আসিফের কথা শুনে আমার চিন্তা কিছুটা কমলো। কারণ, আর যাই হোক কোন ভূত তো আমাদের বাড়িতে আসেনি। এরপর কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। যদিও এই অচেনা লোকগুলোর রহস্য তখনও আমাদের মাথা থেকে যায়নি। পরের দিন সকাল বেলা আমাদের ঘুম ভাঙে। ঘুম ভাঙার পর আসিফ আমাকে নিয়ে ঘরের বাহিরে যায়। সে আমাকে ঘরের দরজার উপরে যা দেখালো আমি পুরোই অবাক হয়ে গেলাম। আমি দেখলাম আমাদের ঘরের দরজার উপরে একটা ছোট বক্সে সাউন্ড সিস্টেম বসানো। আমাদের বুঝতে বাকি রইলো না এর মাধ্যমেই কৃত্রিমভাবে কেউ ভয়ংকর কান্নার শব্দ করে আমাদের ভয় দেখাতো। এরপর আমরা সেই বক্সটা খুলে ফেলি। আমাদের এখন একটুও সন্দেহ নেই এই বিষয়ে যে, নিশ্চয়ই কেউ আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এসব কাজ করছে। কিন্তু আমাদের ভয় দেখিয়ে কার কি লাভ হবে? হয়তো কেউ চায় যে আমরা এই বাড়িতে না থাকি। কিন্তু কেনো? কারা তারা?
এসব প্রশ্নের কোন উত্তর আমাদের কাছে ছিল না। হয়তো এর আগে যারা এই বাড়ি থেকে ভূতের ভয়ে চলে গেছে তারা এই লোকগুলোর পাগলামীরই স্বীকার হয়েছে। তাই আশেপাশের লোকেরাও এটাকে ভূতের বাড়ি হিসাবে জানে।
পরের এক সপ্তাহ আমাদের সাথে আর অন্য রকম অদ্ভুদ কিছু ঘটেনি। আমরা স্বাভাবিক ভাবেই আবার আমাদের দিন কাটাচ্ছিলাম।
আমাদের বাড়িটা বেশ বড় ছিলো। তাই এখানে অনেকগুলোই ঘর ছিলো। সবগুলো ঘরই আমি পরিষ্কার করেছিলাম। শুধু একটা ঘর বাদে। আসলে সেই ঘরটা বাহির থেকে দেখতে বেশ ছোট এবং নোংরা মনে হতো তাই কখনো সেই ঘরে যাওয়ার কথা ভাবিনি। এছাড়াও ঘরটার বাহিরে একটা বড় তালা দেওয়া ছিলো। যার চাবি আমাদের কাছে ছিলো না। তাই আমরা কখনো তালাটা ভাঙার কথাও ভাবিনি। কিন্তু আজ সকালে রান্নাঘরে রান্না করছিলাম, হঠাৎ রান্না ঘরের এক কোণে একটা চাবি দেখতে পেলাম। চাবিটা বেশ বড় ছিলো। আমার কেনো জানি মনে হলো, যে চাবিটা হয়তো সেই ঘরের যে ঘরটা এখনো খোলা হয়নি। কৌতুহল বসতই চাবিটা নিয়ে সেই বদ্ধ ঘরের সামনে গেলাম। এরপর সাহস করে চাবিটা তালার ভেতর ঢুকিয়ে দিলাম তালাটা খোলার জন্য। আমাকে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথেই তালাটা খুলে গেলো। এরপর আমি আস্তে করে দরজাটা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেলো।
আমি ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ঢুকলাম। ঢুকেই বুঝতে পারলাম যে ঘরটাতে অনেক বছর ধরে কেউ আসে না। ঘরের চারিদিক ময়লা,ধুলা আর মাকড়সার জালে ভরা ছিলো। ঘরটা ছোট ছিলো কিন্তু পুরো ঘরটা অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ভর্তি ছিলো। আমি ঘরের ভেতর একটা বুকসেলফ দেখতে পেলাম। সেখানে মাত্র কয়েকটা বই ছিলো। আমি বইগুলো দেখলাম না। এরপরে ঘরের আরেক কোনে নজর যেতেই দেখলাম যে একটা সিন্দুকের মতো কিছু পরে রয়েছে সেখানে। সিন্দুকটা বন্ধ করাছিলো কিন্তু কোন তালা দেওয়া ছিলো না। এরপর আমি সিন্দুকটা খুলে দেখলাম পুরো সিন্দুকে শুধু মাত্র একটি ছোট বাক্স রয়েছে। প্রথমে বাক্সটা কিসের সেটা বুঝতে পারলাম না।
এরপর সেটা খুলে দেখলাম সেখানে বেশকিছু ছোট কাঁচের টুকরার মতো চকচকে বস্তু রয়েছে। কাঁচের টুকরাগুলো দেখতে বেশ সুন্দরছিলো। কিন্তু বাড়ির এতোটা ভেতরে এই সামান্য কাঁচের টুকরা এতোটা গোপনভাবে আর যত্ন করে রাখার মানেটা বুঝলাম না আমি। এরপর ঘরটার তালা আবার লাগিয়ে ঘরের বাহিরে চলে আসলাম। আসার সময় শুধু সেই কাঁচের টুকরা গুলো নিয়ে আসলাম। ভাবলাম আমার মেয়ে রাত্রি এই কাঁচের টুকরাগুলো দেখলে বেশ খুশি হবে! সে এইসব জিনিস নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসে। এরপর ভাবনামতোই কাঁচের টুকরা গুলো রাত্রিকে দিলাম খেলার জন্য।
.
রাত্রি সেইগুলো নিয়েই খেলছিলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যাঁ হয়ে গেলো। আসিফ বাড়িতে নেই। আমি রান্না ঘরে ছিলাম আর রাত্রি তার ঘরে সেই কাঁচের টুকরাগুলো নিয়ে খেলছিলো। একটুপর দরজায় কারো ধাক্কা দেওয়ার শব্দ শুনলাম। দরজাটা খুলে দেখলাম আসিফ এসেছে। আমাকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে ঘরে ঢুকলো সে। আমি আবার রান্নাঘরে চলে গেলাম। কিছুক্ষন পর হঠাৎ আসিফের জোরে চিৎকার শুনতে পাই।
-মিশি। মিশি। তাড়াতাড়ি এইদিকে আসো।
আমি আসিফের চিৎকার শুনে দ্রুত ঘরে যাই।
আমি ঘরে ঢুকতেই আসিফ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-রাত্রির হাতে এইগুলো কি? এইগুলো রাত্রি কোথায় পেলো?
চলবে....
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব
Comments
Post a Comment