Skip to main content

ভ্যাম্পায়ার শিকারি (পরিচ্ছেদ - ০৩)

স্বপ্ন, আমি একটা বড় ঘরের ভেতর একটা বিছানায় শুয়ে আছি। আমার গায়ে ডার্ক গোলাপি রঙের নাইট ড্রেস। চোখ দুইটা অস্পষ্টভাবে খোলা ছিলো। একটা বড় হাত আমার গালে আলতো করে স্পর্শ করল। আমি সেই হাতটা কার তার চেহারা না দেখেই বিছানা থেকে উঠে বসলাম। খুব ভালো লাগছিলো। পুরটা সময় হাতটা আমার গালে ছিলে। আমার গালে হাত বুলাতে বুলাতে আমি এক সময় এই হাতে চুমু দিলাম। হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মাথা উচু করে সামনে তাকালাম।
- খালিদ!
ঘুম ভেঙে গেলো এখানেই। স্বপ্নেও খালিদ আমার পেছন ছাড়ছে না। আজকে শব্দ না করেই রেডি হলাম। তা না হলে তমা সত্যিই আমার খবর করে দিতো। রেডি হয়ে কলেজের দরজা খুলতে গেলাম। একটু বেলা হলে আব্বু তেড়ে আসলো আমার দিকে।
- কাল বৃষ্টিতে ভিজেছ আমাকে বলো নি কেন? কিছু না বলেই ঘুমাতে চলে গিয়েছ। তোমার আব্বুর চিন্তা হয় না বুঝি।
- সামান্য বৃষ্টি....
- সামান্য হোক বা অসামান্য হোক না কেনো আমাকে বলবা না। কবে তোমার বয়ফ্রেন্ড হবে, বিয়ে করবা আর আমাকে একা ফেলে চলে যাবা।
- আব্বু! থামো। কিচ্ছু হয় নি। আমি ঠিক আছি।
- চলো এক্ষুনি ডাক্তারের কাছে চলো।
- আব্বু যাও এখন। আমি ক্লাস করব। ডাক্তার লাগবে না।
- ও, একটা কথা মনে পড়ে গেলো। কলেজের ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য তোমাকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
- কি দায়িত্ব?
- ফ্যান লেটার আর গিফট ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে গিয়ে দিয়ে আসতে হবে। পারলে নীলকেও নিয়ে যাও। সেও তো কলেজ ক্যাপ্টেন।
- আচ্ছা।
আব্বু তো চলে গেলো কিন্তু মস্তিষ্কে খালিদের চিন্তা আবার ঘুরপাক খাওয়া শুরু করে দিলো। ভ্যাম্পায়ারদের ওখানে যাওয়া মানেই খালিদের সাথে দেখা হওয়া, যাকে আমি প্রাণপনে Avoid করার চেষ্টা করি। ভাবতে পারি নি আমাকে কেউ avoid করবে।
.
ক্লাস শুরু হলো। সেই পুরাতন বরিং ক্লাস আবার। মনোযোগ হারিয়ে ফেললাম। এদিক ওদিক তাকাতেই নীল ক্লাসে আসে নি সেই দিক নজর পড়ল। বুড়োটার আবার সর্দি লাগতে পারে তাই দেখে আসা দরকার। ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি নীলের হোস্টেলের দিকে যায়। পথে কলেজের বারান্দায় ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো।
- আরে নীল, দাড়াও দাড়াও।
আমার কথা শুনেও না শোনার ভান করে চলে গেলো। আমি নীলের দিকে ছুটে গেলাম।
- কি ব্যপার বুড়ো? ঠান্ডা লেগেছে নাকি?
- না।
- ক্লাসে আসো নি কেনো?
- এমনি।
- এমনি মানে? কি হয়েছে?
- সব কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?
- না।
- হুম, এবার তাহলে সামনে থেকে সরো।
- যাওয়ার আগে একটা কথা।
- কি?
- ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে জিনিসপত্র দিতে যেতে হবে।
- কি? আমাকে তোমার সাথে যেতে হবে?
- হুম।
- তমাকে নিয়ে যাও।
- আচ্ছা। ভালো থাকো।
নীল কথার জবাব না দিয়েই চলে গেলো। কথা বলার পুরটা সময় আমার দিকে একবার তাকিয়েও দেখলো না। খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। ধ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিয়ে বসে পড়লাম। তমা ঘরে নেই। হাটু দুইটা মুখের কাছে নিয়ে মুখ গুজে নিলাম।
.
নীল আমার ছোট বেলার বন্ধু। খুব ছোট বেলার থেকেই ওর মা বাবা ওকে ভ্যাম্পায়ারদের শিকার করার ট্রেনিং দিতো। নীলের গায়ে, জামায় রক্ত লেগে যেতো শিকার করে আসার সময়। আমি ওর জামা কাপড় আর ওর গা ধুয়ে দিতাম ছোট বেলায়। আজ বড় হয়ে আমার সাথে এমন আচরণ করছে। ওর মা বাবা যেখানে ব্যস্ত থাকত আমি সব সময় ওকে নিজের সব টুকু সময় দিতাম। কাল পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো। আচ্ছা, আমার যেমন নীলের ব্যবহারে কষ্ট লেগেছে, তেমনি কি খালিদও আমার ব্যবহারে কষ্ট পায়? না, না, একটা তুচ্ছ মানুষের কথায় কেনো কষ্ট পাবে একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ার!
.
আমি চোখের পানি মুছে রেডি হয়ে তমাকে ডাকতে গেলাম। তমা রাজি হয়ে গেলো। আজ তমার ঘুম ভাঙিয়ে দিনি বলে ওর মন ভালো। সুযোগের সৎ ব্যবহার করলাম। সব জিনিস নিয়ে ভ্যাম্পায়ারদের হোস্টেলে গেলাম। হোস্টেলে গিয়ে প্রথমে বুদ্ধিমান টাইপ বা সেন্সেবল ভ্যাম্পায়ারের সাথে দেখা হলো, সৌরভ।
- কি ব্যপার নওরিন? তোমাকে তো আর পাওয়ায় যায় না?
- ব্যস্ত থাকি।
- ব্যস্ত থাকো নাকি কাউকে avoid করো?
- স্টুডেন্টরা তোমাদের কিছু ফ্যান লেটার আর গিফট দিয়েছে।
ফ্যান লেটারের বড় ভক্ত অভি, যার সাথে প্রথম পর্বে পরিচয় হয়েছিলো।
- কই, দেখি। আমার ফ্যান লেটার সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে।
অভির গালে তাকিয়ে দেখলাম লাল হাতের ছাপ, যেনো কেউ চড় মেরেছে। ভ্যাম্পায়ারদের এখানকার সব স্টুডেন্ট ভালোবাসে ফিল্মস্টারের মতো করে। তাই তারা তো কেউ চড় মারবে না।
- অভি তোমার গালে কিসের দাগ?
- ও কিছু না। দুষ্টুমি করে মার খেয়েছি।
অভির কথায় বিশ্বাস হলো না। আমি সৌরভের দিকে তাকালাম।
- খালিদ চড় মেরেছে।
- এই সৌরভ তোকে না বলতে নিষেধ করলাম।
- তোমার রক্ত খেতে গিয়েছিলো তাই খালিদ ওকে মেরেছে।
কথা শুনে খালিদের ওপর আমার রাগ আরও বেড়ে গেলো। আমি কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই খালিদের রুমের ভেতর ঢুকে পড়লাম। খালিদ রুমে ছিলো না। আমি আবার সৌরভকে জিজ্ঞেস করলাম, " খালিদ কোথায়?" সৌরভকে বলতে না দিয়ে অভি বলল, " খালিদ কেনো আবার? থাক না নওরিন।" সৌরভ বলে দিলো, " খালিদ লাইব্রেরিতে।"
- সৌরভ, নওরিনকে কেনো বললি কথাটা?
- তোর বাহানায় নওরিন এতোদিন পর খালিদের সাথে কথা বলবে।
ভ্যাম্পায়ারদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা এখানে। আমি বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে গেলাম লাইব্রেরিতে। খালিদ চেয়ারে বসে একটা বই পড়ছিলো।
- নিজের অধিকার সব সময় আমার ওপর চাপিয়ে দাও কেন?
- মানে?
- অভিকে চড় মেরেছ কেন?
- তোমার রক্ত খেতে গিয়েছিলো তাই।
- আমি নিজে ওকে রক্ত খেতে দিয়েছিলাম।
- তোমাকে তো এখন মারতে পারি না।
- তুমি নিজে আমার রক্ত খাবা না, আমাকে তুচ্ছ করবা, তাই বলে অন্য কাউকে খেতে দিবা না।
- কি বলো এসব?
- I hate you. আমার বিষয়ে আর কোনদিন তুমি নাক গলাবা না।
আমি কথা শেষ করেই নিজের হোস্টেলে ফিরে চলে যাবো কিন্তু রাস্তায় নীলের সাথে দেখা হয়ে গেলো।
- ফ্যান লেটার দিয়েছ?
- আচ্ছা, নীল ভালো করেছ যে এসেছ। জানো কি হয়েছে...
আমি কথা বলতে বলতে নীলের হাত চেপে ধরলাম।
- খালিদ অভিকে চড় মেরেছে আমার রক্ত খেতে গিয়েছিলো বলে?
- আমি অভির দিকে রিভলভার ধরেছিলাম।
- সেটা আলাদা কথা। খালিদ তো...
আমার কথা শেষ না হতেই ওপর থেকে পানি ঢেলে দিলো কেউ। উপরে আমি আর নীল তাকিয়ে দেখি মারিয়া ( ভ্যাম্পায়ারদের ভেতরে এক সুন্দরি ভ্যাম্পায়ার) বালতি হাতে হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়ানো। নীল সাথে সাথে তার পকেট থেকে ভ্যাম্পায়ার মারার রিভলভারটা বের করে মারিয়ের দিকে তাক করল।
- নীল, না।
আমি নীলকে ঠেকালাম। উপর থেকে মারিয়ে বলল, " তোমার বান্ধবীকে বলো তার ব্যবহারটা যেনো ঠিক করে।"
মারিয়ে ভেতরে চলে গেলো। আর নীলও নিজের হাতটা নামিয়ে নিলো।
- ওর সাহস কি করে হয় তোমার গায়ে পানি ঢালার।
- নীল যায় হোক। চলো চলে যায়।
আমার হাত ধরে নীল আমাদের হোস্টেলের দিকে হাটতে যাবে, এমন সময় নীলের চোখ আমার কাটা কবজির দিকে পড়ল।
- হাত কাটা...
- সেদিন সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়েছিললাম। ও কিছু না। এখন তুমি আবার আব্বুর মতো শুরু করো না।
নীল জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। আমি কি হয়েছে জানার জন্য নীলের হাত ধরলাম, কিন্তু নীল আমার হাত ঝটকা মেরে ফেলে দিলো।
- আমার কাজ আছে আমি আসছি।
- নীল, শোন...
আমার কথা না শুনেই নীল ধ্রুত পায়ে চলে গেলো।
.
বিকালে আমি সেই বুড়ির বাড়ি তার দেওয়া জামা কাপড় ফেরত দিতে গেলাম। নীলের রুমে গিয়ে তার জামাটাও নিয়ে আসলাম। কিন্তু নীল রুমে ছিলো না। নীলের কি হয়েছে বুঝলাম না। একবার ভালো করে কথা বলে, আরেকবার খারাপ করে কথা বলে। বুড়ির বাড়ি জামা দিয়ে আসলাম। ফেরার পথে দেখি রাস্তায় একটা লোকও নেই। কিন্তু আসার সময় লোকজন ছিলো। হাটতে হাটতে আমার মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। আমি হাটার স্পীড বাড়িয়েদিলাম। হঠাৎ আমার মনে হলো একটা লোক পড়লো আমার পেছনে লাফ মারলো। পেছন ফিরে দেখি এরা আসলে মানুষ খাওয়া ভ্যাম্পায়ার। মানুষের রক্ত খেয়ে তারা তাদের মেরেই ফেলে। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আমার পেছনে ওই ভ্যাম্পায়ার গুলো তাড়া করতে লাগলো। আমি জানি না আমি কিভাবে নিজেকে বাচাব। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি একটা পুরাতন বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লাম। ঢুকে বাড়ির একদম ওপরের ঘরে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। দৌড়ানোর কারনে আমার নিঃশ্বাস ধ্রুত হয়ে গেছে। আমি হাপাচ্ছি। হয়ত ওই ভ্যাম্পায়ার গুলো আমার ঘ্রাণ পেয়ে গেছে। আমাকে পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে আমার মুখে আচড় কেটে দিলো। আমি চিল্লিয়ে পেছন ফিরে ওদের দিকে তাকালাম। ওই ভ্যাম্পায়ারগুলো আমার দিকে আস্তে আস্তে আগাতে থাকলো। এবার ওরা আমার হাতে আচড় মারলো। আমি ব্যাথায় চিল্লিয়ে উঠলাম। আমার একদম কাছে এসে ঘাড়ে কামড় মারতে যাবে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। আমার কাছে পালানোর পথ নেই আর বাচারও পথ নেই। আমি শেষ বারের মতো নিজের মনের কথাটা প্রকাশ করলাম, " খালিদ I love you।"কামড়টা বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো তবুও আমার ঘাড়ে পড়ল না। সামনে তাকিয়ে দেখি ভ্যাম্পায়ারগুলো ভয়ে ভয়ে আমার কাছ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। ঘরের জানালা দিয়ে খালিদ এসেছে। একজন পিয়র ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের অনেক ক্ষমতা। তাদের সামনে এই সাধারণ ভ্যাম্পায়ার কিছুই না। খালিদ আমার ঠিক পেছনে দাঁড়ালো। তারপর আমার চোখ দুইটা তার ডান হাত দিয়ে ঢেকে দিলো। খালিদ আমাকে এমন ভাবে ধরল যেনো মনে হচ্ছে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। খালিদ আমার থেকে লম্বা আর আমার মাথাটা ঠিক তার বুকে গিয়ে ঠেকলো। আমি শুধু অনুভব করলাম যে আমার চারিদিকে প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...