Skip to main content

ভূমি পরিমাপ পদ্ধতি

ভূমির পরিমাণ পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলা লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজে ব্যবহার্য দুই প্রকার পরিমাপ হলো শতাংশের হিসাব ও কাঠা'র হিসাব। অবশ্য এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আর তা হলো এই যে এক একরের এক শত ভাগের এক ভাগকে বলা হয় "এক শতাংশ" জমি (অধিকতর প্রচলিত শব্দবন্ধ হলো "এক ডেসিমাল জমি")। অন্যদিকে কাঠার উর্ধ্বতর একক হলো "বিঘা" এবং বিঘা'র উর্ধ্বতর একক হলো "একর।" ২০ কাঠা সমান এক বিঘা জমি এবং তিন বিঘা সমান এক একর জমি। এই পরিমাপ সর্বজনীন, এবং "সরকারি মান" (Standard Measurement) হিসেবে অনুমোদিত। বাংলাদেশে ঐতিহ্যগত ভাবে গান্টার শিকল জরীপ পদ্ধতিতে জমির পরিমাণ মাপা হয়ে থাকে। আন্তজার্তিক প্রয়োজনে কখনো কখনো সরকারী কাগজে হেক্টর ব্যহার করা হয়ে থাকে।

ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি

ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো:
(১) ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
(২) কাঠা,
(৩) বিঘা এবং
(৪) একর
এই পরিমাপ সর্ব এলাকায় সর্বজন গৃহীত। এটা "সরকারি মান"( Standerd Measurement) বলে পরিচিত।
উক্ত পরিমাপের কতিপয় নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
ইঞ্চি, ফুট ও গজঃ
১২'' ইঞ্চি = ১ ফুট
৩ ফুট= ১ গজ
(৩) ভূমি যে কোন সাইজের কেন ভূমির দের্ঘ্য ও প্রস্থে যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে এটা ১.০০ একর (এক একর) হবে।
যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০ গজ×২২ গজ= ৪৮৪০ বর্গগজ।

বর্গগজ/বর্গফুট অনুযায়ী শতাংশ ও একরের পরিমাণঃ
৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর ধরে
৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর
৪৩৫৬০ বর্গফুট= ১ একর
১৬১৩ বর্গগজ= ১ বিঘা
১৪৫২০বর্গগজ= ১ বিঘা
৪৮.৪০ বর্গফুট= ০১ শতাংশ
৪৩৫.৬০ বর্গফুট= ০১ শতাংশ
৮০.১৬ বর্গগজ= ১ কাঠা
৭২১.৪৬ বর্গগজ= ১ কাঠা
৫.০১ বর্গগজ = ১ ছটাক
৪৫.০৯ বর্গফুট= ১ কাঠা
২০ বর্গহাত = ১ ছটাকা
১৮ ইঞ্চি ফুট= ১ হাত (প্রামাণ সাই)

কাঠা, বিঘা ও একরের মাপঃ
১৬ ছটাক = ১/ কাটা
০.০১৬৫ অযুতাংশ = ১/কাঠা
০.৩৩ শতাংশ বা ০.৩৩০০ অযুতাংশ = ১ বিঘা
২০ (বিশ) কাঠা = ১ বিঘা
৩ বিঘা = ১.০০ একর।
টিকাঃ একশত শতাংশ বা এক হাজার সহস্রাংশ বা দশ হাজার অযুতাংশ= ১.০০ (এক) একর। দশমিক বিন্দুর (.) পরে চাষ অঙ্ক হলে অযুতাংশ পড়তে হবে।

মিলিমিটার ও ইঞ্চিঃ
১ মিলিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়)
১ সেন্টিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়)
১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি বা ৩.২৮ ফুট/ ১.০৯৩ গজ (প্রায়)
১০০০ মিটার = ১ কিলোমিটার
১ কিলোমিটার= ১১ শত গজ
২ কিলোমিটার = (সোয়া মাইল)
১৭৬০ গজ = ১ মাইল
১৩২০ গজ = পৌন এক মাইল।
৮৮০ গজ = আধা মাইল
৪৪০ গজ = পোয়া মাইল।
১ বর্গ মিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট (প্রায়)
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর (প্রায়)
১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার (প্রায়)

গান্টার শিকল জরীপঃ
ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি সঠিক এবং সহজ করার জন্য ফরাসী বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্যে ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্য ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে তার নাম অনুসারেই এই শিকলের নামকরণ করা হয় গান্টার শিকল। আমাদের দেশে গান্টার শিকল দ্বারা জমি জরিপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। একর, শতক এবং মাইলষ্টোন বসানোর জন্য গান্টার শিকল অত্যন্ত উপযোগী। এই শিকলের দৈর্ঘ্য ২০.৩১ মিটার (প্রায়) বা ৬৬ ফুট
গান্টার শিকল ভূমি পরিমাপের সুবিধার্থে একে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় থাকে। এর প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
প্রতি এক লিঙ্ক = ৭.৯২ ইঞ্চি
দৈর্ঘ্য ১০ চেইন ×প্রস্থে ১ চেইন = ১০ বর্গ চেইন = ১ একর
গান্টার শিকলে ১০ লিঙ্ক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পর পর নস বা ফুলি স্থাপন করা হয় (নস ফুলি)
২০ লিঙ্ক বা ১৫৮.৪ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৩০ লিঙ্ক বা ২৩৭.৩ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৪০ লিঙ্ক বা ৩১৬.৮ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৫০ লিঙ্ক বা ৩৯৬.০ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৮০ গান্টার বা ১৭৬০ গজ পর স্থাপিত হয়- মাইল ষ্টোন

একর শতকে ভূমির পরিমাপ
১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল
১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক
১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর
আমাদের দেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমান বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনক।

বিভিন্ন প্রকারের আঞ্চলিক পরিমাপ
আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারের মাপ ঝোক প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি। অঞ্চলে ভেদে এই পরিমাপগুলো আয়তন বিভিন্ন রকমের হয়ে তাকে। বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির পরিমাপ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হলেও সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর, শতক পদ্ধতিতে করা হয়। সারাদেশে একর শতকের হিসাব সমান।

কানিঃ কানি দুই প্রকার। যথা-
(ক) কাচ্চা কানি
(খ) সাই কানি
কাচ্চা কানি: ৪০ শতকে এক বাচ্চা কানি। কাচ্চা কানি ৪০ শতকে হয় বলে একে ৪০ শতকের কানিও বলা হয়।
সাই কানিঃ এই কানি কোথাও ১২০ শতকে ধরা হয়। আবার কোথাও কোথাও ১৬০ শতকেও ধরা হয়।

কানি গন্ডার সাথে বিভিন্ন প্রকারের পরিমাপের তুলনা
২ কানি ১০ গন্ডা (৪০ শতকের কানিতে) = ১ একর
১ কানি = ১৭২৮০ বর্গফুট
১ কানি = ১৯৩৬ বর্গগজ
১ কানি = ১৬১৯ বর্গমিটার
১ কানি = ৪০ বর্গ লিঙ্ক
১ একর = ১০ বর্গ চেইন
১ একর = ১০০ শতক
১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার
১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক
১ একর = ৬০.৫ কাঠা
১ শতক = ১ গন্ডা বা ৪৩২.৬ বর্গফুট

বিঘা-কাঠার হিসাব
১ বিঘা = (৮০ হাত×৮০ হাত) ৬৪০০ বর্গহাত
১ বিঘা = ২০ কাঠা
১ কাঠা = ১৬ ছটাক
১ ছটাক = ২০ গন্ডা
১ বিঘা = ৩৩,০০০ বর্গলিঙ্ক
১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট
১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট
১ ছটাক = ৪৫ বর্গফুট

লিঙ্ক এর সাথে ফুট ও ইঞ্চির পরিবর্তন
লিঙ্ক = ৭.৯ ইঞ্চি
৫ লিঙ্ক = ৩ ফুট ৩.৬ ইঞ্চি
১০ লিঙ্ক = ৬ ফুট ৭.২ ইঞ্চ
১৫ লিঙ্ক = ৯ ফুট ১০.৮ ইঞ্চি
২০ লিঙ্ক = ১৩ ফুট ২.৪ ইঞ্চি
২৫ লিঙ্ক = ১৬ ফুট ৬.০ ইঞ্চি
৪০ লিঙ্ক = ২৬ ফুট ৪.৮ ইঞ্চি
৫০ লিঙ্ক = ৩৩ ফুট
১০০ লিঙ্ক = ৬৬ ফুট

এয়র হেক্টর হিসাব
১ হেক্টর = ১০,০০০
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর
১ হেক্টর = ৭.৪৭ বিঘা
১ হেক্টর = ১০০ এয়র।

Comments

Popular Posts

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জন্য  ব্যবহার করা  হয়। ২. পার-অক্সাইড : ফেব্রিকের মধ্যে থাকা ন্যাচারাল গ্রে কালার রিমুভ করতে ব্যবহার করা হয়। ৩. স্টেবিলাইজার : পার-অক্সাডের রিয়েকশন স্টেবল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাবহার না করললে পার-অক্সাইড খুব দ্রুত ভেঙে পার-হাইড্রোক্সিল আয়ন গুলি শেষ করে ফেলবে, যা ব্লিচিং এর জন্য দায়ী। ৪. ডিটারজেন্ট :  ওয়েটিং অথবা ক্লিনিং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ৫. এন্টিক্রিজিং এজেন্ট:  নিটিং এর পর ও ওয়েট প্রসেসিং এর সময়  ফেব্রিকে ভাজ অথবা ক্রিজ পরে ফলে সেড আন-ইভেন আসতে পারে। ডাইং এর সময় তাই তা দূর করতে এক ধরনের ক্রিজ রিমুভার ব্যবহার করা হয় যেন ক্রিজ না পরে। এটি লুব্রিকেশন টাইপ এর কেমিক্যাল। ৬. সিকুস্টারিং এজেন্ট: পানির মধ্যে থাকা মেটাল আয়ন, হার্ডনেস রিমুভ করতে  ও পানিকে সফট করতে ব্যবহার করা হয়। ৭. ওয়েটিং এজেন্ট :  সারফেস টেনশন দূর করে ফেব্রিকের ভিজানোর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ওয়েটিং প্রপার

উপন্যাসের গঠন কৌশল

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E.M. Forster- এর মতে, কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তাঁর মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। উপন্যাসকে এক সুবিশাল ক্যানভাস হিসেবে ধরা যায়, লেখক তাঁর পরিকল্পনা মাফিক একেকটি অধ্যায়কে জায়গা করে দেন সেখানে। স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা, মানুষের হৃদয়ের গভীর তলদেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা—ইত্যাদি দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য। উপন্যাস বিশ্লেষকগণ একটি সার্থক উপন্যাসের গঠন কৌশল নিয়ে ছয়টি রীতির কথা বলেছেন। প্লট বা আখ্যান সম্পাদনাঃ উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনি। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। প্লটের মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা বাস্তব জীবনকে প্র

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ছানা سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ- উচ্চারণ- সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বি-হামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। রুকূর তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْمِ উচ্চারণ- সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম। অর্থাৎ- আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করতছি। তাসমীহ سَمِعَ اللّٰهُ لِمَنْ حَمِدَهْ উচ্চারণ- সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ। অর্থাৎ- যে তাহার (আল্লাহর) প্রশংসা করে, আল্লাহ তাহা শুনেন। তাহমীদ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ উচ্চারণ- রাব্বানা লাকাল হামদ। অর্থাৎ- হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি প্রশংসিত। সিজদার তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى উচ্চারণ- সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা। অর্থাৎ- আমার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করতেছি। আত্তাহিয়্যাতু اَلتَّحِيّ