Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - ০১)

আজও সকালে ঘুম ভাঙ্গল একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে। আমার ঘুম থেকে ওঠা দেখে পাশ থেকে আমার রুমমেট আর বেস্ট ফ্রেন্ড তমা নড়েচড়ে উঠল। সবার আগে ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে ওঠা আমার একটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ঘুম থেকে উঠেই আমি কটাকট আওয়াজ করতে লাগলাম মানে রেডি হতে লাগলাম। পাশে তমার ঘুম সম্পুর্ন ভেঙে গেলো আর তেলেবেগুনে জলে উঠলো।
- আচ্ছা, উঠবি তো উঠিবি, আমাকে কেন উঠাবি?
উত্তরে আমি শুধু হাসি দিলাম। তমা আমার কম্বল টেনে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ভোরে উঠেই আমার এই কলেজের ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য কিছু দায়িত্ব পালন করা লাগে। সকালে উঠেই সবগুলো ক্লাসের তালা খুলি আর জানালা খুলি। আমি একাই প্রায় সব কাজ করি। এই কাজগুলো যেনো আমার সংসারের কাজ। এই ভোরে বেশি আলো নেই চারিদিকে। শুধু নীল আলো। দূরে দেখি একটা মেয়ে আর একটা ছেলে ওই কলেজের বারান্দার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যপারটা কি জানার জন্য আমি কাছে গেলাম। মেয়েটা ছেলেটার দিকে মুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে আছি। আপনারা দেখলে ভাবতেন হয়ত প্রেমিক প্রেমিকা। কিন্তু না। ওই ছেলেটার চোখ লাল একদম। যেনো সে তার শিকার পেয়েছে। এই মানুষ রুপি ছেলের সাথে আমি ভালোভাবেই পরিচিত। তাই ভয় না পেয়ে একদম কাছে চলে গেলাম।
- অভি, প্লিজ এমন করো না।
- আমি নিজেকে ঠেকাতে পারছি না। আমাকে ঠেকানোর জন্য রক্ত নিয়ে আসো।
কাল বিকালে আমি কলেজের সিঁড়িতে হোচট খেয়ে হাতের কবজি কেটে ফেলেছিলাম। মনে হয় আজ এটাই আমার অস্ত্র। আমি রক্ত জমাট বাধা হাতটা অভির দিকে বাড়িয়ে দিলাম, যে একজন ভ্যাম্পায়ার।
- আমার এখান থেকে রক্ত খাও আর এই মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।
অভি সাথে সাথে আমার হাত ধরে এক টান মেরে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসলো। এমন সময় পেছন থেকে একজন অভিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
- নীল!
- অভি, যদি নওরিনের হাতের এক ফোটা রক্তও খেয়েছ এই রিভলভার দিয়ে তোমার বুক ছিদ্র করে দেবো।
নীলের হাতে ছিলো ভ্যাম্পায়ারদের মারার স্পেশাল রিভলভার । কেনোই বা থাকবে না! কারণ নীলের পরিবার ভ্যাম্পায়ার শিকার করে।
- নীল এমন করো না।
আমি নীলের ডান হাতটা ধরে ফেললাম,যেটাতে রিভলভার ধরা ছিলো।
- ওকে বরং আব্বুর কাছে নিয়ে যাও।
নীল আমার কথায় মাথা ঠান্ডা করে রাজি হলো। আমার পাশে ভ্যাম্পায়ারের বশে থাকা ওই মেয়েটাকেও নিয়ে যেতে হবে। নীল আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল কারণ দুজনকে একসাথে ও নিয়ে যেতে পারবে না। আমার বুকের ভেতর একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। আমি জানি আব্বু মেয়েটাকে একজনের কাছে নিয়ে যাবে, যার সাথে আমি মোটেও দেখা করতে চাই না। কিন্তু এখন উপায় নেই। কথা মতো আমি মেয়েটাকে আর নীল অভিকে নিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে নিয়ে গেলাম। আব্বু এই কলেজের প্রিন্সিপাল। আব্বু এই সময় রুমেই থাকে। আব্বু অভিকে খুব করে বকল। বলা যায় বকার চেষ্টা করল। আব্বুকে কখনো বকতে দেখি নি।
- তোমাকে না কতবার বলেছি নিজেকে কন্ট্রোল করা শেখো।
- আচ্ছা, ওই মেয়েটাই তো আমার প্রেমে....
- থামো, এর আগেও এমন বলেছিলে তুমি।
আব্বু আর অভির প্রায় রোজকার ব্যাপার এইটা। আপনাদের অবাক লাগতে পারে যে একজন ভ্যাম্পায়ারের সাথে এতো ভালো ব্যাবহার কেনো। আসলে এই কলেজে দুই ধরনের স্টুডেন্ট পড়ে। এক মানুষ আর অপরটা ভ্যাম্পায়ার। আর আমি এই দুই দলের লোক। যদিও নীল তা না। তার ফ্যামিলি আগে ভ্যাম্পায়ার শিকার করত আগেই বলেছি। তাই নীলের এই ভ্যাম্পায়ারদের ওপর আগে থেকেই একটা রাগ। কিন্তু বর্তমানে ভ্যাম্পায়ারেরা নিজেদের সামলে নিচ্ছে আর মানুষের রক্ত পান করা ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষ আর ভ্যাম্পায়ারেরা মিলেমিশে থাকবে এটাই আমার আব্বুর লক্ষ্য ছিলো।
.
রুমের ভেতর আমার এই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষের প্রবেশ হলো। আব্বু খুব খুশি আর আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নীল তো তার গম্ভীর ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
- খালিদ, খুব ভালো করেছ যে এসেছ। আসলে এই মেয়েটা বশে পড়ে গেছে। তাই এর স্মৃতি ডিলিট করে দাও।
আমার আব্বুই পারে এতো সুন্দর করে ভ্যাম্পায়ারদের ম্যানেজ করতে। খালিদ হাসান, যে কিনা আমার জীবনের স্পেশাল একজন সে পিউর ব্লাড ভ্যাম্পায়ার। সব ভ্যাম্পায়ারের কাছে স্মৃতি ডিলিট করার মতো পাওয়ার নেই। শুধু পিউর ব্লাড ভ্যাম্পায়ার এমন করতে পারে। আমাদের কলেজে একজনই পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার আছে। আর সেটা হলো খালিদ। খালিদ আগেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "কেমন আছো?" আমি কাপা গলায় বললাম, "ভালো।" আসলে এটা আমার খালিদের প্রতি ভালোবাসা না যার কারনে আমি এতো ঘাবড়িয়ে কথা বলছি, এটা খালিদের প্রতি আমার রাগ আর ক্ষোভ।যাকে ভালোবাসি তার ওপর ঠিক মতো রাগ করা যায় না। তাই আমার মনে এখন খালিদের প্রতি রাগ আর ভালোবাসার মিশ্রণ। আমি বাহানা বানিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
.
ক্লাসে বই নিয়ে জানালার পাশের একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। এই সময়টা কেউ থাকে না ক্লাসে। আজ আমি খুব ভয়ে ভয়ে আছি। আমি খালিদের সাথে মোটেও দেখা করতে চাই নি। ভ্যাম্পায়ারেরা রাতে ক্লাস করে আরর আমরা দিনে। তাই খালিদের সাথে আমার তেমন দেখা হওয়ার সম্ভবনা ছিলো না। কিন্তু আজ ছুটির পর প্রথম ক্লাস শুরু হবে। তাই দিন আর রাতের সব স্টুডেন্ট আজ উপস্থিত থাকবে। তারমান্র খালিদও থাকবে। সবার চোখের আড়ালে আমি ক্লাসে এসে বসে আছি যাতে করে খালিদের সামনে না পড়তে হয়। ধীরে ধীরে সময় পার হলো। স্টুডেন্টরা জমা হতে থাকলো মাঠে। রাতের স্টুডেন্ট বা ভ্যাম্পায়ার স্টুডেন্টের সংখ্যা কম। তবুও এই কম সংখ্যক স্টুডেন্ট সবাইকে বশ করে ফেলতে পারে। ভ্যাম্পায়ারেরা দেখতে ইন্টারন্যাশনাল হিরোদের মতো। সেই রকম বডি আর ফিগার একদম সুগঠিত। গায়ের রং সাদা ফর্সা। মানুষ তো আকর্ষন বোধ করবেই। আর তাই হলো। ভ্যাম্পায়ারেরা মাঠে আশার সাথে সাথে সব স্টুডেন্টরা চিয়ার করতে শুরু করে দিলো, যেনো কোন ফিল্মস্টার এসেছে। বাইরে এতো গ্যাঞ্জাম। খুব চেষ্টা করলাম জানালা দিয়ে বাইরে না তাকাতে। কিন্তু জানালার কাছে বসা আমার বোকামি হয়েছে। যেই সব ছেলে মেয়েরা " খালিদ, খালিদ" বলে চিল্লাতে লাগলো আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে ফেললাম। আমার খালিদ সবচেয়ে লম্বা আর সবচেয়ে সুন্দর ভ্যাম্পায়ার। তার চুলগুলো দেখে মনে হয় একদম সফট হবে। চেহারাটাও খুব মায়াবী। আমি অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি। খালিদও কিভাবে জেনো টের পেয়ে গেলো আর আমার দিকে তাকালো। আমাদের দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেলো। অভি আজ ভোরে মেয়েটার রক্ত খাওয়ার জন্য তাকে বশ করেছিলো। তখন অভির চোখ লাল হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু পিয়র ব্লাড হয়ত চোখের রং পরিবর্তন না করেই বশ করতে পারে। আমিও তাই অনুভব করলাম। মুগ্ধ হয়ে খালিদের চকলেট কালারের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে তাকানোর পর একটা দীর্ঘশ্বাস দিলাম। বাতাসে আমার নিঃশ্বাস ভেসে গেলো খালিদের কাছে। ভ্যাম্পায়ারের ঘ্রাণ শক্তি বেশিই হয়। আর পিয়র ব্লাড হলে তো কথাই নেই। খালিদ আমার নিঃশ্বাসের বাতাসটা বুক ভরে টেনে নিলো। এই দৃশ্য দেখে আমি আর না থাকতে পেরে জানালাটা বন্ধ করে দিলাম আর আমার বইয়ের ওপর কয়েক ফোটা পানি পড়ল।
.
ক্লাস শুরু হওয়ার আগে তমা আমার পাশে এসে বসল। ভাবলাম খালিদের ব্যপারটা মাথা থেকে ঝাড়তে পারব আর অন্য কাজে ব্যস্ত হবো। কিন্তু তমা ঝাড়তে দিলো না।
- আমি জানি তুই খালিদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলি।
- মোটেও না।
- মোটেও হ্যা। খালিদকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলি তাই তো?
- আর তুই আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলি।
- কথা ঘুরাবি না বলে দিলাম।
-.....
- খালিদকে তুই পছন্দ করিস?
- জিজ্ঞেস করছিস না বলছিস?
- খালিদ তোর ক্রাশ?
- না।
- মিথ্যা বলিস না। আমি তোর বেস্ট ফেন্ড কিন্তু।
- আমি খালিদকে খুব শ্রদ্ধ করি। খালিদ খুব ভালো।
- ভালো তো প্রোপজ করে ফেল।
- না।
- না, কেনো? জানি তুই অত আকর্ষনীয় না....
- ওই, চুপ।
- এই চারকোণা বডি খালিদের পছন্দ নাও হতে পারে। অলরেডি ভ্যাম্পায়ারে একটা সুন্দরী মেয়ে ভ্যাম্পায়ারও আছে....
- তুই থামবি?
- আচ্ছা, আচ্ছা, থামলাম।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...