Skip to main content

All Man Are Dogs

-নারী স্বাধীনতার জন্য আমি গরুর মাংস খাই না, ষাঁড়ের মাংস খাই। মুরগী খাই না, মোরগ খাই। মেয়ে মাছ খাই না, ছেলে মাছ খাই। বকরীর মাংস খাই না, খাসীর মাংস খাই।
-তাহলে সবজি কোনটা খান? ছেলে সবজি নাকি মেয়ে সবজি?
-লেডিস ফিংগার বাদে সব।
-আচ্ছা আপনি কিসের দুধ খান ? গাভীর নাকি ষাঁড়ের?
কিসের দুধ খান জিজ্ঞেস করাতেই রেগে ফুঁসে উঠলেন বিশিষ্ট নারীবাদী লেখিকা সুলতানা আইরিন। সিগারেটে একটা কড়া টান দিয়ে বললেন,
-কাজের প্রশ্ন করো। নয়তো ইন্টার্ভিউ দেবো না।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই সাংবাদিকের চাকরী পেয়েছি। চাকরীর প্রথম দিনের প্রথম ইন্টার্ভিউটাই যদি না নিতে পারি, তবে আর চাকরী থাকবে বলে মনে হয় না। ভুল পালটে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-ম্যাম রেগে যাচ্ছেন কেনো? আচ্ছা বলুন পুরুষজাতি সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
-অল ম্যান আর ডগস।
-ঘেউ ঘেউ।
-কি করছেন এসব?
-অল ম্যান আর ডগস বললেন তো তাই কুকুরের মতো একটু ডাক দেবার চেষ্টা করলাম। বাদ দিন, পুরুষজাতির মাঝে তো আপনার বাবাও আছে। তার সম্পর্কে কি ধারণা?
-সেও খারাপ হতে পারে। হয়তো তা আমার মা জানে। কিন্তু মায়েরা অনেক কিছু লুকোয়। হয়তো সেও আট-দশটা পুরুষের মতো ধর্ষক, প্রতারক, স্বার্থপর, বহুগামী।
-তারমানে আপনি বলতে চান, আপনি জারজ সন্তান?
-এসব কি ধরনের প্রশ্ন?
-ম্যাম আপনার কথার প্রেক্ষিতে আস্ক করলাম। স্কিপ দ্যাট, বলুন পুরুষজাতিকে আপনি কিভাবে দেখতে চান?

সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন বিশিষ্ট নারীবাদী নেত্রী সুলতানা আইরিন। জ্বলন্ত সিগারেটটা মেঝেতে ছুড়ে ফেললেন। এরকমটা মানুষ যখন প্রচণ্ড রাগ করে তখন করে। কিন্তু তার এভাবে রেগে যাওয়ার কারণটা কি? আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই...
-এই সাংবাদিক আপদটারে বের কর।
সাথে ছায়ার মতো থাকা দুই চ্যালাকে অর্ডার দিয়ে দু'তলায় উঠার সিঁড়ির দিকে এগোলেন। আমিও সাত পাঁচ না ভেবে সুলতানা আইরিনের পা ধরে ফ্লোরে শুঁয়ে পরলাম। চেঁচিয়ে বলতে লাগলাম,
-আমার ভুল হয়ে গেছে ম্যাম। প্লিজ ইন্টারভিউটা দিন। নয়তো আমার চাকরী থাকবে না। প্লিজ ম্যাম গরীবরে একটু রহম করুন।

হুট করে কি হলো কে জানে?  বাংলা সিনেমার খল নায়িকাদের মতো করে হেসে উঠলেন সুলতানা আইরিন। চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন,
-হ্যা! এই জায়গাতেই চাই। পুরুষকে ঠিক এই জায়গাতেই চাই।
আমি নিচ থেকে তার পা ধরেই জবাব দিলাম,
-এটা তো সম্ভব না।
-কেনো?
-এতো পুরুষ আপনার ফ্লোরে আটবে না।
আমার কথা শুনে হেসে ফেললেন সুলতানা আইরিন। বললেন,
-আমার ফ্লোরে না। আমার জুতোর নিচে চাই।

জুতোর নিচে? তা কি করে সম্ভব? জুতোর নিচে এতো পুরুষ আটবে কি করে? ব্যাপারটা যাচাই করা উচিৎ। তাই বাম হাত দিয়ে তার ডান পা শক্ত করে ধরলাম; আর ডান হাত দিয়ে তার বাম পায়ের জুতোটা টেনে খুললাম। ভালো করে এপিঠ ওপিঠ দেখার পর জুতোটাকে আমার সাধারণই মনে হলো।
-এই তুমি আমার জুতো নিয়ে কি করছো?
-দেখলাম আপনার জুতোর মাঝে বিশেষ কিছু আছে কি না। কিন্তু কিছুই তো পেলাম না।
-উফ স্টুপিড। পা ছাড়ো।
-আগে বলুন ইন্টার্ভিউ দিবেন।
-আচ্ছা দেবো। আগে পা ছাড়ো।

আমি এবার তাড়াতাড়ি করে পা ছেড়ে নিজের শার্টের ভাজ আর চুল ঠিক করলাম। নয়তো সাংবাদিক সাংবাদিক ভাবটা চলে যাবে।
সুলতানা আইরিন গিয়ে পুনরায় সোফায় বসলেন। এবার আমার প্রথম প্রশ্ন,
-বর্তমানে নারীবাদী সংগঠনগুলো শহরকেন্দ্রিক বিলাসমুখী হয়ে পরেছে। কোন গ্রামীণ বা গরীব নারী নির্যাতিত হলে তাদের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু কোন শহুরে সুন্দরী মেয়ে ফুটপাতে হাটটে গিয়ে উষ্টা খেলে নারীবাদী সংগঠনগুলো তখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দেয়। এ ব্যাপারে আপনার মত কি?
-কোন প্রমাণ আছে?
-অসংখ্য। বর্ডারে ফেলানী হত্যা, টংগীতে আট বছরের ধর্ষিত মেয়েসহ বাবার ট্রেনের নিচে পরে আত্মহত্যা, কিশোরগঞ্জে যৌতুকের জন্য গৃহবধুকে পুড়িয়ে হত্যা। এছাড়াও অনু, তাশফিয়া এরা কেউই কিন্তু বিচার পায় নি। এতো অসংখ্য নির্যাতিত মেয়েদের কষ্ট রেখে আপনারা শুধু বোরখা পরবে কি পরবে না তা নিয়ে পরে আছেন। জাতি জানতে চায় কেনো?
সুলতানা আইরিন কি যেনো ভাবলেন। তারপর জবাব দিলেন,
-ফেলানীর ব্যপারটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের। এখানে আমার কিছু করার নেই। আর বাবা মানেই পুরুষ। আর পুরুষ মানেই প্রতারক। তাই তাদের আত্মহত্যায় আমার কিছু যায় আসে না। আর কোন গায়ের গেয়ো গৃহবধুকে নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। অনু, তাশফিয়া এদের বিচারের তদন্ত চলছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব নিয়ে ভাবার আমার সময় নেই। আমার পুরো বিশ্ব নিয়ে ভাবতে হয়।

পুরো বিশ্ব? এই মহিলা বলে কি? আমি তাড়াতাড়ি করে জিজ্ঞেস করলাম,
-ম্যাম বলুন তো বাংলাদেশে বর্তমানে বিভাগ কয়টা?
-ছয়টা।
-ম্যাডাম আমি যখন হাফপ্যান্ট পরা শিখেছি, তখন বিভাগ ছিল ছয়টা। কিন্তু এখন কয়টা?
-এই বাজে বকো না তো, অন্য প্রশ্ন করো। নয়তো ইন্টার্ভিউ দেবো না।
মনে মনে ভাবলাম নিজের দেশে বিভাগ কয়টা জানে না। অথচ পুরো বিশ্ব নিয়ে ভাবছে।
-আচ্ছা ম্যাম শেষ প্রশ্ন।
-বলো।
-আপনি আপনার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে পরবর্তীতে একজন বয়স্ক রুগ্ন শুকনো এক পা কবরে দেয়া বিজনেসম্যানকে বিয়ে করেছেন। আপনার যেহেতু পুরুষে এতো এলার্জি তবে আপনি কেনো পরবর্তীতে আবার পুরুষ বিয়ে করলেন। একজন মেয়েকেও বিয়ে করতে পারতেন। অথবা আপনি যেহেতু বলেছেন, অল ম্যান আর ডগস; তাহলে একটা কুকুরকেই বিয়ে করতেন। দু'দুটো পুরুষকে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো?

আমার শেষ প্রশ্নটা শুনে ম্যাডামের রাগ উঠে গেলো তুঙ্গে। হাতের কাছে যা পেলেন। তাই-ই আমায় ছুড়ে মারতে লাগলেন। আমিও সাথে সাথে পেছন ঘুরে ভৌ-দৌড়। তবে আসার আগে সুলতানা আইরিনের বাসার দরজায় দুই সেকেন্ডের জন্য দাঁড়ালাম। তারপর গলা ছেড়ে ডাকলাম,
-ঘেউ ঘেউ।
তারপর আবার দৌড়। শেষবার যখন পিছনে তাকালাম দেখতে পেলাম বিশিষ্ট নারীবাদী নেত্রী সুলতানা আইরিনের দুই চ্যালাও আমার পেছন পেছন ছুটছে।

© মোঃ শামীম শিহাব

I I সমস্ত গল্প, ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই। কোন অংশ বা পুরো গল্প এবং কোন চরিত্র কোন ব্যক্তি বা কোন ঘটনার সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।

Comments

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

উপন্যাসের গঠন কৌশল

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E.M. Forster- এর মতে, কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তাঁর মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। উপন্যাসকে এক সুবিশাল ক্যানভাস হিসেবে ধরা যায়, লেখক তাঁর পরিকল্পনা মাফিক একেকটি অধ্যায়কে জায়গা করে দেন সেখানে। স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা, মানুষের হৃদয়ের গভীর তলদেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা—ইত্যাদি দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য। উপন্যাস বিশ্লেষকগণ একটি সার্থক উপন্যাসের গঠন কৌশল নিয়ে ছয়টি রীতির কথা বলেছেন। প্লট বা আখ্যান সম্পাদনাঃ উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনি। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। প্লটের মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা বাস্তব জীবনকে প্র...