Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - ০৯)

সত্যিই খুব ক্লান্ত লাগছিলো। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম। এদিকে যখন চোখ খুললাম নিজেকে অন্য জায়গায় পেলাম।
- আমি কোথায়?
- তুমি আমার কাছে নওরিন।
- প্রভা!!!
- হ্যা, আমি।
- আজ তাহলে আমার রক্ত খাওয়ার প্ল্যান তোমার।
- না,প্ল্যান তো তা ছিলো না। কিন্তু তোমার রক্তের গন্ধ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।
- প্ল্যান ছিলো না মানে?
- আমাদের বস শুধু তোমাকে তুলে আনতে বলেছিলো। কিন্তু আমি কারো কথা শুনি না। নিজের মতো করে চলি।
- তোমার বস?
- হ্যা, আমার বস।
- আমাকে তার কি দরকার? আমি একটা সাধারণ মানুষ।
- তুমি কোনো সাধারণ মানুষ না।
- না, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে....
- এসব বলে লাভ নেই খুকি। তুমি এখন আমার রক্তের পিপাসা মিটাবা।
- প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দাও।
- প্লিজ!!!! তুমি ভ্যাম্পায়ার আর ভ্যাম্পায়ার শিকারিকে নিজের আঙ্গুলে করে ঘোরাও আর আমাকে প্লিজ বলছ!!! শুনে ভালোই লাগলো।
- তুমিই কি প্রতিদিন আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট মারছ?
- অবশ্যই। একজন ভ্যাম্পায়ার মানুষের রক্ত ছাড়া শক্তিশালী হতে পারে না। তাছাড়া আমাদের বসের প্রতিদিন শক্তির প্রয়োজন জোয়ান থাকার জন্য।
- আর বিপ্লব ভাইয়া তো তোমাকে ভালোবাসে।
- হা....ভালোবাসা কি জানেমন। আমি তো জানি না।
- বিপ্লব ভাইয়া তোমার জন্য নীলকে চড় মেরেছে।
- মারুক। নীলের ভেতরে যা আছে তা বিপ্লবের ভেতর নেই। ইশ, তবে নীলকে আমি পটাতে পারব না। না জানি তোমার মতো শুকনো বডির মেয়ে নীলকে কীভাবে পটালে।
-.....
- গল্প অনেক হলো। নিজের শিকারের সাথে বেশি ভাব বাড়াতে নেই। পরে খেতে মায়া লাগবে।
প্রভা আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে লাগলো। ওর ছোটের মণি একদম লাল হয়েগেছে.....
.
প্রভা আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে লাগলো। ওর চোখের মণি একদম লাল হয়ে গেছে.....
আমার কাছে ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিক ছিলো। কিন্তু প্রভার কথা শুনে আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। এদিকে প্রভা আমার কাছে চলে এসেছে। অনুতাপ আমার হাত পা বেধে দিয়েছে।
- ১ মিনিট প্রভা।
কন্ঠটা নীলের ছিলো। নীল আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েছিল। প্রভা নীলের দিকে তাকিয়ে হাসলো যেন তার কোন ভয় নেই।
- ও নীল। তুমি এসেছ ভালোই হয়েছে। এখন তোমার সামনে।আমি তোমার প্রিয়তমার রক্ত খাবো। তার শরীরে এক বিন্দু রক্তও থাকবে না।
- তাই! আর তোমার কি মনে হয় যে আমি দাঁড়িয়ে এসব দেখব।
- একদম না। তোমার পেছনে তাকিয়ে দেখো।
নীলের পেছনে ৪/৫ টা মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ার চলে আসলো।
- আমি জানি তো নীল তোমাকে ঠেকানো মুশকিল। তবে যতক্ষণ এ এই ভ্যাম্পায়ারগুলো মারবা আমার রক্ত খাওয়া শেষ হয়ে যাবে।
- হুম, বুঝলাম। তবে আমি এখানে একা আসি নি।
এইবার মানুষ খেকো ভ্যাম্পায়ারের পেছনে অভি, সৌরভ, মারিয়া, লাবনি দাঁড়িয়েছিল।
- তোমরা এখানে!!!
- নওরিনকে আজ এখান থেকে আমি বাঁচিয়ে নিয়ে যাবো আর তোমাকে শেষ করে দিয়ে যাবো।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। প্রতিটা ভ্যাম্পায়ারের কাছে আলাদা শক্তি থাকে। প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তি। ঝড় সৃষ্টি করতে পারে, পানি টেনে আনতে পারে, আগুন ধরাতে পারে বা বরব জমাতে পারে। শারিরীক ভাবেই অনেক শক্তিশালী হয়। মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ার গুলো খুব সহজেই কাবু হয়ে গেলো। কিন্তু প্রভাকে কাবু করা সহজ ছিলো না। প্রভার সাথে প্রথমে মারিয়া আর লাবনি লড়াই করছিলো। প্রভার তো অভ্যাস আছে এসব করার। লাবনি আর মারিয়ার ছিলো না। তারা খুব খরাপভাবে আহত হয়ে পড়ল। নীল দেখতে পেয়ে নিজের রিভলভারটা প্রভার দিকে তাক করল। প্রভার চোখে এবার আমি ভয় দেখতে পেলাম। গুলি চলল। কিন্তু সেটা প্রভার গায়ে লাগলো না। প্রভার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিপ্লব ভাইয়া। গুলিটা তার গায়ে লেগে গেলো। নিজে হাতে ভাইকে গুলি করার ঘটনা নীল পাথর হয়ে গেলো। তার হাত থেকে রিভলভারটা পড়ে গেল। নীল ছুটে গিয়ে তার ভাইকে ধরল। আমার চোখ দিয়ে পুরটা ঘটনা চলাকালীন পানি পড়ছিলো। কাপা হাতে আমি রিভলভারটা তুলে নিলাম। সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি প্রভার দিকে তাক করে চোখ বন্ধ করে গুলি চালিয়ে দিলাম। গুলিটা প্রভার গায়ে লাগলো যদিও আমার চোখ বন্ধ ছিলো।
.
আমি আর বাকি সবাই আব্বুর অফিসে গেলাম প্রথমেই। আমাকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছে আব্বু।
- মা, তুমি ঠিক আছো?
আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল।
- হ্যা।
- আমি বুঝতে পারি নি যে কেউ ভ্যাম্পায়ার হোস্টেল থেকে তুলে নিয়ে যাবে।
- হুম।
- আমি জানি তুমি অনেক শক পেয়েছ। বিশ্রাম নাও মা।
- ঠিক আছে।
.
প্রভা যেই কথাগুলো বলল, আমার কানে বাজচ্ছিলো। আমার জন্য এসব কিছু হয়েছে। তাদের বস তো আমাকে চাই। তাই সে এতো গুলো মানুষকে এতো দিন মেরে আসছে। সব আমার জন্য হয়েছে। এতো চিন্তার মধ্যেও আমার মনে পড়ে গেলো কাল আমার জন্মদিন। কালকেই যদি মরে যায় ভালো হবে। সুইসাইড করব কালকে আমি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বিপ্লব ভাইকে গুলি মেরেছে নীল। মারিয়া আর লাবনি এতো আহত হয়েছে। আমার মরে যাওয়ায় ভালো।
.
হোস্টেলের রুমে আমি যায় নি। আব্বুর কোয়াটারে ছিলাম। সকালে উঠেই আব্বু আর আমার ভালো ভ্যাম্পায়ারগুলো আমাকে শুভেচ্ছা জানালো।
- আমি একদম খুশি না।
- কেনো আব্বু?
- ১৮ বছর হয়ে গেছে। তুমি বড় হয়ে যাচ্ছ আর ককবে বিয়ে করে আআমাকে ছেড়ে চলে যাবা।
- আব্বু!!!
আব্বু জানে না যে আমি বিয়ের আগেই ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এমন জায়গায় যাবো যেখান থেকে কেউ আর ফেরত আসে না।
- আরে প্রিন্সিপাল এমন কাদে না।
অভি বলল।
- তুমি চুপ করো।
আব্বু টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল।
.
এদিকে নীল আর খালিদ আমাকে শুভেচ্ছা জানায় নি তাই আমি নিজে গিয়ে ওদের সাথে দেখা করব ঠিক করলাম। কারণ আজ তো আমার জীবনের শেষ দিন।
.
বিপ্লব ভাইয়া গুলি খেয়েছিল। এখন বেডে ব্যান্ডেজ। নীল সেই ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো। আমি নীলের কাছে গেলাম। তার ঘাড়ে হাত দিলাম। নীলের চোখ আমার দিকে পড়ল। এতক্ষণ খেয়াল করে নি যে আমি এসেছি।
- নওরিন।
নীল আমাকে জড়িয়ে ধরল। তার চোখের পানি আমার ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। আমি না থাকলে না জানি নীল কার ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদবে। তমা কি....
- সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীল আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
- নীল, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার কথা সব সময় সত্যি হয়।
আমার কথা শেষ হতেই ওদিকের বিছানায় বিপ্লব ভাইয়ার জ্ঞান ফিরে আসলো। আমি আর নীল তার পাশে গেলাম।
.
আমার দিকে তাকিয়ে বিপ্লব ভাইয়া বলল,
- নওরিন, আমাকে মাফ করে দিও। আমি খুব বোকা। আমার জন্য প্রভা এমন সুযোগ পেয়েছে।
- এসব কথা এখন থাক না।
- আর নীল তুমিও গিলটি ফিল করা বন্ধ করে দাও। আমি ঠিক আছি।
.
আমি জানি নীলের এতো সহজে গিলটি ফিলটা যাবে না। নীল আমাকে আমার রুমে পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য আমার সাথে হাটলো। সুযোগ পেয়ে আমি নীলকে বললাম,
- আমার আজ জন্মদিন।
নীলের মুখে হাসি ফুটলো না। কিন্তু বুঝলাম ও একটু খুশি হয়েছে।
- জন্মদিনে আমাকে কি দিবা?
- হুম, চকলেট কেক, চিপস, মাংস....
- আমি খাবার নেবো না।
- আরে নেও। প্রভাকে মেরে ভ্যাম্পায়ার শিকার এজেন্সি থেকে অনেক টাকা পেয়েছি।
- বললাম তো। আমি খাবার নেবো না।
- তাহলে কি নিবা?
- আমি চাই আমার জন্মদিনে তুমি নিজেকে মাফ করে দেও। তুমি কোন খারাপ কাজ করো নি। পরিস্থিতি অমন ছিলো। প্লিজ নীল।
নীল আমার গালে হাত রেখে বলল,
- ঠিক আছে। Happy birthday.
.
নীলের পরে আমার জীবনের স্পেশাল মানুষটার সাথে দেখা ককরার কথা। ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে গিয়ে আমি লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। খালিদকে বই পড়তে দেখে আমার খালিদের বইয়ের ভেতর নিজের ছবি পাওয়ার ককথা মনে পড়ে গগেলো। বুকের ভেতর ধুকধুক করছে হাই স্পীডে। মমনে হচ্ছে না যে আমি শেষ বারের মতো খালিদের সাথে দেখা করতে এসেছি, মনে হচ্ছে যেনো তাকে I love you বলতে এসেছি। অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকতে দেখে খালিদ নিজে আমআমাকে প্রশ্ন করল।
- কিছু বলবা?
- না......মানে.....আসলে.....
খালিদ বইটা বন্ধ করে দিয়ে আমার কাছে চলে আসলো। একদম আমার মুখের কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
- হিমা, তুমি কি রাগ করেছ আমি তোমাকে ববাঁচাতে যায় নি বলে?
- না....
- তুমিই আমাকে তোমার ব্যপারে নাক গলাতে নিষেধ করেছিলে। Happy birthday হিমা।
- তোমার মনে আছে?
- হুম, আমার কাছে কি চাও বলো? আমি সব কিছু দিতে রাজি আছি তোমার জন্য।
- আমি....
- যা চাও একবার বলে দেখো।
- আমি চাই তুমি আমাকে সব সত্যি কথা বলো।
- মানে?
- প্রভার বস কে? কেনো আমার মতো সাধারণ মানুষের পিছে পড়ে আছে। আবার আমি নাকি সাধারণ মানুষ না। আমি কে?
খালিদ চুপ হয়ে গেলো।
- কি হলো বলো? নিজের জন্মদিনে আমি সব সত্যি কথা জানতে চাই।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...