Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - ০৮)

চোখ খুলে নিজেকে ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে দেখি। তমার আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে ছিলো,
- নওরিন, তুই ঠিক আছিস?
- হ্যা।
- নীলের সাথে তুই সেফ থাকবি না কেনো?
আসল কথা তমা যানে না যে নীল এখন ভ্যাম্পায়ার।
-.....
- দেখ আমাকে বল। নীল কি সেইরকম ছেলে?
- সেই রকম মানে?
- মানে ওই রকম।
- কোন রকম?
- আরে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।
- ও আচ্ছা।
পাশ থেকে অভি উত্তর দেয়।
- হ্যা, হ্যা। সেই রকম ছেলে নীল। কন্ট্রোল হয় না মেয়ে দেখলে।
- অভি এসব....
অভি আমাকে বলতে না দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে।
- নওরিন এখন ছোট বেলার বন্ধু বলে নীলের ব্যাপারে খারাপ বলতে পারে না আর শুনতেও পারে না।
- ছি!!!!
তমা উঠে দাঁড়ায়।
- তুই এখানে থাক। আমি চললাম। নীল এই ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলেই আছে। ওর কাছে না থাকায় ভালো।
তমা রুম থেকে পালিয়ে যায়। আর সৌরভ পেছন থেকে এসে অভির মাথায় বই ছুড়ে মারে।
- এইটা করা একদম ঠিক হয় নি।
- আরে, এতো লাভ ট্রাই এঙ্গেল ভালো লাগে না। দুইটা একটা কম হয়ে যাক।
আমি নিজের মুখ থেকে অভির হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলি,
- নীল কোথায়?
আমার প্রশ্নে সৌরভ উত্তর দেয়,
- খালিদের সাথে আছে।
.
আমি যখন অভি আর সৌরভের সাথে নিচে বসে ছিলাম অন্য দিকে নীল আর খালিদ উপরের রুমে ছিলো। দুজনের মধ্যে কথা চলছিলো।
- এখন তুমি কি করবে নীল? হিমা তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
- আমি থাকলে ওর ক্ষতি করে দেবো।
- আপাতত তোমার এখানে থাকায় ভালো।
- হুম।
- কিন্তু যদি আমি দেখেছি তুমি হিমার রক্ত খাওয়ার চেষ্টা করেছ বুঝতেই পারছ আমি কি করব।
নীল নিজের পকেট থেকে রিভিলভার বের করে খালিদের দিকে তাকা করল।
- বিশ্বাস তো আমিও তোমাকে করি না।
- হা...কেনো?
- আমি জানি তুমিও নওরিনের ওপর দুর্বল।
- ঠিক বলেছ।
- নওরিনের রক্ত খাওয়ার ইচ্ছা হয় না তোমার?
- আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না আমার হিমার রক্ত খাওয়ার কতটা পিপাসা।
- আর নওরিন এমন এক মেয়ে যে নিজের রক্ত ভ্যাম্পায়ারকে খাওয়ানোর জন্য পাগল হয়ে যায়।
- হুম।
- কেনো জানো?
- জানি।
- সব তোমার দোষ।
- আমি জানি হিমার ওপর যা কিছু ঘটছে সব আমার দোষ।
- পিয়র ব্লাড ছাড়া নওরিন ভ্যাম্পায়ার হতে পারবে না।
- আমি ওকে কখনো ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারব না।
- I don't trust you.
- আমিও অবশ্য বুঝতে পারি না আর কতদিন হিমার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারব!
.
ক্লাস শেষ করেই আমি প্রথমে নীলের রুমে চলে গেলাম।
- নীল, কেমন আছো? কেমন লাগছে এখন?
- মাথা ঘুরে গিয়েছিলো তোমার, প্রশ্নটা আমার তোমাকে করা উচিৎ।
-.....
নীল কি বলে বোঝাবো আমি ভাষা হারিয়ে ফেলি। নীল নিজের রিভলভার আবার বের করে নিজের মাথায় তাক করল। আমি নীলের হাত থেকে রিভলভারটা কেড়ে নিতে চাইলাম। কাড়াকাড়িতে রিভলভারটা আমাদের দুজনের হাতে, কিন্তু এর মুখ নীলের বুকের দিকে তাক করা।
- আমাকে মেরে ফেলো নওরিন।
- না।
- কেনো?
আমি রিভলভারটা নিজের হাতে নিয়ে নিলাম।
- নীল, আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইব দিবা?
- কি?
- আমি চাই তুমি আমার রক্ত খাও।
- কিন্তু....
- প্লিজ।
- ঠিক আছে।
নীল আমার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে রক্ত টানতে লাগলো।
.
নীল যখন আমার রক্ত খায় তখন শুধু নীলের ভেতরেই আমার স্মৃতি চলাচল করে না, আমার ভেতরেও চলে। আমার মনে হয় না রক্ত স্বল্পতায়য় জন্য আমার মাথা ঘোরে, কারণটা অন্য।
.
ভ্যাম্পায়ার হোস্টেলে আমাকে আর নীলকে ডাকা হয়। আমরা রাতে ওখানে গেলাম। ভেতরে ঢুকেই দুজন অপরিচিত মানুষ কি ভ্যাম্পায়ারের সাথে দেখা হলো। একজন ছেলে আর অপরটা মেয়ে। মেয়েটা হয়ত ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড। দুজনের দাঁড়িয়ে থাকা আর চোখাচোখি করা দেখে মনে হলো। ছেলেটা দেখতে কিছুটা নীলের মতো। আমার ধারনা ঠিক করে ছেলেটা নীলকে দেখে জড়িয়ে ধরল।
- কেমন আছো ছোট ভাইয়া?
ছেলেটা নীলকে প্রশ্ন করল।
- অনেকদিন তোমাকে দেখি নি। তা কি মনে করে?
- আমার গার্লফ্রেন্ড প্রভা। তোমার হবু ভাবীও বলতে পারো।
- প্রভা!!!
- হুম।
নীল রেগে গিয়ে নিজের ভাই আর প্রভার দিকে তাকালো।
- প্রভা একটা ভ্যাম্পায়ার।
- তো কি হয়েছে?
- ভ্যাম্পায়ার শিকারি হয়ে তুমি এই ভ্যাম্পায়ারের প্রেমে পড়লে। তাও আবার প্রভা!!
- তোর ভাবী হয় বুঝলি।
- না, বুঝি নি। তুমি বোঝ প্রভা মোটেও ভালো না। ওর সাথে সম্পর্ক করো না। ও তোমাকে মিসইউজ করবে....
নীলের কথা শেষ না হতেই তার ভাই ওকে চড় মেরে দিলো।
- আমাকে শিখাবি না। আমার যা ইচ্ছা তাই করব।
নীল চুপ হয়ে গেলো। নীলেত ভাইয়ের নজর এবার আমার দিকে পড়ল।
- এইটা কে? তোর গার্লফ্রেন্ড?
- নওরিনকে এসবের ভেতর টেনো না।
- আবার আমার মুখের ওপর কথা বললি!!!
নীল আবার চুপ হয়ে গেলো আর আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল যেনো আমি কিছু না মনে করি।
- হ্যালো, আমার নাম বিপ্লব। আমি নীলের বড় ভাই।
- হ্যালো, আমার নাম নওরিন। আমি আপনার ভাইয়ের ফ্রেন্ড।
- আমাকে তুমি করে বলতে পারো। আর শুধুই কি বন্ধু?
-.......
- তুমি কি সত্যিটা জানো?
- কোন সত্যি?
প্রশ্নটা আমি না, খালিদ রাগি সুরে জিজ্ঞেস করল।
- এই যে নীল একজন ভ্যাম্পায়ার।
- জানি।
- তারপরেও একটা ভ্যাম্পায়ারের সাথে এভাবে থাকো?
- আমি ভ্যাম্পায়ারদের ভয় পায় না।
কথাটা অবশ্য বলা মিথ্যা হয়ে গেলো। কারণ খারাপ মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ারদের আমি ভয় পায়।
- বাহ, তুমি তো দেখছি আমার মতো।
- মানে?
- আমিও ভ্যাম্পায়ার শিকারি হয়ে ভ্যাম্পায়ারের প্রেমে পড়ি।
নীল এবার বলে উঠলো,
- তুমি হয়ত প্রভাকে মারতে চেয়েছিলে বলে ও এখন তোমার সাথে নাটক করছে নিজের জীবন বাচানোর জন্য।
- না, আমি তোর মতো ভালো শিকারি না যে আমার কাছ থেকে জীবন বাচানো লাগবে তার।
এতক্ষণ পর প্রভা বলল,
- চলো না, অনেক রাত হয়েছে। আবার কাল আলাপ করো।
- যাওয়ার আগে একটা কথা। আমি প্রভাকে বিয়ে করছি। খবরটা দেওয়ার জন্যই এখানে আসা।
.
আমি আর নীল নিজেদের রুমে ফিরে যাওয়ার সময় আমি হাটতে হাটতে নীলকে প্রশ্ন করলাম,
- প্রভা হয়ত পালটিয়ে গিয়েছে। তাই হয়ত বিপ্লব ভাইয়া ওকে ভালোবাসে।
- প্রভার মতো মেয়েদের আমি ভালোভাবেই চিনি। তারা কখনোই পাল্টাই না।
- প্রভাকে তুমি আগে থেকে চেনো?
- অবশ্যই। প্রভা মানুষখেকো ভ্যাম্পায়ারদের ভেতরেই পড়ে। কিন্তু বুদ্ধি আছে খুব। জটিল প্রকৃতির।
- তাহলে এখন কি হবে?
- সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। আমি জানি প্রভা এখানে কিছু না কিছু ঘটবেই। চোখ খোলা রেখে আমাকে ব্যস ইভিডেন্স জোগাড় করতে হবে ওর বিরুদ্ধে।
- আমিও তোমার সাথে আছে নীল।
নীল এতক্ষণ রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাটছিলো। আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরল।
.
পরের দিন নীলের কথা সত্যি প্রমাণ করে ঘটনা ঘটল। কলেজের স্টুডেন্ট এর ডেডবডি পাওয়া গেলো সিঁড়িরর নিচে। আমি আর নীল অবশ্যই দেখতে গেলাম লাশ।
- নীল, তোমার কি মনে হয়? আমাদের কি বিপ্লব ভাইয়াকে সব.....
- না, এখন না। কাল রাতে তো বললাম ইভিডেন্স লাগবে।
- ওকে।
- তুমি ব্যস সতর্ক থেকো।
- হুম।
.
প্রভা কতটা মারাত্মক তা আমি জানি না। তবে আমার উপর আগে মানুষ খেকো ভ্যাম্পায়ার হামলা করেছিলো। তারা কতটা মারাত্মক সেটা আমি জানি। তাই নিজের গলায় আব্বুর দেওয়া লকেট পরে নিলাম। ভ্যাম্পায়ার মারার স্টিকটা ভাজ করা যায়। তাই খুব সহজেই নিজের পকেটে রাখলাম। নীল অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু ৪ দিন হয়ে আসলো তবুও নীল কিছু খুঁজে পেলো না।
.
অপরদিকে খালিদকে আমি আবারও avoid করা শুরু করেছিলাম তার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে। খালিদ আর নীল আমার সমস্যা না। এরা দুজন আমার কোন choice ও না। এরা তা বোঝে না। আমি ব্যস চাই সবাই ভালো থাকুক আর এই প্রতিদিনের মরণ খেলা বন্ধ হয়ে যাক।
.
আমার শরীর যেনো ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হতে লাগলো। স্বপ্ন এ ঘুমের ভেতরে আমি খারাপ জিনিস দেখি। গা ঘাম দিয়ে আমার ঘুম ভেঙে যায়। শুধু তাই না। আমার মাঝে মাঝে খুব মাথা ঘোরে।
.
এমন এক দিন আমি ভ্যাম্পায়ারের হোস্টেলে যায়। সেখানে তাদের জিনিসপত্র ডেলিভারি করতে করতে আমি একেবারে সেন্সলেস হয়ে যায়।
.
আমাকে ছোট লেডি ভ্যাম্পায়ার লাবণির ঘরে শুতে দেওয়া হয়েছিল। আমি চোখ খুলে নিজেকে ওখানেই পায়। সৌরভ পাশে দাঁড়ানো ছিলো। এমন সময় বিপ্লব ভাইয়া রুমে ঢুকলো।
- নওরিন, তুমি খুব অসুস্থ। আমার মনে হয় তুমি রক্তস্বল্পতায় ভুগছো। তাই তোমার জন্য রক্ত এনেছি।
- আমি ভ্যাম্পায়ার না যে রক্ত খাবো।
- না, এই রক্ত আমি সাধারণভাবে তোমার গায়ে দেবো।
বিপ্লব ভাইয়া রক্তের ব্যাগ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো, কিন্তু সৌরভ ঠেকিয়ে দেয়।
- না।
- না কেনো?
- এই রক্ত নওরিনের গায়ে দেওয়া যাবে না।
- তা কেনো?
- নওরিনের আসলে কি হয়েছে তা আমরা জানি না। ভুল ভাল রক্ত নওরিনের গায়ে দেওয়া যাবে না।
- আরে O positive রক্ত সবাইকে দেওয়া যায়।
- তবুও এখন কেউ নেই ঘরে তাই দেওয়া যাবে না।
বিপ্লব ভাইয়া আমার দিকে রাগের দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর দ্রুত পায়ে চলে গেলো।
- নওরিন, তুমি ঠিক আছো?
- আছি।
- বিপ্লব ভাইয়া তো নীলের ভাই। আমার ভালোই চাইবে। রক্তটা দিতে দিলে না কেনো?
- বিপ্লব এখন প্রভার সাথে আছে।
- তো?
- নীল তোমাকে প্রভার ব্যপারে কিছু জানায় নি?
- জানিয়েছে।
- তাহলে আর প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো না। এখন বিশ্রাম করো।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...