Skip to main content

ডায়েরি (পরিচ্ছেদ - ০২)

অবেশেষে তাকে খুজে না পেয়ে খুব বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা বের করে তাকে কল দিলাম। কিছুক্ষন কল বাজার পরেই রমিজ চাচা কলটা ধরলেন। রমিজ চাচা কলটা ধরতেই খুব গম্ভীর আর কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে আমি তাকে বললামঃ
-রমিজ চাচা। চা বানাতে গিয়ে তুমি কোথাও উধাও হয়ে গেলে? এখন তুমি কোথায়?

রমিজ চাচা আমাকে যা বললো তা শুনে যেনো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। রমিজ চাচা বললেনঃ
-কি বলেন এসব বাবু? আমি চা বানামু কেমনে? আপনি কি ঘুমের তালে আমারে কল দিলেন নাকি! আমিতো এখনও আমার গ্রামের বাড়িতেই আছি। আপনারে তো কইয়াই আসছিলাম যে আমার মা মারা গেছে তাই আসতে ৩-৪ দিন বেশি সময় লাগবো।
-তুমি কি সত্যিই আজ গ্রাম থেকে ট্রেনে করে আসোনি?
-কি বলেন বাবু! আজকা সকালেই মারে দাফন দিলাম। এইখানে এখন মেলা কাম, তাই আরো ২ দিন থাকা লাগবো। আর আমি ট্রেনে কইরা আসুম কেন? আমিতো বাসে যাতায়াত করি। আপনের কি হইছে বাবু? আমি কি তাড়াতাড়ি চইলা আসুম?
-আরে কিছু হয়নি। তুমি গ্রামের কাজ শেষ করে ধীরে সুস্থেই আসো। হয়তো বই পড়ার নেশায় ভুল কিছু দেখেছি। আচ্ছা ঘুমাও। তুমি চিন্তা করোনা।

এই বলেই কলটা আমি কেটে দিলাম। রমিজ চাচাকে তো বেশ চিন্তা করতে না করে দিলাম। কিন্তু আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।

রমিজ চাচা যদি না এসে থাকে তাহলে একটু আগে আমি যাকে দেখলাম, যার সাথে কথা বললাম। সে কে ছিলো! আর আসলেই তো রমিজ চাচাতো ট্রেনে করে যাতায়াত করেন না। তিনি সব সময় বাসে যাতায়াত করেন। তাহলে কি একটু আগে রমিজ চাচা আমার কাছে এসেছিলো এটা শুধুমাত্র আমার কল্পনা ছিলো?
এরপর গম্ভীরভাবে বাড়ির উঠানে গেলাম। সেখানে গিয়ে টেবিলে যা দেখলাম আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। টেবিলে এখনও সেই ডায়েরিটা পরে রয়েছে, যেটা কিছুক্ষণ আগে রমিজ চাচা আমাকে দিয়েছিল। রমিজ চাচা যদি নাই আসে তাহলে এই ডায়েরিটা আমার কাছে এলো কিভাবে?
ব্যাপারটা যদি আমার কল্পনা হতো, তাহলে তো আর ডায়েরিটা এখানে পরে থাকতো না! আর রমিজ চাচাও মজা করার মানুষ না।

বুঝলাম, এই সকল রহস্যের সমাধান এই ডায়েরির ভেতরেই রয়েছে। এরপর ডায়েরিটা টেবিল থেকে হাতে নিলাম। ডায়েরিটা খুলেই দেখলাম যা ভেবেছিলাম তাই। এটা একটা ব্যাক্তিগত ডায়েরি ছিলো। ডায়েরিটা বেশ পুরাতন এবং পুরোটাই বাংলা ভাষায় লেখাছিলো। যে ডায়েরিটা লিখেছে তার লেখার প্রশংসা করতে হয়। অসাধারণ সুন্দর হাতের লেখা। ডায়েরির শুরুতেই যে লিখেছে তার নাম লেখা ছিলোঃ "সানজিদা আফজাল মিশি।"
.
পুরো ডায়েরিটা পড়া শুরু করলাম। সেখানে লিখাছিলোঃ
"আমার নাম সানজিদা আফজাল মিশি। আমার জন্ম হয় বাংলাদেশে। আমার যখন ১৩ বছর বয়স ছিলো তখন আমার বাবা-মা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় । এরপর থেকে আমার মামা-মামিই আমাকে বড় করে তোলে। আমি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলাদেশেই ছিলাম। এরপর আসিফুর রহমান আসিফ নামের একজন ছেলের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। এরপর আমি আসিফের সাথে আমেরিকায় চলে যাই। আসিফ আমেরিকার একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করতো। আমরা খুব ভালোভাবেই সেখানে বসবাস করতে থাকি। আসিফো অনেক ভালো একটা ছেলে ছিলো। সেও আমার মতো অনাথ। আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে তার আপন আর কেউ ছিলো না। তাই সে আমায় অনেক ভালোবাসতো। যদিও সে দেশের বাহিরে ছিলো, তারপরও সে বাংলাদেশকে অনেক ভালোবাসতো। সে চাইতো এই দেশে এসেই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু কাজের চাপে সে দেশে ফেরার সময়ো পায়না। দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের ৭ বছর কেটে যায়। এর মধ্যে আমাদের একটা মেয়েও হয়ে গিয়েছিলো। ভালোবেসে আসিফ নাম দিয়েছিলো রাত্রি। তখন রাত্রির বয়স ছিলো ৫ বছর। সেবার আসিফের কোম্পানি থেকে হঠাৎ আসিফকে এক মাসের ছুটি দেওয়া হয়। ছুটি পাওয়ায় আসিফ, আমি আর রাত্রি ৩ জনেই বেশ খুশি হয়েছিলাম।

চলবে......
লেখাঃ মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

হুমায়ুন আহমেদ - এর উক্তি সমূহ

১. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালবাসা। ২. ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটোই মানুষের চোখে লিখা থাকে। ৩. একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে দেখা ও তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিষ্কার করার মধ্যবর্তী স...