পেটের উপরের ডান অংশে যেখানে লিভার থাকে, তার নীচে পিত্ত থলির অবস্থান। উন্নত বিশ্বে প্রায় ১০-১৫% মানুষ পিত্ত থলির পাথরে আক্রান্ত হয়। ৪০ বছর বয়সের নীচে আক্রান্তদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা পুরুষের তুলনায় তিন গুন। তবে, ৪০ বছর পরবর্তীতে মহিলা ও পুরুষ সমান ভাবে আক্রান্ত হয়। এই পিত্ত থলির পাথরে প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে, কোন উপসর্গ থকেনা। অন্য কোন কারনে করা আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে হঠাৎ শণাক্ত হয়। এরপরই শুরু হয় যত বিপত্তি। অনেক অজানা আশংকা। মনে হয়, অতিসত্ত্বর শরীর ব্যবচ্ছেদ করে পাথর নিংড়ানো ছাড়া কোন গত্যান্তর নেই। আসলে কি তাই? চলুন দেখে আসি ব্যাপারটা কি?
পিত্ত থলির পাথর নিয়ে সাধারণ মানুষের কিছু প্রশ্ন??
পিত্ত থলির পাথর নিয়ে রোগী ও স্বজনদের চিন্তা বা দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কারণ, অনেক দিন ধরে, আমাদের সমাজে এই নিয়ে কিছু বদ্ধমূল ধারণা বিদ্যমান। রোগী ও তার স্বজনদের নিন্মোক্ত প্রশ্ন থাকেঃ
১. এই পাথর ঔষধে মিলিয়ে যাবে কি?
২. পাথর থাকলেই অপরেশান করা লাগে কি?
৩.পাথর বেশী দিন থাকলে ক্যান্সার হয় কি না?
.... এরকম অনেক প্রশ্ন। আসুর উত্তর খুজি...
পিত্ত থলিতে কি কি ধরনের পাথর হতে পারে?
পিত্ত থলিতে পাথর প্রধানত তিন ধরণেরঃ
১. কোলেস্টেরল পাথর।
২. পিগমেন্ট বা রঙিন পাথর।
৩. মিক্সড পাথর।
কি কি কারণে পিত্ত থলিতে পাথর হতে পারে?
পিত্ত থলির পাথরের কারনঃ
১. কোলেস্টেরল পিত্ত থলিতে পাথরঃ
এই পাথরের ঝুকি বেশিঃ
ক) বৃদ্ধ বয়সে।
খ) মেয়েদের।
গ) যাদের অধিক ওজন।
ঘ) গর্ভবতী অবস্থায়।
ঙ)যারা দ্রত ওজন কমায়।
চ) স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির রোগীদের।
২. পিগমেন্ট পাথরঃ
এ পাথরের ঝুকি বেশীঃ
ক) যাদের হিমোলাইসিস বা রক্ত ভেঙ্গে যাওয়া রোগ রয়েছে।
খ) লিভার সিরোসিসে আক্রান্তদের।
গ) পিত্ত সিস্টেমের ইনফেকশান হতে।
পিত্ত থলির পাথরে কি কি উপসর্গ হতে পারেঃ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে, কোন উপসর্গ থাকেনা। অন্য কোন কারনে করা আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে পিত্ত থলিতে এ পাথর পাওয়া যায়। বাকীদের নিম্নোক্ত উপসর্গ হতে পারে।
উপসর্গঃ
উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পেটে ব্যথা। ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং প্রায় ২ ঘণ্টা থাকে। আর যদি ব্যথা ৬ ঘণ্টার বেশী থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সাথে পিত্ত থলির প্রদাহ বা অগ্নাশয়ের প্রদাহ হয়েছে। ৭০% ক্ষেত্রে পেটের উপরিভাগে, ২০% ক্ষেত্রে পেটের উপরিভাগে ডান পাশে ব্যথা হয়। এই ব্যাথা সাধারণত ডান কাঁধে উপরে বা পিছনের কাঁধের অস্থিদ্বয়ের মাঝখানে ছড়ায়।
পিত্ত থলির পাথরে কি কি সমস্যা হতে পারে?
পিত্ত থলির পাথরে নিম্নোক্ত সমস্যা হতে পারেঃ
১. পিত্ত প্রদাহ যা সল্প সময় ও দীর্ঘ সময়ের জন্য হতে পারে।
২. পাথর ছুটে পিত্ত নালিতে চলে যেতে পারে, এবং জন্ডিস দেখা দিতে পারে।
৩. অগ্নাশয়ের প্রদাহ হতে পারে।
৪. পিত্ত থলি ও খাদ্য নালীর মধ্যে ছিদ্র হয়ে সংযোগ হয়ে যেতে পারে।
৫. পিত্ত পাথর আঁটকে খাদ্য নালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পিত্ত থলির পাথরের কি কি চিকিৎসা?
চিকিৎসা দুই ধরণেরঃ-
১. অপারেশানে চিকিৎসা।
২. ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা।
চিকিৎসা কাদের দিতে হয়?
সাধারণত, যাদের পাথরের উপসর্গ থাকে বা পাথর পরবর্তী সমস্যা তৈরী হয়, তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
১. অপারেশানে চিকিৎসাঃ
ক) অপারেশান হচ্ছে পিত্ত থলি কেটে ফেলা। তা পেট খুলে বা পেটে ছিদ্র করে করা যায়।
খ) যাদের উপসর্গ বা পিত্ত থলির পাথরের জন্য সমস্যা দেখা দেয়, তাদেরই অপারেশান করা লাগে।
গ) অপারেশান সাধারণত ব্যথা উঠার ৫-৭ দিনের মধ্যে অথবা ৬ সপ্তাহ পর করতে হয়।
২. ঔষধে চিকিৎসাঃ
ক) পিত্ত থলির পাথরের একমাত্র ঔষধ হচ্ছে বাইল এসিড, যা মুখে খেতে দিতে হয়। ২-৪ বার, খাওয়া লাগে।
খ) শুধু মাত্র কোলেস্টেরল পাথরের কিছু কিছুতে এই ঔষধ কাজ করে।
গ) ঔষধ বন্ধ করার পর আবার পাথর হতে পারে।
পিত্ত থলির পাথরে যাদের উপসর্গ নাই তাদের অপারেশান লাগে কিনা??
যাদের কোন উপসর্গ নাই, তাদের অপারেশান লাগেনা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ না থাকলেও অপারেশান করে ফেলা উচিৎ, যেমনঃ
১. যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে।
২. যাদের জন্মগত হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া রয়েছে।
৩. যাদের অত্যাধিক ওজনের কারণে অপারেশান প্রয়োজন, সে সময়ে।
৪. কেউ কেউ মনে করেন পিত্ত থলির পাথরের সাথে, পিত্ত থলির ক্যান্সারের অতি সামান্য যোগসূত্র রয়েছে এবং তা যতকিঞ্চিৎ এবং যাদের উপসর্গ থাকে তাদের হতে পারে, তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে উপসর্গ বিহীন রোগীর অপারেশান করার কোন বিধান নেই।
শেষ কথাঃ
পিত্ত থলিতে পাথর হলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া উপসর্গ বা সমস্যা না থাকলে তাদের কিছুই করতে হয়না।
© ডাঃ এম ফরহাদ
Comments
Post a Comment