Skip to main content

ক্যান্সার এর লক্ষণসমূহ ও প্রতিকার

ক‍্যান্সার কি?

শরীরের কোন কোষ যখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়তে থাকে  তখন তা একটা চাকা বা পিন্ড তৈরি করে । যদি তা আশেপাশের টিস‍্যু ভেদ করার ক্ষমতা সম্পন্ন হয় তবে তাকে ক‍্যান্সার বলে। যদি তা আশেপাশের টিস‍্যু ভেদ করার ক্ষমতা সম্পন্ন না হয় তবে তাকে বিনাইন টিউমার বলে।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ক‍্যানসার সমূহঃ

পুরুষদের ক্যান্সারঃ

১. ফুসফুস ক্যান্সার

২. লিম্ফোমা

৩. খাদ্যনালীর ক্যান্সার

৪. পাকস্থলির ক্যান্সার

৫. লিভার ক্যান্সার


মহিলাদের ক্যান্সারঃ

১. স্তন ক্যান্সার

২. জরায়ুমুখের ক্যান্সার

৩. ফুসফুস ক্যান্সার

৪. লিম্ফোমা

৫. খাদ্যনালীর ক্যান্সার


ক‍্যান্সারের প্রধান লক্ষণ সমূহঃ

১. অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস।

২. প্রতিনিয়ত  স্বল্পমাত্রার শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি।

৩. তিল ও আচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন।

৪. ক্ষত সারতে বিলম্ব হ‌ওয়া।

৫. স্বাভাবিক প্রসাব ও পায়খানার অভ‍্যাসের পরিবর্তন।

৬. খাদ‍্যে অরুচি ও বমি বমি ভাব।

৭. ত্বকের স্থূলতা ও চাকা।

৮. অস্বাভাবিক রক্তপাত।

৯. প্রতিনিয়ত ক্লান্ত হয়ে পড়া।

১০. খুসখুসে কাশি ও স্বরভ‌ঙ্গ।

ক্যান্সার এর লক্ষণসমূহ বিস্তারিতঃ

সাধারণ ব্যথা এবং ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর মধ্যকার ফারাক জানা থাকাটা জরুরি। বেশিরভাগ সময়ই পুরুষদের ক্যান্সার হলে তা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না। কেননা ক্যান্সারের লক্ষণগুলোকে ছোটখাটো কোনো সমস্যার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে অগ্রাহ্য করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়েই যদি ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সনাক্ত করা যায় তাহলে ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হতে পারে।

পুরুষদের ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্রামের অভ্যাসে পরিবর্তন, খাবার গিলতে সমস্যা, গলার স্বর কর্কশ বা ফ্যাঁসফেঁসে হয়ে যাওয়া, অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া, মুখের পরিবর্তন এবং পাকস্থলী বা তলপেটে ব্যথা প্রভৃতি।

নিয়মিতভাবে ক্যান্সারের স্ক্রিনিং টেস্ট করানো প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার সনাক্ত করার সবচেয়ে ভালো উপায়। ক্যান্সারে আক্রান্তদের বেশিরভাগই তাদের রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অগ্রাহ্য করেন বা পরিস্থিতি বিপর্যয়কর হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কিছু্ই টের পান না। তবে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোও খুব বেশি স্পষ্ট হয় না এবং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে খুব বেশি বাধাগ্রস্ত করে না। ফলে লোকেই বুঝতে পারেন না তাদের আসলে ক্যান্সার হয়েছে কিনা। আসুন জেনে নেওয়া যাক ক্যান্সারের এমন ৫টি লক্ষণ সম্পর্কে যেগুলো পুরুষদের একদমই অগ্রাহ্য করা উচিত নয়।

১. প্রস্রাবে পরিবর্তনঃ
প্রস্রাবের প্রবাহে যে পরিবর্তনগুলো হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ: প্রস্রাবের প্রবাহ শুরু করতে সমস্যা, প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করতে সমস্যা, স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল প্রস্রাবের স্রোত, প্রস্রাব ঝরা বা চুইয়ে পড়া, দিনে কতবার প্রস্রাব করা হচ্ছে সেই হার-এ পরিবর্তন, অণ্ডকোষের অথবা অন্ডকোষের ভেতরের মাংসপিণ্ডের আকার এর স্ফীতি বা সংকোচন, অণ্ডকোষের ওজন বেড়ে যাওয়া এবং লিঙ্গোত্থানে সমস্যা।

২. মুখের পরিবর্তনঃ
মুখের ভেতরে এবং গলায় যেসব পরিবর্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে: মুখের ভেতরে সাদা দাগ (গোল স্পট বা লম্বা দাগ), মুখে এবং গলায় অনবরত ব্যথা, খাবার গিলতে সমস্যা, নিচের চোয়াল নাড়াতে সমস্যা, অজানা কারণে দাঁত নড়বড়ে হওয়া বা উঠে আসা, মুখ ফুলে যাওয়া, ঠোঁটে অসাড়তা বা অতিসংবেদনশীলতা, গালের ভেতরে বা জিহ্বায় ক্ষত ও ঘাঁ অথবা জিহ্বা থেকে রক্ত পড়া, অনবরত কফ-কাশি বা স্বরভঙ্গ এবং কফের সঙ্গে রক্ত বের হওয়োক

৩. স্তনে পরিবর্তনঃ
পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। যত স্তন ক্যান্সার হয় তার মাত্র ১% হয় পুরুষদের স্তনে। আর এ কারণেই পুরুষরা স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো অগ্রাহ্য করেন। পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হয় মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোনের উচ্চ মাত্রা, ক্ষতিকর বিকিরণ বা পারিবারিকভাবে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে।
পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলো: স্তনের আকার বেড়ে যাওয়া, স্তনের বোটায় ব্যথা, স্তনবৃন্তের সংকোচন বা ওল্টানো অবস্থা, স্তনবৃন্তে ক্ষত, স্তনবৃন্তের চারপাশে গোলকার লালচে হওয়া বা মাংসপিণ্ড যাতে ব্যথা নাও থাকতে পারে, স্তনবৃন্ত থেকে তরল নিঃসরিত হওয়া যা দেখতে পানির মতো, কালো বা রক্তাভ হতে পারে, বাহুর নিচের লসিকাগ্রন্থি বেড়ে যাওয়া, স্তনবৃন্ত বা এর চারপাশে লাল হয়ে যাওয়া।

৪. পাকস্থলি সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহঃ
পাকস্থলিতে এবং পেটের ব্যথা হতে পারে নানা কারণে। কিন্তু ব্যথা কমানোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি তা না কমে তাহলে তা ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে। পাকস্থলি সংশ্লিষ্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলো: ক্ষুধামান্দ্য, দীর্ঘমেয়াদি এসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া (পাকস্থলি বা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ), বমি- রক্তসহ বা ছাড়া, পেট ফোলা, বা পেটে তরল জমা হওয়া, পাকস্থলিতে ব্যথা যা হতে পারে ভেতরের দিকে চাপ প্রয়োগ করার অনুভূতিযুক্ত (অগ্নাশয় ক্যান্সার), পাকস্থলিতে খিচুনি এবং অস্বস্তি (লিভার ক্যান্সার), অল্প খাবারেই পেট ভরে যাওয়া, প্রস্রাব বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া (কিডনি বা মূত্রাশয় ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার)।

৫. অজানা কারণে ওজন কমাঃ
যারা সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের হুট করেই ওজন কমাটা কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই যদি ওজন কমে যায় তাহলে বিপদের লক্ষণ। অগ্নাশয়, পাকস্থলি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হলে এমন হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে। এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস বা যক্ষ্মা হলে হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে।


ক‍্যান্সার প্রতিরোধের উপায়ঃ

১. ধূমপান ও মদ‍্যপান থেকে বিরত থাকুন। পরোক্ষ ধূমপান থেকেও দূরে থাকুন।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।

৩. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।

৪. স্বাস্থ‍্যকর খাবার খান।

৫. পরিবেশ দূষণ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করুন।

৬. তেজস্ক্রিয় রশ্মি থেকে দূরে থাকুন।

৭. সময়মত টিকা গ্ৰহন: হেপাটাইটিস বি, এইচ পি ভি

৮. শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান।

সচেতনতাই হোক ক‍্যান্সার প্রতিরোধের প্রধান উপায়।


ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ

ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রকারভেদঃ

১. কেমোথেরাপি

২. অপারেশন

৩. রেডিওথেরাপি

৪. হরমোন থেরাপি

৫. ইমুনোথেরাপি

৬. বায়োলজিক্যাল থেরাপি


ক্যান্সারের মূল চিকিৎসার দায়িত্ব হল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের বা অঙ্কোলজিস্টের। তিনি কখন অপারেশন করলে বা কেমোথেরাপি দিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে তা বলে দেবেন।

ক্যান্সারের বেশ ভাল চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। সরকারি পর্যায়ে বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল হলো জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী ঢাকা। এছাড়াও বেশিরভাগ পুরাতন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসা করা হয়। বেসরকারী পর্যায়েও অনেক ক্যান্সার হাসপাতাল আছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার চিকিৎসা করলে ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। এজন্য ক‍্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতাই মূল উপায়।


লেখাঃ

ডাঃ মো: লুৎফুল কবীর

এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার

জাতীয় ক‍্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতাল।


© মোঃ শামীম শিহাব

Comments

Post a Comment

Popular Posts

নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও তাসবীহ সমূহ

জায়নামাযে দাঁড়ানোর দোয়া اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ حَنِيْفًا وَّمَا اٰنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- উচ্চারণ-ইন্নি ওয়াজ্জা...

টেক্সটাইল ডাইং কেমিক্যাল গুলির নাম এবং ব্যবহার

ডাইং ফিনিশিং এ ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোর নাম এবং ব্যবহার জেনে নিন : ১. সোডা  :  কালার ফিক্সং  করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে। তাছাড়া PH কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জ...

Countries in the World

This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more Got it! Countries in the World: 195 # Country Population (2020) Land Area (Km²) 1 China 1,439,323,776 9,388,211 2 India 1,380,004,385 2,973,190 3 United States 331,002,651 9,147,420 4 Indonesia 273,523,615 1,811,570 5 Pakistan 220,892,340 770,880 6 Brazil 212,559,417 8,358,140 7 Nigeria 206,139,589 910,770 8 Bangladesh 164,689,383 130,170 9 Russia 145,934,462 16,376,870 10 Mexico 128,932,753 1,943,950 11 Japan 126,476,461 364,555 12 Ethiopia ...