন করা। অপরদিকে নীল খালিদের রক্ত খেয়ে শান্ত হলো আর আমি আর নীল হোস্টেলে ফিরে গেলাম।
.
নীল পুরোটা রাস্তা আমার দিকে তাকায় নি। আমি নীলকে তার ঘরে পৌছিয়ে দিলাম।
- নওরিন!
- হুম।
- I am sorry.
- তোমাকে কিছু বলা লাগবে না।
- নিজেকে ঠেকাতে পারি নি। আজকের পর থেকে আমার কাছ থেকে দূরে থাকো।
- কখনওই না।
- তুমি বুঝতে পারছ না রক্তের পিপাসা উঠলে আমি জ্ঞান হারায়। কি করছি নিজেই জানি না।
- আমার খারাপ লাগে নি।
- মানে?
- তুমি আমার রক্ত খেয়েছ। আমার তাতে খারাপ লাগে নি। তুমি ভ্যাম্পায়ার বলে আমি কখনওই তোমাকে ঘৃনা করব না।
আমার কথা শুনে নীল আমাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরল। আমিও নীলকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে নীল প্রশ্ন করল,
- হুম, খালিদকেও ঘৃনা করো না তাই তো?
- মানে?
- কিছু না।
- একটা আফসোস থেকে গেলো।
- কি?
- তুমি পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার না। তাই তোমার রক্ত খাওয়াতে আমি ভ্যাম্পায়ার হবো না।
- তুমি ভ্যাম্পায়ার হতে চাও?
-..... অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি নীলের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। কারণ আমি নিজেই জানি না আমি কি চাই।
.
নীলের রক্তের প্রয়োজন। যেই ট্যাবলেট দিয়ে ভ্যাম্পায়ারেরা নিজেদের পিপাসা দমন করে তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। নীল প্রতিদিন খালিদের রক্ত খাওয়া শুরু করল। এভাবে দিন যেতে থাকলো। ভ্যাম্পায়ারদের জন্য পূর্নিমা রাতে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো কলেজে। আমার এমন পরিবেশে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কোন ইচ্ছা হলো না। তাই বিকালের দিকে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। পথে একটা ছোট্ট ছেলে আমার জামা ধরে টানলো।
- কি হয়েছে তোমার?
- আপু আমার বেলুন ওই বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকে গেছে এনে দাও না।
মনে মনেই ভাবলাম আবার সেই বিল্ডিং যেখানে আমার ওপর ভ্যাম্পায়ার হামলা করেছিলো। তবুও ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে ভেতরে গেলাম। বিল্ডিং এর এক কোনায় বেলুনটা আটকিয়ে ছিলো। আমি ওখান থেকে ওইটা পেড়ে ছেলেটার হাতে দেওয়ার জন্য ছেলেটার সামনে হাটু গেড়ে বসলাম। ছেলেটা আমার হাত থেকে বেলুনটা নিয়ে আমার গালে একটা চুমু দিলো। চুমু দেওয়ার সাথে সাথে আমার চারিদিকে ঘোলাটে অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এক সময় নিজের জ্ঞান হারালাম।
.
চোখ খুলে নিজেকে ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে পেলাম। আমি উঠে বসতেই খালিদ আমার পাশে এসে বসল।
- আমি তো বাইরে ছিলাম। এখানে কিভাবে এলাম?
- যেই ছোট ছেলেটা তোমাকে চুমু দিয়েছিলো সেইটা আসলে একটা ভ্যাম্পায়ার ছিলো।
-....
- আমি জানতাম তুমি সহজে আসতে না এই অনুষ্ঠানে।
খালিদ কথা বলছিলো এমন সময় অভি ঘরের ভেতর ঢুকলো।
- আরে, লাভ বার্ডের ঝগড়া মিটে গেছে মনে হচ্ছে।
অভির পেছন পেছন সৌরভ ঘরে ঢুকলো।
- অভি, আমার মনে হয় আমাদের লাভ বার্ডকে বিরক্ত না করায় ভালো।
- আচ্ছা, নওরিন তুমি আজ আমার সাথে অনুষ্ঠানে ডান্স করবে কিন্তু।
অভির কথা শুনে খালিদ আমার কাধের ওপর হাত দিয়ে আমাকে নিজের দিকে টেনে নিলো।
- নওরিন শুধু আমার সাথে ডান্স করবে।
- আরে ভাইয়া কিন্তু....
- অভি চুপ। খালিদকে আজ রাতে রাগানোর দরকার নেই। কাল রাগিও।
- কিন্তু আমি তো....
সৌরভ অভিকে জোর করে টেন হিচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেলো।
- নওরিন, তমার কাছে আমি একটা জামা দিয়েছি। তুমি আজকে অনুষ্ঠানে ওইটা পরে আসবে।
- কিন্তু স্টুডেন্টরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিলো সেই বিষয়ে কি হলো?
- নীল গার্ড দেবে। আর তাছাড়া অভিজ্ঞ ভ্যাম্পায়ার শিকারিও আছে।
.
আমি খালিদের কথা মতো রুমে গিয়ে জামা পালটিয়ে আসলাম। রুমে অতো মানুষের সামনে ডান্স করতে আমার লজ্জা লাগছিলো। খালিদ আমার হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেলো। খালিদ আর আমি ছাদে ডান্স করলাম। ডান্স করতে করতে খালিদ প্রশ্ন করল,
- নওরিন, তুমি আমাকে পছন্দ করো?
- আমি আগেও বলেছি আমাকে তোমাকে কোন দিন ঘৃনা করতে পারব না।
- আর তুমি নীলের জন্য কি ফিল করো?
খালিদের প্রশ্নে আমি থমকে গেলাম। ডান্স বন্ধ হয়ে গেলো। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে খালিদ আমাকে জড়িয়ে ধরল।
.
পেছন থেকে নীল আমাদের দিকে তার ভ্যাম্পায়ার মারার রিভলভারটা তাক করে ছিলো। খালিদ বুঝতে পেরে আমাকে ছেড়ে দিলো।
- খালিদ নওরিনকে ছেড়ে দাও।
নীলের ককথা মতো খালদ আমাকে ছেড়ে দিতেই নীল আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল। নীলের সাথে চলে যাওয়ার সময় আমি পেছনে খালিদের দিকে তাকালাম। ওর চোখ দুটো পানিতে ভরা ছিলো। আমি দেখারা সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলি। নীল আমাকে নিয়ে যেতে যেতে একটা ব্রিজের কাছে আসলো। আমার হাত ছেড়ে দিয়ে এবার নীল আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমার গলার দিকে নীলের নজর পড়তেই নীলের চোখ লাল হয়ে গেলো। আজ আমি খালিদের দেওয়া জামা পরার সময় লকেট খুলে রেখেছিলাম। পরে আর পরতে মনে নেই। এদিকে নীলের আবার রক্তের পিপাসা জেগেছে। আমার দিকে এসে নীল আমার কোমর চেপে ধরল।
- নীল না....
আমার কথা শেষ হতে না হতেই নীল আমাকে উচু করে ধরে তার দাত আমার ঘাড়ে বসিয়ে দিলো। আমাকে আস্তে আস্তে নিচে রাখার সময় আমি নীলকে ধাক্কা দিয়ে কোন রকমে পানিতে ফেলে দিই। আমরা দুজনেই পানিতে পড়ে যায়।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...